সম্প্রতি আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে ক্যানসার রোগীদের জীবন মানের (Quality of life) ওপরে আধ্যাত্মিকতা এবং ধার্মিকতার প্রভাব নিয়ে চমৎকার একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপিত হয়েছে।
আমরা সবাই জানি কারও ক্যানসার রোগ ধরা পড়া একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। একমাত্র ভুক্তভোগী ব্যক্তি ছাড়া এর ভয়াবহতা অন্য কারও পক্ষে আসলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। স্বভাবতই ক্যানসার রোগ শনাক্ত হওয়ার পরে অনেকেই ধর্মকর্ম কিংবা আধ্যাত্মিকতার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যানসার রোগীদের এই ক্রান্তিকালে আধ্যাত্মিকতা এবং ধার্মিকতা কিভাবে তাদের জীবনের শেষ দিনগুলিকে প্রভাবিত করে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। সর্বমোট ৫৫১ জন ক্যানসার রোগীর ওপর ১ বছর যাবত এই পর্যবেক্ষনটি করা হয়। মার্কিন ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউটের সংজ্ঞা অনুসারে আধ্যাত্মিকতা (spirituality) বলতে একজন ব্যক্তির মানসিক প্রশান্তির অনুভূতি বা জীবনের উদ্দেশ্য এবং সামগ্রিকভাবে জীবনের অর্থ সম্পর্কে উপলব্ধিকে বোঝানো হয়ে থাকে। আর কোন বিশেষ বিশ্বাস এবং আচার-আচরন পালনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অর্জনের পথকে ধার্মিকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সংজ্ঞানুসারে কেউ ধার্মিক না হলেও আধ্যাত্মিক হতে পারেন; আবার কেউ ধার্মিক হলেও আধ্যাত্মিকতা নাও অর্জন পারেন।
গবেষকগণ ক্যানসার রোগীদের চারটি গ্রুপে ভাগ করেছেনঃ ১) কম আধ্যাত্মিক এবং কম ধার্মিক ২) অধিক আধ্যাত্মিক এবং অধিক ধার্মিক ৩) অধিক আধ্যাত্মিক এবং কম ধার্মিক ৪) কম আধ্যাত্মিক এবং অধিক ধার্মিক। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যখন এই সকল ক্যানসারের রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন তখন তাদের শারীরিক এবং মানসিক জীবন মান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আহরণ করা হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যারা অধিক ধার্মিক এবং অধিক আধ্যাত্মিক তাদের শারীরিক এবং মানসিক জীবন মান ভালো ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে যারা অধিক ধার্মিক কিন্তু কম আধ্যাত্মিক তাদের পরিস্থিতি কিন্তু তত ভালো নয়। গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে, এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে শুধু ধার্মিকতা নয়; আধ্যাত্মিক হওয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন মান তথা সামগ্রিক প্রশান্তি বজায় রাখতে পারি।
উল্লেখ্য ইদানীং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। ক্যানসার রোগীদের ওপর ধার্মিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার এমন ভিন্নতর প্রভাব দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কেন এমন ফলাফল পাওয়া গেল?
এক কথায় আমরা এর উত্তর জানিনা।
তবে অনেকে মনে করছেন ধার্মিকতা যদি ব্যক্তির জীবনে বাহ্যিক হয়ে থাকে এবং তার জীবন বোধের সঙ্গে যদি আত্মস্থ না হয়, তা হলে সেটা ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক পরিস্থিতির ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে আধ্যাত্মিকতার উৎস অন্তর থেকে; এটা মানুষের শরীর ও মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং অপার্থিব শক্তির ওপর গভীর আস্থা তার মনে অনাবিল প্রশান্তি এবং স্বস্থির মনোভাব সৃষ্টি করে। এজন্য ক্যানসার রোগীদের প্রান্তিক সময়টিকে শান্তিময় করে তোলার উদ্দেশে আধ্যাত্মিকতার উপযুক্ত প্রয়োগের ওপরেই সকলে জোর দিচ্ছেন। ধার্মিকতা কিংবা আধ্যাত্মিকতা হয়তো ক্যানসার রোগীর মূল চিকিৎসায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি করবে না; কিন্তু ক্যানসার রোগীর ক্রান্তিকালীন সময়কে প্রশান্তিময় এবং সহনশীল করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ধার্মিক ব্যক্তিদের নিকট এই গবেষণার ফলাফল হয়তো তেমন নতুন কিছু মনে হবে না; তবে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে ধার্মিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার প্রভাব সম্পর্কে এ পর্যন্ত পরিচালিত এটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য।
তথ্যসূত্রঃ
• Cannon AJ, Garcia J, Loberiza FR. Interplay between spirituality and religiosity on the physical and mental well-being of cancer survivors post-treatment. Program and abstracts of the 168th American Psychiatric Association Annual Meeting; May 16-20, 2015; Toronto, Ontario, Canada. Abstract 63.
• Pew Research Group. America's changing religious landscape. http://www.pewforum.org/2015/05/12/americas-changing-religious-landscape/ Accessed June 30, 2015.
No comments:
Post a Comment