আগে মেয়েদের মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি সম্পর্কে যত
না বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা ভাবনা হতো, তার চেয়ে বেশী ছিল ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার।যে বয়সে একজন
মহিলা পেশাজীবনের সাফল্যের শীর্ষে থাকেন, তখন মেনোপজের নানারকম যন্ত্রণাদায়ক ভোগান্তি অনেকসময়
তার কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। এতদিন এটা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণামূলক কাজ হয়নি। আসলে
আগে এর প্রয়োজনও হয়নি। কারণ সমস্যা তেমন প্রকট ছিল না। তখন রজঃনিবৃত্তির বয়স পেরোনো
মহিলার সংখ্যা তেমন বেশী ছিল না। এখন মহিলাদের গড় আয়ু বেড়েছে। বর্তমানে কোটি কোটি
মহিলা রজঃনিবৃত্তির পরেও অন্তত পনেরো থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত কর্মব্যস্ত জীবন যাপন করেন। এজন্য মেনোপজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে
আবির্ভূত হচ্ছে।
মহিলাদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ের
কার্যকলাপ পুরোপুরি বন্ধ
হয়ে যাওয়াকে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বলা হয়। মেনোপজের প্রধান লক্ষণ-উপসর্গসমূহ
হচ্ছেঃ তাপঝলক বা হট ফ্লাশ, রাতে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, মানসিক
উদ্বেগ এবং অস্থিরতা বোধ করা ইত্যাদি। এরমধ্যে তাপ ঝলক বা হট ফ্লাশ খুবই কষ্টদায়ক
বিব্রতকর অভিজ্ঞতা। হট ফ্লাশ হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। এর ফলে শরীরে একধরণের গরম তাপের ঢেউ খেলে যায়। কান, মাথা, মুখ ঝাঁ ঝাঁ
করে ওঠে; মুখ লাল হয়ে যায়, প্রচুর ঘাম ঝরতে থাকে এবং অত্যন্ত
অস্থির বোধ হতে থাকে। ঘুমের মধ্যে হট ফ্লাশের কারণে শরীর ঘেমে যায়, ঘুম ভেঙে যায়
এবং অবসন্ন বোধ হয়। কেন হট
ফ্লাশ হয় তার কারণ এখনও তেমন পরিস্কার নয়।
অর্ধেকের বেশী মহিলা মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির সাত বছর পরেও তাপ ঝলক
অনুভব করতে পারেন এবং রাতে ঘামতে পারেন। মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ-উপসর্গ গড়ে ৭ বছর
থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যাদের মেনোপজ কম বয়সে হয় তাদের ক্ষেত্রে এটা ৯ বছর
পর্যন্ত ঘটতে দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ গড়ে ১০ বছর
এবং জাপানী এবং চীনা মহিলাদের গড়ে ৫ থেকে ৬ বছর স্থায়ী হয়। শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা সাড়ে ছয় বছর স্থায়ী হয়। সুতরাং মেনোপজের পরে দীর্ঘদিন যাবত এর
আনুষঙ্গিক লক্ষণ উপসর্গ চলতে থাকলে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই।
মোনাস ইউনিভার্সিটির গবেষকগণ সম্প্রতি মহিলাদের মেনোপজ এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করেছেন। ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মজীবি প্রায় দুই হাজার মহিলার ওপর তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
দেখা যাচ্ছে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির ফলে যে তাপ ঝলক
এবং অন্যান্য যে সকল উপসর্গ হয় তা শুধু মহিলাদের শারীরিক এবং মানসিক অসুবিধা
সৃষ্টি করে তাই নয়; এরফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বিঘ্নিত হয়। সাধারনত
যে সকল মহিলা বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত সঙ্গীবিহীন, অতিরিক্ত মোটা, ধূমপায়ী, সন্তান-সংসারের দেখাশোনা করতে হয় এবং নিজের আবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে তাদের কর্মক্ষমতা
বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
অস্ট্রেলিয়াসহ সব
দেশেই এখন কর্মজীবী মহিলার সংখ্যা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এর মানে মহিলাদের
মেনোপজের সমস্যাও বাড়তে থাকবে। আপাতদৃষ্টিতে প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে চার জনই কর্মক্ষেত্রে মেনোপজ সত্ত্বেও সুচারুরূপে কাজকর্ম করে যান। কিন্তু যাদের তাপঝলক এবং মেনোপজের অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা বেশী তারাই বেশী সমস্যা বোধ করে থাকেন। এজন্য কর্মজীবি মহিলাদের মেনোপজের লক্ষণ-উপসর্গ শনাক্ত করে তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের সুস্থতা এবং নির্ঝঞ্জাট কর্মজীবন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্রঃ
- Gartoulla P, Bell RJ, Worsley R, Davis SR. Menopausal vasomotor symptoms are associated with poor self-assessed work ability. Maturitas. 2016; 87:33-9.
- Avis NE, Crawford SL, Greendale G, et al. Duration of menopausal vasomotor symptoms over the menopause transition. JAMA Internal Medicine. 2015 ;175(4):531-9.
- Richard-Davis G, Manson JE. Vasomotor symptom duration in midlife women-research overturns dogma. JAMA Internal Medicine. 2015;175(4):540-1.
No comments:
Post a Comment