জাকিঃ হ্যালো।
তুবাঃ হ্যালো, কে বলছেন?
জাকিঃ আমার নাম জাকি। আমি আপনার সঙ্গেই পড়ি।
তুবাঃ তাই, কিন্তু কোনদিন দেখেছি কিংবা নাম শুনেছি বলে মনে পড়ছে না তো।
জাকিঃ হ্যাঁ, আমি নতুন এসেছি। কিন্তু সেদিন ক্লাসে আপনি আমার পেন ধার নিয়ে কিছু একটা লিখছিলেন। আমার অবশ্য আপনাকে পেন দিতে পেরে খুব ভাল লাগছিল।
তুবাঃ হা হা । তাই নাকি? তা আমার ফোন নাম্বার কিভাবে পেলেন?
জাকিঃ এটা আমার জন্য কোন ব্যাপার নয়। সবকিছু যোগাড় করার আমার নিজস্ব উপায় আছে।
তুবাঃ তাই নাকি। আপনি আসলে কেন ফোন করেছেন?
জাকিঃ আপনার সঙ্গে আলাপ করার জন্য।
তুবাঃ কি বিষয়ে আলাপ করতে চান?
জাকিঃ বলতে দ্বিধা নেই আমার আপনাকে খুব ভাল লেগেছে।
তুবাঃ কিন্তু আপনি তো আমাকে ঠিকমত চিনেনই না।
জাকিঃ তা ঠিক। কিন্তু আমার জাস্ট মনে হয়েছে। আমার আপনাকে ভাল লাগছে। হয়ত আমার ভুল হতে পারে। একদিন কি আপনার সঙ্গে বসে কফি খাওয়া যাবে?
তুবাঃ অবাক ব্যাপার। আপনাকে আমি চিনিনা, আপনিও আমাকে তেমন চিনেন না। আপনার সঙ্গে আমি খামাখা কফি খেতে যাব কেন?
জাকিঃ সেটা সত্য। কিন্তু আমি বিষয়টা পরিষ্কার করে বলি। আমি সজ্জন ছেলে। সবাই বলে আমার সেন্স অব হিউমার খুব ভাল। আমি সুস্বাদু পিজা বানাতে পারি। আমি বাবা মায়ের খুব আদরের।
তুবাঃ আপনার অন্য ভাইবোন আপনাকে ঈর্ষা করে না?
জাকিঃ আমি তো একমাত্র সন্তান। যাহোক আমি গর্ব করতে চাই না। কিন্তু আমি ভাল গিটার বাজাতে পারি। আপনার মন জয় করার জন্য এগুলোই কি যথেষ্ট না?
তুবাঃ হা হা । আপনার সেন্স অব হিউমার আসলেই ভাল।
জাকিঃ তাহলে আমি চেষ্টা শুরু করি। আমি কিন্তু সবচেয়ে ভাল কফির দোকান কোনটা জানি।
তুবাঃ জিমির দোকানের কথা বলছেন?
জাকিঃ হ্যাঁ অবশ্যই। আপনি যদি সাবান গোলা পানির মত তরল বস্তুকে কফি মনে করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
তুবাঃ তাহলে কোনটা?
জাকিঃ সবচেয়ে ভাল হচ্ছে রিভার ভিউ।
তুবাঃ কিন্তু ওদের কফি তো পোড়া তেতো।
জাকিঃ এটা কি আমাদের প্রথম ঝগড়া? আমার খুব মজা লাগছে।
তুবাঃ হা হা।
জাকিঃ রিভার ভিউয়ের কফি আসলেই ভালো। তবে আপনি যেটার কথা বলছেন আমি সেটার কথা বলছি না। এই রিভার ভিউ আসলে শহর থেকে একটু বাইরে। আমার খাওয়া কফির মধ্যে এ পর্যন্ত ওটাই সেরা।
তুবাঃ ঠিক আছে। ভালো কথা।
জাকিঃ আসেন এরকম একটা ঝগড়ার পরে পরিবেশটা একটু শান্ত করা যাক। একটা খেলা করা যাক।
তুবাঃ কি খেলা?
জাকিঃ বলেন তো দেখি আমার সম্পর্কে কোনটি সত্য নয়? আমাকে হাঙর কামড় দিয়েছে। আমার চোখের রং নীল। আমার বাবা নভোচারী।
তুবাঃ হুম। আমার মনে হয় আপনার বাবা নভোচারী নয়। অবশ্য আপনাকে হাঙর কামড় দেওয়ার সম্ভাবনাও কম।
জাকিঃ গোল্লা। পুরোই রসগোল্লা। দেখেছেন আপনারা মেয়েরা ছেলেদের চোখের দিকে কখনও খেয়ালই করেন না। আমার চোখ আসলে কাজল কালো।
তুবাঃ হা হা। তার মানে হাঙর আপনাকে কামড় দিয়েছিল?
জাকিঃ ঠিক তাই। আমি বাবার সঙ্গে একদিন সাগরে সাঁতার কাটছিলাম। তখন এক বিশাল হাঙর আমাকে তাড়া করেছিল। আমি বেচারাকে মানা করেছিলাম। দেখি আমার দিকে তেড়ে আসছেই। কি আর করা দিলাম হাঙরের নাকে এক প্রচণ্ড ঘুষি। সেই ঘুষি খেয়ে হাঙর কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল।
তুবাঃ হা হা । আপনি বানিয়ে বানিয়ে ভালোই বলতে পারেন।
জাকিঃ হা হা । আসল ঘটনা এত বীরত্বের না। আমার দিকে একটা হাঙর তেড়ে আসছিল বটে। তা দেখতে পেয়েই আমি যত জোরে পারি সাঁতার দিতে শুরু করি। তারপর পানি থেকে উঠেই দিলাম ভোঁ দৌড়। অবশ্য হাঙর আমার সাঁতরানোর বোর্ডটা কামড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছিল।
তুবাঃ ও মা গো। কি ভয়ংকর ব্যাপার।
জাকিঃ হ্যাঁ আসলেই ভয়ংকর। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আপনি কখনও এরকম ভয় পান নি?
তুবাঃ আমি গত বছর গাড়ী অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম। আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল আর আমার সঙ্গের বান্ধবীর নাকের হাড় ভেঙেছিল। অল্পের জন্য আমরা জানে বেঁচে গিয়েছি।
জাকিঃ বুঝতে পারছি। খুব ভয় পেয়েছিলেন। আপনি গাড়ী ড্রাইভ করছিলেন?
তুবাঃ হ্যাঁ। আমি ড্রাইভ করছিলাম। কিন্তু দোষ ছিল উলটো দিক থেকে আসা গাড়ীটার।
জাকিঃ খুবই দুঃখজনক। এরকম একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আপনার জন্য মানানসই না।
তুবাঃ না এখন আমি ঠিক আছি। কিন্তু আপনার বাবা তাহলে নভোচারী?
জাকিঃ হ্যাঁ। কিন্তু আমি আজ আমার বাবাকে নিয়ে আপনার সঙ্গে গল্প করব না। আপনার সঙ্গে কফি খাওয়ার দিন এসব নিয়ে গল্প হবে।
তুবাঃ ঠিক আছে।
জাকিঃ তাহলে কবে আমাদের দেখা হচ্ছে?
তুবাঃ একটু ভেবে বলব।
জাকিঃ না না । ভাবাভাবির কিছু নেই। আমাকে এত সাসপেন্সের ভেতরে রাখবেন না। আমার হার্ট খুব দুর্বল। আমাকে নিয়ে বেশী খেলবেন না।
তুবাঃ আচ্ছা। যাবো।
জাকিঃ সত্যি? মানে আমি বলতে চাচ্ছি আপনি যাবো বলেছেন। যাবো মানে যাবো। পরে যেন মত বদল করবেন না। আর আমি বলতে চাই, আপনি সত্যি দারুণ।
তুবাঃ আপনি একটু পাগল গোছের। ঠিক না?
জাকিঃ আমরা সবাই কি একটু একটু পাগল না? যাহোক সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবারে দেখা হচ্ছে।
তুবাঃ সব ঠিক থাকবে না কেন?
জাকিঃ আমি কিন্তু আপনার চোখের রঙ সেদিন ভালো করে দেখবো।
তুবাঃ আপনি আসলেই একটা পাগল।
জাকিঃ বেশী তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে না কি?
তুবাঃ হা হা।
জাকিঃ ঠিক আছে শুক্রবারে বিকেলে দেখা হবে।
তুবা শুক্রবারে রিভার ভিউয়ে গিয়েছিল। নদীর পাড়ে এটি একটু নির্জন এলাকায়। ক্যাফের বাইরে একটি বেঞ্চে সে বসেছিল। হঠাৎ তার মনে হল কেউ একজন এসে তার পাশে বসলো। কিন্তু আশেপাশে কাউকে সে দেখতে পেল না। শুধু শুনতে পেল একজন তাকে বলছেঃ ভয় পাবেন না। আমি জাকি। কফির অর্ডার দিয়ে এসেছি। এখনই নিয়ে আসবে।
কিছুক্ষণ পরে ক্যাফের ছেলেটি দুকাপ কফি হাতে এসে দেখতে পেল বেঞ্চের ওপরে তুবা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।