শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Thursday 28 May 2015

বীর্যপাতের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের সম্পর্ক

 ২০১৪ সালের হিসেব অনুসারে দুনিয়াজুড়ে পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক শনাক্তকৃত ক্যানসার হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যানসার। প্রোস্টেট ক্যানসার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেলেও এখন পর্যন্ত এটা প্রতিরোধ করার কোন উপায় জানা যায়নি। এজন্য এ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। 
আমেরিকান ইউরোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন ২০১৫ সালের বার্ষিক সম্মেলনে মজার একটি তথ্য দিয়েছে। পুরুষেরা এটা জেনে হয়তো আনন্দিত হবেন। বলা হচ্ছে অধিক বীর্যপাত প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। নতুন তথ্য হলেও এর পেছনে বেশ জোরালো প্রমাণ রয়েছে। এজন্য গবেষকগণ এটা জানাতে পেরেও আনন্দ বোধ করছেন। অবশ্য মূল গবেষক ডঃ রাইডার তার গবেষণার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার উপদেশ দিয়েছেন।
মূলত  স্বাস্থ্যপেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩২,০০০  জনের উপর ১৮ বছর পর্যবেক্ষণের পর এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।  এই সময়ে ৩৮৩৯ জনের প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৮৪ জনের ক্যানসার খুব মারাত্মক ছিল। ১৯৯২ সাল থেকে এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছিল। ২০থেকে ২৯ এবং ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষেরা মাসে গড়ে কতবার বীর্যপাত করেছেন তার একটি গড় হিসেব করা হয়েছে। বিভিন্ন হিসেব নিকেশের পরে দেখা যাচ্ছে যারা মাসে ২১ বারের বেশী বীর্যপাত করেছেন তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের হার মাসে ৪ থেকে ৭ বার বীর্যস্খলনকারীদের চেয়ে ২০% কম। ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষেদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন মাসে ৮ থেকে ১২ বার বীর্যপাত করেছেন; মাত্র ৮.৮% পুরুষ ২১ বারের বেশী বীর্যস্খলনের কথা বলেছেন। ডঃ রাইডার অবশ্য বীর্যপাতের সত্যিকারের সংখ্যার ওপরে তত জোর দিচ্ছেন না। তার বক্তব্য হচ্ছে, “পুরুষদের নিরাপদ যৌন সক্রিয়তা প্রোস্টেটের জন্য উপকারী ”।  আসলে এদের ওপর পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১০ বছর আগেই বলা হয়েছিল যে অধিকবার বীর্যপাতের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের একটি সম্পর্ক আছে। দশ বছর পর এখন সেই তথ্যই আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করা হল।  অন্য আরও কয়েকটি পর্যবেক্ষণেও একই রকম তথ্য এসেছে। অনেকে শুধু বীর্যপাত নয়, বেশী বেশী অর্গাজমের ভূমিকা নিয়েও অনেকে আশার আলো দেখছেন।
ডঃ রাইডারের গবেষণার শক্তিশালী  দিক হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যাপকসংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আর বীর্যপাতের হিসেবনিকেশের জন্য কোন লুকোছাপা না করে সরাসরি যৌন মিলন, হস্তমৈথুন এবং স্বপ্নদোষের  বীর্যপাতের তথ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ৫৯ বছর ছিল এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকের অন্তত ৫ বার পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) পরীক্ষা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বিবাহিত। তবে যাদের বীর্যপাতের হার মাসে ২১ বারের বেশী তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদকারী পুরুষের সংখ্যা বেশী ছিল।   

 তথ্যসূত্রঃ
  • American Urological Association (AUA) 2015 Annual Meeting: Abstract PD6-07. Presented May 15, 2015.
  • Leitzmann MF, Platz EA, Stampfer MJ, Willett WC, Giovannucci E. Ejaculation Frequency and Subsequent Risk of Prostate Cancer. JAMA. 2004; 291(13):1578-1586. doi:10.1001/jama.291.13.1578.

Sunday 17 May 2015

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং আছাড় খাওয়া

ছোটবেলায় সকলেরই কমবেশি আছাড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও বয়সকালে এটা আনন্দের বিষয় নয়। ছোটদের একটি ছড়া আছে-
“রেল গাড়ী ঝমাঝম,
পা পিছলে আলুর দম”। 
তা বাস-ট্রেন থেকে পড়ে এখনও আছাড় খাওয়ার প্রবণতা এখনও সমানে চলছে। কিন্তু বেশী গোল বাধে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়ে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহার করার সময় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরী। 
যাদের বয়স ৭০ থেকে ৯৭ বছর হয়েছে তাদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের মনেই আশঙ্কা থাকে যে এই বয়সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহার করলে রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে  যেতে পারে এবং অনেকেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন কিংবা আছাড় খেতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি পর্যবেক্ষণে এ ধরণের বয়সী প্রায় ৬০০ উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করানোর পরেও রক্তচাপ খুব কমে আছাড় খাওয়ার অতিরিক্ত কোন ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। এই পর্যবেক্ষণের রোগীদের বিটা ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর, ডাইউরেটিক্স, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার সহ ছয় ধরণের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এক বছরের পর্যবেক্ষণে ৫৪১ টি আছাড় খাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।   অর্ধেকের বেশী রোগী কোন রকম আছাড় খাননি। প্রায় ৪৫ শতাংশ রোগী এক বছরে ১ বার থেকে ১৭ বার পর্যন্ত আছাড় খাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যারা আছাড় খেয়েছেন তাদের মধ্যে ১৩.৭% ঘরের বাইরে, ২১.২% ঘরের ভিতরে এবং ৭.৪% ঘরের ভিতরে এবং বাইরে আছাড় খেয়েছেন। আছাড়ের ফলে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবং এর জন্য চিকিৎসা নেওয়া লেগেছে।  দেখা যাচ্ছে যারা দুর্বল এবং সক্রিয় তারাই বেশী আছাড় খেয়ে থাকেন। ঘরের ভিতরে যারা আছাড় খেয়েছেন তারা আসলেই দুর্বল; কিন্তু আশেপাশের আসবাবপত্র ধরে ফেলার কারণে তাদের আছাড় তেমন গুরুতর হয়নি। কিন্তু ঘরের বাইরে যারা আছাড় খান তারা শারীরিকভাবে অতিরিক্ত সক্রিয় এবং এদের আছাড় গুরুতর হয়ে থাকে। যাদের এসিই ইনহিবিটর এবং ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছাড় খাওয়ার প্রবণতা কম দেখা গিয়েছে। এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ পেশীর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য এটা সেবনের পরে কম আছারের ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার শুধু আছাড় খাওয়ার ঝুঁকি কমায়ই না, এটা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের গতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণেও এদের মধ্যে আছাড় খাওয়ার প্রবণতা কম হতে পারে।
বার্ধক্যে আছাড় খাওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা এবং এটা অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে যা গুরুতর পরিণতি ডেকে আনে। এজন্য বয়স বেশী হলে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করে ঝুঁকি বাড়ানো ঠিক কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। তবে এখন গবেষকগণ মনে করছেন যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।   
তথ্যসূত্রঃ

Lipsitz LA, Habtemariam D, Gagnon M, Iloputaife I, Sorond F, Tchalla AE, et al. Reexamining the Effect of Antihypertensive Medications On Falls in Old Age. Hypertension. 2015 May 4, 2015.