শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Sunday 12 May 2013

কেমিক্যালযুক্ত ফলমূলে ক্যান্সার ঝুঁকি




কৃষিক্ষেত্রে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কীটনাশক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকি এবং দিন দিন এসব কীটনাশক রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। বাড়ির টবে লাগানো ফুলগাছ থেকে শুরু করে বাগানের শাক-সবজি, লাউ-কুমড়ো, বেগুন-বরবটির গাছ আর মাঠে ধান-পাট-যব সব ধরনের শস্যের বালাইনাশক হিসেবে এসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। আজকাল কলা থেকে শুরু করে আম, আপেল, পেয়ারা, বরই, আঙ্গুর ইত্যাদি সব ধরনের ফল সংরক্ষণ এবং পাকানোর জন্যও নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, আজকাল বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপও বেড়েছে। স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহারের সঙ্গে ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা? সত্যিকার অর্থে এ প্রশ্নের সদুত্তর এখনো কেউ দিতে পারেননি। ব্রিটেনের ক্যান্সার গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের (Cancer Research UK) প্রাপ্ত তথ্য এবং কিছু গবেষণার ফলাফল থেকে বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহারের সঙ্গে কতগুলো ক্যান্সার যেমন: লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে সম্পর্কটি কতখানি জোরালো তা বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে বলেননি। কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে যারা কীটনাশক দ্রব্যাদি ছিটানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের শরীরে এগুলো অতিরিক্ত প্রবেশ করার আশংকা থাকে। বিশেষত যারা কীটনাশক ব্যবহারের সতর্কতামূলক নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলে না তাদের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে এবং এ ধরনের কৃষি ক্ষেত্রের কর্মীদের মধ্যে লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমার প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে।
ক্যান্সার গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থাও (International Agency for Research into Cancer-IARC) এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে এবং তাদের ধারণা নিয়মিত যেসব কৃষিকর্মী কীটনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত তাদের ক্যান্সার হওয়ারর্ ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে প্রতিটি কীটনাশক উপাদান সম্পর্কে আলাদাভাবে তথ্য সংগ্রহ না করা পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না। ডিডিটি এবং লিনডেন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি পাওয়া গিয়েছিল। ইদানীং এ ভয়ঙ্কর রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, কীটনাশকের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী আর কীটনাশক ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে আবশ্যক। কিন্তু মানব শরীরের জন্য কীটনাশক ক্ষতিকর কিনা তা জানাও আমাদের জরুরি। এ পর্যন্ত এ সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু দুর্বলতার কারণে সঠিক তথ্য এবং নির্দেশনা বের করা সম্ভব হয়নি_অধিকাংশ গবেষণা খুব ছোট পরিসরে করা হয়েছে। ফলে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন। কৃষক এবং কৃষিকর্মীদের শরীরে ঠিক কতটুকু কীটনাশক প্রবেশ করছে তা নির্ধারণ করাও সহজ নয়। আর একজন কৃষিকর্মী অনেক রকম কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। ফলে কোন্ কীটনাশক ক্ষতিকর তা বলা যায় না। এ পর্যন্ত গবেষণার ফলাফলগুলোর মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার কোনোটাই বলা হচ্ছে কীটনাশক ব্যবহার নিরাপদ। স্বভাবত আমরা বিভ্রান্ত যে ক্যান্সারের মূলে কীটনাশকের আসলে কোনো ভূমিকা আছে কি-না।

No comments:

Post a Comment