সৃজনশীল ব্যক্তি কে? অনেকে হয়ত বলবেন যার কল্পনাশক্তি প্রখর কিংবা যার উপস্থিত বুদ্ধি বেশী অথবা যিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন তিনিই সৃজনশীল। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কিন্তু একটি দেশকে কখন সৃজনশীল বলা যাবে? বলা হচ্ছে একটি সৃজনশীল দেশের মূল উপাদান তিনটিঃ মেধা, প্রযুক্তি এবং সহনশীলতা।
টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মারটিন প্রসপারিটি ইন্সটিটিউটের একদল গবেষক ১৯৬ দেশের সৃজনশীলতার একটি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিটি দেশের বিশ্ব সৃজনশীলতা সূচক (Global Creativity Index বা GCI) নির্ধারণ করেছেন।তাদের সৃজনশীলতা সূচকের মূল উপাদান তিনটি “টি” বা “three T’s: মেধা(talent), প্রযুক্তি (technology) এবং সহনশীলতা (tolerance)।
প্রযুক্তির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে গবেষণা উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ এবং মাথাপিছু আবিস্কার প্যাটেন্ট করার দরখাস্তের হার দ্বারা। মেধার মূল্যায়ন করা হয়েছে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির হার এবং কত শতাংশ উচ্চশিক্ষিত মানুষ সৃজনশীল শিল্পে কার্যরত আছেন তার হিসেব ধরে। আর সহনশীলতা বিচার করা হয়েছে একটি দেশ ইমিগ্রান্টদের প্রতি কেমন আচরণ করছে, বিভিন্ন জাতি এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রতি কেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং দেশে সমকামীদের সংখ্যা কত তার ওপর ভিত্তি করে।
এ সকল বিষয়ে আসলে ১৩৯ টি দেশের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বাকী দেশগুলোর তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক বিচারে সবচেয়ে সৃজনশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড সৃজনশীল দেশ হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। আর আমাদের বাংলাদেশের নাম এসেছে ৯৫ তম স্থানে।
প্রশ্ন হচ্ছে এমন সূচক নির্ণয়ের দরকার কি? এটা মূলত একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির পরিমাপক। গবেষকগণ মনে করছেন সৃজনশীলতার সূচকের সঙ্গে একটি দেশের সামাজিক সাম্যের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যে সকল দেশের সৃজনশীলতার সূচক যত উন্নত তাদের সামাজিক বৈষম্যের হার তত কম।
তথ্যসূত্রঃ Richard Florida, Charlotta Mellander, Karen King. The Global Creativity Index 2015. Martin Prosperity Institute, University of Toronto, Canada