শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Monday 28 April 2014

স্যার-এ কি সার?

“স্যার” শব্দ পাওয়া যায় মধ্যযুগের ফরাসী ভাষায়ফরাসী messire  থেকে sire এবং পরে তা পরিণত হয়েছে sir শব্দে। এর অর্থ “আমার প্রভু” (mylord) পুরনো ফরাসী ভাষায় sieur এসেছে Seigneur থেকে। এ শব্দটির অর্থও “প্রভু”। ল্যাটিন ভাষায় সিনিয়র বা গুরুজনদের উদ্দেশ্য করেও এটা বলা হতো এবং মূলত সেখান থেকে এটা ইউরোপীয় ভাষাসমূহে প্রবেশ করে। ১২০৫ সাল থেকে ইংরেজ নাইট বা ব্যারনদের(knight or baronet) সম্মান করে “স্যার” সম্বোধন করা হতো। ইংরেজীতে “স্বাধীন পুরুষ”, “পিতা” এবং “গুরুত্বপূর্ণ মানুষ” বোঝানোর জন্যও স্যার বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে স্যার শব্দের বিচিত্র ব্যবহার দেখা যায়। সাধারনত উচ্চ পদস্থ এবং মর্যাদার কর্মকর্তাদের এবং শিক্ষকদের “স্যার” সম্বোধন করা হতে থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদেরকেও স্যার সম্বোধন করে থাকে।  মহিলাদের জন্য সমতুল্য শব্দ হচ্ছে “ম্যাম” বা “ম্যাডাম” (ma'am or madam)তবে কম বয়সী মেয়েরা এটা শুনতে পছন্দ করে না। তারা “মিস” (miss) ডাকলে আনন্দ পায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে নাইটের সমতুল্য শব্দ হচ্ছে “ডেম” বা “লেডি”( Dame or Lady)নাইটের পত্নীদের এভাবেই সম্বোধন করা হয়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যখন সূর্য অস্ত যেতো না তখন প্রতি বছর অনেককে ঘটা করে “নাইট” (এবং লেডি) উপাধি দেওয়া হতো। ভারতে ব্রিটিশ রাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬১ সাল থেকে অনেক বিখ্যাত আমলা, সামরিক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী ভারতীয় নাগরিককে the Order of the Star of India প্রদান করা শুরু হয়। ১৮৭৮ সাল থেকে জুনিয়র অফিসারদের The Order of the Indian Empire উপাধি দেওয়া প্রচলন হয়। এসকল তকমা প্রাপ্তদের “স্যার” বলা হতো। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত  ভেঙ্গে স্বাধীন ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এ সকল উপাধি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে এটা সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হয় ১৯৫০ সালে আর পাকিস্তান নিষিদ্ধ করে ১৯৫৬ সালে।

মজার বিষয় হচ্ছে আধুনিক পশ্চিমা দুনিয়ায় এখন আর সাধারনভাবে “স্যার” সম্বোধন শোনা যায় না। প্রত্যেকের নামের দুটি অংশ-প্রথম নাম এবং পারিবারিক নাম। যেমন একজনের নাম হায়দার আলী। হায়দার আলীর পরিচিতজন তাকে শুধু “হায়দার” বলে ডাকে; কিন্তু যারা তাকে চেনেনা তারা তাকে “মিঃ আলী” বলে সম্বোধন করে। হায়দার আলী যদি কোন স্কুলের টিচার হন, তাহলে তার সকল ছাত্রছাত্রী তাকে “মিঃ আলী” বলে সম্বোধন করে থাকে। কিন্তু সহকর্মীরা “তাকে” হায়দার বলে ডাকে।

ততোধিক মজার বিষয় হচ্ছে ব্রিটিশদের প্রভুত্ব থেকে মুক্ত হয়ে উপমহাদেশের জনগণ ব্রিটিশ তকমা দেওয়ার প্রচলন আদেশ জারী করে বন্ধ করেছে। কিন্তু নিজেরা এখনও “স্যার” অর্থাৎ “হে প্রভু” ডাক শুনতে চায়; এই বেলায় অফিসার, ডাক্তার, উকিল-মোক্তার কিংবা বিচারক কোন ফারাক দেখা যায় না। সবার মনের ভিতরেই প্রভু হওয়ার সুপ্ত বাসনা। কেউ সেবক হতে চায় না। 

No comments:

Post a Comment