শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Saturday 30 April 2016

ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম

বলা হয় “একটা মন ভাঙা আর উপাসনালয় ভাঙা একই কথা”। সিনেমা কিংবা সাহিত্যেব্রোকেন হার্টরীতিমত একটি স্থায়ী আসন পেয়ে গিয়েছেব্রোকেন হার্টবললেই আমাদের চোখের সামনে দেবদাসের মতো অনেক রোমান্টিক মুভির চিত্র ভেসে ওঠে কিন্তু ধীরে ধীরে চিকিৎসা শাস্ত্রেওব্রোকেন হার্টএকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিচ্ছে যেকোনো মানসিক বিপর্যয়ের মুখে আসলেই অনেক সময় অনেকে হৃদয় ভেঙ্গে যায়বা হার্ট ব্রেকহয় কিন্তু এর ফলে কি আসলে কেউ মারা যেতে পারে?  
এর উত্তর দেওয়া সহজ নয়


এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে একটু কিছু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে গত দুই দশক যাবত দেখা যাচ্ছে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হচ্ছে হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের একধরণের ছন্দ পতন এর ফলে হৃদপিণ্ডের উপরের প্রকোষ্ঠ বা অলিন্দ ছন্দবিহীন অনিয়মিত গতিতে স্পন্দিত হতে থাকে পশ্চিমা দেশ গুলোতে একটু বয়স হলেই মানুষের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়  

বলাবাহুল্য হৃদপিণ্ডের ছন্দপতন মানেই বিপদ যাদের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হয় তাদের স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশী; আর মরে যাওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ ইউরোপে প্রতি বছর সোয়া লাখ থেকে আড়াই লাখ মানুষের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ধরা পড়ে ধারণা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ শুধু ইউরোপেই ১৪ থেকে ১৭ মিলিয়ন মানুষের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১০ সালে পাঁচ মিলিয়নের বেশী মানুষের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ তা বেড়ে ১২ মিলিয়নের ওপরে যাবে অনুমান করা যায় এর ফলে কি ব্যাপক সংখ্যক মানুষ স্ট্রোক এবং মৃত্যুর ঝুঁকির মুখে থাকবে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এদের অধিকাংশেরই অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না এর পিছনে বংশগতি এবং পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে কারও অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন আচমকা শুরু হয়; কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা চলতেই থাকে বা ক্রনিক রূপ ধারন করে নানাধরণের অসুখবিসুখ, ক্লান্তি, মদ-সিগারেট, চা-কফি কিংবা মানসিক উদ্বেগের কারণে কারও হৃদপিন্ডে ক্রনিক অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
 
প্রশ্ন হচ্ছে শোক কিংবা বিচ্ছেদের সঙ্গে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন এবং ব্রোকেন হার্টের সম্পর্ক কি?

দেখা যাচ্ছে এদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ডেনমার্কের সাম্প্রতিক  একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মারা গেলে কিংবা দীর্ঘদিনের সঙ্গীদের একজন মারা গেলে অপরজনের মধ্যে শোকের কারণে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। এই অবস্থা অন্তত মৃত্যুর পরবর্তী একবছর পর্যন্ত থাকে।

১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কের হাসপাতালের প্রায় নব্বই হাজার রোগীর নথিপত্র ঘেঁটে দেখা হয়েছে। তাতে দেখা যায় ওই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি পাঁচ জনের অন্তত একজন তার সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনীকে হারিয়েছে। তুলনা করার জন্য ওই সময়ে হাসপাতালের বাইরের প্রায় নয় লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দম্পতিদের একজনের মৃত্যুর পরবর্তী একমাসের মধ্যে অন্যজনের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার আশংকা আসলেই অনেক বেড়ে যায়। সাধারনত পার্টনারের মৃত্যুর পরের দুই সপ্তাহে এ সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে এক বছর লেগে যায়। যাদের বয়স ষাটের ওপরে তাদের মধ্যে এটার সম্ভাবনা আরও বেশী। এর আগে এত বেশী মানুষের ওপরে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন নিয়ে এত নির্ভরযোগ্য পর্যবেক্ষণ আর কখনও করা হয়নি। তাই এই ফলাফলকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এবং ব্রোকেন হার্টের কারণে মৃত্যুর সঙ্গে এটা সম্পর্কিত বিবেচনা করা হচ্ছে। 
  
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্রোকেন হার্টের প্রসঙ্গ এসেছে বিগত ২৫ বছর যাবত।ডাক্তারি ভাষায় এটাকে বলা হয় “stress­induced cardiomyopathy বা Takotsubo cardiomyopathy১৯৯০ সালে জাপানে প্রথম এটা শনাক্ত করা হয়েছিল। জাপানী ভাষায় অক্টোপাস ধরার পাত্রকে “টাকোতসুবো” বলা হয়। অনেকটা আমাদের পরিচিত দইয়ের খুঁটি বা পাত্রের মতো।  ইকোকার্ডিওগ্রাম করলে ব্রোকেন হার্টের রোগীর হৃদপিণ্ড অনেকটা “টাকোতসুবোর” মতই দেখা যায়। এজন্য এটার নাম দেওয়া হয়েছিল “টাকোতসুবো সিনড্রোম”। প্রথমে জাপানে শনাক্ত হলেও এখন দুনিয়াজুড়ে সব জায়গাতেই ব্রোকেন হার্ট বা “টাকোতসুবো সিন্ড্রোমের” রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সাধারনত প্রিয়জনের মৃত্যুর পরে সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী সহসা হার্ট অ্যাটাকের মতোই তীব্র বুকে ব্যাথা, শ্বাস কষ্ট এবং অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে। অনেকের রক্ত পরীক্ষা করলে হার্ট অ্যাটাকের প্রমাণও পাওয়া যায়। একমাত্র ইকো এবং করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করলেই এটাকে সাধারণ হার্ট অ্যাটাক থেকে পৃথক করা সম্ভব হয়। প্রকৃতপক্ষে এখন দেখা যাচ্ছে “টাকোতসুবো সিন্ড্রোমের” হার একেবারে কম নয়; আর ব্রোকেন হার্টের রোগীদের প্রতি দশ জনের নয়জনই মহিলা। তীব্র মানসিক উদ্বেগ, বিচ্ছেদ যন্ত্রণা কিংবা গুরুতর বিপর্যয়ের পরে ব্রোকেন হার্ট হয় সত্য; কিন্তু এর আসল কারণ কি কিংবা কেন এটা হচ্ছে তা এখনও পরিস্কার নয়। তবে এধরণের মানসিক পরিস্থিতিতে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত হয়। এটা কোনোভাবে হৃদপেশীকে দুর্বল করে দেওয়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন।
       
এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা না বললেই নয়। শুধু তীব্র শোক কিংবা বিচ্ছেদের ফলে যে ব্রোকেন হার্ট হয়, তা ঠিক নয়। অতিরিক্ত উৎফুল্ল কিংবা আনন্দের ফলেও কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাকে বলা যায় “হ্যাপি হার্ট সিনড্রোম”। যেমন দেখা যায় নাতি-নাতনির জন্মের আনন্দের পরে কিংবা তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় নিজের দল বিজয়ী হলে অনেকের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।



দীর্ঘ মেয়াদে ব্রোকেন হার্টের পরিণতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা এখনও তেমন স্বচ্ছ নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে শনাক্ত হলে “টাকোতসুবো সিন্ড্রোম” চিকিৎসার সাহায্যে নিরাময় করা সম্ভব।যাহোক শোক-বিচ্ছেদ বেদনায় আমাদের মন এবং হৃদপিণ্ড আক্ষরিক অর্থেই ভাঙতে পারে এবং অনেক সময় তা আসলেই বিপজ্জনক হতে পারে।   

Wednesday 27 April 2016

অস্ট্রেলিয়ার মাতাল টিয়ে পাখীরা


অস্ট্রেলিয়ানদের দুটি বিষয়ে খুবই সুনাম রয়েছে মদ খাওয়ার প্রতি অসম্ভব আসক্তি এবং  যেকোনো কিছু নিয়ে বাজি ধরা শোনা যায় ইংল্যান্ড থেকে প্রথম যে জাহাজ অস্ট্রেলিয়া এসেছিল তার যাত্রীরা সাগর পথে সারাক্ষণ বাজি এবং মদ নিয়েই মত্ত ছিল এখনও এর প্রভাব অস্ট্রেলিয়ার সর্বত্র দেখা যায় আর কোন দেশে ঘোড় দৌড় নিয়ে এখনও এত মাতামাতি হয় কিনা সন্দেহ এখন দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পাখীরাও মাতাল হয়ে যাচ্ছে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে রেইন বো লরিকিট পাখী রেইন বো লরিকিট এক প্রজাতির খুবই রঙিন টিয়ে পাখী রেইন বো লরিকিট মাতাল হলে মানুষের মতই বেসামাল আচরণ করে, এমন কি গাছের ডাল থেকে ধপাস করে নীচে পড়েও যায়


লরিকিট টিয়ের মাতাল হওয়ার বিষয়টি অবশ্য নতুন কিছু নয় সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত মাতাল টিয়েদের দেখা মেলে রেইন বো লরিকিট ঝাঁক ধরে চলে মাতাল হলে রেইন বো লরিকিট খুব চিৎকার ডাকাডাকি করে এবং জানালার কাঁচে তার প্রতিবিম্ব দেখলে ঠোকরা-ঠুকরি করতে থাকে পাখীর চিকিৎসকরা বলছেন মাতাল রেইন বো লরিকিটের খুব মাথা ব্যাথা হয় এবং কয়েকদিন যাবত তাদের হ্যাং ওভার চলতে পারে
    
মাতাল টিয়ের চিকিৎসা কি করা হয়?

টিয়ের মাতলামির চিকিৎসা খুবই সহজ এসময় এদের সাধারনত মিষ্টি পরিজ এবং তাজা ফল খেতে দেওয়া হয়


তবে মানুষের মতই পাখীর মাতাল হওয়ার বিষয়টি সবসময় হেলাফেলার বিষয় নয় অনেক মাতাল টিয়ে পাখীর সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লাগে এমন কি এসময়ে অনেক পাখী অজ্ঞাত কারণে মরেও যায়।
এবছর এখন পর্যন্ত কয়েকশ মাতাল রেইন বো লরিকিট টিয়ের চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু কেন এরা এমন মাতাল হয়ে যায় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনেকে বলেন গাঁজানো পাকা ফলের রস খাওয়ার কারণে এমন হয়; আবার কেউ বলেন এটা কোন ভাইরাসজনিত রোগ। পাখীর ডাক্তারগণ এটাকে  “drop lorry” বা “drunken lorikeet disease” বলে থাকেন। কারণ যাই হোক রেইন বো লরিকিটদের এই রোগ সহসা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।


তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফী 

Sunday 24 April 2016

একটি দুর্ঘটনার কাহিনী

অস্ট্রেলিয়ার একটি ছোট রাজ্য ভিক্টোরিয়া ভিক্টোরিয়ার মাঝে প্রায় সমতল বরেন্দ্রভূমির মতো লাল জমিনের বিশাল এক জনপদের নাম জিপসল্যান্ড বিস্তীর্ণ মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজ কোমল ঘাস আর ঘাস সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিনমান চড়ে বেড়ায় বিশাল বপুর গরু এবং ভেড়া ওদের ঠিকঠাক মতো দেখে রাখার জন্য চোখে পড়বে দুয়েকটা কিম্ভুত চেহারার কুকুর আর কোথাও কোথাও রঙিন কার্পেটের মতো বিছানো নানারকম ফসলের মাঠ মাইলের পর মাইল গেলেও অনেক সময় একজন মানুষ চোখে পড়ে না

এমন এক বিরল জনপদে অনেক দিন আগে গ্রীস থেকে বাইশ বছরের এক টগবগে তরুণ অ্যাডাম হিক কেন এসেছিল তা আসলে অনুসন্ধানের বিষয় তবে জিপসল্যান্ড তখনি একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল বিশেষ করে দুধ-পনীর এবং দুগ্ধজাত আরও নানারকম পণ্যের পসরা এদিকের হাটে হাটে অচিরেই অ্যাডাম অনেক গরু-ভেড়াসহ বিশাল জমিনের মালিক হয়ে গেল সারাদিনের পরিশ্রমের পরে সপ্তাহান্তে মফঃস্বলের ছোট শহর ট্রাফালগারের বাজারের একটি রেস্টুরেন্ট কাম বারে বসে কয়েক গ্লাস মদ পান করা ছিল অ্যাডামের বিনোদন। বারের পাশেই ছোট একটু মঞ্চ ছিল। ওখানে শুক্রবার-শনিবার মাঝরাত পর্যন্ত নাচগান হতো। গান বলতে গিটারে কান্ট্রি মিউজিক। তার সঙ্গে মিল রেখে নাচ। তখন নাচ-গান করার মতো মহিলা জিপসল্যান্ডে আসলে তেমন ছিল না। এক সময় অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্রিটেনের অনেক চাকরানি-ধোপীদের ছোট-খাটো চুরি চামারির অপরাধে গুরুতর শাস্তি হিসেবে দ্বীপান্তর দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হতো। তারা এসে প্রথমে ভিড়ত তাসমানিয়ার গারদে। সেখান থেকে ভাল আচরণের পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে চাকরী কিংবা জমি দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে জিপসল্যান্ডের এই ছোট রেস্টুরেন্টটিতেও কয়েকটি মেয়ে এসেছিল। এদের ভেতরে ব্লন্ড চুলের এক নীল নয়না সুন্দরী  স্পেনের মেয়ে রোজা যেন কিভাবে এসে জুটেছিল।

রোজা সুন্দরী, আবার ভাল গান গায় এবং নাচে। তাই অনেকের নজর ছিল তার দিকে। কিন্তু রোজা কাউকে তখনও তেমন কেয়ার করতো না। গ্রীসের পুরুষেরা দেখতে সুন্দর।অ্যাডাম হিকের চেহারাও দেখতে দেবতার মতোকিন্তু সে কথা বলত কম, নাচের আসরেও তাকে তেমন দেখা যেত না। তবে অ্যাডাম যখন বারে আসতো স্প্যানিস মেয়ে রোজাকেই মদের গ্লাস হাতে তার দিকে যেতে দেখা যেতএছাড়া আর কেউ কিছু তাদের সম্পর্কে বলতে পারে না। এমনভাবে কোন এক বৃষ্টি ভেজা রাতে ওদের দুজনকে নাচের আসরে দেখা গেলবৃষ্টির কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে সেদিন নাচের তেমন কেউ ছিল না। অন্যদিনের চেয়ে সেদিন তারা দুজনেই মনে হয় একটু বেশীই পান করে ফেলেছিল। কারণ নাচের শেষে দেখা গেল কঠিন মেয়ে রোজা হিকের স্কন্ধে মাথা রেখে আসলে ঘুমিয়ে পড়েছে এবং নিরুপায় অ্যাডাম তাকে কোলে করে নিয়ে নিজের গাড়ীতে তুলছে।

পরদিন দুপুরে রোজার যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে নিজেকে অ্যাডামের বাসার শয্যায় আবিস্কার করলেও সে খুব যে বিব্রত হয়েছে তা মনে হলোনাএরপর আসলে দীর্ঘ ঊনষাট বছর সেটাই হয়ে গেল তার নিজের শয্যা। আর পাশের দুটি কক্ষে একে একে পাতা হয়েছে তাদের দুই কন্যা এবং এক পুত্রের শয্যা। কন্যা দুটি বড় হয়ে বিবাহসূত্রে অন্যত্র চলে গিয়েছে। সঙ্গে আছে একমাত্র পুত্র গ্রাহাম।
ঊনষাট বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষে প্যানক্রিয়াসের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্ষান্ত দিয়ে রোজা যেদিন ওপারে চলে যায় তার পরের সপ্তাহ থেকে আবার অ্যাডামকে সেই পুরনো রেস্টুরেন্ট কাম বারটিতে দেখা যেত। অবশ্য তার এখন বয়স হয়েছে। কিন্তু সে মোটামুটি সুস্থ জীবনই যাপন করতো। একমাত্র ছেলে গ্রাহাম স্থানীয় একটি আইটি কোম্পানিতে চাকরী করে। সে বিয়ে শাদী না করায় বাড়ীতে শুধু বাপ বেটা দুজনে থাকতো। গ্রাহাম সকাল বেলা অফিসে চলে গেলে অ্যাডাম ট্রাক্টর নিয়ে মাঠের দিকে বের হয়ে পড়তো। গ্রাহাম তাকে প্রতিদিনই মানা করতো। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই অ্যাডাম ছিল কাজের মানুষ। আর এজন্যই তার আজ এত বিশাল সহায়সম্পত্তি। অবশ্য পয়মন্ত রোজার কারণে এত দীর্ঘ সময় এটা তার পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তাই রোজার মৃত্যুর পরে অ্যাডামকে একা একা বাড়ীতে খুব কমই দেখা যেত। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা সময়ে অসময়ে বিরান বিশাল ফসলের মাঠে কি হয় না হয় এর জন্য  গ্রাহামের চিন্তার অন্ত ছিল না। তাই ট্রাক্টর নিয়ে বের হলেও গ্রাহাম অন্তত দুই তিনবার ফোন করে হিকের খবর নিত।

সেদিন সকালেও গ্রাহাম যথারীতি অফিসে বের হয়ে গিয়েছে। আর অ্যাডাম ধীরেসুস্থে তার ট্রাক্টর নিয়ে মাঠের দিকে। আসলে তার সমস্ত জমি একটি সমবায়ের লোকজনই আজকাল চাষবাস করে। কিন্তু সময় কাটানোর জন্য অ্যাডাম ট্রাক্টর নিয়ে এটা সেটা করতো। সেদিনও তাই করছিল। মাঠের শেষপ্রান্তে একটি উঁচু টিলার মতো আছে। অনেকদিন ট্রাক্টর চালানোর অভ্যাস অ্যাডামেরওই টিলার ওপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে যেতে সে বিশেষ আনন্দ পেত। আজও তাই যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন যেন ট্রাক্টরের চাকা একটি পাথরের ওপর উঠে গেল এবং তাল সামলাতে না পেরে ওটা একদিকে কাত হয়ে গেল অ্যাডাম ব্রেক করার আগেই তা উলটে টিলার ঢালে পড়ে গেল আগে হলে অ্যাডাম হয়তো সামলে নিত কিন্তু আজ সে সোজা ট্রাক্টরের নীচে পড়ে গেল বৃদ্ধ বয়সে অ্যাডাম আর ট্র্যাক্টরের ভার সইতে পারলো না উলটে যাওয়ার ফলে ট্রাক্টরের বিশাল দু চাকা ঊর্ধ্ব পানে চরকির মতো ঘুরতে থাকলো আর নীচে চাপা পড়ে অ্যাডাম ক্ষীণস্বরেহেল্প হেল্পবলে চিৎকার করলেও বিস্তীর্ণ শূন্য মাঠে সে ডাক কারও কানে গেল না

অফিসে গ্রাহাম সেদিন একটু বেশী কাজের ভিড়ে ছিল অন্যদিন মাঝেমধ্যেই সে ফোন করতো আজ লাঞ্চ ব্রেকে খেতে বসে যখন ফোন করলো তখন অপর দিকে অ্যাডামের কোন গলা শোনা গেল না গ্রাহাম আবার ফোন করলো রিং বাজছে কিন্তু কেউ ধরছে না কয়েকবার ফোন করার পরেও যখন অ্যাডাম ধরল না, তখন সে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো দেরী না করে বাসার দিকে গাড়ী নিয়ে রওয়ানা হল কিন্তু বাসায় তখনও কেউ নেই এদিক খুঁজে দেখতে পেলো বাসার সামনে ট্রাক্টরটি নেই তার মানে অ্যাডাম নিশ্চয় ট্রাক্টর নিয়ে বের হয়েছে সে এবার মাঠের দিকে রওয়ানা হল কিন্তু মাঠ পুরোই ফাঁকা হঠাৎ দেখতে পেলো দূরে টিলার পিছনে ট্রাক্টরের চাকা ওপর দিকে উলটে আছে সে দৌড় দিয়ে কাছে যেতেই চোখে পড়লো ট্রাক্টরের নীচে স্থির অ্যাডামের দেহ ট্রাক্টরের তেলের ট্যাংক থেকে তেল গড়িয়ে পড়ছে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে মনে হয় অনেক আগেই চাকাগুলোও স্থির

(স্থান-কাল-পাত্র-পাত্রীর নাম পরিবর্তিত)            

Sunday, 24 April 2016 

Thursday 7 April 2016

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১৬

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ডায়াবেটিস-Halt the rise, beat diabetesশারীরিক পরিশ্রম করলে এবং খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকলেই ডায়াবেটিসকে পরাস্ত করা যায়।

·         ৩৫০ মিলিয়ন
দুনিয়াজুড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ এখন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। আগামী ২০ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

·         .৫ মিলিয়ন
২০১২ সালে সরাসরি ডায়াবেটিসের কারণে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছে। এদের ৮০% মৃত্যু ঘটেছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। 

·         ৯০%
মোট ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০%-এর বেশী টাইপ-২ ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত। ইদানীং শিশুদেরও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে।
  

ডায়াবেটিস সম্পর্কে ১০টি তথ্য

) দুনিয়াজুড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ এখন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। আগামী ২০ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগ এভাবে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মূলত দুটি কারণেঃ শরীরের ওজন বাড়া বা মেদ-ভুঁড়ি হওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম না করে অলস জীবন যাপন করা। 
২) অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর ৭ নম্বর প্রধান কারণ হবে ডায়াবেটিস মেলিটাস। আগামী ১০ বছরে ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুর হার ৫০% বাড়বে।
৩) ডায়াবেটিস মেলিটাস মূলত দুই ধরণেরঃ টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয় না। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা ঠিক মতো কাজ করতে পারে না।
৪) তৃতীয় আরেক ধরণের ডায়াবেটিস গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational diabetes) নামে পরিচিত। এর ফলে গর্ভে সন্তান থাকাকালে মায়েদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কারণে মায়েদের গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন নানারকম জটিলতা হতে পারে। পরবর্তীতে তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫) টাইপ-১ এর চেয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ অনেকগুণ বেশী।পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০ শতাংশেরও বেশী টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। আগে শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ খুবই কম ছিল। কিন্তু এখন এর প্রকোপ বেড়েছে। ইদানীং শিশু-কিশোরদের মধ্যে নতুন শনাক্ত ডায়াবেটিসের অর্ধেকের বেশীই টাইপ-২ ডায়াবেটিস।    
৬) অধিকাংশ দেশে অল্প বয়সে ক্রনিক রোগ এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীদের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ রক্তনালী এবং হৃদরোগের কারণে মারা যায়।  
৭) ২০১২ সালে সরাসরি ডায়াবেটিস রোগের কারণে ১.৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
৮) ডায়াবেটিস রোগের কারণে যত  মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৮০ শতাংশই ঘটে কম আয় এবং মধ্যম আয়ের দেশসমূহে। উন্নত দেশের অধিকাংশ মানুষ চাকরী থেকে অবসর গ্রহণের পরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের মানুষ সাধারনত ৩৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
৯) অন্ধত্ব, অ্যাম্পুটেশন (Amputation) এবং কিডনি বিকলতার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায়, স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার না করতে পারার কারণে ডায়াবেটিসের ফলে ব্যাপকহারে অন্ধত্ব, অ্যাম্পুটেশন এবং কিডনি বিকলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

১০) টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারি মাত্রার শারীরিক ব্যায়াম করলে এবং খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়; তবে চিকিৎসার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়