শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Sunday, 29 December 2013

টাইপ-২ ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং রজঃনিবৃত্তি

দেখা যাচ্ছে ৪৫ বছরের কম বয়সী মহিলাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস মেলিটাস থাকলে তাদের রজঃনিবৃত্তি সাধারণত আগে হয়ে যায়। সম্প্রতি ল্যাটিন আমেরিকার ১১ টি দেশে প্রায় ৬০০০ মহিলার উপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের রজঃনিবৃত্তি হয়েছে গড়ে ৪৮ বছর বয়সে।  কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের রজঃনিবৃত্তি হয়েছে ৫০ বছর বয়সে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে ৪৫ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে ডায়াবেটিস আর রজঃনিবৃত্তির উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। আর রজঃনিবৃত্তি হওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ারও কোন সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। গবেষকগণ মনে করছেন ডায়াবেটিস থাকলে প্রজনন তন্ত্রের ওপর কোন প্রভাবের কারণে দ্রুত রজঃনিবৃত্তি ঘটে। কিন্তু এর আসল রহস্য কি সেটা তারা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। 

তথ্যসূত্রঃ

Monterrosa-Castro A, Blumel JE, Portela-Buelvas K, Mezones-Holguin E, Baron G, Bencosme A, et al. Type II diabetes mellitus and menopause: a multinational study. Climacteric : the journal of the International Menopause Society. 2013 Dec;16(6):663-72.

উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এতদিন হৃদরোগের সঙ্গে উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার সম্পর্ক প্রমাণিত সত্য ছিল। এখন স্ট্রোকের জন্যও উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা করাকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে

উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা এমন একটি বিষয় যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেশী। অকারণে  দীর্ঘদিন উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তায় ভুগলে আমাদের রক্তনালীতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি ছয় হাজারের বেশী মানুষের ওপর ১৬ বছর পর্যবেক্ষণ করে গবেষকগণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা স্ট্রোকের প্রকোপ বাড়ায়। এর আগে কখনও স্ট্রোকের জন্য উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তাকে এভাবে সরাসরি সম্পর্কিত মনে করা হয়নি।

অতএব হৃদরোগ প্রতিরোধের মত স্ট্রোক প্রতিরোধ করার জন্যও আমাদের উদ্বেগবিহীন এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করার অভ্যাস করতে হবে।


তথ্যসূত্রঃ
Lambiase MJ, Kubzansky LD, Thurston RC. Prospective Study of Anxiety and Incident Stroke. Stroke. 2013 December 19, 2013.

Thursday, 19 December 2013

ভিটামিন প্রতিদিন আর না

অনেকের ধারণা প্রতিদিন ভিটামিন খেলে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি তাজা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত Physicians' Health Study II (PHS II)-এর ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৬৫ বছরের বেশী বয়সীরা টানা একযুগ ধরে ভিটামিন খেয়েও কোন উপকার পাননি। একই সময়ে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে ক্যান্সার কিংবা হৃদরোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও নিয়মিত ভিটামিন সেবনের কোন উপকারিতা নেই।  গবেষকগণ মনে করছেন এর মাধ্যমে  মাল্টিভিটামিন নিয়ে বিতর্কের চিরতরে অবসান ঘটতে যাচ্ছে। যারা অপুষ্টিতে আক্রান্ত না তাদের শুধু শুধু নানারকম ভিটামিন সেবন করার কোনই যুক্তি নেই।

তথ্যসূত্রঃ Ann Intern Med. Published online December 17, 2013. 

Wednesday, 11 December 2013

ডিমেনসিয়া বাড়ছে

অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভুলে যাওয়া ভালো। কিন্তু ভুলে যাওয়া যখন সত্যি সত্যি রোগ হিসেবে দেখা দেয়, তখন সেটা চিন্তার বিষয় বটে। অনুমান করা হচ্ছে পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ডিমেনসিয়ায় ভুগছে। অর্থাৎ তারা বুদ্ধিভ্রংশ, ভুলোমনা বা তাদের কিছু মনে থাকে না। তারা স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতে পারেনা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে, সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়,এমনকি তাদের নিজের যত্ন নেয়ার ক্ষমতাও থাকে না এবং আরও অনেক রকম শারীরিক এবং স্নায়বিক সমস্যায় ভুগে থাকে। এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে ডিমেন্সিয়ার রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে সাত কোটিআর ২০৫০ সালে এ সংখ্যা হবে সাড়ে তের কোটি অর্থাৎ পুরো এক বাংলাদেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশী। অনেকের মনেই আশঙ্কা এত বুদ্ধিভ্রংশ মানুষের সেবাযত্নের ব্যবস্থা কিভাবে হবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখন পর্যন্ত ১৯৩ টি দেশের মধ্যে মাত্র ১৩ টি দেশে বুদ্ধিভ্রংশ রোগীদের চিকিৎসার কিছু ব্যবস্থা আছেকিন্তু দুনিয়াজুড়ে যেভাবে ভুলোদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে শীগগিরই ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করবে।  

Tuesday, 10 December 2013

সেক্সটিং বাড়ছে



মোবাইল ফোন কিংবা -মেইলের মাধ্যমে যৌন উদ্দীপক মেসেজ বা ছবি পাঠানোকে সেক্সটিং বলে ২০০৪ সালে প্রথম কানাডা এবং এরপর বিভিন্ন দেশে সেক্সটিং শব্দটা ব্যবহার করা হতে থাকে। সবশেষে ২০১২ সাল থেকে এটা ইংরেজি ডিকশনারীতেও স্থান করে নিয়েছেএখন বিশ্ব জুড়ে সেক্সটিং বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে শুরুতে সেক্সটিং মূলত যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা কানাডার মতো দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু জরীপে দেখা যায় ৬৪ ভাগ ব্রাজিলিয়ান সেক্সটিং করে ভারতে শতকরা প্রায় ৫৪ ভাগেরও বেশি মানুষ সেক্সটিং করছে উদ্বেগের বিষয় হলো সেক্সটিং কিশোর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় আমেরিকায় ৩০ ভাগ কিশোর-কিশোরী নিজেদের নগ্ন ছবি ইমেইল বা মোবাইল ফোনে অন্যদের পাঠিয়ে থাকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা সেক্সটিং বেশি করে আবেগপ্রবণ, অরক্ষিত, নিঃসঙ্গ ও স্নেহবঞ্চিত সন্তানেরা এই ধরনের কাজে বেশী জড়িয়ে যায় অনেকে মনে করেন ভারতে সেক্সটিং বাড়ার কারণ যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, পারিবারিক মূল্যবোধের পরিবর্তন, গভীর রাত করে পার্টি, মোবাইল ফোন ইন্টারনেটে বেশি সময় ধরে থাকা ইত্যাদি সেক্সটিং কোন দেশেই কিংবা সমাজেই ভালো কাজ হিসেবে গন্য হচ্ছে না বরং অনেক দেশেই এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে ইদানীং অস্ট্রেলিয়া সেক্সটিং আইন কঠোর করেছে এবং এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল-কলেজে প্রচারণা চলছে। বাংলাদেশে এটা কতটা ছড়িয়েছে সে সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে আমাদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।  

Monday, 9 December 2013

ডায়াবেটিসের হিসেব-নিকেশ

  • ২০১৩ সালে দুনিয়াজুড়ে ৩৮২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। ধারণা করা হচ্ছে ২০৩৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৫৯২ মিলিয়নে উন্নীত হবে।
  •  প্রতি পাঁচ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে চার জন নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে।
  • বেশীরভাগ ডায়াবেটিস রোগীর বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছর।
  •  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ডায়াবেটিস রোগীদের অর্ধেকেরই রোগ শনাক্ত করা হয় না।
  • বাংলাদেশে ২০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার ৬.৩% এবং মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫১ লাখ। 
  • ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার জন্য উত্তর আমেরিকা এবং ক্যারিবিয় দেশসমূহ ২৬৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। এটা ডায়াবেটিসের পেছনে সারা দুনিয়ার ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার খরচ মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার যা সারা দুনিয়ার ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য মোট ব্যয়ের এক শতাংশেরও কম।

তথ্যসূত্রঃ www.idf.org/diabetesatlas   

Tuesday, 19 November 2013

“লায়েক” হওয়ার বয়স ১৬ নাকি ১৫?

বিলেতের ছেলেমেয়েদের বয়স ১৬ হলে তারা “লায়েক” হয়েছে বলে গণ্য করা হয়তখন তারা আইনতঃ সম্মতি দেওয়ার যোগ্য হয়, বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে ডেটিং করতে পারে , মদ খেতে পারে , দোকান থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের সামগ্রী কিনতে পারে। ১৮৮৫ সালে ইংল্যান্ডে  শিশু পতিতাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য তীব্র সামাজিক আন্দোলনের মুখে সম্মতি দানের বয়স ১৬ নির্ধারণ করা হয়।  কিন্তু আজকাল আর কেউ ১৬ বছর বয়স হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে চায় না। প্রতি তিন জনে একজন বয়স ১৫ হতেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে। এত বিপুল সংখ্যক কিশোর কিশোরীর যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে উপদেশ এবং সেবা দিতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে । তাই সেবাদানে সুবিধার জন্য এই বয়স সীমা ১৬ থেকে কমিয়ে ১৫ বছর করার প্রস্তাব উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন অ্যাস্টন এই প্রস্তাব দিয়েছেন। বিলেতের সরকার অবশ্য তাতে সায় দেয়নিকারণ শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য ১৬ বছরের বয়স সীমা  মেনে চলার দরকার রয়েছে। কিশোর-  কিশোরীদের যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করলেও তারা তড়িঘড়ি কোন সিদ্ধান্তে যেতে চান না। ব্রিটিশ উপপ্রধান মন্ত্রী মনে করেন, এ সম্পর্কে আরও আলোচনা এবং বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে ।

Sunday, 12 May 2013

নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনও চলছে



১৯৩৬ সাল পর্যন্তও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ ছিল নিউমোনিয়া অ্যান্টিবায়োটিক  আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হার কমতে শুরু করেছে কিন্তু এখনও সারা পৃথিবীতে শিশুদের মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ নিউমোনিয়া বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৩ জন শিশু নিউমনিয়াতে মৃত্যু বরণ করে নিউমোনিয়াতে যত মৃত্যু হয়, তার ৯৯% উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ঘটে এদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে- বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশিয়া এবং সাব-সাহারার দেশসমুহ  ২০১১ সালেও বিশ্বে প্রায় ১৪ লাখ ৫ বছরের কম বয়সী শিশু নিউমোনিয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করেছে   এইডস, ম্যালেরিয়া  এবং হামের  কারণে যত মৃত্যু হয়, এ সংখ্যা তার চেয়ে বেশী
২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর ১২ নভেম্বর “বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসহিসেবে পালন করে আসছে নিউমোনিয়া সম্পর্কে বিশেষত শিশুদের নিউমোনিয়া সম্পর্কে সারা পৃথিবীতে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ শিশুদের নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব জোটের উদ্যোগে (Global Coalition Against Child Pneumonia)প্রতি বছর এই দিবস পালন করা হয়
স্বভাবতই মনে প্রশ্ন আসে নিউমোনিয়া কি? নিউমোনিয়া ফুসফুসের এক ধরনের জীবাণুজনিত সংক্রমণ আমাদের ফুসফুস অসংখ্য ছোট ছোট বায়ুথলি দিয়ে তৈরি নিউমোনিয়া হলে ফুসফুসের বায়ুথলি প্রদাহজনিত রস এবং পুঁজ দিয়ে ভরে যায় এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথা হয় শিশুদের নিউমোনিয়া হলে সহজেই তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যু ঘটে
নানারকম জীবাণুর কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে; যেমন-ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক সাধারণত যে সকল জীবাণু দ্বারা নিউমোনিয়া হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, হিমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-বি, রেস্পিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস ইত্যাদি এইডস আক্রান্তদের মধ্যে নিউমোসিস্টিস জিরভেচি নামে পরিচিত অস্বাভাবিক জীবাণু দ্বারা নিউমোনিয়া হয়
কিভাবে নিউমোনিয়ার জীবাণু ছড়ায়? নিউমোনিয়ার জীবাণু আমাদের নাক এবং গলায় বাস করেবিশেষ পরিস্থিতিতে শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকলে নিউমোনিয়া হয় সাধারণত আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে জীবাণু ছড়ায়
যে জীবাণু দিয়ে নিউমোনিয়া হোক না কেন, লক্ষন-উপসর্গ প্রায় একই রকম তবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ার উপসর্গ ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার উপসর্গের চেয়ে তীব্র হয় নিউমোনিয়ার প্রধান উপসর্গ- শ্বাসকষ্ট, শ্বাসের গতি বৃদ্ধি, কাশি, জ্বর, কাঁপুনি, ক্ষুধামন্দা, বুকে সাঁইসুঁই শব্দ হওয়া  ইত্যাদি
শিশুদের মারাত্মক নিউমোনিয়া হলে শ্বাসের গতি অনেক বেড়ে যায় এবং দম নেওয়ার সময় পাঁজর দেবে যায় খুব তীব্র নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু পানাহার করতে পারে না, অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা খুব কমে যেতে পারে, খিঁচুনি হতে পারে; এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে  
নিউমোনিয়া হওয়ার পেছনে অনেকগুলি ঝুঁকি উপাদান কাজ করতে পারে যে সকল শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে যে সকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে না তাদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় অন্য কোনও গুরুতর রোগ থাকলে, হাম কিংবা এইচ আই ভি/ এইডস আক্রান্ত শিশুদেরও নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
কতগুলি পরিবেশগত কারণেও নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে যেমন- ঘরের ভিতরে বায়ু দূষণ, ধূমপান, বদ্ধ ঘরে অতিবসতি ইত্যাদি 
উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিৎসা করলে সহজেই নিউমোনিয়া নিরাময় করা যায় এজন্য আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল কিংবা একজন চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হয় তবে অধিকাংশ নিউমোনিয়ার রোগীকে বাড়িতেই উপযুক্ত সেবা দিয়ে চিকিৎসা  করা সম্ভব যে সকল শিশুর বয়স ২ মাসের কম কিংবা যারা মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভুগছে তাদেরকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা উচিত ১৪ টি উন্নয়নশীল দেশের এক জরীপে দেখা যায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের প্রতি ৪ জনের মাত্র ১ জন উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক পায় যত শিশুর নিউমোনিয়া হয়, তাদের মধ্যে প্রতি দুই জনের মধ্যে এক জন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুযোগ পায়
শিশু মৃত্যু হার কমানোর জন্য নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যথাযথ পুষ্টি, সুস্থ পরিবেশ এবং টীকার সাহায্যে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায় হাম, হুপিং কাশি এবং হিমফিলাস নিউমনির বিরুদ্ধে  টীকা প্রদানের মাধ্যমে অর্ধেকের বেশী নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব
জন্মের পর শিশুকে প্রথম ৬ মাস বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায় মায়ের বুকের দুধ শুধু নিউমোনিয়া প্রতিরোধই করে না, এটা নিউমোনিয়ার স্থায়িত্বকালও কমায়  ঘরের বায়ুদূষণ কমানো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি যত্নশীল থাকলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ সহজেই কমানো সম্ভব
বিভিন্ন জরীপে দেখা যায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারলে এবং  সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে প্রতিবছর ১০ লাখ শিশুর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব শুধুমাত্র সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলেও ৬ লাখ শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায় পৃথিবীর ৪২ টি গরীব দেশের শিশুদের নিউমোনিয়া উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিৎসা করার জন্য প্রতিবছর ৬০ কোটি ডলার দরকার দক্ষিন এশিয়া এবং সাব-সাহারার দেশগুলির শিশুদের নিউমোনিয়া চিকিৎসার জন্য এর তিন ভাগের এক ভাগ মানে ২০ কোটি ডলার প্রয়োজন কিন্তু এর মাধ্যমে দুনিয়ার ৮৫% নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব এই অর্থ দিয়ে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক নয়, স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও সম্ভব  
এজন্য ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের এক কর্মসূচী [Global action plan for the prevention and control of pneumonia (GAPP)] শুরু করেছে এর উদ্দেশ্য সারা পৃথিবীতে শিশুদের নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ কমানো এবং আক্রান্ত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এর জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা হল- 
·    মায়ের বুকের দুধ পান, হাত ধোয়া এবং ঘরের ভিতরে বায়ুদূষণ প্রতিরোধের মাধ্যমে শিশুদের নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমানো
·         নিউমোনিয়ার টীকা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ
·   প্রতিটি নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবায়োটিক এবং অক্সিজেন দিয়ে  চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এর স্বাস্থ্য কাঠামোকে সে ভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা


বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যু হার ৬৬% কমেছে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১৬% নিউমোনিয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করেছে নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর ফলে আগামীতে এটা অনেক কমবে বলে আশা করা হচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের নিউমোনিয়ার টীকা দেওয়া শুরু হবে অতএব নিউমোনিয়ার বিষয়ে আমরা সকলে সচেতন হলে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব
  



বড়দের হাম



হাম সাধারণ রোগ নয়। হামের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টিসহ নানা রকম জটিলতা হতে পারে। এ রকম প্রচারণা আমরা প্রতিনিয়ত শুনি। ইদানীং হাম শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও আক্রমণ করছে। এ জন্য হাম প্রতিরোধে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
হাম ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এটা অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি। পৃথিবীব্যাপী এর প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এর ভাইরাস আশপাশের সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির কৰে প্রবেশ করলেও সুস্থ কেউ হামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
হামের ভাইরাসের সুপ্তিকাল ১০ থেকে ১৪ দিন। অর্থাৎ সুস্থ কারোর শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করার ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লৰণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায়। হাম হলে প্রচন্ড জ্বর হয়। জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা, চোখ-নাক দিয়ে পানি ঝরা, কাশি, মাথাব্যথা, কানে ব্যথাসহ নানাবিধ উপসর্গ থাকে। জ্বর শুরু হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিনের মাথায় শরীরে লাল দানা ওঠে। হামের লাল দানা ওঠার ৪ দিন আগে থেকে শুরম্ন করে পরবতর্ী ৪ দিন পর্যনত্ম রোগীর শরীর থেকে হামের জীবাণু অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। সারা বছর পৃথিবীতে প্রায় ১ কোটি মানুষ হাম দ্বারা আক্রানত্ম হয়। এদের মধ্যে নানা রকম জটিলতার কারণে ২ লাখের মৃতু্য ঘটে থাকে। হামের কারণে ৫ বছর কম বয়সী শিশুরাই বেশি মৃতু্যবরণ করে। নবজাতক এবং বড়রাই হামের জটিলতার বেশি শিকার হয়।
ইদানীং কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী এবং বড়দের হাম হতে দেখা যাচ্ছে। আগেই বলা হয়েছে বড়দের হাম হলে জটিলতা বেশি হয়। হামের জটিলতার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে মারাত্মক নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানের সংক্রমণ ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেক সময় মসত্মিষ্কের প্রদাহ হতে পারে। হাম শিশুদের অপুষ্টির একটি কারণ। গর্ভাবস্থায় মায়েদের হাম হলে গর্ভপাত ও অকাল প্রসব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া গর্ভস্থ শিশুর ওজন কমে যায়।
কারও হাম হলে অবশ্যই অবহেলা করা যাবে না। হাম আক্রানত্ম ব্যক্তির পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টি এবং পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘাম প্রতিরোধযোগ্য একটি ব্যাধি। এর বিরম্নদ্ধে অত্যনত্ম কার্যকর টিকা রয়েছে। সম্প্রসারিত টিকা দান প্রকল্পের অধীনে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হামের বিরম্নদ্ধেও টিকা দেয়া হয়।
এছাড়া হাম, মাম্পস এবং রম্নবেলা রোগের বিরম্নদ্ধে ব্যবহারের জন্য আরেক ধরনের অত্যনত্ম কার্যকর টিকা বাজারে পাওয়া যায়। যাদের জন্ম ১৯৫৭ সালের পরে এবং যাদের শৈশবে হাম হয়নি কিংবা শৈশবে হামের টিকা নেয়ার নিশ্চিত প্রমাণ নেই তাদের এমএম আর টিকা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী,শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, বিদেশ ভ্রমণকারী কিংবা ঝুঁকিগ্রস্থ মনে করছেন এমন প্রত্যেকের অন্তত দুই ডোজ এমএম আর টিকা গ্রহণ করা উচিত। হামের টিকা নিরাপদ। এমএমআর টিকারও তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে গর্ভাবস্থায় মায়েদের এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এ টিকা গ্রহণ করা উচিত নয়। টিকা নেয়ার পরে সামান্য জ্বর কিংবা টিকা প্রদানের স্থানে লাল চাকা কিংবা ফুলে যেতে পারে যা কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।


হাসতে নেই মানা


 

বাংলা সাহিত্যে মজার জগতের কারিগর সুকুমার রায় লিখেছিলেন-
রাম গড়ুরের ছানা হাসতে তাদের মানা
হাসির কথা শুনলে বলে
হাসব না-না, না-না
সদাই মরে ত্রাসে-
ঐ বুঝি কেউ হাসে।
এক চোখে তাই মিটমিটিয়ে
তাকায় আশে পাশে।
ঘুম নাহি তার চোখে,
আপনি বকে বকে
আপনারে কয়,
হাসিস্ যদি মারব কিন্তু তোকে।
যায় না বনের কাছে,
কিংবা গাছে গাছে
দখিন হাওয়ার সুড়সুড়িতে
হাসিয়ে ফেলে পাছে। (সংক্ষেপিত)

হাসি সম্পর্কে এত সুন্দর প্রকাশ কমই দেখা যায়। বিশ্বসাহিত্য কিংবা চিত্রশিল্প কর্মেও হাসি নিয়ে আমরা নানারকম অমর সৃষ্টি দেখি। মোনালিসার হাসি নিয়ে যেমন গবেষণা এখনো শেষ হয়নি, তেমন অনেক জানার বাকি ক্রীতদাসের হাসিসম্পর্কে। কিন্তু হাসির ঔষধি মূল্য নিয়ে সচরাচর তেমন কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আজকাল মালিশ চিকিৎসা, জল চিকিৎসা, সুগন্ধি চিকিৎসা, স্পর্শ চিকিৎসা, কম্পন চিকিৎসা ইত্যাদি নানাবিধ চিকিৎসার প্রসার দেখতে পাই। এর পাশাপাশি হাস্যরসেরও চিকিৎসা গুণ রয়েছে। হাসলে কিংবা হাসালে চিন্তা প্রফুল্ল হয়, মন উদ্দীপিত হয়, বিষন্ন বিপর্যস্ত ব্যক্তি বাঁচার আনন্দ খুঁজে পায়। হাসিখুশি ব্যক্তি, সুস্থ ব্যক্তি। অবশ্য হাস্য-গবেষকগণ এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না আসলে হাসিই মানুষকে সুস্থবোধ করতে সাহায্য করে, নাকি এর পেছনে আরো অন্য কোনো কারণ রয়েছে। যারা হাসেন, তাদের রসবোধ প্রখর হয়; তারা জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। হাসিখুশি ব্যক্তিকে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজনেরাও পছন্দ করেন। হাসিখুশি ব্যক্তির সাহচর্যে এসে কেউ গোমরা হয়ে বসে থাকতে পারেন না। হাসির এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় এ নিয়ে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি।

হাসলে শরীরে কি ঘটে?

হাসলে শরীরে নানারকম শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মুখম-ল ও শরীরের পেশি প্রসারিত-সংকুচিত হয়, হৃদঘাত এবং রক্তচাপ পরিবর্তিত হয়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং আমাদের শরীরের সর্বত্র অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রবাহিত হয়। অনেকে বলেন হাসি এবং ব্যায়ামের উপকারিতা একই রকম। হাসির পাশাপাশি যদি কেউ হাল্কা শরীরচর্চা করেন, তাহলে তারা আরো উপকৃত হবেন। যারা ঘরে ব্যায়ামের যন্ত্র দিয়ে শরীরচর্চা করেন তাদের হৃদস্পন্দন ১০ মিনিটে যতটুকু বাড়ে, ১ মিনিটের প্রাণখোলা হাসিতেও সমপরিমান হৃস্পন্দন বাড়ে। হাসলে প্রচুর ক্যালরিও খরচ হয়। হিসাব করে দেখা গেছে ১০-১৫ মিনিটের হাসির ফলে ৫০ ক্যালরি খরচ হয়। এই হিসেব দেখে, তাই বলে কেউ যেন শরীরচর্চা ছেড়ে না দেন। একটি চকোলেট খেলেও আমরা ৫০ ক্যালরি পাই। প্রতি ঘণ্টায় ৫০ ক্যালরি খরচ করে আমরা যদি ১ পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের পুরো ১ দিন হাসতে হবে। বিগত কয়েক দশকের গবেষণায় শরীরের ওপরে হাসির প্রভাব সম্পর্কে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে।

রক্তপ্রবাহ

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ একটা মজার গবেষণা করেছেন। কাউকে কমেডি নাটক বা দুঃখের নাটক দেখতে দিলে তাদের রক্ত প্রবাহের ওপর কেমন প্রতিক্রিয়া হয়, তারা গবেষণার মাধ্যমে সেটাই পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফলাফল যা ভাবার তাই হয়েছে। যারা হাসির নাটক দেখেছেন তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপ্রবাহ বেড়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিংবা উদ্বেগ, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। কিন্তু কিছু পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, হাস্যরস শরীরে রোগ প্রতিরোধের জন্য দরকারি কোষ এবং অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ
ডায়াবেটিস রোগীদের ওপর হাসি-তামাশার প্রভাব নিয়ে কিছু গবেষণা হয়েছে। এর ফলাফলও বেশ মজার। বলা হচ্ছে হাসি-তামাশা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমানোর জন্য সহায়ক।

শিথিলায়ন এবং ঘুম

নরমান কাজিন নামে এক ভদ্রলোক একটি বই লিখেছেন। মূলত তার বইটি হাসির উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসা গবেষকদের প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কাজিনের এক ধরনের বাত হয়েছিল যার ফলে শিরদাঁড় এবং কোমরে প্রচ- ব্যথা হয়। উনি অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছেন ওষুধ সেবনে তার যত না উপকার হতো, তার চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যেত কোনো হাসির সিনেমা দেখলে। উনি বলেছেন দশ মিনিট হাসতে পারলে দুঘণ্টা আরামে ঘুমোনো যেত।

হাসি এক অমূল্য ওষুধ

হাসির উপকারিতা নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকলেও গবেষকগণ এর প্রকৃত রহস্য উদ্ধার করতে গিয়ে পড়েছেন এক গোলকধাঁধায়। কারণ হাসি সংক্রান্ত গবেষণাগুলোর পরিসর ছোট এবং তেমন নির্ভরযোগ্য ও গোছানো নয়। অনেক গবেষক আগে থেকেই হাসির ইতিবাচক দিক প্রমাণের জন্য পক্ষপাতমূলক কাজ-কর্ম করেছেন। ফলে হাসির উপকারিতা সম্পর্কে নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া কঠিন। সবচেয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যায় ব্যথানাশক হিসেবে হাসির ভূমিকা নিয়ে। অনেক গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে হাসলে আঘাতজনিত ব্যথার অনুভূতি অনেক কমে যায়। অবশ্য এটা কি শুধু হাসির প্রভাব, না আর কোনো উপাদান এখানে কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন বলা হচ্ছে হাসলে মানুষের অসুস্থতার হার কমে যায়। নাকি যারা সুস্থ তারা বেশি হাসতে পারেন? এ জন্য হাসিই সুস্থতার নিয়ামক নাকি, সুস্থতার ফল হাসি তামাশাÑ এ প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ নয়।

উন্নত জীবনের জন্য হাসি

এ কথা অনস্বীকার্য হাসি সামাজিকায়নের চাবিকাঠি। হাসি স্বর্গীয়। হাস্যরসিক ব্যক্তি বন্ধুবৎসল, পরিবার-পরিজনবেষ্টিত সুখী মানুষ। এটা হাসির কারণে নাকি সুখী পরিবারের ফসল হাসি, তা নিয়ে অযথা বিতর্ক না করে, আমরা সকলের মুখে হাসি চাই। নিঃসঙ্গ ব্যক্তির চেয়ে বন্ধু-বান্ধব পরিবৃত্ত ব্যক্তি ৩০ গুণ বেশি হাসেন। যারা হাসেন তাদের সঙ্গে আশপাশের মানুষের সংযোগ অধিকতর ঘনিষ্ঠ। স্বাস্থ্যের ওপর এসবের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
হাসি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু আমরা শুধু বাঁচার জন্য হাসি না। পরিবার প্রিয়জনদের সঙ্গে হাস্যময় আন্তরিকতা আমাদের আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করে; কেন করে তা অনুসন্ধান হাসি গবেষকগণ করতে পারেন। হাসি যদি আমরা উপভোগ করি তো সেটাই কি হাসির জন্য যথেষ্ট কারণ নয়? এর জন্য কি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের দরকার আছে?

কীটনাশকের স্বাস্থ্যঝুঁকি




দুটিই বাড়ছে। কৃষিক্ষেত্রে ও দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকি এবং দিন দিন এসব কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। বাড়ির টবে লাগানো ফুলগাছ থেকে শুরু করে বাগানের শাকসবজি, লাউ-কুমড়া, বেগুন-বরবটির গাছ আর মাঠে ধান, পাট, যবসহ সব ধরনের শস্যের বালাইনাশক হিসেবে এসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। কলা থেকে শুরু করে আম, আপেল, পেয়ারা, বরই, আঙুর ইত্যাদি ফল সংরক্ষণ এবং পাকানোর জন্যও নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে আজকাল বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপও বেড়েছে। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহারের সঙ্গে ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না? ব্রিটেনের ক্যান্সার গবেষণা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য এবং কিছু গবেষণার ফলাফল থেকে বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহারের সঙ্গে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ সম্পর্ক কতটা জোরালো তা বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে বলেননি।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যাঁরা কীটনাশক দ্রব্যাদি ছিটানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের শরীরে এগুলো অতিরিক্ত প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত যাঁরা কীটনাশক ব্যবহারের সতর্কতামূলক নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলেন না তাঁদের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে এবং এ ধরনের কৃষিক্ষেত্রের কর্মীদের মধ্যে লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমার প্রকোপ তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
ক্যান্সার গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থাও এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে এবং তাদের ধারণা, নিয়মিত যেসব কৃষিকর্মী কীটনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত, তাঁদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। ডিডিটি ও লিনডেন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি পাওয়া গিয়েছিল। ইদানীং এ ভয়ংকর রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে, কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী আর কীটনাশক ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে আবশ্যক। কিন্তু মানব শরীরের জন্য কীটনাশক ক্ষতিকর কি না তা জানাও আমাদের জরুরি।
কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আছে। পাশাপাশি অন্য কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহার নিরাপদ।
সম্প্রতি বলা হয়েছে, ফল ও সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা প্রাণীদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু খাবারে এসব কীটনাশকের মাত্রা খুব কম থাকে। মানুষের শরীরে এরা ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে কি না তা এখনো সরাসরি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের সাধারণ জ্ঞান এটাই বলে যে সাবধান থাকাই উত্তম। বাজারের ফল-সবজি, মাংস-মাছ এখন কিছুই আর রাসায়নিক কীটনাশক কিংবা রাসায়নিক সংরক্ষকমুক্ত নয়। একজন নিরীহ ভোক্তার পক্ষে এসব যাচাই করা কিংবা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সতর্কতামূলক প্রতিরোধব্যবস্থা অনুসরণ করাই উত্তম_ যেকোনো ফল এবং কাঁচা সবজি গ্রহণের আগে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে কিংবা ডুবিয়ে রাখতে হবে।
এত দিন চিকিৎসা শাস্ত্রের শিক্ষা মোতাবেক জেনেছি, ফল-সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আজ নিয়তির পরিহাস, সেই ক্যান্সার প্রতিরোধক শাকসবজি, ফলমূল রাসায়নিক কীটনাশক ও সংরক্ষক ওষুধের অতি প্রয়োগ কিংবা অপব্যবহারে ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।