শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Tuesday 20 October 2015

বিশ্ব সৃজনশীলতা সূচক



সৃজনশীল ব্যক্তি কে? অনেকে হয়ত বলবেন যার কল্পনাশক্তি প্রখর কিংবা যার উপস্থিত বুদ্ধি বেশী অথবা যিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন তিনিই সৃজনশীল। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কিন্তু একটি দেশকে কখন সৃজনশীল বলা যাবে? বলা হচ্ছে একটি সৃজনশীল দেশের মূল উপাদান তিনটিঃ মেধা, প্রযুক্তি এবং সহনশীলতা।

টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মারটিন প্রসপারিটি ইন্সটিটিউটের একদল গবেষক ১৯৬ দেশের সৃজনশীলতার একটি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিটি দেশের বিশ্ব সৃজনশীলতা সূচক (Global Creativity Index  বা GCI) নির্ধারণ করেছেন।তাদের সৃজনশীলতা সূচকের মূল উপাদান তিনটি “টি” বা “three T’s: মেধা(talent), প্রযুক্তি (technology) এবং সহনশীলতা (tolerance)।
     
প্রযুক্তির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে গবেষণা উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ এবং মাথাপিছু আবিস্কার প্যাটেন্ট করার দরখাস্তের হার দ্বারা। মেধার মূল্যায়ন করা হয়েছে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির হার এবং কত শতাংশ উচ্চশিক্ষিত মানুষ সৃজনশীল শিল্পে কার্যরত আছেন তার হিসেব ধরে। আর সহনশীলতা বিচার করা হয়েছে একটি দেশ ইমিগ্রান্টদের প্রতি কেমন আচরণ করছে, বিভিন্ন জাতি এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রতি কেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং দেশে সমকামীদের সংখ্যা কত তার ওপর ভিত্তি করে।

এ সকল বিষয়ে আসলে ১৩৯ টি দেশের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বাকী দেশগুলোর তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক বিচারে সবচেয়ে সৃজনশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড সৃজনশীল দেশ হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। আর আমাদের বাংলাদেশের নাম এসেছে ৯৫ তম স্থানে। 
  
প্রশ্ন হচ্ছে এমন সূচক নির্ণয়ের দরকার কি? এটা মূলত একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির পরিমাপক। গবেষকগণ মনে করছেন সৃজনশীলতার সূচকের সঙ্গে একটি দেশের সামাজিক সাম্যের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যে সকল দেশের সৃজনশীলতার সূচক যত উন্নত তাদের সামাজিক বৈষম্যের হার তত কম। 

তথ্যসূত্রঃ Richard Florida, Charlotta Mellander, Karen King. The Global Creativity Index 2015. Martin Prosperity Institute, University of Toronto, Canada


Thursday 15 October 2015

হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য সারমেয়



কবিগুরু রবি ঠাকুর লিখেছিলেনঃ
“প্রত্যহ প্রভাতকালে ভক্ত এ কুকুর
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে আসনের কাছে
যতক্ষণে সঙ্গ তার না করি স্বীকার
করস্পর্শ দিয়ে ।
এটুকু স্বীকৃতি লাভ করি
সর্বাঙ্গে তরঙ্গি উঠে আনন্দপ্রবাহ ।
বাক্যহীন প্রাণীলোক-মাঝে
এই জীব শুধু
ভালো মন্দ সব ভেদ করি
দেখেছে সম্পূর্ণ মানুষেরে ;
দেখেছে আনন্দে যারে প্রাণ দেওয়া যায়
যারে ঢেলে দেওয়া যায় অহেতুক প্রেম ,
অসীম চৈতন্যলোকে
পথ দেখাইয়া দেয় যাহার চেতনা”।

দুনিয়ায় কুকুরই একমাত্র প্রাণী সত্যিকার অর্থে থাকা-খাওয়ার জন্য যাকে কোন কাজ করতে হয় না। গরু-ছাগল দুধ দেয়। গরু হাল চাষ করে; মানুষ গরু-ছাগল জবাই করে তার গোস্ত খায়। গাধাকেও ভার বহন করতে হয়। বিড়াল ইঁদুর মারে। মুরগী ডিম দেয়। আমরা মুরগীর মাংস খাই। কিন্তু কুকুরের মত কারও সৌভাগ্য হয়নি। কুকুর সারাদিন কোন কাজ না করে দিব্যি ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া করছে, আরাম করে বারান্দায় ঘুম দিচ্ছে। অবশ্য কুকুর একেবারেই কিছু করে না এমন বলা যাবে না। রাতবিরাতে মনিবের ঘরবাড়ীর দিকে নজর রাখে। কিন্তু সেটা তেমন বড় কিছু নয়। আসল কাজ হচ্ছে মনিবকে তোয়াজ করা। সুন্দর করে বললে বলতে হয় মনিবকে ভালবাসা। খেয়াল করলে সবাই দেখতে পাবেন যে বাইরে থেকে মনিব ফিরলে প্রথম তাকে দেখতে পায় তার কুকুর। আর দেখামাত্রই সেকি আনন্দ প্রকাশ। ঘেউ ঘেউ করে জানান তো দেবেই, লেজ নাড়ানোর জোরে আশেপাশে ঝড় শুরু হয়ে যাবে। মানুষ আদরের কাঙাল। মনিবের প্রতি কুকুরের এই ভালবাসা, এই আদর কখনও বৃথা যায় না। আর তাই মানুষ কুকুরের সব দায়দায়িত্ব নেয়। পদলেহন, পুচ্ছ তাড়না এবং ঘেউ ঘেউ চিৎকারের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করেই কুকুর তার সব পাওনা আদায় করে নেয়। আর কোন প্রাণীর পক্ষে এটা সম্ভব হয় না। আর তাই সারমেয়র এমন আচরণের প্রতি সকলের এত হিংসা।

কিন্তু মানুষ বড়ই স্বার্থপর। কুকুরের প্রতি এহেন আচরণ বেশী দিন থাকে নি। মানুষ কুকুরকেও কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। যেমন কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি খুব প্রখর। অতএব গড়ে উঠেছে গোয়েন্দা কুকুরবাহিনী। গন্ধ শুকে শুকে কুকুর নানা রকম ড্রাগ শনাক্ত করছে, অপরাধীর পিছু তাড়া করছে। জঙ্গলে শিকারের কাজেও কুকুরের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এখন কুকুরকে একেবারেই অন্যধরণের একটি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই জানেন  টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ থাকলে তাদের ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং তাদের যেকোনো সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহসা খুব কমে যেতে পারে। এটা অনেক সময় খুবই মারাত্মক এবং সময় মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হতে পারে। ছবির কুকুরটি গন্ধ শুকে কারও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে তা বুঝতে পারে এবং তার মনিবকে সতর্ক করতে পারে। এখন টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাসের রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য অনেকেই এধরণের কুকুর ব্যবহার করছেন। এরজন্য বেশ কিছু কুকুর প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে উঠেছে।    

Wednesday 7 October 2015

সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং এর চিকিৎসার অন্তরায়


সম্প্রতি PLOS Neglected Tropical Diseases জার্নালে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া এবং এর চিকিৎসার অন্তরায় সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এটা পড়ার পরে মনে হল নিবন্ধটির মূল বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে।
আমরা জানি এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার কতগুলি দেশে সাপের কামড়ে বিষক্রিয়া একটা বড় সমস্যা কম করে হলেও প্রতি বছর ১২ লাখ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এরফলে ২৫,০০০ থেকে ১২৫,০০০ মানুষ মারা যায়। আর অন্তত ৪০০,০০০ মানুষ  নানারকম জটিলতায় ভুগে থাকে। এত ব্যাপক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসমূহ, দাতা সংস্থা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট সাপের কামড়ের গুরুত্ব তেমন নয়। আজকাল সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিত সচেতনতা বেড়েছে। অধিকাংশ সংস্থা এখন সাপ, সাপের বিষ, এবং সাপের কামড়ের বিষক্রিয়াকে বায়োমেডিক্যাল এবং টেকনোলজিকাল সমস্যা হিসেবে দেখছে। কিন্তু তারপরেও এটা স্বীকার করতে হবে যে, এর চিকিৎসার যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর সমাধানের জন্য শুধু মেডিক্যাল চিকিৎসা নয়, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টিও মাথায় রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।এর অর্থ আমাদের শুধু সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার চিকিৎসা করলে হবে না; এর পেছনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনো-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কথা মনে রাখতে হবে। সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ায় মূলত গ্রামীণ হতদরিদ্ররাই মৃত্যুবরণ করে। সাপের বিষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম তৈরির গরজ ওষুধ কোম্পানিগুলির খুবই কম। কারণ এটা লাভজনক নয়। আবার যা অল্প পরিমাণ অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় তার দাম অনেকক্ষেত্রেই গরীব জনগণের নাগালের বাইরে। অধিকাংশ দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় এর সার্বক্ষণিক সরবরাহও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সাপের কামড় সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে নানারকম কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি। এর পেছনে রয়েছে সমাজ এবং সংস্কৃতির দীর্ঘদিনের লালিত ধ্যানধারণা এবং চেতনার প্রভাব। যার ফলে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা গ্রহনেও দেখা দেয় নানা রকম বাধা-বিপত্তি।এজন্য সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার ফলে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তথ্যসূত্রঃ Gutiérrez JM, Burnouf T, Harrison RA, Calvete JJ, Brown N, Jensen SD, et al. (2015) A Call for Incorporating Social Research in the Global Struggle against Snakebite. PLoS Negl Trop Dis 9(9): e0003960.  

অতিরিক্ত হট ফ্ল্যাশ মেয়েদের হৃদরোগের পূর্বাভাস


 
মহিলাদের মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তিকালে এবং এরপরে নানারকম সমস্যা হয়ে থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর উপসর্গ হল হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক। এরফলে শরীরে হঠাৎ একটা গরম উত্তাপের ঢেউ খেলে যায়।  কান, মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে, মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়, প্রচুর ঘাম ঝরতে থাকে আর সঙ্গে থাকে অস্থিরতা। অনেকের এত বুক ধড়ফড় করতে থাকে যে তাদের নিকট মনে হয় গুরুতর হৃদরোগ হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হৃদরোগের প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যাদের অতিরিক্ত হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হয়, তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আসলেই বেশী। কারণ তাদের রক্তনালীর মধ্যবর্তী এবং একদম ভিতরের স্তর অত্যন্ত পুরু থাকে। কিন্তু যাদের হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক কম হয় কিংবা একেবারেই হয় না, তাদের রক্তনালীর গঠন স্বাভাবিক। এর অর্থ যাদের হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হচ্ছে তাদের হৃদরোগের ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। এ বছর আমেরিকার লাস ভেগাসে নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে এই গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে আসলে হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলকের সঙ্গে রক্তনালীর সমস্যার বিষয়টি কখনও পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এজন্য এই ফলাফলকে অনেকে বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। এমনিতেই মেয়েরা তাদের সমস্যা গোপন করতে চায়। অধিকাংশ মহিলা হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলকের বিষয়টি চিকিৎসককে জানায়ও না কিংবা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয় না।  কিন্তু যাদের দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার কিংবা তার চেয়ে বেশী হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হবে, তাদের অবশ্যই কোলেস্টেরল বা উচ্চরক্তচাপের মতো এটাকেও হৃদরোগের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে গবেষকগণ মনে করছেন। অবশ্য এ সম্পর্কে এখনও আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।

তথ্যসূত্রঃ North American Menopause Society (NAMS) 2015 Annual Meeting: Abstract S-12. Presented October 2, 2015.

Friday 2 October 2015

২ অক্টোবর ২০১৫ বিশ্ব হাসি দিবস

শিল্পী হার্ভি বল ১৯৬৩ সালে প্রথম স্মাইলিআইকনটি তৈরি করেছিলেন। এটা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলে তিনি হাসি দিবসপ্রচলন করেন।প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবার হাসি দিবস হিসেবে পালিত হয়। হার্ভির স্মাইলি আইকনটির কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন ভৌগোলিক কিংবা ধর্মীয় গণ্ডি।তার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রানিত করা, বন্ধুত্বকে উৎসাহিত করা;নিজে হাসা এবং অপরকে হাসতে উদ্বুদ্ধ করা।


হাসি সম্পর্কে কয়েকটি মজার তথ্যঃ
•        হাসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
•        হাসি মানসিক চাপ লাঘবে সাহায্য করে
•        ভ্রু কোঁচকানোর চেয়ে হাসা সহজ
•        হাসার জন্য মুখমন্ডলের ৫ থেকে ৫৩ টি পেশী কাজ করে
•        শিশু জন্ম থেকেই হাসতে পারে
•        মোট ১৯ রকমের হাসি আছে।

•        দুনিয়াতে শত শত রকমের ভাষা আছে। কিন্তু শুধু হাসি দিয়েই সব ভাষাতে কথা বলা যায়।