গাঁজার নেশা সৃষ্টিকারী মূল উপাদানটির নাম টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC)। গাঁজায় এর পরিমাণ যত বেশী হবে, সেটা তত শক্তিশালী। অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ছিল যে শক্তিশালী গাঁজা সেবন করলে কি আসক্তি জন্মানোর সম্ভাবনা বেশী?
সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফলে এ প্রশ্নের জবাব মিলেছে। ডাচ গবেষকগণ এখন বলছেন কড়া ডোজের গাঁজা সেবনের সময় গাঁজাখোররা এমনভাবে ধোঁয়া টানে যে আসলে তার ফলে শরীরে খুব বেশী টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল প্রবেশ করে না। ফলে আসক্তি জন্মানোর বিষয়টি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মাদকাসক্তি ইন্সটিটিইউটের একদল গবেষক এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রায় একশো গাঁজাখোরের ওপর টানা দেড় বছর পর্যবেক্ষণ শেষে তারা বলছেন কড়া ডোজের গাঁজা টানলেই যে বেশী আসক্তি জন্মাবে ব্যাপারটা তা নয়। কারণ গাঁজার ডোজ কড়া হলেও গাঁজাখোরেরা ধোঁয়া এমনভাবে টানে যে শরীরে তা মাত্রাতিরিক্ত হতে পারে না।
দেখা যায় প্রতি দশ জন গঞ্জিকা সেবনকারীর মধ্যে একজন এতে আসক্ত বা নির্ভরশীল হয়ে যায়। যারা নিয়মিত এবং অতিরিক্ত কড়া গাঁজা সেবন করে তাদের মধ্যেই আসক্তির সম্ভাবনা বেশী। আসক্তি জন্মানোর মূল উপাদান টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল (THC) ।
ডাচ গবেষকগণ নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন আস্তানা থেকে প্রথমে ৬০০ গাঁজাখোর খুঁজে বের করেন। তাদের মধ্য থেকে তারা ৯৮ জনকে তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন করেন । এদের গাঁজা সেবনের পুরো প্রক্রিয়াটি টানা দেড় বছর ধরে অনুসরণ করা হয়। তাদের গাঁজা সেবনের ধরণ, সময়কাল, কতটুকু ধোঁয়া টানছে, কতটুকু গাঁজা নিচ্ছে এবং তার মধ্যে কি পরিমাণ টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল আছে- এসব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসেব রাখা হয়। তারপরে তারা ফলাফল হিসেব করে বলছেনঃ
·
গাঁজাখোরদের পুরিয়াতে টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনলের পরিমাণ ১ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকে।
·
গাঁজার পুরিয়াতে টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনলের পরিমাণ যত বেশী থাকে, গাঁজাখোরেরা ধোঁয়া তত কম টানে। কারণ অল্প
ধোঁয়াতেই তার নেশা জমে যায়।
·
ধোঁয়া টানার পরিমাণ আবার নির্ভর করে আসক্তি জন্মানোর ওপর। যারা গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ে তারা ধোঁয়া বেশী টানে।
·
মাসে কতটুকু টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল গ্রহণ করে সেটার সঙ্গে দেড় বছর পড়ে নির্ভরশীলতা জন্মানোর সম্পর্কটি তেমন সরাসরি নয়।
যেকোনো মাদকাসক্তি জন্মানোর পেছনে অনেক রকম কারণ জড়িত থাকে। এখানে ব্যক্তির আর্থসামাজিক অবস্থা, তার মানসিক পরিস্থিতি এবং পরিবেশের প্রভাবের সঙ্গে বংশগতির মিথস্ক্রিয়া কাজ করে থাকে। অনেকে মনে করছেন ডাচ
গবেষণা থেকে এখনই কোন সিদ্ধান্তে আসা সমীচীন নয়। তবে অতিরিক্ত গাঁজা শরীর এবং মন এ দুয়ের জন্যই ক্ষতিকর। এজন্য এসম্পর্কে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ van der Pol P, Liebregts N, Brunt T, et al.
Cross-sectional and prospective relation of cannabis potency, dosing and
smoking behaviour with cannabis dependence: an ecological study. Addiction.
Published online March 16 2014
No comments:
Post a Comment