শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Friday, 4 March 2016

বাদুড় কেমন করে পারে?

রোগজীবাণু বয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাদুড়ের আসলেই কোন তুলনা নেই। বাদুড় অন্তত ১০০ রকম ভয়ংকর ভাইরাসের বাহক। এসকল ভাইরাস মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য মারাত্মক। জলাতঙ্কের ভাইরাস হোক, ইবোলা ভাইরাস হোক কিংবা হোক হেন্ড্রা/নিপাহ ভাইরাস-এ সব কিছুই বাদুড় নিশ্চিন্ত মনে দিব্যি বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারে।এসব ঘাতক জীবাণু দ্বারা বাদুড়ের কোন ক্ষতি হয় না। অথচ বাদুড় থেকে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলেই মানুষ নিশ্চিত মৃত্যুমুখে পতিত হয়।এর সঙ্গে তুলনা করা যায় বুবোনিক প্লেগ রোগের বাহক ইঁদুরের মাছির(fleas) সঙ্গে। ইঁদুরে মাছি প্লেগের জীবাণু বহন করে; কিন্তু তাদের প্লেগ হয় না। এতদিন সবাই বাদুড়ের শরীরে প্রাণঘাতী জীবাণুর বসবাস অবাক-বিস্ময়ে লক্ষ্য করলেও, এর ভেতরের রহস্য কি তা জানা ছিলনা?  এখন এই রহস্যের সমাধান মিলেছে। 
   

যেকোন জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা ধ্বংস করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুই স্তরে কাজ করে- প্রথমত কিছু ব্যবস্থা রয়েছে জন্মগত; আর দ্বিতীয়ত কিছু অর্জিত ব্যবস্থা। আমাদের পাকস্থলীতে নিয়মিত অ্যাসিড নিঃসরিত হয়। এই অ্যাসিড খাবারের সঙ্গে ঢুকে যাওয়া অনেক জীবাণু মেরে ফেলে। এটা একধরণের জন্মগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নমুনা। দেখা যাচ্ছে বাদুড়ের শরীরেও তেমন অনেক মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে জন্মগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। বাদুড়ের জন্মগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল অস্ত্র হচ্ছে ইন্টারফেরন(interferons)বাদুড়ের শরীরে মাত্র তিন রকম ইন্টারফেরন তৈরি হয়। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে বাদুড়ের শরীরে ইন্টারফেরন অবিরাম তৈরি হতেই থাকে। ফলে অনেক ভাইরাস বাদুড়ের শরীরে প্রবেশ করলেও, তা বাদুড়ের কোন ক্ষতি করতে পারেনা। কিন্তু মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধক ইন্টারফেরন সবসময় তৈরি হয় না; ভাইরাস শরীরে ঢোকার পরে তৈরি হওয়া শুরু হয়।এজন্য নানারকম প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্রিয়া সক্রিয় হওয়ার আগেই ভাইরাস মানুষের শরীরে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে ফেলে এবং অনেক ক্ষেত্রেই আর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে আর তা অতিক্রম করা সম্ভব হয় না।অতএব বাদুড়ের মতো ভাইরাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হলে আমাদের আসলেই “ব্যাট ম্যান” হওয়া লাগবে বাদুড়ের শরীরের ক্রোমোজোমের এক বিশেষ জিন বাদুড়কে এই অদ্ভুত ক্ষমতা দিয়েছে এখন গবেষকদের স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের শরীরেও এমন জিন ঢুকিয়ে ভাইরাস প্রতিরোধী ইন্টারফেরন অবিরাম তৈরি করানো সম্ভব করা যায় কিনা তখন সেটা আর সিনেমার “ব্যাট ম্যান” থাকবে না; হয়ে যাবে আসল “ব্যাট ম্যান”