কবিগুরু রবি ঠাকুর লিখেছিলেনঃ
“প্রত্যহ প্রভাতকালে ভক্ত এ কুকুর
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে আসনের কাছে
যতক্ষণে সঙ্গ তার না করি স্বীকার
করস্পর্শ দিয়ে ।
এটুকু স্বীকৃতি লাভ করি
সর্বাঙ্গে তরঙ্গি উঠে আনন্দপ্রবাহ ।
বাক্যহীন প্রাণীলোক-মাঝে
এই জীব শুধু
ভালো মন্দ সব ভেদ করি
দেখেছে সম্পূর্ণ মানুষেরে ;
দেখেছে আনন্দে যারে প্রাণ দেওয়া যায়
যারে ঢেলে দেওয়া যায় অহেতুক প্রেম ,
অসীম চৈতন্যলোকে
পথ দেখাইয়া দেয় যাহার চেতনা”।
দুনিয়ায় কুকুরই একমাত্র প্রাণী সত্যিকার অর্থে থাকা-খাওয়ার জন্য যাকে কোন কাজ করতে হয় না। গরু-ছাগল দুধ দেয়। গরু হাল চাষ করে; মানুষ গরু-ছাগল জবাই করে তার গোস্ত খায়। গাধাকেও ভার বহন করতে হয়। বিড়াল ইঁদুর মারে। মুরগী ডিম দেয়। আমরা মুরগীর মাংস খাই। কিন্তু কুকুরের মত কারও সৌভাগ্য হয়নি। কুকুর সারাদিন কোন কাজ না করে দিব্যি ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া করছে, আরাম করে বারান্দায় ঘুম দিচ্ছে। অবশ্য কুকুর একেবারেই কিছু করে না এমন বলা যাবে না। রাতবিরাতে মনিবের ঘরবাড়ীর দিকে নজর রাখে। কিন্তু সেটা তেমন বড় কিছু নয়। আসল কাজ হচ্ছে মনিবকে তোয়াজ করা। সুন্দর করে বললে বলতে হয় মনিবকে ভালবাসা। খেয়াল করলে সবাই দেখতে পাবেন যে বাইরে থেকে মনিব ফিরলে প্রথম তাকে দেখতে পায় তার কুকুর। আর দেখামাত্রই সেকি আনন্দ প্রকাশ। ঘেউ ঘেউ করে জানান তো দেবেই, লেজ নাড়ানোর জোরে আশেপাশে ঝড় শুরু হয়ে যাবে। মানুষ আদরের কাঙাল। মনিবের প্রতি কুকুরের এই ভালবাসা, এই আদর কখনও বৃথা যায় না। আর তাই মানুষ কুকুরের সব দায়দায়িত্ব নেয়। পদলেহন, পুচ্ছ তাড়না এবং ঘেউ ঘেউ চিৎকারের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করেই কুকুর তার সব পাওনা আদায় করে নেয়। আর কোন প্রাণীর পক্ষে এটা সম্ভব হয় না। আর তাই সারমেয়র এমন আচরণের প্রতি সকলের এত হিংসা।
কিন্তু মানুষ বড়ই স্বার্থপর। কুকুরের প্রতি এহেন আচরণ বেশী দিন থাকে নি। মানুষ কুকুরকেও কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। যেমন কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি খুব প্রখর। অতএব গড়ে উঠেছে গোয়েন্দা কুকুরবাহিনী। গন্ধ শুকে শুকে কুকুর নানা রকম ড্রাগ শনাক্ত করছে, অপরাধীর পিছু তাড়া করছে। জঙ্গলে শিকারের কাজেও কুকুরের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এখন কুকুরকে একেবারেই অন্যধরণের একটি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই জানেন টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ থাকলে তাদের ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং তাদের যেকোনো সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহসা খুব কমে যেতে পারে। এটা অনেক সময় খুবই মারাত্মক এবং সময় মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হতে পারে। ছবির কুকুরটি গন্ধ শুকে কারও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে তা বুঝতে পারে এবং তার মনিবকে সতর্ক করতে পারে। এখন টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাসের রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য অনেকেই এধরণের কুকুর ব্যবহার করছেন। এরজন্য বেশ কিছু কুকুর প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে উঠেছে।
No comments:
Post a Comment