প্রতিদিন ১ ঘণ্টা যোগ সাধনা করলে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিভিন্ন হিসেব অনুসারে অনেক দেশেই আজকাল প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি। সাধারণত কারো সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণয় করা হয়। সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ থেকে ১৩৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০-৮৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ থাকাকে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সতর্ক না হলে এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন না করলে কিছুদিনের মধ্যেই প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ প্রকৃত উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, যোগ সাধনার মাধ্যমে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এ সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত রোগীদের অ্যারোবিক ব্যায়াম, খাবার মেনে চলা এবং ধূমপান পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে এর সঙ্গে যারা নিয়মিত এক ঘণ্টা হঠযোগ করেছেন তাদের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
যোগ সাধনার মূলত দুটি ভাগ ঃ হঠযোগ এবং রাজযোগ । হঠযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীরকে সুস্থ-সবল করা। হঠযোগের ধারণা অনুসারে শক্তিকে আয়ত্ত করতে হলে শরীর নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সকলে যোগ বলতে হঠযোগের ব্যায়াম বা আসনগুলোকে বুঝে থাকেন। রাজযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবাত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করা। হঠযোগ ব্যায়ামের মূল তিনটি উপাদান - আসন, প্রাণায়ম এবং ধ্যান। এদের মধ্যে কোন উপাদান কিভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, বিশেষজ্ঞগণ তার ব্যাখ্যা না দিলেও যোগ সাধনা যে রক্তচাপ কমাচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিত। তিনমাসের যোগ সাধনায় তারা রক্তচাপ গড়পড়তা ৪.৫ থেকে ৪.৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ কমার প্রমাণ পেয়েছেন।
রক্তচাপ মাত্র ২ মিঃ মিঃ পারদ চাপ কমাতে পারলে হৃদরোগের হার ৬% এবং স্ট্রোকের হার ১৫% কমানো সম্ভব। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশসমূহে কমবয়সী যুবকদের মধ্যেও অস্বাভাবিক হারে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগ বাড়ছে। ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন এই বিশাল স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবেলায় যোগ সাধনা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশে যোগ সাধনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও এটাকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রয়োগ করার সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ এক্ষেত্রে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছেন।
তথ্যসূত্রঃ European Society of Cardiology news release