শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Wednesday 18 February 2015

রজঃনিবৃত্তির পরে ৭ বছর তাপঝলক

অর্ধেকের বেশী মহিলা মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির সাত বছর পরেও তাপ ঝলক অনুভব করতে পারেন এবং রাতে ঘামতে পারেন। সম্প্রতি JAMA Internal Medicine জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৪৯ জন মহিলার ওপর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের পর এটা জানানো হয়েছে।
   
দেখা যাচ্ছে মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ-উপসর্গ গড়ে ৭.৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ সকল লক্ষণ সর্বোচ্চ ১১.৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। যাদের মেনোপজ কম বয়সে হয় তাদের ক্ষেত্রে এটা ৯.৪ বছর পর্যন্ত ঘটতে দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ গড়ে ১০ বছর এবং জাপানী এবং চীনা মহিলাদের গড়ে যথাক্রমে ৪.৮ এবং ৫.৪ বছর স্থায়ী হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা ৬.৫ বছর স্থায়ী হয়।

সুতরাং মেনোপজের পরে দীর্ঘদিন যাবত এর আনুষঙ্গিক লক্ষণ উপসর্গ চলতে থাকলে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। মেনোপজের আনুষঙ্গিক লক্ষণ-উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এখন বিভিন্ন ধরণের ওষুধ রয়েছে। এক্ষেত্রে যে ব্যাপক গবেষণা চলছে তাতে ভবিষ্যতে আরও নানাবিধ অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

তথ্যসূত্রঃ
·         Avis NE, Crawford SL, Greendale G, et al. Duration of menopausal vasomotor symptoms over the menopause transition. JAMA Internal Medicine. 2015. Published online February 16, 2015.

·         Richard-Davis G, Manson JE. Vasomotor symptom duration in midlife women—research overturns dogma. JAMA Internal Medicine. 2015. Published online February 16, 2015.

Tuesday 17 February 2015

মস্তিস্কের যৌবন ধরে রাখে ধ্যান?

 আজকাল মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষয়তো আর রোধ করা যায় না। জীবনের প্রথম দুই দশকের পর থেকেই মস্তিষ্কের ওপর বয়সের ছাপ পড়তে থাকে। বয়স যতই বাড়তে থাকে, মস্তিষ্কের ক্ষয়ও ততই বাড়তে থাকে। মস্তিস্ককে আজীবন সতেজ রাখার জন্য তাই চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন প্রক্রিয়াই সফল প্রমাণিত হয় নি। তবে অনেকের ধারণা ছিল ধ্যান করলে হয়তো মস্তিষ্কের ওপর উপকারী প্রভাব পড়তে পারে। এবং এখন তা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। আসলেই ধ্যান করলে মস্তিষ্কের বয়সজনিত ক্ষয় কম হয়। নতুন একটি পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ধ্যান করেছেন তাদের মস্তিষ্কের ধূসর বস্তু বা গ্রে ম্যাটারের ক্ষয় তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে ধ্যানীদের মস্তিষ্কের এই কম ক্ষয় হওয়ার বিষয়টি বেশ ব্যাপক। গবেষকগণ প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কের ওপর ধ্যানের এমন সর্বব্যাপী প্রভাব আশা করেননি। মোট ১০০ জনের মস্তিষ্কের বিভিন্ন আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ কর্মটি সমাধা করা হয়েছে। মস্তিষ্কের ওপর ধ্যানের প্রভাব সম্পর্কে এ পর্যন্ত সম্পন্ন এটাই সত্যিকার অর্থে  বড় ধরণের এবং দীর্ঘ মেয়াদের আধুনিক পর্যবেক্ষণ।


তথ্যসূত্রঃ Luders E, Cherbuin N, Kurth F. Forever Young(er): Potential Age-defying Effects of Long-term Meditation on Gray Matter Atrophy. Frontiers in Psychology. 2015 2015-January-21;5. English.  

Tuesday 10 February 2015

অস্ট্রেলীয়দের যৌন জীবন

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের যৌন জীবনের একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বিগত ১০ বছরে অস্ট্রেলীয়দের জীবনে নিয়মিত যৌন মিলনের হার ২০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরীপ ১০ বছর আগে হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল অস্ট্রেলীয়রা সপ্তাহে ১.৮ বার যৌন মিলন করে থাকে। কিন্তু এবার ১৭,০০০ অংশগ্রহনকারীর উপর জরীপে দেখা যাচ্ছে তা সপ্তাহে ১.৪ বারে নেমে এসেছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহে ২ থেকে ৪ বার যৌন সম্পর্ক উপভোগ করার আশা ব্যক্ত করেছে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না।  
এবারের সমীক্ষার প্রধান জুলিয়েট রিখটার ৩০ বছর যাবত মানুষের যৌনসম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি মনে করছেন অস্ট্রেলীয়দের যৌন জীবন এমন মরুভুমি হয়ে যাওয়ার জন্য  ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন দায়ী। কারণ আজকাল অফিস আর বাসার মধ্যে সীমারেখা মুছে গিয়েছে। অনেকে বাসায় বসেও অফিসের মেইল চেক করছেন, জরুরী কাজ কর্ম সারছেন। আর এটা নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে দাম্পত্য জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে।  অবশ্য এক্ষেত্রে ব্রিটিশদের অবস্থাও খারাপ। তারা আরও কম যৌন মিলনের সুযোগ পাচ্ছে। ব্রিটিশরা ১৯৯০ সালে প্রতিমাসে গড়ে ৫ বার যৌন মিলনের সুযোগ পেত; ১০ বছর আগে তা কমে হয়েছিল সপ্তাহে একবার; বর্তমানে তা হয়েছে প্রতিমাসে ৩ বার। অর্থাৎ অস্ট্রেলীয়দের চেয়ে ব্রিটিশরা গড়ে প্রায় অর্ধেক সেক্স করার সুযোগ পাচ্ছে।
গবেষকগণ বলছেন আমেরিকা এবং ফ্রান্সেও একই প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।   
জাপানের অবস্থা আরও সঙ্গীন। তাদের বেডরুমে রীতিমতো খরা চলছে। বলা হচ্ছে জাপানে বিবাহিতদের ৪০ শতাংশ প্রতিমাসে ১ বার যৌন সম্পর্ক করার সুযোগ পায়।
অবশ্য জুলিয়েট রিখটার মনে করছেন সেক্সই তো আর জীবনের সব কিছু নয়। অস্ট্রেলীয় দম্পতিদের মনের মিল খুব বেশী। আর তাদের যৌনজীবনে এখন বৈচিত্র্য অনেক বেশী। এবারের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আগের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশী মহিলা এবং ৮ শতাংশ বেশী পুরুষ ওরাল সেক্স করছে। গড়ে পুরুষদের জীবনে ১৮ জন মহিলা এবং মেয়েদের জীবনে ৮ জন পুরুষ সঙ্গী এসেছে। সমকামী পুরুষেরা গড়ে ৯৬ জন সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে; আর সমকামী মহিলারা গড়ে ৬ জনের সঙ্গ লাভ করেছে।  যৌন জীবনে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আগের চেয়ে কমেছে। মহিলারা আজকাল প্রায় পুরুষদের মতোই বহুচারিনী হয়ে উঠছে।  

Saturday 7 February 2015

প্রতি দুইজনে একজনের ক্যান্সার

নতুন এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিলেতে ১৯৬০ সালে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের অন্তত প্রতি দুইজনে একজনের জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯৩০ সালে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের চেয়ে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশী। মোট শনাক্ত করা ক্যানসারের ৬০ শতাংশ ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের হয়েছে। বেশীদিন বাঁচলে ক্যানসার বেশী হবে সেটা নিয়ে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই। তারপরেও ধূমপান নিবারণ, শারীরিক পরিশ্রম, মদ কম পান করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।  প্রতি ৫ টির মধ্যে ২ টি ক্যানসার জীবনাচরণ বদলে প্রতিরোধ করা সম্ভব।


তথ্যসূত্রঃ Ahmad AS, Ormiston-Smith N, Sasieni PD. Trends in the lifetime risk of developing cancer in Great Britain: comparison of risk for those born from 1930 to 1960. Br J Cancer. 2015. Published online February 3, 2015.