পরোক্ষ ধূমপান কী?
সহজ কথায় ধূমপানরত
ব্যক্তির বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি গ্রহণ করলে সেটাকে পরোক্ষ ধূমপান
বলা হয়। এটা দুভাবে আসতে পারে, ধূমপানরত ব্যক্তির
জ্বলন্ত বিড়ি কিংবা সিগারেটের পাশ থেকে নির্গত ধোঁয়া কিংবা ধূমপায়ী ধোঁয়া গ্রহণের
পর নিঃশ্বাসের সঙ্গে পরিত্যক্ত ধোঁয়া। বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অংশের পাশ থেকে নির্গত
ধোঁয়া দিয়ে কোনো একটি কক্ষের মোট ধোঁয়ার ৮৫ শতাংশ ভরে থাকে।
তামাকের ধোঁয়ায় কী থাকে?
তামাকের ধোঁয়ায়
চার হাজারের বেশি উপাদান থাকে। এগুলোর মধ্যে যেসব কণা রয়েছে তা হলো—আলকাতরা, নিকোটিন, বেনজিন ও বেনজোপাইরিন। আর গ্যাসীয় উপাদানগুলো রয়েছে কার্বন
মনোক্সাইড, অ্যামোনিয়া, ডাই-মিথাইল নাইট্রোস অ্যামাইন, ফরমালডিহাইড,
হাইড্রোজেন সায়ানাইড ও অ্যাক্রোলিন। এক হিসাবে দেখা যায়,
তামাকের ধোঁয়ায় অন্তত ৬০ রকমের উপাদান রয়েছে, যেগুলো ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। আর শ্বাসনালির জন্য উত্তেজক
যে কত উপাদান রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা
(Environment
protection
agency) তামাকের ধোঁয়াকে অ্যাসবেস্টস এবং আর্সেনিকের মতোই প্রথম শ্রেণীর
ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে গণ্য করে।
পরোক্ষ ধূমপায়ীর কী ক্ষতি হয়?
অন্যের ধোঁয়া
পান করলে চোখ জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা,
গলাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি
হয়। ৩০ মিনিট পরোক্ষ ধূমপান করলে হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করার জন্য তা যথেষ্ট। হাঁপানির
রোগীর হাঁপানির প্রকোপ বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ ধূমপান বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
দীর্ঘমেয়াদে কী হয়?
বাড়িতে পরোক্ষ
ধূমপানের ফলে হৃদরোগ এবং ফুসফুসের ক্যানসারের
প্রকোপ ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আর কর্মস্থল এবং পথেঘাটে পরোক্ষ ধূমপানের ফলে হৃদরোগের হার বেড়ে যায় ৫০-৬০ শতাংশ। অত্যন্ত
নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, অধূমপায়ীদের ফুসফুসের
ক্যানসার এবং হৃদরোগের কারণ পরোক্ষ
ধূমপান।
পরোক্ষ ধূমপানের ব্যাপকতা?
প্রকৃতপক্ষে
এর ব্যাপকতা অনেক বিস্তৃত। এক হিসাবে দেখা যায়, ব্রিটেনের অর্ধেক শিশুই বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। ধূমপায়ী মা-বাবার
শিশুদের মধ্যে শ্বাসনালির রোগব্যাধির প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান
নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন আমাদের পরোক্ষ ধূমপানের
বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। ঘরের ভেতর ধূমপান
করলে তা ধূমপায়ীর জন্য তো বটেই, সঙ্গে সঙ্গে তা তার
পরিবারের অন্যদের, বিশেষত শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর।
No comments:
Post a Comment