শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Tuesday, 27 May 2014

সঙ্গীত চিকিৎসা


সঙ্গীত শুধু বিনোদনের বিষয় নয়। সঙ্গীতের রোগ নিরাময় করার ক্ষমতাও আছে।

২০১১ সালে ৩২ টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ৩১৮১ জনের উপরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এখানে দেখা যায় সঙ্গীত দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ লাঘব করে, বিষণ্ণতা প্রশমন করে। এদের মধ্যে সাতটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সঙ্গীত ব্যথা উপশম করে এবং ৪ টি পর্যবেক্ষণে হৃদঘাত কমানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় সঙ্গীত জীবনের মান উন্নত করে।

ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া যে কারও জন্য শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক  উৎকণ্ঠার বিষয়। সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায়  সঙ্গীতের ভূমিকা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে ৩০ টি  পর্যবেক্ষণে ১৮৯১ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর সঙ্গীতের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এখানেও দেখা যায় সঙ্গীত রোগীদের উদ্বেগ প্রশমন করে, মুড ভালো করে এবং সার্বিকভাবে রোগীদের অবস্থা উন্নত করে। আমরা সকলেই জানি ক্যানসারের রোগীদের অনেক সময় অসম্ভব ব্যথা হয়। দুটি গুরুত্বপূর্ণ রিভিউয়ে দেখা যাচ্ছে গান ক্যানসারের ব্যথা উপশমে সক্ষম।

স্ট্রোকের পরে অনেক রোগী বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। সাধারণত প্রতি তিন জন স্ট্রোকের রোগীর মধ্যে অন্তত একজন উল্লেখযোগ্য বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। এটা স্ট্রোক নিরাময়ের পথে অন্তরায়। স্ট্রোকের পরে বিষণ্ণতা হলে রোগের জটিলতা বাড়ে, মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকগণ সব সময় আশা করেন যেন স্ট্রোকের পরে কারও বিষণ্ণতা না হয়। এজন্য নানারকম ওষুধ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। যেমন- সাইকো থেরাপি, আকুপাংচার, বৈদ্যুতিক শক, সঙ্গীত ইত্যাদি। সঙ্গীতের সাহায্যে স্ট্রোকের পরে বিষণ্ণতা লাঘবে ভালো উপকার পাওয়া গিয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের ওপরেও সঙ্গীতের প্রভাব দেখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে সুমধুর সঙ্গীত গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গীত আনন্দ দেয়, সেজন্যই এমন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে না। গবেষকগণ মনে করছেন সঙ্গীত কোন কারণে আসলেই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।   

কিন্তু সঙ্গীত কিভাবে আমাদের সুস্থ করে তোলে? সঙ্গীতের মূল বিষয় শব্দ। আর শব্দের মূলে রয়েছে কম্পন। গবেষকগণ এখন বিভিন্ন ধরণের শব্দ কম্পন নিয়ে পরীক্ষা করছেন। কি ধরণের শব্দ কম্পন কতক্ষণ ব্যবহার করলে কেমন উপকার হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীতের শব্দ কম্পন শরীরে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এরই কোন কোনটি আমাদের জন্য উপকারী। তারা মনে করছেন অচিরেই কোন রোগের জন্য কি ধরণের সঙ্গীত কতক্ষণ, কত বার এবং কতদিন শোনা দরকার তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তখন চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রোগের জন্য প্রেসক্রিপশন আকারে সঙ্গীতের পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন।

তথ্যসূত্রঃ
1. Overview of Systematic Reviews. Evidence-based complementary and alternative medicine: eCAM. 2014;2014:170396. PubMed PMID: 24817897. Pubmed Central PMCID: PMC4003746. 
2. Nabavi SF, Turner A, Dean OM, Sureda A, Nabavi SM. Post-Stroke Depression Therapy: Where are we now? Current neurovascular research. 2014 May 22. PubMed PMID: 24852795. 
3. Zhang JM, Wang P, Yao JX, Zhao L, Davis MP, Walsh D, et al. Music interventions for psychological and physical outcomes in cancer: a systematic review and meta-analysis. Supportive care in cancer: official journal of the Multinational Association of Supportive Care in Cancer. 2012 Dec; 20(12):3043-53. PubMed PMID: 23052912. 
4. Fritz TH, Ciupek M, Kirkland A, Ihme K, Guha A, Hoyer J, et al. Enhanced response to music in pregnancy. Psychophysiology. 2014 May 18. PubMed PMID: 24835575. 
5. Bradt J, Dileo C, Grocke D, Magill L. Music interventions for improving psychological and physical outcomes in cancer patients. The Cochrane database of systematic reviews. 2011 (8):CD006911. PubMed PMID: 21833957.

Sunday, 18 May 2014

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য জনসম্পদ

২০০৭ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে জনসম্পদের ওপর অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি জরীপ করা হয়েছিল। এই  জরীপের ফলাফলে দেখা যায় আমাদের প্রতি ১০,০০০ মানুষের জন্য- 
  • ৫ জন চিকিৎসক
  • ২ জন নার্স 
  •  ১২ জন হাতুড়ে গ্রাম্য চিকিৎসক
  •  ১১ জন ফার্মেসীর ওষুধ বিক্রেতা
  • ৩৩ জন কবিরাজ বা বৈদ্য
  • ৩২ জন ঝাড়ফুঁক দেওয়ার লোক এবং
  • ৬ জন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার আছে

এরা সবাই কম-বেশী বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দেয় এবং ওষুধের পরামর্শ দেয়।

কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য জনশক্তির সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক কম। যেমনঃ আমাদের দেশে প্রতি ১০০০০ মানুষের জন্য চিকিৎসক, দাঁতের ডাক্তার এবং নার্স আছে সাকুল্যে ৭.৭ জন। শ্রীলংকায় এই সংখ্যা ২১.৯ জন, ভারতে ১৪.৬ জন, পাকিস্তানে ১২.৫ জন। সহস্রাব্দের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে এই সংখ্যা প্রতি ১০০০০ জনগণের জন্য ২৩.০ জন হওয়া উচিত। 
  
আমাদের সেবিকা এবং চিকিৎসকের অনুপাত ২:৫ । অর্থাৎ প্রতি ৫ জন চিকিৎসকের জন্য ২ জন নার্স আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রতি ৩ জন নার্সের জন্য ১ জন চিকিৎসক থাকা উচিত। যে কোন কমিউনিটির জন্য পর্যাপ্ত নার্স থাকা বিশেষ জরুরী। কারণ হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবার প্রাণশক্তি নার্স। আমাদের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টেরও স্বল্পতা রয়েছে। প্রতি ১ জন চিকিৎসকের জন্য ৫ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট থাকা উচিত। সার্বিকভাবে এই জরীপে দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশের মানদণ্ডে বিবেচনা করলে আমাদের আরও ৬০,০০০ চিকিৎসক, ২৮০,০০০ নার্স এবং ৪৮৩,০০০ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দরকার। 


তথ্যসূত্রঃ Ahmed SM, Hossain MA, Rajachowdhury AM, Bhuiya AU. The health workforce crisis in Bangladesh: shortage, inappropriate skill-mix and inequitable distribution. Human resources for health. 2011;9:3.

Wednesday, 7 May 2014

যৌনক্ষমতা বাড়ানোর “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হার্বাল ওষুধ” আসলে কতটুকু নিরাপদ?

পথে-ঘাটে কিংবা বাসে-লঞ্চে চলতে ফিরতে আমরা পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ নিয়ে নানারকম বিজ্ঞাপন দেখি কিংবা হকারদের বক্তৃতা শুনতে পাই। অনলাইনেও পুরুষের “বিশেষ অঙ্গ” দীর্ঘ করার জন্য কিংবা যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য নানারকম প্রচারণা দেখা যায়। এ সব ওষুধে আসলে কি থাকে এবং তা কতটুকু নিরাপদ? 

সম্প্রতি ইতালির কয়েকজন গবেষক এ সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর অনেক রকম ওষুধ আছে সত্য; কিন্তু এদের অধিকাংশই মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমন কি ম্যানিয়া পর্যন্ত হতে পারে।এজন্য তারা পথে ঘাটে কিংবা অন লাইনে বিক্রি হওয়া এসব ওষুধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে চান। এসকল ওষুধের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যারা এধরনের ওষুধ সেবন করেন তাদের এমনিতেই মানসিক সমস্যা থাকে; আবার ওষুধ সেবনের ফলে তা আরও বেড়ে যায়। বিগত বছরগুলিতে যৌনক্ষমতাবর্ধক ওষুধ বিক্রির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এদের প্রতিটির গায়েই লেখা থাকে “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক” কিংবা “হার্বাল”। অতএব কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অধিকাংশ পুরুষ আরও লম্বা “বিশেষ অঙ্গ” এবং আরও বেশী সময় রমণের আশায় সহজেই এ সকল বাণিজ্যিক প্রচারণার ফাঁদে পড়ছে। এই ধরণের ভিত্তিহীন  প্রচারণা  জনস্বাস্থ্য এবং সুস্থ চিন্তাভাবনার পথে বিশাল অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

গবেষকদল বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১০৮ রকমের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধের বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে এসবের মধ্যে মূলত ৪ ধরণের ওষুধ থাকেঃ ইওহিম্বিন (yohimbine), ম্যাকা (maca), জিঙ্কো বিলোবা (ginkgo biloba)  এবং হর্নি গোট উইড (horny goat weed )। এই ৪ রকমের ওষুধই আসক্তিসহ উদ্বেগ, প্যানিক, মুডের পরিবর্তন, মানসিক বিভ্রমজাতীয়  মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

ইওহিম্বিন বিভিন্ন গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দাবী করা হয়েছে এটা ধ্বজ-ভঙ্গের জন্য কার্যকরী। আবার এ ওষুধ সেবন করলে ওজন কমে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইওহিম্বিনের অনেক রকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা সেবন করলে মানসিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়; পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা হতে পারে, হৃদঘাত বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।   
ম্যাকা (Lepidium meyenii) এক বিশেষ ধরণের গাছ থেকে সংগৃহীত ওষুধ। এর মূল উপাদান টেট্রাহাইড্রো-বিটা-কারবোলিন। দাবী করা হয় এটা যৌন শক্তি বাড়ায় এবং বন্ধাত্য রোধ করে। কিন্তু টেট্রাহাইড্রো-বিটা-কারবোলিন এমন একটি রাসায়নিক উপাদান যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং আসক্তি সৃষ্টি করে। 

হর্নি গোট উইড সেবন করলে মানসিক উন্মত্ততা সৃষ্টি হয়; হৃদপিণ্ডের ছন্দ বিঘ্নিত হয় এবং ত্বকে নানারকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে। 

জিঙ্কো বিলোবা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা সুস্থ মানুষের শরীরেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। এ ছাড়া এটা অন্যান্য ওষুধ যেমন অ্যালপ্রাজোলাম, সিটালোপ্রাম ইত্যাদি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমন কি মানসিক উন্মত্ততা সৃষ্টি করতে পারে। 

এ চার রকম ওষুধ ছাড়া আরও পাওয়া গিয়েছে হরিণের শিংয়ের চামড়া। কিন্তু এটা সেবন করলে প্রকৃতপক্ষে শরীর ভেঙে যায় এবং নানারকম স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।

মজার বিষয় হচ্ছে এসকল ওষুধ বিক্রির ওপর প্রায় কোনরকম নিয়ন্ত্রণই নাই। যে কেউ যে কোন সময় ইচ্ছে করলেই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ওষুধ কিনতে পারে এবং  সেবন করতে পারে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এসকল ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোন হিসেব নিকেশ নাই এবং সেটা নিয়ে কোন জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও নাই। অনেকেই জানেন না যে যৌনক্ষমতা বাড়ানোর “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হার্বাল” ওষুধের নামে তারা যা সেবন করছেন, সেগুলির মধ্যে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে এবং এসকল ওষুধও অন্যান্য অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এসকল ওষুধের কোন প্রকার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকার ফলে অনেক সময় এর মধ্যে আসলে কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিংবা আদৌ কোন ওষুধ আছে কিনা সে সম্পর্কেও কোন কিছু জানা যায় না। 

তথ্যসূত্রঃ American Psychiatric Association's 2014 Annual Meeting. Abstract NR4-44. Presented  May 4, 2014.

Tuesday, 29 April 2014

একটি সাঁকোর জন্য আর কতদিন ?

এক ভদ্রলোক নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন নদীতে একজন ডুবন্ত মানুষ। ভদ্রলোক কালবিলম্ব না করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং ডুবন্ত মানুষটিকে উদ্ধার করে তীরে তুলে আনলেন। কিন্তু পাড়ে উঠতে না উঠতেই তিনি দেখতে পেলেন আরেক জন ডুবন্ত মানুষ। তিনি তাকেও উদ্ধার করলেন। দ্বিতীয়জনকে নিয়ে আসতে না আসতেই তার চোখে পড়লো নদীতে আরও কয়েকজন মানুষ ডুবে যাচ্ছে। এভাবে ডুবন্ত মানুষদের উদ্ধার করতে করতে ভদ্রলোক নিজেই অসুস্থ হয়ে নদীর পাড়ে শুয়ে পড়লেন। তিনি মনে মনে চিন্তা করছেন যে এই নদীতে এত মানুষ ডুবে যাচ্ছে কেন?

পরদিন তিনি নদীর পাড় দিয়ে উজানের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। দুই পাড়ে কোন তেমন জনবসতি নেই। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরে তিনি দেখতে পেলেন নদীর দুই পাড়ে দুটি গ্রাম। এক গ্রামের মানুষ নানা প্রয়োজনে অন্য গ্রামে যায়। কিন্তু নদীতে কোন পারাপারের ব্যবস্থা নেই। নদীর ওপর কোন সাঁকোও নেই। ফলে প্রতিদিন অনেকেই নদী পার হতে গিয়ে ডুবে যায়।

কিন্তু ভদ্রলোকের পক্ষে একা কি আর এত ডুবন্ত মানুষকে প্রতিদিন উদ্ধার করা সম্ভব। এরজন্য দরকার একটি সাঁকো। আমাদের অবস্থা হয়েছে এরকম। আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি দুই পাড়ের দুটি গ্রাম। মাঝখানে বিশাল নদী; কিন্তু নেই কোন সাঁকো। আমরা সবাই ডুবন্ত মানুষ।


আজ চিকিৎসক-সংবাদকর্মী কিংবা চিকিৎসক-রোগীর সঙ্গে যে সকল সমস্যা তার মূলেও সেই নদী। কিন্তু নেই সাঁকোর বন্ধন। আমরা একটি সাঁকোর জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করবো?  

Monday, 28 April 2014

স্যার-এ কি সার?

“স্যার” শব্দ পাওয়া যায় মধ্যযুগের ফরাসী ভাষায়ফরাসী messire  থেকে sire এবং পরে তা পরিণত হয়েছে sir শব্দে। এর অর্থ “আমার প্রভু” (mylord) পুরনো ফরাসী ভাষায় sieur এসেছে Seigneur থেকে। এ শব্দটির অর্থও “প্রভু”। ল্যাটিন ভাষায় সিনিয়র বা গুরুজনদের উদ্দেশ্য করেও এটা বলা হতো এবং মূলত সেখান থেকে এটা ইউরোপীয় ভাষাসমূহে প্রবেশ করে। ১২০৫ সাল থেকে ইংরেজ নাইট বা ব্যারনদের(knight or baronet) সম্মান করে “স্যার” সম্বোধন করা হতো। ইংরেজীতে “স্বাধীন পুরুষ”, “পিতা” এবং “গুরুত্বপূর্ণ মানুষ” বোঝানোর জন্যও স্যার বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে স্যার শব্দের বিচিত্র ব্যবহার দেখা যায়। সাধারনত উচ্চ পদস্থ এবং মর্যাদার কর্মকর্তাদের এবং শিক্ষকদের “স্যার” সম্বোধন করা হতে থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদেরকেও স্যার সম্বোধন করে থাকে।  মহিলাদের জন্য সমতুল্য শব্দ হচ্ছে “ম্যাম” বা “ম্যাডাম” (ma'am or madam)তবে কম বয়সী মেয়েরা এটা শুনতে পছন্দ করে না। তারা “মিস” (miss) ডাকলে আনন্দ পায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে নাইটের সমতুল্য শব্দ হচ্ছে “ডেম” বা “লেডি”( Dame or Lady)নাইটের পত্নীদের এভাবেই সম্বোধন করা হয়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যখন সূর্য অস্ত যেতো না তখন প্রতি বছর অনেককে ঘটা করে “নাইট” (এবং লেডি) উপাধি দেওয়া হতো। ভারতে ব্রিটিশ রাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬১ সাল থেকে অনেক বিখ্যাত আমলা, সামরিক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী ভারতীয় নাগরিককে the Order of the Star of India প্রদান করা শুরু হয়। ১৮৭৮ সাল থেকে জুনিয়র অফিসারদের The Order of the Indian Empire উপাধি দেওয়া প্রচলন হয়। এসকল তকমা প্রাপ্তদের “স্যার” বলা হতো। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত  ভেঙ্গে স্বাধীন ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এ সকল উপাধি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে এটা সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হয় ১৯৫০ সালে আর পাকিস্তান নিষিদ্ধ করে ১৯৫৬ সালে।

মজার বিষয় হচ্ছে আধুনিক পশ্চিমা দুনিয়ায় এখন আর সাধারনভাবে “স্যার” সম্বোধন শোনা যায় না। প্রত্যেকের নামের দুটি অংশ-প্রথম নাম এবং পারিবারিক নাম। যেমন একজনের নাম হায়দার আলী। হায়দার আলীর পরিচিতজন তাকে শুধু “হায়দার” বলে ডাকে; কিন্তু যারা তাকে চেনেনা তারা তাকে “মিঃ আলী” বলে সম্বোধন করে। হায়দার আলী যদি কোন স্কুলের টিচার হন, তাহলে তার সকল ছাত্রছাত্রী তাকে “মিঃ আলী” বলে সম্বোধন করে থাকে। কিন্তু সহকর্মীরা “তাকে” হায়দার বলে ডাকে।

ততোধিক মজার বিষয় হচ্ছে ব্রিটিশদের প্রভুত্ব থেকে মুক্ত হয়ে উপমহাদেশের জনগণ ব্রিটিশ তকমা দেওয়ার প্রচলন আদেশ জারী করে বন্ধ করেছে। কিন্তু নিজেরা এখনও “স্যার” অর্থাৎ “হে প্রভু” ডাক শুনতে চায়; এই বেলায় অফিসার, ডাক্তার, উকিল-মোক্তার কিংবা বিচারক কোন ফারাক দেখা যায় না। সবার মনের ভিতরেই প্রভু হওয়ার সুপ্ত বাসনা। কেউ সেবক হতে চায় না। 

Tuesday, 15 April 2014

স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি-র টাচ স্ক্রিনের জীবাণু

চিকিৎসক এবং হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীদের স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি-র টাচ স্ক্রিন নানারকম জীবাণু দ্বারা আক্রান্তসম্প্রতি জার্মান হাসপাতালে চিকিৎসক এবং সেবিকাদের স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি-র টাচ স্ক্রিন পরীক্ষা করে এমনই দেখা গিয়েছেএটা শুধু চিকিৎসক এবং সেবিকাদের ব্যক্তিগত সুস্থতার জন্যই হুমকি নয়, তাদের পরিবার এবং রোগীদের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি-র টাচ স্ক্রিনে যে সকল জীবাণু শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ Staphylococcus aureusEnterococcus, and Enterobacteriaceae জাতীয় ব্যাকটেরিয়া। এজন্য সতর্কতা হিসেবে সকল চিকিৎসক এবং সেবিকার উচিত তাদের স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি-র টাচ স্ক্রিন নিয়মিত পরিস্কার করা; বিশেষত হাসপাতাল থেকে বাড়ী ফেরার আগে অবশ্যই তা করা উচিত। অন্যথায় তাদের শিশুদের মধ্যে খুব সহজেই এসকল জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। কারণ বাড়ী ফেরার পর অনেকের বাচ্চাই বাবা-মায়ের ফোন নিয়ে খেলা করে কিংবা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে থাকে।   

তথ্যসূত্রঃ 16th International Congress on Infectious Diseases (ICID): Abstract 61.014. Presented  April 5, 2014.

Friday, 4 April 2014

গাঁজায় কেমন আসক্তি হয়?


গাঁজার নেশা সৃষ্টিকারী মূল উপাদানটির নাম টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC) গাঁজায় এর পরিমাণ যত বেশী হবে, সেটা তত শক্তিশালী অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ছিল যে শক্তিশালী গাঁজা সেবন করলে কি আসক্তি জন্মানোর সম্ভাবনা বেশী?
সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফলে প্রশ্নের জবাব মিলেছে ডাচ গবেষকগণ এখন বলছেন কড়া ডোজের গাঁজা সেবনের সময় গাঁজাখোররা এমনভাবে ধোঁয়া টানে যে আসলে তার ফলে শরীরে খুব বেশী টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল প্রবেশ করে না ফলে আসক্তি জন্মানোর বিষয়টি তেমন উল্লেখযোগ্য নয় আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মাদকাসক্তি ইন্সটিটিইউটের একদল গবেষক পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রায় একশো গাঁজাখোরের ওপর টানা দেড় বছর পর্যবেক্ষণ শেষে তারা বলছেন কড়া ডোজের গাঁজা টানলেই যে বেশী আসক্তি জন্মাবে ব্যাপারটা তা নয় কারণ গাঁজার ডোজ কড়া হলেও গাঁজাখোরেরা ধোঁয়া এমনভাবে টানে যে শরীরে তা মাত্রাতিরিক্ত হতে পারে না
দেখা যায় প্রতি দশ জন গঞ্জিকা সেবনকারীর মধ্যে একজন এতে আসক্ত বা নির্ভরশীল হয়ে যায় যারা নিয়মিত এবং অতিরিক্ত কড়া গাঁজা সেবন করে তাদের মধ্যেই আসক্তির সম্ভাবনা বেশী আসক্তি জন্মানোর মূল উপাদান টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল (THC)  
ডাচ গবেষকগণ নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন আস্তানা থেকে প্রথমে ৬০০ গাঁজাখোর খুঁজে বের করেন তাদের মধ্য থেকে তারা ৯৮ জনকে তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন করেন এদের গাঁজা সেবনের পুরো প্রক্রিয়াটি টানা দেড় বছর ধরে অনুসরণ করা হয় তাদের গাঁজা সেবনের ধরণ, সময়কাল, কতটুকু ধোঁয়া টানছে, কতটুকু গাঁজা নিচ্ছে এবং তার মধ্যে কি পরিমাণ টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল আছে- এসব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসেব রাখা হয় তারপরে তারা ফলাফল হিসেব করে বলছেনঃ
·         গাঁজাখোরদের পুরিয়াতে টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনলের পরিমাণ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকে
·         গাঁজার পুরিয়াতে টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনলের পরিমাণ যত বেশী থাকে, গাঁজাখোরেরা ধোঁয়া তত কম টানে কারণ অল্প ধোঁয়াতেই তার নেশা জমে যায়।
·         ধোঁয়া টানার পরিমাণ আবার নির্ভর করে আসক্তি জন্মানোর ওপর যারা গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ে তারা ধোঁয়া বেশী টানে
·         মাসে কতটুকু টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল গ্রহণ করে সেটার সঙ্গে দেড় বছর পড়ে নির্ভরশীলতা জন্মানোর সম্পর্কটি তেমন সরাসরি নয়

যেকোনো মাদকাসক্তি জন্মানোর পেছনে অনেক রকম কারণ জড়িত থাকে এখানে ব্যক্তির আর্থসামাজিক অবস্থা, তার মানসিক পরিস্থিতি এবং পরিবেশের প্রভাবের সঙ্গে বংশগতির মিথস্ক্রিয়া কাজ করে থাকে অনেকে মনে করছেন ডাচ গবেষণা থেকে এখনই কোন সিদ্ধান্তে আসা সমীচীন নয়। তবে অতিরিক্ত গাঁজা শরীর এবং মন দুয়ের জন্যই ক্ষতিকর এজন্য এসম্পর্কে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে

তথ্যসূত্রঃ van der Pol P, Liebregts N, Brunt T, et al. Cross-sectional and prospective relation of cannabis potency, dosing and smoking behaviour with cannabis dependence: an ecological study. Addiction. Published online March 16 2014

বঁধু, মিছে রাগ করো না, করো না।


মানুষ ষড়রিপুর দাস। এর মধ্যে দ্বিতীয় রিপু ক্রোধ বা রাগ। পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে দেবতাদের বিভিন্ন সময়ে ক্রোধান্বিত হতে দেখা যায়। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে অ্যারিস রাগ বা ক্রোধের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অ্যারিস কখন কিভাবে কার ওপর রেগে যান, এই ভয়ে তার জন্য কোনো উপাসনালয় তৈরি করা হয়নি। দুর্বাশা মুনিও রাগের জন্য পরিচিত।
মানুষ কেন রাগে? এককথায় এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। ক্রোধান্বিত হওয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানাবিধ কারণ রয়েছে। আনন্দ-বেদনা-হতাশার মতো নিত্যনৈমিত্তিক আবেগের মতো ক্রোধ বা রাগও একটি আবেগ। কোনো ঘটনায় আমরা যেমন খুশি কিংবা মনঃক্ষুণ্ন হই, তেমনি কোনো কোনো ঘটনায় রাগান্বিত হই। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত রাগ মেনে নেওয়া গেলেও, মাত্রাবিহীন রাগারাগি কারও কাম্য নয়। অতিরিক্ত ক্রোধ স্বাস্থ্যহানিকর। সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত ক্রোধের কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রেগে যাওয়ার পরের দুই ঘণ্টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই সময়েই হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকগুলি ঘটে থাকে। যাদের হৃদরোগের অন্যান্য ঝুঁকি আছে তাদের জন্য এসময়টা আরও বিপজ্জনক। একবার ক্রোধে ফেটে পড়ার পরের দুই ঘণ্টায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচ গুণ বেড়ে যায়; আর স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বাড়ে।
অবশ্য মাঝে মধ্যে রেগে গেলে তত ভয় নেই। এরফলে বছরে প্রতি ১০,০০০ মানুষের মধ্যে বড়জোর প্রতিমাসে একটি হার্ট অ্যাটাক বেশী হতে পারে; যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশী তাদের মধ্যে ৪ জনের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু যারা অযথা অকারণে প্রতিনিয়ত রেগে থাকেন তাদের নিয়ে খুবই  বিপদ। দিনে পাঁচবার ক্রোধান্বিত হলে অন্যদিক দিয়ে সুস্থ মানুষেরও বছরে প্রতি ১০,০০০ জনের মধ্যে ১৫৮ জনের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি হৃদরোগের অন্যান্য ঝুঁকি থাকে, তাহলে ৬৫৭ জনের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা রয়েছে। তার মানে রাগী মেজাজ বা অকারণে সব সময় ক্রোধান্বিত থাকা একটি মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়।
কিন্তু কেন রাগার পরে এমন হচ্ছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। ক্রোধ সরাসরি হৃদ যন্ত্র কিংবা রক্তনালীর কোন ক্ষতি করে না।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় রাগী মানুষেরা ক্রনিক মানসিক চাপ কিংবা উদ্বেগে ভুগে থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষ ধূমপান করে, মদ খায়; এছাড়া তাদের শারীরবৃত্তিক এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে যায় যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ সবকিছুই হার্ট অ্যাটাক কিংব স্ট্রোক করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখে। রাগ সেখানে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে মাত্র।   

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রেগে গেলে কিভাবে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
এর কোনো সহজ সমাধান নেই। রাগের মাথায় উত্তেজনাবশত কিছু না করে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে। রাগের যথার্থ কারণ আছে কিনা তা ভাবতে হবে এবং বিষয়টির ঠিক-বেঠিক দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজকে আপনি রাগ করছেন, আগামীকাল আপনার রাগ থাকবে না। কিন্তু রাগের মাথায় যে মানসিক কিংবা শারীরিক আঘাত অপরকে করা হয়, সেটি কিন্তু তার পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন। এ জন্য রাগের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করার পরিবর্তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে নিরিবিলি কোথাও ঘটনার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই সর্বোত্তম।
যদি এমন করা সম্ভব না হয়, তাহলে রাগের প্রতিক্রিয়া কোনো ভঙ্গুর বস্তুর ওপরে প্রক্ষেপ করা যায়। যেমন রাগ কমানোর জন্য অনেককে দেয়ালে মুষ্টাঘাত করতে দেখা যায়, কেউ কেউ থালা-বাসন ভাঙেন। কিন্তু এমন প্রতিক্রিয়াও অনেক সময় আশপাশের মানুষের জন্য ভীতি সৃষ্টি করে। এ জন্য বলা হয়, রেগে গেলে খেলতে চলে যান, দৌড়াতে পারেন কিংবা টিভি দেখতে পারেন। এ ধরনের ক্রিয়া-কলাপের মাধ্যমে রাগ কমানো যায়। রেগে যাওয়া স্বাভাবিক আবেগ। রাগার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু রাগের বশে কাউকে আঘাত করার অধিকার কারও নেই। রাগের কারণে হতাশা এলে ক্রোধ আরও বেড়ে যায়। অতএব হতাশা গ্রাস করার আগেই রাগের কারণ বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেকের রেগে যাওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত হয়, বলা যায় রেগে যাওয়া একটি নেশা হয়ে যায়।
সবশেষে রাগ সম্পর্কে একটি শিক্ষামূলক গল্প।
এক ছেলে প্রচন্ড রাগী ছিলো। খুব সামান্য কারণেই রেগে যেত তার বাবা তাকে একটা পেরেক ভর্তি  বাক্স দিয়ে বললো, “যতবার তুমি রেগে যাবে ততবার একটা করে পেরেক বাগানের কাঠের বেড়াতে ঢুকিয়ে আসবে প্রথমদিনে ছেলেটি বাগানে গিয়ে ৩৭টি পেরেক মারলো পরের কয়েক সপ্তাহে তার রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসার ফলে কাঠে নতুন পেরেকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে এলো। সে বুঝতে পারলো হাতুড়ী দিয়ে কাঠের বেড়ায় পেরেক বসানোর চেয়ে তার রাগকে নিয়ন্ত্রন করা বেশি সহজ। শেষপর্যন্ত সেই দিনটি এলো যেদিন তাকে একটি পেরেকও মারতে হলো না। সে তার বাবাকে এই কথা জানালো। তারা বাবা তাকে বললো, তুমি যেসব দিনে তোমার রাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারবে সেসব দিনে একটি একটি করে পেরেক খুলে ফেলবে
অনেক দিন পরে ছেলেটি তার বাবাকে জানালো যে সব পেরেকই সে খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তার বাবা এবার তাকে নিয়ে বাগানে গেল এবং কাঠের বেড়াটি দেখিয়ে বললো,তুমি ভালভাবেই তোমার কাজ সম্পন্ন করেছো এখন তুমি তোমার রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারো কিন্তু দেখো প্রতিটা কাঠে পেরেকের গর্তগুলো এখনো রয়ে গিয়েছে। কাঠের বেড়াটি আর কখনই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। যখন তুমি কাউকে রেগে গিয়ে কিছু বলো তখন তার মনে তুমি যেন একটি পেরেক ঠুকে দাও, পরবর্তিতে তুমি তোমার কথা ফিরিয়ে নিলেও কিন্তু তার মনে ঠিক এমন ক্ষত থেকে যায় তাই নিজের রাগতে নিয়ন্ত্রন করতে শেখো। মানসিক ক্ষত অনেক সময় শারীরিক ক্ষতের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর তাইতো রবি ঠাকুর বলেছেন,
বঁধু, মিছে রাগ করো না, করো না।
মম মন বুঝে দেখো মনে মনে
মনে রেখো, কোরো করুণা”

অতএব রাগের আগুন বশে রাখুন। মনে রাখতে হবে, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন”।