শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Saturday 24 December 2016

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম



প্রতিদিন ১ ঘণ্টা যোগ সাধনা করলে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিভিন্ন হিসেব অনুসারে অনেক দেশেই আজকাল প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি। সাধারণত কারো সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণয় করা হয়।  সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ থেকে ১৩৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ  এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০-৮৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ থাকাকে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। 

সতর্ক না হলে এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন না করলে কিছুদিনের মধ্যেই প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ প্রকৃত উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, যোগ সাধনার মাধ্যমে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এ সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত রোগীদের অ্যারোবিক ব্যায়াম, খাবার মেনে চলা এবং ধূমপান পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে এর সঙ্গে যারা নিয়মিত এক ঘণ্টা হঠযোগ করেছেন তাদের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। 

যোগ সাধনার মূলত দুটি ভাগ ঃ হঠযোগ এবং রাজযোগ । হঠযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীরকে সুস্থ-সবল করা। হঠযোগের  ধারণা অনুসারে শক্তিকে আয়ত্ত করতে হলে শরীর নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সকলে যোগ বলতে হঠযোগের ব্যায়াম বা আসনগুলোকে বুঝে থাকেন। রাজযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবাত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করা। হঠযোগ ব্যায়ামের মূল তিনটি উপাদান - আসন, প্রাণায়ম এবং ধ্যান। এদের মধ্যে কোন উপাদান কিভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, বিশেষজ্ঞগণ তার ব্যাখ্যা না দিলেও যোগ সাধনা যে রক্তচাপ কমাচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিত। তিনমাসের যোগ সাধনায় তারা রক্তচাপ গড়পড়তা ৪.৫ থেকে ৪.৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ কমার প্রমাণ পেয়েছেন। 

রক্তচাপ মাত্র ২ মিঃ মিঃ পারদ চাপ  কমাতে পারলে হৃদরোগের হার ৬% এবং স্ট্রোকের হার ১৫% কমানো সম্ভব। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশসমূহে কমবয়সী যুবকদের মধ্যেও অস্বাভাবিক হারে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগ বাড়ছে।  ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন এই  বিশাল স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবেলায় যোগ সাধনা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশে যোগ সাধনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও এটাকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রয়োগ করার সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ এক্ষেত্রে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছেন।


তথ্যসূত্রঃ European Society of Cardiology news release    

হার্ট অ্যাটাক এবং শিক্ষা-দীক্ষা



একসময় মনে করা হতো হৃদরোগ বনেদী ব্যামো। বড়লোকদের এটা বেশী হয়।  বিষয়টা এখন আর তেমন মনে হচ্ছে না।

অস্ট্রেলিয়ায় ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে একটা খুব বড় রকমের সমীক্ষা চলছে।  সমীক্ষার একটি ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যারা স্কুলের সীমানা পেরোতে পারেননি তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার হার বাড়াবাড়ি রকমের বেশী। একজন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী ব্যক্তির চেয়ে অশিক্ষিত ব্যক্তির হৃদরোগ হওয়ার হার ১৫০ শতাংশ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বেশী। যারা ইন্টারমিডিয়েট ডিগ্রিধারী তাদের বেলায় এ হার যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ বেশী। 

প্রতি ২৭ মিনিটে একজন অস্ট্রেলিয়ান হৃদরোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। 

দুনিয়ায় অসাম্য এবং বৈষম্যের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। হৃদরোগের এমন বৈষম্যমূলক বিস্তার গবেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ হৃদরোগ প্রতিরোধের নীতি নির্ধারণে এটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। উন্নতমানের  উচ্চশিক্ষা একজন মানুষকে শুধু  ভালো চাকরির নিশ্চয়তায় দেয় না; তাকে ভালো আবাসন এবং সঠিক সুষম খাবার নির্বাচনের জ্ঞ্যনও দেয়। নিঃসন্দেহে এটা তার  স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ ভূমিকা রাখে। অতএব হৃদরোগের বিস্তার প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভূমিকা নিয়ে আরও গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।    


তথ্যসূত্রঃ Socioeconomic variation in incidence of primary and secondary major cardiovascular disease events: an Australian population-based prospective cohort study, Rosemary J. Korda, Kay Soga, Grace Joshy, Bianca Calabria, John Attia, Deborah Wong and Emily Banks, International Journal for Equity in Health, doi: 10.1186/s12939-016-0471-0, published 21 November 2016.

ভালো কোলেস্টেরল কি আসলে ভালো?



এইচডিএল বা  বেশী ঘনত্বের লিপোপ্রোটিনকে (High-Density Lipoprotein) ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। রক্তে এর মাত্রা ঠিক থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম। এজন্য অনেকে রক্তে এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এর মাত্রা বাড়িয়ে তেমন ভালো ফল পাওয়া যায়নি। দেখা যাচ্ছে এইচডিএল-এর মাত্রা খুব বেশী হলে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষসমূহ প্রদাহের মত প্রতিক্রিয়া দেখায় যা শরীরের অন্যান্য কোষ-কলার জন্য হিতে বিপরীত হয়। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের পরে এখন গবেষকগণ মনে করছেন এইচডিএল-এর কাজ-কর্ম আসলে এতদিন যেমন সোজা সরল মনে করা হতো, আসলে তা নয়। এর মাধ্যমে সেই পুরনো কথা আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিল যে, বেশী ভালোও ভালো নয়।  বাড়তি এইচডিএল-কে আমাদের শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে এখনও আরও অনেক দূর যেতে হবে। 

তথ্যসূত্রঃ 
High-Density Lipoproteins Exert Pro-inflammatory Effects on Macrophages via Passive Cholesterol Depletion and PKC-NF-κB/STAT1-IRF1 Signaling, Marjo M.P.C. Donners et al., Cell Metabolism, doi: 10.1016/j.cmet.2016.10.013, published online 17 November 2016.