শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Wednesday 7 October 2015

সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং এর চিকিৎসার অন্তরায়


সম্প্রতি PLOS Neglected Tropical Diseases জার্নালে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া এবং এর চিকিৎসার অন্তরায় সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এটা পড়ার পরে মনে হল নিবন্ধটির মূল বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে।
আমরা জানি এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার কতগুলি দেশে সাপের কামড়ে বিষক্রিয়া একটা বড় সমস্যা কম করে হলেও প্রতি বছর ১২ লাখ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এরফলে ২৫,০০০ থেকে ১২৫,০০০ মানুষ মারা যায়। আর অন্তত ৪০০,০০০ মানুষ  নানারকম জটিলতায় ভুগে থাকে। এত ব্যাপক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসমূহ, দাতা সংস্থা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট সাপের কামড়ের গুরুত্ব তেমন নয়। আজকাল সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিত সচেতনতা বেড়েছে। অধিকাংশ সংস্থা এখন সাপ, সাপের বিষ, এবং সাপের কামড়ের বিষক্রিয়াকে বায়োমেডিক্যাল এবং টেকনোলজিকাল সমস্যা হিসেবে দেখছে। কিন্তু তারপরেও এটা স্বীকার করতে হবে যে, এর চিকিৎসার যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর সমাধানের জন্য শুধু মেডিক্যাল চিকিৎসা নয়, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টিও মাথায় রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।এর অর্থ আমাদের শুধু সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার চিকিৎসা করলে হবে না; এর পেছনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনো-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কথা মনে রাখতে হবে। সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ায় মূলত গ্রামীণ হতদরিদ্ররাই মৃত্যুবরণ করে। সাপের বিষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম তৈরির গরজ ওষুধ কোম্পানিগুলির খুবই কম। কারণ এটা লাভজনক নয়। আবার যা অল্প পরিমাণ অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় তার দাম অনেকক্ষেত্রেই গরীব জনগণের নাগালের বাইরে। অধিকাংশ দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় এর সার্বক্ষণিক সরবরাহও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সাপের কামড় সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে নানারকম কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি। এর পেছনে রয়েছে সমাজ এবং সংস্কৃতির দীর্ঘদিনের লালিত ধ্যানধারণা এবং চেতনার প্রভাব। যার ফলে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা গ্রহনেও দেখা দেয় নানা রকম বাধা-বিপত্তি।এজন্য সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার ফলে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তথ্যসূত্রঃ Gutiérrez JM, Burnouf T, Harrison RA, Calvete JJ, Brown N, Jensen SD, et al. (2015) A Call for Incorporating Social Research in the Global Struggle against Snakebite. PLoS Negl Trop Dis 9(9): e0003960.  

No comments:

Post a Comment