সঙ্গীত শুধু বিনোদনের বিষয় নয়। সঙ্গীতের রোগ নিরাময় করার ক্ষমতাও আছে।
২০১১ সালে ৩২ টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ৩১৮১ জনের উপরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এখানে দেখা যায় সঙ্গীত দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ লাঘব করে, বিষণ্ণতা প্রশমন করে। এদের মধ্যে সাতটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সঙ্গীত ব্যথা উপশম করে এবং ৪ টি পর্যবেক্ষণে হৃদঘাত কমানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় সঙ্গীত জীবনের মান উন্নত করে।
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া যে কারও জন্য শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক উৎকণ্ঠার বিষয়। সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায় সঙ্গীতের ভূমিকা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে ৩০ টি পর্যবেক্ষণে ১৮৯১ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর সঙ্গীতের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এখানেও দেখা যায় সঙ্গীত রোগীদের উদ্বেগ প্রশমন করে, মুড ভালো করে এবং সার্বিকভাবে রোগীদের অবস্থা উন্নত করে। আমরা সকলেই জানি ক্যানসারের রোগীদের অনেক সময় অসম্ভব ব্যথা হয়। দুটি গুরুত্বপূর্ণ রিভিউয়ে দেখা যাচ্ছে গান ক্যানসারের ব্যথা উপশমে সক্ষম।
স্ট্রোকের পরে অনেক রোগী বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। সাধারণত প্রতি তিন জন স্ট্রোকের রোগীর মধ্যে অন্তত একজন উল্লেখযোগ্য বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। এটা স্ট্রোক নিরাময়ের পথে অন্তরায়। স্ট্রোকের পরে বিষণ্ণতা হলে রোগের জটিলতা বাড়ে, মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকগণ সব সময় আশা করেন যেন স্ট্রোকের পরে কারও বিষণ্ণতা না হয়। এজন্য নানারকম ওষুধ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। যেমন- সাইকো থেরাপি, আকুপাংচার, বৈদ্যুতিক শক, সঙ্গীত ইত্যাদি। সঙ্গীতের সাহায্যে স্ট্রোকের পরে বিষণ্ণতা লাঘবে ভালো উপকার পাওয়া গিয়েছে।
গর্ভবতী মহিলাদের ওপরেও সঙ্গীতের প্রভাব দেখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে সুমধুর সঙ্গীত গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গীত আনন্দ দেয়, সেজন্যই এমন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে না। গবেষকগণ মনে করছেন সঙ্গীত কোন কারণে আসলেই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু সঙ্গীত কিভাবে আমাদের সুস্থ করে তোলে? সঙ্গীতের মূল বিষয় শব্দ। আর শব্দের মূলে রয়েছে কম্পন। গবেষকগণ এখন বিভিন্ন ধরণের শব্দ কম্পন নিয়ে পরীক্ষা করছেন। কি ধরণের শব্দ কম্পন কতক্ষণ ব্যবহার করলে কেমন উপকার হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীতের শব্দ কম্পন শরীরে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এরই কোন কোনটি আমাদের জন্য উপকারী। তারা মনে করছেন অচিরেই কোন রোগের জন্য কি ধরণের সঙ্গীত কতক্ষণ, কত বার এবং কতদিন শোনা দরকার তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তখন চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রোগের জন্য প্রেসক্রিপশন আকারে সঙ্গীতের পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন।
তথ্যসূত্রঃ
1. Overview of Systematic Reviews. Evidence-based complementary and alternative medicine: eCAM. 2014;2014:170396. PubMed PMID: 24817897. Pubmed Central PMCID: PMC4003746.
2. Nabavi SF, Turner A, Dean OM, Sureda A, Nabavi SM. Post-Stroke Depression Therapy: Where are we now? Current neurovascular research. 2014 May 22. PubMed PMID: 24852795.
3. Zhang JM, Wang P, Yao JX, Zhao L, Davis MP, Walsh D, et al. Music interventions for psychological and physical outcomes in cancer: a systematic review and meta-analysis. Supportive care in cancer: official journal of the Multinational Association of Supportive Care in Cancer. 2012 Dec; 20(12):3043-53. PubMed PMID: 23052912.
4. Fritz TH, Ciupek M, Kirkland A, Ihme K, Guha A, Hoyer J, et al. Enhanced response to music in pregnancy. Psychophysiology. 2014 May 18. PubMed PMID: 24835575.
5. Bradt J, Dileo C, Grocke D, Magill L. Music interventions for improving psychological and physical outcomes in cancer patients. The Cochrane database of systematic reviews. 2011 (8):CD006911. PubMed PMID: 21833957.
No comments:
Post a Comment