পৃথিবীর প্রতিটি
স্থানে যাওয়ার মানচিত্র রয়েছে। গুগল মানচিত্রের সাহায্যে এখন যেকোন জায়গায় যাওয়া
সম্ভব। অনেক সময় বাইরের দুনিয়ার মতো মানুষের মগজের ভিতরেও বিশেষ কোন অঞ্চলের কাজ
পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন হয়।তার জন্য রয়েছে মস্তিষ্কের মানচিত্র।সম্প্রতি মানুষের
মস্তিষ্কের মানচিত্রের একটি নতুন সংস্করণ
বের হয়েছে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের
গবেষকগণ মানুষের মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র প্রণয়ন করেছেন। তারা মানুষের সেরিব্রাল কর্টেক্স বা গুরু মস্তিষ্কের
বাইরের আস্তরণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানাধরণের অনুভূতির সংযোগস্থলের বিস্তারিত
চিত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সম্প্রতি ন্যাচার (Nature)পত্রিকায় মানুষের নতুন মানচিত্রের বিস্তারিত
বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। এরফলে মস্তিষ্কের অনেক রোগ যেমন- অটিজম, ডিমেন্সিয়া, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভবিষ্যৎ গবেষণায়
আরও সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য মস্তিস্ক এমন কোন কম্পিউটার নয় যে
সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে এটা কাজ করবে। বরং এর সফটওয়ার(মস্তিষ্কের যে ভাবে
কাজ করে)এটার হার্ডওয়ারের(মস্তিষ্কের গঠনপ্রণালীর)সঙ্গে সম্পর্কিত। এজন্য মস্তিস্ক
কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে আমাদের এর গঠন প্রণালী বুঝতে হবে।
বর্তমানে
মস্তিষ্কের যে মানচিত্র ব্যবহার করা হয় তা প্রায় একশ’ বছর পুরনো। উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে জার্মান
নিউরো-অ্যানাটমিস্ট করবিনিয়ান ব্রডম্যান প্রথম মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু পুরনো ম্যাপে আসলে মস্তিষ্কের অনেক কাজকর্মের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তাই অনেকদিন ধরে মস্তিষ্কের একটি বিস্তারিত ম্যাপের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল।
মস্তিষ্কের নতুন
মানচিত্র তৈরি করার জন্য গবেষকগণ Human Connectome Project-এর ডাটা ব্যবহার করেছেন। এই প্রজেক্টে এমআরআই
মেশিনের সাহায্যে নেওয়া ১২০০ মানুষের মস্তিষ্কের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গঠন,
ধরণ এবং কার্যানুসারে
মস্তিষ্কের দুই অংশে ১৮০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে
পারে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই অনেক ধরণের স্নায়ুরোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে
মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
তথ্যসূত্রঃ Glasser M, Coalson T, Robinson E,
Hacker C, Harwell J, Yacoub E. A Multi-Modal Parcellation of Human Cerebral
Cortex. Nature, 2016.