শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Friday, 4 April 2014

পুরুষের যৌন দুর্বলতা এবং স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ



কোলেস্টেরল কমানোর স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধ আজকাল অনেক পরিচিত পুরুষের  ইরেকটাইল ডিসফাংশন(erectile dysfunction) বা লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধ বিশেষ ভূমিকা রয়েছেআমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির ২০১৪ সালের বার্ষিক বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে  স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্য জানানো হয়েছে এবং একটি অনলাইন জার্নালেও এটা প্রকাশিত হয়েছে
৪০ বছরের বেশী বয়সী পুরুষদের প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কোন না কোন পর্যায়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগে থাকেন শারীরিক কিংবা মানসিক উভয় কারণেই ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী হলে, অতিরিক্ত ধূমপান করলে কিংবা অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি হলে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা দেখা দেয় মানসিক কারণেও অনেকের ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা, আর্থিক সমস্যা, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি কারণে এটা ঘটে থাকে
ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণের উপর পুরুষাঙ্গের উত্থানের সমস্যা যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারনে হয় তা হলে অবশ্যই সে রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। সচরাচর এই রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া  কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয়যেমনঃ সিলডেনাফিল (sildenafil)এটা অনেকের নিকট ভায়াগ্রা নামে পরিচিত। অনেকক্ষেত্রে অ্যানড্রোজেন জাতীয় হরমোন  প্রয়োগ করা হয়লিংগে ইনজেকশন কিংবা  অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রসথেসিস স্থাপন করেও এর চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এর চিকিৎসায় স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ব্যবহারের বিষয়টি একেবারেই নতুন।
বর্তমান পর্যবেক্ষণের ফলাফলে যা পাওয়া যাচ্ছে তার সারমর্ম হলঃ 
·         কোলেস্টেরল কমানোর স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধ পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশন ২৫ শতাংশ কমাতে সক্ষম।
·         স্ট্যাটিন ভায়াগ্রার মতো কার্যকরী নয়। তবে এটা ভায়াগ্রার কাজ অন্তত অর্ধেক করতে সক্ষম।
·         স্ট্যাটিন রক্তনালীকে প্রসারিত করে লিঙ্গে সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে
·         গবেষকদের ধারণা স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ব্যবহার করার ব্যাপারে এখন পুরুষেরা অধিক আগ্রহী হবেন।  
আগেই বলা হয়েছে বয়স্কদের অনেকেরই ইরেকটাইল ডিসফাংশন রয়েছে। বয়স হলে হৃদরোগের প্রকোপ যেমন বাড়ে; তেমন ইরেকটাইল ডিসফাংশনের প্রকোপও বেড়ে যায়। এখন বলা হচ্ছে কারও ইরেকটাইল ডিসফাংশনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তার হৃদরোগের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো উচিৎ। কারণ দুটোই আসলে রক্তনালীর সমস্যা। অনেক সময় কারও করোনারি হৃদরোগ প্রকাশ পাওয়ার আগেই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের লক্ষণ দেখা যায়। করোনারি হৃদরোগীদের রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর জন্য স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধ প্রচুর ব্যবহার করা হয়। এর আগের কয়েকটি পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছিল স্ট্যাটিন সেবন করলে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়। এজন্য অনেকে এটার ব্যবহার নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন।  কিন্তু এখন বড় ধরণের মেটাঅ্যানালিসিসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে আসলে স্ট্যাটিন পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশনের লক্ষণ উপশমের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে।  সার্বিকভাবে বলা যায় স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশন ২৫ শতাংশ কমাতে সক্ষম। ভায়াগ্রা ব্যবহার করলে যে উপকার হয় এটা তার সমতুল্য না হলেও, একেবারে কমও নয়। স্ট্যাটিন ভায়াগ্রার অন্তত ৫০ শতাংশ কাজ করতে সক্ষম। এখনই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসার জন্য  কাউকে স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না।তবে যাদের হৃদরোগের পাশাপাশি ইরেকটাইল ডিসফাংশন আছে, তারা যদি  স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে কিছু উপকার পায় তো ক্ষতি কি? রথ দেখা হল, কলাও বেচা হল।


তথ্যসূত্রঃ Kostis JB, Dobrzynski JM. The Effect of Statins on Erectile Dysfunction: A Meta-Analysis of Randomized Trials. The Journal of Sexual Medicine. 2014 Mar 29. PubMed PMID: 24684744. Epub 2014/04/02. Eng.

No comments:

Post a Comment