শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Friday 4 August 2017

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ওষুধের জটিলতা




প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ওষুধের জটিলতা

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ওষুধের তালিকায় রয়েছে ওমেপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, র‍্যাবে প্রাজল, ল্যান্সোপ্রাজল, ডেক্সল্যান্সোপ্রাজল, এসেমোপ্রাজল ইত্যাদি। কয়েক বছর যাবৎ প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ ব্যবহার কতটুকু নিরাপদ - এ নিয়ে নানারকম বিতর্ক চলছে। একের পর এক গবেষণার ফলাফলে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহারের বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে এবং তা অনেকের মনেই ভীতির সঞ্চার করেছে। চিকিৎসকদের প্রতিনিয়ত এ সম্পর্কে রোগীদের নিকট থেকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অনেক রোগী প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছেঃ কিডনির ইন্টারস্টিসিয়াল প্রদাহ ও ক্রনিক কিডনির রোগ, ডিমেনসিয়া বা বুদ্ধিভ্রংশতা, অস্থি ক্ষয় এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা, হৃদরোগ হওয়ার বাড়তি সম্ভাবনা, অন্ত্রে ক্লস্ট্রিডিয়াল সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি, ফুসফুসে নিউমোনিয়া হওয়ার বাড়তি সম্ভাবনা, র‍্যাবডোমায়োলাইসিস বা মাংসপেশী গলে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্তস্বল্পতা হওয়ার প্রবণতা, হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি, পাকস্থলীর ভিতরের আবরণী কলা ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি। বলাবাহুল্য এত রকম জটিলতার ঝুঁকি নিয়ে কোন ওষুধ সেবন করা আসলেই চিন্তার বিষয়। এজন্য প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবন করা আসলে কতটুকু নিরাপদ কিংবা বিপজ্জনক তা সঠিক নির্ধারণ করা জরুরী হয়ে পড়েছিল।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে আসলেই এত রকম জটিলতা হয় কিনা এবং হলে তার সম্ভাবনা কতখানি, এ সকল প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে উক্ত গবেষণা পত্রে। এতে বলা হয়েছে যে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে যে সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ করা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে তা অতিরঞ্জিত। কারণ এসম্পর্কিত অধিকাংশ গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক (observational study)। পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত জটিলতাসমূহ আসলেই প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের জন্য হয়েছে কিনা তা শতভাগ নিশ্চিত করা সবক্ষেত্রে এখনও সম্ভব হয়নি। এজন্য আরও উন্নত ধরণের গবেষণার প্রয়োজন।

বলাবাহুল্য প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর প্রয়োজনীয় উপকারী ওষুধ। যাদের আসলেই এটা দরকার তাদের সঠিক নিম্নতম মাত্রায় সেবন করা উচিত এবং নির্ধারিত সময়ের পরে আর না সেবন করা উত্তম। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবনে যাদের উপকার হয়না, তাদের এটা সেবন না করা ভালো। এ পর্যায়ে সকলেই মণে করছেন বিনা প্রয়োজনে মুড়ি-মুড়কির মতো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।  

তথ্যসূত্রঃ

·      Michael F Vaezi, Yu-Xiao Yang, Colin W Howden. Complications of Proton Pump Inhibitor Therapy. Gastroenterology. July 2017; 153(1): 35-48.

No comments:

Post a Comment