শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Saturday 26 January 2013

আলঝিমারস রোগঃ বৃদ্ধ বয়সের বুদ্ধিবৈকল্য


মানুষের বয়স বাড়লে স্মরণ শক্তি কমে যায় বয়স চল্লিশের কথা পেরুলেই বিশাল অংশের একদল লোকের স্মরণ শক্তি কমে যেতে শুরু করে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সব কিছু ভুলে যাবার প্রবণতা। এই ধরণের বুদ্ধিবৈকল্য বা স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার কারণ যে সকল রোগ, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে আলঝিমারস রোগ। ১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক A. Alzheimer সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেনতার নাম অনুসারেই এ রোগের নাম রাখা হয়।

এ রোগের সঠিক কারণ কি তা কিন্ত এখন ও জানা যায়নি তবে সাম্প্রতিক গবেষনা গুলো দাবী করছে; যে সকল উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটার এর আদান প্রদান এর মাধ্যমে মস্তিস্ক তাদের কার্য সম্পাদন করে তাদের সমস্যার কারণেই এই রোগটি হয়ে থাকে। পরিসংখান অনুযায়ী শতকরা ১৫ ভাগ রোগীই এ রোগে আক্রান্ত হন পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে, আর শতকরা ১ থেকে ৫ শতাংশ রোগের কারন হলো জেনেটিকএ রোগ হলে মস্তিস্কের আয়তন সঙ্কুচিত  হয়ে আসতে থাকে, বিশেষ করে সেরিব্রাল কর্টেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস উল্লেখযোগ্য ভাবে আকারে কমতে থাকে।

আগেই বলেছি আলঝিমারস রোগ হলে রোগীর স্মৃতি শক্তি কমে যেতে শুরু করে। রোগী সাম্প্রতিক (short term) এবং অতীত (long term) দুই ধরণের স্মৃতিই হারিয়ে ফেলেন।  যদিও সাম্প্রতিক ঘটনা গুলো ভুলে যাবার হারটাই অধিক। এছাড়া এ সকল রোগীর মাঝে বিভ্রান্তি , খিটখিটে স্বভাব, আক্রমণাত্মক মনোভাব , বিষন্নতা-অবসাদ, বাকশক্তিহীনতা বা অন্যের কথা বোঝার ক্ষমতা লোপ পাওয়সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি তার এই সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না এমন কি তার মনে এ বিশ্বাস জন্মায় যে তার এ ধরনের কোন সমস্যাই নেই। এর ফলে অনেক সময়ই ব্যক্তিটি পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তার একটি বৈরি সম্পর্ক তৈরী হয় ফলে  তিনি চরম একাকীত্বে ভুগতে থাকেন।

এমন রোগ হলে পরিবারের প্রবীণ সদস্যটিকে একজন বিশেষজ্ঞের নিকট নিয়ে যাওয়া উচিত। সাধারণত চিকিৎসক সাহেব রোগীর ইতিহাস জেনে এবং তার আত্মীয়দের সাথে কথা বলেই রোগটি নিশ্চিত করতে পারেন। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানাবিধ ল্যাব পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- এম,আর,ই, (MRI), স্পেক্ট (SPECT-single photon emission computed tomography), পেট স্ক্যান (PET-positron emission tomography) ইত্যাদি

দুর্ভাগ্যজনক হলো আলঝিমারস রোগের এখনো সঠিক কোন চিকিৎসা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে পরিবারের আপনজনেরা সহানুভুতিশীল হলে এবং সহমর্মিতা সহ ব্যক্তিটিকে একটি সঠিক স্নেহময় পরিবেশ তৈরী করে দিলে তার জন্য একটি অর্থবহ জীবন যাপন সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে, যেসকল ব্যক্তি মধ্যবয়সে বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক কাজ (যেমন লেখালেখি, বইপড়া, যন্ত্রসংগীত বাজানো), বিভিন্ন সামাজিক গঠন/সেবামূলক কাজ, বুদ্ধির খেলা যেমন- দাবা  ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাদের এ রোগ হবার প্রবণতা কম। অন্যদিকে যারা অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ রোগে ভুগেন বা ধূমপায়ী তাদের মধ্যে এ রোগ হবার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশী।
সম্প্রতি আলঝিমারস  রোগের উপশমে নতুন কিছু ওষুধ আবিস্কৃত হয়েছে। এদের কার্যকারীতা শতভাগ না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এরা রোগ উপশমে ভূমিকা রেখেছে। তবে বাস্তবতা হলো এই যে বার্ধক্যে উপনীত হলে আমরা যে কেউই এমন একটি রোগের শিকার হয়ে উঠতে পারি, তাই আমাদের সকলের উচিত এমন রোগীদের সহানুভুতির দৃষ্টিতে দেখা এবং আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটা সুন্দর  পৃথিবীর পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস অব্যাহত রাখা।

No comments:

Post a Comment