পথে-ঘাটে কিংবা বাসে-লঞ্চে চলতে ফিরতে আমরা পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ নিয়ে নানারকম বিজ্ঞাপন দেখি কিংবা হকারদের বক্তৃতা শুনতে পাই। অনলাইনেও পুরুষের “বিশেষ অঙ্গ” দীর্ঘ করার জন্য কিংবা যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য নানারকম প্রচারণা দেখা যায়। এ সব ওষুধে আসলে কি থাকে এবং তা কতটুকু নিরাপদ?
সম্প্রতি ইতালির কয়েকজন গবেষক এ সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর অনেক রকম ওষুধ আছে সত্য; কিন্তু এদের অধিকাংশই মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমন কি ম্যানিয়া পর্যন্ত হতে পারে।এজন্য তারা পথে ঘাটে কিংবা অন লাইনে বিক্রি হওয়া এসব ওষুধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে চান। এসকল ওষুধের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যারা এধরনের ওষুধ সেবন করেন তাদের এমনিতেই মানসিক সমস্যা থাকে; আবার ওষুধ সেবনের ফলে তা আরও বেড়ে যায়। বিগত বছরগুলিতে যৌনক্ষমতাবর্ধক ওষুধ বিক্রির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এদের প্রতিটির গায়েই লেখা থাকে “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক” কিংবা “হার্বাল”। অতএব কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অধিকাংশ পুরুষ আরও লম্বা “বিশেষ অঙ্গ” এবং আরও বেশী সময় রমণের আশায় সহজেই এ সকল বাণিজ্যিক প্রচারণার ফাঁদে পড়ছে। এই ধরণের ভিত্তিহীন প্রচারণা জনস্বাস্থ্য এবং সুস্থ চিন্তাভাবনার পথে বিশাল অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
গবেষকদল বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১০৮ রকমের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধের বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে এসবের মধ্যে মূলত ৪ ধরণের ওষুধ থাকেঃ ইওহিম্বিন (yohimbine), ম্যাকা (maca), জিঙ্কো বিলোবা (ginkgo biloba) এবং হর্নি গোট উইড (horny goat weed )। এই ৪ রকমের ওষুধই আসক্তিসহ উদ্বেগ, প্যানিক, মুডের পরিবর্তন, মানসিক বিভ্রমজাতীয় মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইওহিম্বিন বিভিন্ন গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দাবী করা হয়েছে এটা ধ্বজ-ভঙ্গের জন্য কার্যকরী। আবার এ ওষুধ সেবন করলে ওজন কমে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইওহিম্বিনের অনেক রকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা সেবন করলে মানসিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়; পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা হতে পারে, হৃদঘাত বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
ম্যাকা (Lepidium meyenii) এক বিশেষ ধরণের গাছ থেকে সংগৃহীত ওষুধ। এর মূল উপাদান টেট্রাহাইড্রো-বিটা-কারবোলিন। দাবী করা হয় এটা যৌন শক্তি বাড়ায় এবং বন্ধাত্য রোধ করে। কিন্তু টেট্রাহাইড্রো-বিটা-কারবোলিন এমন একটি রাসায়নিক উপাদান যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং আসক্তি সৃষ্টি করে।
হর্নি গোট উইড সেবন করলে মানসিক উন্মত্ততা সৃষ্টি হয়; হৃদপিণ্ডের ছন্দ বিঘ্নিত হয় এবং ত্বকে নানারকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
জিঙ্কো বিলোবা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা সুস্থ মানুষের শরীরেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। এ ছাড়া এটা অন্যান্য ওষুধ যেমন অ্যালপ্রাজোলাম, সিটালোপ্রাম ইত্যাদি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমন কি মানসিক উন্মত্ততা সৃষ্টি করতে পারে।
এ চার রকম ওষুধ ছাড়া আরও পাওয়া গিয়েছে হরিণের শিংয়ের চামড়া। কিন্তু এটা সেবন করলে প্রকৃতপক্ষে শরীর ভেঙে যায় এবং নানারকম স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।
মজার বিষয় হচ্ছে এসকল ওষুধ বিক্রির ওপর প্রায় কোনরকম নিয়ন্ত্রণই নাই। যে কেউ যে কোন সময় ইচ্ছে করলেই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ওষুধ কিনতে পারে এবং সেবন করতে পারে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এসকল ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোন হিসেব নিকেশ নাই এবং সেটা নিয়ে কোন জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও নাই। অনেকেই জানেন না যে যৌনক্ষমতা বাড়ানোর “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হার্বাল” ওষুধের নামে তারা যা সেবন করছেন, সেগুলির মধ্যে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে এবং এসকল ওষুধও অন্যান্য অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এসকল ওষুধের কোন প্রকার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকার ফলে অনেক সময় এর মধ্যে আসলে কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিংবা আদৌ কোন ওষুধ আছে কিনা সে সম্পর্কেও কোন কিছু জানা যায় না।
তথ্যসূত্রঃ American Psychiatric Association's 2014 Annual Meeting. Abstract NR4-44. Presented May 4, 2014.
No comments:
Post a Comment