শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Saturday 24 December 2016

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম



প্রতিদিন ১ ঘণ্টা যোগ সাধনা করলে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিভিন্ন হিসেব অনুসারে অনেক দেশেই আজকাল প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি। সাধারণত কারো সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণয় করা হয়।  সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ থেকে ১৩৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ  এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০-৮৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ থাকাকে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। 

সতর্ক না হলে এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন না করলে কিছুদিনের মধ্যেই প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ প্রকৃত উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, যোগ সাধনার মাধ্যমে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এ সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত রোগীদের অ্যারোবিক ব্যায়াম, খাবার মেনে চলা এবং ধূমপান পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে এর সঙ্গে যারা নিয়মিত এক ঘণ্টা হঠযোগ করেছেন তাদের প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। 

যোগ সাধনার মূলত দুটি ভাগ ঃ হঠযোগ এবং রাজযোগ । হঠযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীরকে সুস্থ-সবল করা। হঠযোগের  ধারণা অনুসারে শক্তিকে আয়ত্ত করতে হলে শরীর নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সকলে যোগ বলতে হঠযোগের ব্যায়াম বা আসনগুলোকে বুঝে থাকেন। রাজযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবাত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করা। হঠযোগ ব্যায়ামের মূল তিনটি উপাদান - আসন, প্রাণায়ম এবং ধ্যান। এদের মধ্যে কোন উপাদান কিভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, বিশেষজ্ঞগণ তার ব্যাখ্যা না দিলেও যোগ সাধনা যে রক্তচাপ কমাচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিত। তিনমাসের যোগ সাধনায় তারা রক্তচাপ গড়পড়তা ৪.৫ থেকে ৪.৯ মিঃ মিঃ পারদ চাপ কমার প্রমাণ পেয়েছেন। 

রক্তচাপ মাত্র ২ মিঃ মিঃ পারদ চাপ  কমাতে পারলে হৃদরোগের হার ৬% এবং স্ট্রোকের হার ১৫% কমানো সম্ভব। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশসমূহে কমবয়সী যুবকদের মধ্যেও অস্বাভাবিক হারে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগ বাড়ছে।  ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন এই  বিশাল স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবেলায় যোগ সাধনা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশে যোগ সাধনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও এটাকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রয়োগ করার সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ এক্ষেত্রে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছেন।


তথ্যসূত্রঃ European Society of Cardiology news release    

হার্ট অ্যাটাক এবং শিক্ষা-দীক্ষা



একসময় মনে করা হতো হৃদরোগ বনেদী ব্যামো। বড়লোকদের এটা বেশী হয়।  বিষয়টা এখন আর তেমন মনে হচ্ছে না।

অস্ট্রেলিয়ায় ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে একটা খুব বড় রকমের সমীক্ষা চলছে।  সমীক্ষার একটি ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যারা স্কুলের সীমানা পেরোতে পারেননি তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার হার বাড়াবাড়ি রকমের বেশী। একজন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী ব্যক্তির চেয়ে অশিক্ষিত ব্যক্তির হৃদরোগ হওয়ার হার ১৫০ শতাংশ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বেশী। যারা ইন্টারমিডিয়েট ডিগ্রিধারী তাদের বেলায় এ হার যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ বেশী। 

প্রতি ২৭ মিনিটে একজন অস্ট্রেলিয়ান হৃদরোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। 

দুনিয়ায় অসাম্য এবং বৈষম্যের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। হৃদরোগের এমন বৈষম্যমূলক বিস্তার গবেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ হৃদরোগ প্রতিরোধের নীতি নির্ধারণে এটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। উন্নতমানের  উচ্চশিক্ষা একজন মানুষকে শুধু  ভালো চাকরির নিশ্চয়তায় দেয় না; তাকে ভালো আবাসন এবং সঠিক সুষম খাবার নির্বাচনের জ্ঞ্যনও দেয়। নিঃসন্দেহে এটা তার  স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ ভূমিকা রাখে। অতএব হৃদরোগের বিস্তার প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভূমিকা নিয়ে আরও গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।    


তথ্যসূত্রঃ Socioeconomic variation in incidence of primary and secondary major cardiovascular disease events: an Australian population-based prospective cohort study, Rosemary J. Korda, Kay Soga, Grace Joshy, Bianca Calabria, John Attia, Deborah Wong and Emily Banks, International Journal for Equity in Health, doi: 10.1186/s12939-016-0471-0, published 21 November 2016.

ভালো কোলেস্টেরল কি আসলে ভালো?



এইচডিএল বা  বেশী ঘনত্বের লিপোপ্রোটিনকে (High-Density Lipoprotein) ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। রক্তে এর মাত্রা ঠিক থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম। এজন্য অনেকে রক্তে এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এর মাত্রা বাড়িয়ে তেমন ভালো ফল পাওয়া যায়নি। দেখা যাচ্ছে এইচডিএল-এর মাত্রা খুব বেশী হলে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষসমূহ প্রদাহের মত প্রতিক্রিয়া দেখায় যা শরীরের অন্যান্য কোষ-কলার জন্য হিতে বিপরীত হয়। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের পরে এখন গবেষকগণ মনে করছেন এইচডিএল-এর কাজ-কর্ম আসলে এতদিন যেমন সোজা সরল মনে করা হতো, আসলে তা নয়। এর মাধ্যমে সেই পুরনো কথা আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিল যে, বেশী ভালোও ভালো নয়।  বাড়তি এইচডিএল-কে আমাদের শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে এখনও আরও অনেক দূর যেতে হবে। 

তথ্যসূত্রঃ 
High-Density Lipoproteins Exert Pro-inflammatory Effects on Macrophages via Passive Cholesterol Depletion and PKC-NF-κB/STAT1-IRF1 Signaling, Marjo M.P.C. Donners et al., Cell Metabolism, doi: 10.1016/j.cmet.2016.10.013, published online 17 November 2016.

Saturday 19 November 2016

আজ পুরুষদের দিন - আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ১৯ নভেম্বর ২০১৬



আজ পুরুষদের দিন। পৃথিবীতে পুরুষের অবস্থা এখন বড়ই করুণ। পুরুষ দিবস পালনের মূল  উদ্দেশ্য পুরুষের স্বাস্থ্য, পুরুষ ও মহিলাদের সম্পর্ক এবং সমাজ-সংসারে পুরুষের ইতিবাচক ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এবারের পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় - “পুরুষের আত্মহত্যা প্রতিরোধ”। 
শুধুমাত্র চীন ছাড়া অন্যান্য দেশে পুরুষদের আত্মহত্যার হার মহিলাদের তুলনায় তিন গুণ বেশী। রাশিয়ায় মহিলা ও পুরুষের আত্মহত্যার অনুপাত ১ঃ ৬ অর্থাৎ মহিলাদের তুলনায় ৬ গুণ বেশী  পুরুষ আত্মহত্যা করে থাকে।  
সারা দুনিয়াতেই পুরুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন মহিলাদের তুলনায় খারাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুসারে ২০১৫ সালে পুরুষের গড় আয়ু ৬৯ বছর  আর মহিলাদের জন্য তা ৭৪ বছর। পুরুষের স্বাস্থ্যের এই ধরণের দুঃখজনক পরিস্থিতি তাদেরকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে বলে অনেক মনে করছেন। বিচ্যুত উগ্র নারীবাদী প্রচারণার কারণে সমাজে পুরুষের ভাবমুর্তি দারুণভাবে বিকৃত  এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরিবার, সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর অঙ্গণে পুরুষের অবদান এবং ত্যাগের মূল্যায়ন নেই বললেই চলে। এজন্য এবারের পুরুষ দিবসের আহ্বান - পুরুষের সমস্যা সম্পর্কে জানুন, পুরুষকে ভালবাসুন এবং পুরুষের সমস্যার কথা শুনুন। 

এবার ৬০টি দেশে পুরুষ দিবস পালিত হবে। 

Friday 18 November 2016

ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং হৃদরোগ


অনেক দিন যাবত হৃদরোগের সঙ্গে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি নিয়ে একধরণের কুয়াশা বিরাজ করছে। এবার হয়ত সেটা দূর হবে। সম্প্রতি Annals of Internal Medicine  এ সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। সমীক্ষায় হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের সঙ্গে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি - এর  সম্পর্ক নিয়ে আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কিত গাইডলাইনে সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশী গ্রহণ না করলে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের জন্য ক্ষতিকর নয়। 

ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন (IOM) প্রতিদিন একজন বয়স্ক মানুষের জন্য ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৬০০ থেকে ৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণের সুপারিশ করে থাকে। তবে ক্যালসিয়াম গ্রহণের মাত্রা ২০০০ থেকে ২৫০০ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন ডি সেবনের মাত্রা ৪০০০ আইইউ-এর বেশী হওয়া উচিত নয়। গবেষকগণ বলছেন সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সেবন না করলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের জন্য বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়  না। 

হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি প্রয়োজনীয়। এ জন্য অনেকে মুড়ি-মুড়কির মত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সেবন করা থাকেন; সঙ্গত কারণে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে হয়ত এটা আমাদের হৃদপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু পর্যবেক্ষণে সেরকম ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে। বর্তমান সমীক্ষার মাধ্যমে এ বিতর্কের সমাধান হল। সুপারিশকৃত মাত্রায় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সেবন করলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বাড়তি ক্যালসিয়াম সেবনের তেমন কোন উপকারিতা নেই। কিন্তু ক্ষতিকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে; যেমন - কিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয় ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন ওষুধ আকারে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সেবন করার চেয়ে প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে এটা গ্রহণ করা উত্তম। সামুদ্রিক মাছ, সাধারণ ছোট মাছ, দুধ, দই, পনির এবং সবুজ শাকসবজিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। নিয়মিত খাবারের মাধ্যমে ৭০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া সহজ। এজন্য ট্যাবলেট আকারে সাপ্লিমেন্টারি ক্যালসিয়াম  গ্রহণ করা জরুরী নয়। 
মনে রাখতে হবে ভালো জিনিস বেশী গ্রহণ করাও সব সময় ভালো নয়। 

তথ্যসূত্রঃ 
Chung M, Tang AM, Fu Z, Wang DD, Newberry SJ. Calcium intake and cardiovascular disease risk: an updated systematic review and meta analysis. Ann Intern Med. 2016 Oct 25. [Epub ahead of print]

Kopecky SL, Bauer DC, Gulati M, et al. Lack of evidence linking calcium with or without vitamin D supplementation to cardiovascular disease in generally healthy adults: a clinical guideline from the National Osteoporosis Foundation and the American Society for Preventive Cardiology. Ann Intern Med. 2016 Oct 25. [Epub ahead of print]

Margolis KL, Manson JE. Calcium supplements and cardiovascular disease risk: what do clinicians and patients need to know? Ann Intern Med. 2016 Oct 25. [Epub ahead of print]

Anderson JJ, Kruszka B, Delaney JA, et al. Calcium intake from diet and supplements and the risk of coronary artery calcification and its progression among older adults: 10-year follow-up of the Multi-Ethnic Study of Atherosclerosis (MESA). J Am Heart Assoc. 2016;5.

Monday 7 November 2016

উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা কমানোর সহজ চার উপায়




সকলেরই কমবেশী মাথাব্যথায় ভোগার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নানা কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকেরই অতিরক্ত উদ্বেগ বা টেনশনের কারণে মাথাব্যথা হয় যা tension headache নামে পরিচিত। সাধারণত এধরণের মাথাব্যথা দুপুরের পরে শুরু হয়। এর তীব্রতা মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার হতে পারে। অনেকের মাথায় প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হয় কিংবা মনে হয় যেন মাথাটি কেউ ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে রেখেছে। উদ্বেগের কারণে গলা, কাঁধ এবং মাথার পেশী অতিরক্ত সংকুচিত হওয়ার ফলে এই ব্যথা হতে পারে। যারা একটু নার্ভাস প্রকৃতির তাদের প্রতিনিয়ত উদ্বেগের কারণে মাথাব্যথায় ভুগতে দেখা যায়। যদিও এধরণের মাথাব্যথা ক্ষতিকর নয়; কিন্তু ঘন ঘন মাথাব্যথায় অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
  
যাদের ঘন ঘন টেনশনজনিত মাথা ব্যথা হয় তারা সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে উপকার পেতে পারেনঃ

১। প্রাত্যহিক জীবনের কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি সচেতন থাকুন। যেমনঃ যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমাতে হবে, নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করতে হবে এবং ক্লান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে এমন বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতে হবে। 

২। শিথিলায়ন কৌশল প্রয়োগ করুন। শারীরিক এবং মানসিক শিথিলায়ন কৌশল টেনশনজনিত মাথাব্যথা লাঘবের জন্য খুব উপকারী। এর নিয়মিত অনুশীলন আপনার মাথা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। স্কন্ধ এবং গলায় ঈষৎ গরম সেঁক দিলেও উপকার পাওয়া যায়। এসকল পেশীর ব্যায়াম করলে ব্যথা কমে যায়। 

৩। বায়োফিডব্যাকের সাহায্যে ব্যথার উপশম পাওয়া যায়। অবশ্য এরজন্য বায়োফিডব্যাক থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে। 

৪। যাদের সাধারণ কৌশলগুলি প্রয়োগের পরেও মাথাব্যথা কমে না, তাদের ওষুধ সেবন করতে হবে। সাধারণ ব্যথানাশক এবং উদ্বেগনাশক ওষুধ সেবনেই অনেকে উপকৃত হতে পারেন। 


তবে এরপরেও যদি উপশম না হয়, তাহলে অবশ্যই মাথাব্যথাকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। হয়ত  আপনার মাথাব্যথা সাধারণ উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা নয়। এর পিছনে অন্য কোন জটিল কিংবা গুরুতর সমস্যা নিহিত থাকতে পারে। 

Sunday 6 November 2016

ভূতের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপন এবং অতঃপর



জাকিঃ হ্যালো। 
তুবাঃ হ্যালো, কে বলছেন?  
জাকিঃ আমার নাম জাকি। আমি আপনার সঙ্গেই পড়ি। 
তুবাঃ তাই, কিন্তু কোনদিন দেখেছি কিংবা নাম শুনেছি বলে মনে পড়ছে না তো। 
জাকিঃ হ্যাঁ, আমি নতুন এসেছি। কিন্তু সেদিন ক্লাসে আপনি আমার পেন ধার নিয়ে কিছু একটা লিখছিলেন। আমার অবশ্য আপনাকে পেন দিতে পেরে খুব ভাল লাগছিল। 
তুবাঃ হা হা । তাই নাকি? তা আমার ফোন নাম্বার কিভাবে পেলেন? 
জাকিঃ এটা আমার জন্য কোন ব্যাপার নয়। সবকিছু যোগাড় করার আমার নিজস্ব উপায় আছে। 
তুবাঃ তাই নাকি।  আপনি আসলে কেন ফোন করেছেন? 
জাকিঃ আপনার সঙ্গে আলাপ করার জন্য। 
তুবাঃ কি বিষয়ে আলাপ করতে চান? 
জাকিঃ বলতে দ্বিধা নেই আমার আপনাকে খুব ভাল লেগেছে। 
তুবাঃ কিন্তু আপনি তো আমাকে ঠিকমত চিনেনই না। 
জাকিঃ তা ঠিক। কিন্তু আমার জাস্ট মনে হয়েছে। আমার আপনাকে ভাল লাগছে। হয়ত আমার ভুল হতে পারে। একদিন কি আপনার সঙ্গে বসে কফি খাওয়া যাবে? 
তুবাঃ অবাক ব্যাপার। আপনাকে আমি চিনিনা, আপনিও আমাকে তেমন চিনেন না। আপনার সঙ্গে আমি খামাখা কফি খেতে যাব কেন? 
জাকিঃ সেটা সত্য। কিন্তু আমি বিষয়টা পরিষ্কার করে বলি। আমি সজ্জন ছেলে। সবাই বলে আমার সেন্স অব হিউমার খুব ভাল। আমি সুস্বাদু পিজা বানাতে পারি। আমি বাবা মায়ের খুব আদরের। 
তুবাঃ আপনার অন্য ভাইবোন আপনাকে ঈর্ষা করে না? 
জাকিঃ আমি তো একমাত্র সন্তান। যাহোক আমি গর্ব করতে চাই না। কিন্তু আমি ভাল গিটার বাজাতে পারি। আপনার মন জয় করার জন্য এগুলোই কি যথেষ্ট না? 
তুবাঃ হা হা । আপনার সেন্স অব হিউমার আসলেই ভাল। 
জাকিঃ তাহলে আমি চেষ্টা শুরু করি। আমি কিন্তু সবচেয়ে ভাল কফির দোকান কোনটা জানি। 
তুবাঃ জিমির দোকানের কথা বলছেন? 
জাকিঃ হ্যাঁ অবশ্যই।  আপনি যদি সাবান গোলা পানির মত তরল বস্তুকে কফি মনে করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। 
তুবাঃ তাহলে কোনটা?
জাকিঃ সবচেয়ে ভাল হচ্ছে রিভার ভিউ। 
তুবাঃ কিন্তু ওদের কফি তো পোড়া তেতো। 
জাকিঃ এটা কি আমাদের প্রথম ঝগড়া? আমার খুব মজা লাগছে। 
তুবাঃ হা হা। 
জাকিঃ রিভার ভিউয়ের কফি আসলেই ভালো। তবে আপনি যেটার কথা বলছেন আমি সেটার কথা বলছি না। এই রিভার ভিউ আসলে শহর থেকে একটু বাইরে। আমার খাওয়া কফির মধ্যে এ পর্যন্ত ওটাই সেরা। 
তুবাঃ ঠিক আছে। ভালো কথা।  
জাকিঃ আসেন এরকম একটা ঝগড়ার পরে পরিবেশটা একটু শান্ত করা যাক। একটা খেলা করা যাক। 
তুবাঃ কি খেলা? 
জাকিঃ বলেন তো দেখি আমার সম্পর্কে কোনটি সত্য নয়? আমাকে হাঙর কামড় দিয়েছে। আমার চোখের রং নীল। আমার বাবা নভোচারী।
তুবাঃ  হুম। আমার মনে হয় আপনার বাবা নভোচারী নয়। অবশ্য আপনাকে হাঙর কামড় দেওয়ার সম্ভাবনাও কম। 
জাকিঃ গোল্লা। পুরোই রসগোল্লা। দেখেছেন আপনারা মেয়েরা ছেলেদের চোখের দিকে কখনও খেয়ালই করেন না। আমার চোখ আসলে কাজল কালো।  
তুবাঃ  হা হা। তার মানে হাঙর আপনাকে কামড় দিয়েছিল? 
জাকিঃ ঠিক তাই। আমি বাবার সঙ্গে একদিন সাগরে সাঁতার কাটছিলাম। তখন এক বিশাল হাঙর আমাকে তাড়া করেছিল। আমি বেচারাকে মানা করেছিলাম। দেখি আমার দিকে তেড়ে আসছেই। কি আর করা দিলাম হাঙরের নাকে এক প্রচণ্ড ঘুষি। সেই ঘুষি খেয়ে হাঙর কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল। 
তুবাঃ  হা হা । আপনি বানিয়ে বানিয়ে ভালোই বলতে পারেন। 
জাকিঃ হা হা । আসল ঘটনা এত বীরত্বের না। আমার দিকে একটা হাঙর তেড়ে আসছিল বটে।  তা দেখতে পেয়েই আমি যত জোরে পারি সাঁতার দিতে শুরু করি। তারপর পানি থেকে উঠেই দিলাম ভোঁ দৌড়। অবশ্য হাঙর আমার সাঁতরানোর  বোর্ডটা কামড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছিল। 
তুবাঃ  ও মা গো। কি ভয়ংকর ব্যাপার।  
জাকিঃ হ্যাঁ আসলেই ভয়ংকর। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আপনি কখনও এরকম ভয় পান নি? 
তুবাঃ  আমি গত বছর গাড়ী অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম। আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল আর আমার সঙ্গের বান্ধবীর নাকের হাড় ভেঙেছিল। অল্পের জন্য আমরা জানে বেঁচে গিয়েছি। 
জাকিঃ বুঝতে পারছি। খুব ভয় পেয়েছিলেন। আপনি গাড়ী ড্রাইভ করছিলেন? 
তুবাঃ  হ্যাঁ। আমি ড্রাইভ করছিলাম। কিন্তু দোষ ছিল উলটো দিক থেকে আসা গাড়ীটার। 
জাকিঃ খুবই দুঃখজনক। এরকম একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আপনার জন্য মানানসই না। 
তুবাঃ  না এখন আমি ঠিক আছি। কিন্তু আপনার বাবা তাহলে নভোচারী? 
জাকিঃ হ্যাঁ। কিন্তু আমি আজ আমার বাবাকে নিয়ে আপনার সঙ্গে গল্প করব না। আপনার সঙ্গে কফি খাওয়ার দিন এসব নিয়ে গল্প হবে। 
তুবাঃ  ঠিক আছে। 
জাকিঃ তাহলে কবে আমাদের দেখা হচ্ছে? 
তুবাঃ  একটু ভেবে বলব। 
জাকিঃ না না । ভাবাভাবির কিছু নেই। আমাকে এত সাসপেন্সের ভেতরে রাখবেন না। আমার হার্ট খুব দুর্বল। আমাকে নিয়ে বেশী খেলবেন না। 
তুবাঃ  আচ্ছা। যাবো। 
জাকিঃ সত্যি? মানে আমি বলতে চাচ্ছি আপনি যাবো বলেছেন। যাবো মানে যাবো। পরে যেন মত বদল করবেন না। আর আমি বলতে চাই, আপনি সত্যি দারুণ। 
তুবাঃ  আপনি একটু পাগল গোছের। ঠিক না? 
জাকিঃ আমরা সবাই কি একটু একটু পাগল না? যাহোক সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবারে দেখা হচ্ছে।  
তুবাঃ  সব ঠিক থাকবে না কেন?  
জাকিঃ আমি কিন্তু আপনার চোখের রঙ সেদিন ভালো করে দেখবো। 
তুবাঃ  আপনি আসলেই একটা পাগল। 
জাকিঃ বেশী তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে না কি? 
তুবাঃ  হা হা। 
জাকিঃ ঠিক আছে শুক্রবারে বিকেলে দেখা হবে। 

তুবা শুক্রবারে রিভার ভিউয়ে গিয়েছিল। নদীর পাড়ে এটি একটু নির্জন এলাকায়। ক্যাফের বাইরে একটি বেঞ্চে সে বসেছিল। হঠাৎ তার মনে হল কেউ একজন এসে তার পাশে বসলো। কিন্তু আশেপাশে কাউকে সে দেখতে পেল না। শুধু শুনতে পেল একজন তাকে বলছেঃ ভয় পাবেন না। আমি জাকি। কফির অর্ডার দিয়ে এসেছি। এখনই নিয়ে আসবে। 

কিছুক্ষণ পরে ক্যাফের ছেলেটি দুকাপ কফি হাতে এসে দেখতে পেল বেঞ্চের ওপরে তুবা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। 


Wednesday 2 November 2016

অ্যালকোহলে মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই



পশ্চিমা দেশগুলিতে মেয়েরা পুরুষদের মতোই অ্যালকোহল পান করতে শুরু করেছেন ৷ ফলে এতদিন মদ্যপানে নারী-পুরুষের যে ব্যবধান ছিল, তার অবসান হচ্ছে। গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে গড়ে প্রায় দ্বিগুণ মদ্যপান করতেন ৷ কিন্তু মহিলারা প্রতি দশকে ছয় শতাংশ করে এগিয়ে পুরুষদের প্রায় ধরে ফেলেছেন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মদ্যপানে পুরুষদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন৷
সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে এই পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৷ জরিপের তথ্য এসেছে ৬৮টি সমীক্ষা থেকে ৷ ১৯৪৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে সমীক্ষা সম্পন্ন হয় ৷ গবেষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েল্স ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ড্রাগ অ্যান্ড অ্যালকোহল রিসার্চ সেন্টারের টিম স্লেড ৷
মদ্যপান ও মদ্যপান সংক্রান্ত অসুখবিসুখ চিরকাল পুরুষদের বিষয় বলে গণ্য হয়ে এসেছে৷ কিন্তু বর্তমান সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কমবয়সি মহিলারাই মদ্যপান কমানো অভিযানের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ৷

পুরুষরা যে মহিলাদের চেয়ে কম মদ্যপান করে থাকেন এবং সেই ব্যবধান যে এখন কমে আসছে, তার অর্থ এই নয় যে, পুরুষরা কম মদ্যপান করছেন ৷ বরং মহিলাদের বেশি মদ্যপান করাই এই ব্যবধান কমে আসার কারণ ৷ অবশ্য এশিয়া মহাদেশে মদ্যপান সাধারণভাবে কম। এখানে মদ্যপানে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে ব্যবধান এখনও বর্তমান ৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বে অ্যালকোহল সেবন বিস্তার ও পরিমাণ, উভয় বিচারেই বেড়ে চলেছে ৷

Monday 31 October 2016

“হ্যালোইন"ঃ ট্রিক অর ট্রিট


প্রায় দুই হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল হ্যালোইন। "হ্যালোইন" শব্দের উৎপত্তি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। এর অর্থ "পবিত্র সন্ধ্যা"। এটি স্কটিশ শব্দ "অল হ্যালোজ ইভেনিং" থেকে এসেছ। পরে সংক্ষিপ্ত হয়ে "হ্যালোইন" রূপ নিয়েছে। এর শুরু প্রাচীন মধ্য এবং পশ্চিম ইউরোপে । তখন এই অঞ্চল কেল্ট নামে পরিচিত ছিল। এটা বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং ফ্রান্সের উওর অংশ। 

প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর কেল্টিকবাসীরা শস্য কেটে ঘরে তোলার উৎসব উদযাপন করে। প্রথমে অবশ্য ভূতপ্রেত হ্যালোইনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। উৎসবটি পালিত হতো মূলত নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে।  সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো ছিল মূল উদ্দেশ্য । এই এলাকায় প্যাগান লোকজন বিশ্বাস করত ফসল কাটার মৌসুমের শেষ দিন এবং শীতকালের প্রথম রাতে মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে।

আজকাল হ্যালোইনে দিনের আলো ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গেই ছোট ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ে। সবার গায়ে থাকে অদ্ভুত সব পোশাক। হাতে থাকে লণ্ঠন বা টর্চ। বাসায় বাসায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে আর বলে ‘ট্রিক অর ট্রিট’। কেউই অবশ্য ট্রিক করতে দেয় না। সবাই ট্রিট দিয়ে দেয় চকোলেট। আর সেই চকোলেট নেয়ার জন্য ছোট ছেলেমেয়েরা বালতি কিংবা ব্যাগ নিয়ে বের হয়। অনেকে আবার বাড়ির উঠোন কিংবা বারান্দাকে  ভৌতিক বানিয়ে ফেলে। কেউ মাকড়সার জাল বানিয়ে তাতে টাঙিয়ে দেয় কঙ্কাল। হ্যালোইন ডে এর প্রধান প্রতীক হলো কুমড়ার মধ্যে একটি মোমবাতি দেয়া। বড় বড় মিষ্টিকুমড়োর ভেতরটা ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। তারপর কুমড়োর খোলের গায়ে বানানো হয় চোখমুখ। আর ভেতরে জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাতি। হ্যালোইনের রাত সবাই শুধু ট্রিক অর ট্রিটেই কাটিয়ে দেয় না, অনেকে আবার চলে যায় কোনো ভৌতিক স্থানে ঘুরতে। অনেকে বনে আগুন জ্বালিয়ে পার্টি করে। কেউ কেউ আবার ভূতের সিনেমা দেখেও হ্যালোইন উদযাপন করে।

উনিশ শতকে আইরিশ ও স্কটিশ অভিবাসীরা এই উৎসব নিয়ে আসে উত্তর আমেরিকায়। অনেক আমেরিকান এখনও বিশ্বাস করে যে ভূত বা অশরীরী কোনো শক্তি এ পৃথিবীতে আছে। তারা মনে করেন এই দিন মৃত আত্মারা  নিকটজনের সান্নিধ্য লাভের আশায় পৃথিবীর বুকে নেমে আসে। এরা আসে সবার মাঝে থাকার বাসনা নিয়ে; কিন্তু পৃথিবীর মানুষ সেটা কোনোভাবেই হতে দিতে চায় না। সবাই নিজ নিজ বাড়িঘরের সামনে লন্ঠন ও রঙ্গিন বাতি জ্বালিয়ে রাখে যেন সেই আলোয় মৃত আত্মারা পথ দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আমেরিকানরা আইরিশ ও ইংলিশদের ঐতিহ্য থেকে আলাদা কস্টিউম ও ধারায় হ্যালোইন পালন করতে শুরু করে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার, উপহার ও টাকা চাওয়ার রেওয়াজ চালু করে। সেটাই বর্তমানে ‘ট্রিক অর ট্রিট’ ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। ধীরে ধীরে হ্যালোইন সব বয়সীদের উৎসবে পরিণত হয়। তখন তারা নেচে-গেয়ে, পার্টি করে ছুটির দিনটি পালন করত। পরিবর্তন হতে হতে হ্যালোইন উৎসব এখন নতুন এক রূপ ধারণ করেছে। হ্যালেইনের পেছনে শুধু আমেরিকানরাই খরচ করে ৬ বিলিয়ন ডলার। এটি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ছুটির দিন। 

পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়। 

Sunday 30 October 2016

আমাদের “ দ্বিতীয় মস্তিষ্ক ”



একসময়ে বহুদিন মস্তিষ্ক সম্বন্ধে মানুষের কোনই ধারণা ছিল না। প্রাচীন গ্রন্থসমূহে মস্তিষ্ক বা এ জাতীয় কোন শব্দ ছিলনা। অ্যারিষ্টটল ( Aristotle) মস্তিষ্কের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কাজ সম্পর্কে তার ধারণা খুবই অদ্ভুত ছিল। তিনি মনে করতেন মস্তিষ্কের কাজ শরীরের গরম রক্তকে ঠাণ্ডা করে হৃৎপিণ্ডে পাঠিয়ে দেওয়া। গ্যালেন ( Galen ) বিশ্বাস করতেন মস্তিষ্ক সচেতন মনের ( Conscious mind ) বা  চিন্ময় আত্মার আধারমাত্র। এরপর মস্তিষ্ক সম্বন্ধে বহুদিন আর কোন তথ্য পাওয়া যায়না। মধ্যযুগে মানুষের ধারণা ছিল মস্তিষ্ক মনের ইন্দ্রিয় মাত্র। ফুসফুসে যেসব বায়ুকোষ আছে, তাদের সকলের যেমন একই কাজ—মস্তিষ্কের প্রত্যেক অংশের তেমন একই কাজ। দেখা, শোনা, অনুভব, চিন্তা ইত্যাদি নানাকাজের জন্য মস্তিষ্কে যে ভিন্ন ভিন্ন স্থান নির্দিষ্ট আছে এই সত্যটিও তখন অজ্ঞাত ছিল।

এখন মস্তিষ্ক সম্পর্কে সকলেরই কমবেশি ধারণা রয়েছে। মস্তিষ্ক আমাদের সব কাজকর্ম, চিন্তা-চেতনা এবং দেহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। দিনে দিনে একটি বিষয় বেশ পরিষ্কার হচ্ছে যে মাথার খুলির ভিতরের মস্তিষ্ক ছাড়া আমাদের আরেকটি "মস্তিষ্ক" রয়েছে যেটাকে "দ্বিতীয় মস্তিষ্ক” বলা হচ্ছে। এই "দ্বিতীয় মস্তিষ্ক" রয়েছে আমাদের পেটের মধ্যে। অন্ত্রের ভিতরে যে বিশেষ ধরণের স্নায়ুসমূহ রয়েছে তাদের বলা হয় “আন্ত্রিক স্নায়ু ব্যবস্থা”। এতদিন মনে করা হত এটা শুধু অন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যা ভাবা হত এরা আসলে তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ করে। 

“আন্ত্রিক স্নায়ু ব্যবস্থা”-র বিশেষত্ব হচ্ছে এটা পরিপাকতন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আসল মস্তিষ্ক থেকে একে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও এটা আপন গতিতে কাজ করে যেতে পারে। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে পরিপাকতন্ত্র ছাড়া এটা আমাদের মনের ভাব, মেজাজ মর্জি এবং আচরণের ওপরেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমাদের মন ভাল রাখা এবং মনে আনন্দ আনার জন্য ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামের দুটি রাসায়নিক উপাদানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে শরীরের অর্ধেক ডোপামিন এবং অধিকাংশ সেরোটোনিন আসলে তৈরি করে অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়া বিশেষ ধরণের খাবার গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগানোর জন্য বার্তাও প্রেরণ করতে পারে। যেমন অনেক সময় দেখা যায় আমাদের কোন বিশেষ সবজি কিংবা ফল খেতে ইচ্ছে করছে। এর পেছনে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা রয়েছে। সন্দেহ নেই এই পুরো প্রক্রিয়াটি খুব জটিল এবং সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আসল মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রের স্নায়ুব্যবস্থার মধ্যে একটি দীর্ঘ বিবর্তনগত যোগাযোগ রয়েছে। এই যোগাযোগটি কেমন কাজ করছে, তার ওপর আমাদের সুস্থতা অনেকটাই  নির্ভরশীল। আমাদের খাওয়াদাওয়া যেমন আমাদের মন-মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে, তেমন আমাদের মন-মানসিকতাও খাওয়াদাওয়ার প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। 

অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া শুধু ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে না, আমাদের মানসিক অবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে। যেমন দই একটি উপাদেয় খাদ্য। এতে আমাদের শরীরের জন্য দরকারি অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দেখা যাচ্ছে দই খেলে মানসিক বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ লাঘব হয়। অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। 

এখন মনে করা হচ্ছে ভবিষ্যতে আমাদের অনেক মানসিক সমস্যা এবং আচরণগত জটিলতার চিকিৎসার জন্য “দ্বিতীয় মস্তিষ্কের” দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর সেটা করতে গেলে লক্ষ্য রাখতে হবে অন্ত্রে আমাদের উপকারী বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের অবস্থা কি। অন্ত্রের “ক্ষুদে বন্ধু”রা ভাল থাকলে আমরা সুস্থ থাকি।  



তথ্যসূত্রঃ Wang H-X, Wang Y-P. Gut Microbiota-brain Axis. Chinese Medical Journal. 2016;129(19):2373-2380.

Thursday 27 October 2016

নার্সিসাস ও ইকো



।। ১।। 
নার্সিসাসকে বলা হয় আত্মপ্রেমের প্রতীক। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি-র একটি চিত্রকর্মের নাম “মেটামরফোসিস অফ নার্সিসাস”। ফ্রয়েড ১৯১৪ সালে “On Narcissism: An Introduction” নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। 
নার্সিসাস (Narcissus) একটি ড্যাফোডিল জাতীয় ফুলেরও  নাম। গ্রীক মিথ  অনুসারে এই ফুলের জন্ম নার্সিসাস নামের এক অপূর্ব সুন্দর যুবকের দেহ থেকে। এই যুবকের আচরণের নাম নার্সিজম (Narcissism) বা আত্ম-প্রেম।
নার্সিসাসের পিতা ছিলেন নদীর দেবতা সিফিসাস (Cephissus) এবং মাতা লিরিউপি (Liriope)। নার্সিসাসের জন্মের পর তার মা ছেলের আয়ুষ্কালের ব্যাপারে জানার জন্য এক অন্ধ ভবিষ্যৎ-বক্তার নিকট নিয়ে গেলেন। ভবিষ্যৎ-বক্তার নাম ছিল টাইরেসিয়াস (Tirasias)।  
।।২।। 
এখানে টাইরেসিয়াসের অন্ধ হওয়ার কাহিনী জানা দরকার। আগে তিনি অন্ধও ছিলেন না; এমন কি ভবিষ্যৎ-বক্তাও ছিলেন না। পুরুষ হয়েও এক পর্যায়ে তিনি সাত বছর নিজেকে নারী হিসেবে রূপান্তর করে রেখেছিলেন। এই সময় তিনি নারীদের সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারেন। এর একটি হলো মিলনে নারীরা পুরুষদের থেকে বেশি পুলকিত হয়। যখন তিনি এই আবিষ্কারের কথা দেবরাজ জিউস ও তাঁর স্ত্রী হেরাকে বললেন, হেরা খুবই ক্ষেপে গেলেন এবং টাইরেসিয়াসকে অন্ধ করে দিলেন। এরপর তিনি তাঁর দ্বিতীয় আবিষ্কারটি করলেন যে, সব নারী তার এ কথা শুনতে চাইবে না। টাইরেসিয়াসের অন্ধত্বের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জিউস তাঁকে ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা দিয়ে দিলেন! 
।।৩।। 
নার্সিসাসের মা লিরিউপি তাঁকে নিয়ে এই অন্ধ টাইরেসিয়াসের কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার ছেলে কতদিন বাঁচবে?’
টাইরেসিয়াস বললেন, ‘এই ছেলে এক দীর্ঘ  জীবন পাবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে সে নিজেকে যেন কখনও না দেখে’। 
নার্সিসাস ছিল অসামান্য সুন্দর। জলপরী, বনদেবী, ঝর্নাপরী, সুন্দরী মেয়েরা, এমন কি ছেলেরাও তাঁর প্রেমে পড়তো। কিন্তু সে কাউকেই পাত্তা দিত না। একবার এমিনিয়াস নামক এক যুবক নার্সিসাসের প্রেমে মজলো। কিন্তু নার্সিসাস তাকে ফিরিয়ে দিল এবং একটা ছুরি উপহার দিল। এমিনিয়াস সেই ছুরি দিয়ে নার্সিসাসেরই দরজার সামনে আত্মহত্যা করলো।  
নার্সিসাসের প্রতি চরম অনুরক্ত এক বনদেবী হলো ইকো (Echo)। ইকো মানে প্রতিধ্বনি। ইকো কথা বলতে পারতো না। শুধু অন্যের কথার প্রতিধ্বনি করতে পারতো। 
।।৪।। 
ইকোর এই অবস্থাও করেছিলেন জিউসের স্ত্রী হেরা।উল্লেখ্য জিউস মাঝে মধ্যে বিভিন্ন দেবীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে মিলিত হওয়ার জন্য অলিম্পাস পর্বত থেকে চলে আসতেন। হেরা তাঁর স্বামীকে হাতেনাতে ধরার জন্য অলিম্পাস থেকে একবার চলে এলেন। কিন্তু ইকো দীর্ঘসময় সুমিষ্ট কণ্ঠে চমৎকার সব গল্প বলে হেরাকে ভুলিয়ে রাখলো। এই ফাঁকে জিউস চম্পট দিতে পারলেন। হেরার সন্দেহ হলো যে, ইকো তাঁর সাথে ফাঁকিবাজি করেছে। তাই তিনি বাচাল ইকোর কন্ঠস্বর কেড়ে নিলেন। তাঁকে অভিশাপ দিলেন যেন সে কখনো নিজে থেকে কথা বলতে না পারে। বোকার মতো মানুষের কথার প্রতিধ্বনি করতে পারবে শুধু।   
।।৫।। 
এদিকে নার্সিসাস বনে যেত শিকার করার জন্য। ইকোও তাঁর অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকত। ভাবতো হয়তো একবার হলেও নার্সিসাস তার দিকে তাকাবে। একদিন নার্সিসাস যখন বনের মধ্যে ঘুরছিলো তখন কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো। সে জিজ্ঞেস করলো “কে এখানে?” ইকো প্রতিউত্তর করলো, “এখানে...”। নার্সিসাস আবার বললো, “এদিকে এসো”। ইকো প্রতিউত্তর করলো, “এসো...”। নার্সিসাস বললো, “তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো?...আমার  কাছে এস”। ইকো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো; কারণ স্বয়ং নার্সিসাস তাকে ডেকেছে! কিন্তু হায়! সে নিজে তো কথা বলতে পারেনা। সে ছুটে গেলো নার্সিসাসের দিকে এবংঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে।
এতে নার্সিসাস খুব রেগে গেলো। বললো, “সরে যাও! আমি মরে যেতে রাজি আছি, তবুও তোমার হবো না!” এই বলে সে ইকোকে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। ইকোর শরীরের চাপে বনের কচি কচি লতা-গুল্ম পিষ্ট হয়ে গেলো। তার হৃদয় ভেঙে গেলো। লজ্জায় অপমানে সে দৌড়ে পর্বতের দিকে চলে গেলো। আক্ষেপ করতে করতে একসময় সে মরেই গেলো। পর্বতের পাথরের সঙ্গে তার শরীরও লীন হয়ে গেলো। শুধু রয়ে গেলো তার কন্ঠস্বর, যা অন্যের উচ্চারিত শব্দকে অনুকরণ করে।
।।৬।। 
একইভাবে আরো অনেক দেবী এবং পরী আকৃষ্ট হল নার্সিসারের প্রতি। কিন্তু নার্সিসাস তাদেরকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দূরে সরিয়ে দিতো। এভাবে অপমানিত হয়ে তারা মন থেকে চাইত যে, ভালোবেসেও ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট কেমন তা নার্সিসাস একবার যেন বুঝতে পারে। এমন প্রত্যাখ্যাতদের মধ্যে একজন একবার প্রতিশোধের দেবী নেমেসিসের কাছে প্রার্থনা করলো, “হে দেবী নেমেসিস, নার্সিসাস যদি কখনো প্রেমে পড়েও, সে যেন ভালোবাসা না পায়”।
 নেমেসিস প্রার্থনা শুনলেন এবং নার্সিসাসের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেললেন।
।।৭।। 
একদিন প্রখর রৌদ্রের মধ্যে নার্সিসাস একটি ঝর্ণার পাশে এলো। সে যখনি ঝর্ণার পানির  দিকে তাকালো, দেখলো এক অপূর্ব দেবতা  পানি  থেকে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারল না যে ওই প্রতিবিম্ব তারই। নার্সিসাস সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবিম্বের প্রেমে পড়ে  গেলো। নার্সিসাস তাঁর প্রতিবিম্বকে পানি থেকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়ালো। পানিতে ঢেউ উঠতেই সেই তা হারিয়ে গেলো। নার্সিসাস অস্থির হয়ে উঠলো। কোথায় চলে গেলো তাঁর ভালোবাসার মানুষ? যখন পানি আবার স্থির হয়ে এলো,প্রতিবিম্বও আবার ফিরে এলো। নার্সিসাস তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? হে সুন্দর, কেনো তুমি আমার কাছে থেকে দূরে থাকো, কেনো আমাকে এড়িয়ে যাও? পরীরা আমাকে ভালোবাসে। আমাকে পাওয়ার জন্য তারা ব্যাকুল। তোমাকেও আমার প্রতি বিরক্ত দেখা যাচ্ছে না। যখন আমি আমার হাত বাড়িয়ে দেই, তুমিও তাই করো। তুমি আমাকে দেখে হাসো এবং আমার মতো তুমিও মাথা নেড়ে সায় দাও”। আবার হাত বাড়ালো নার্সিসাস। প্রতিবিম্ব  আবার চলে গেলো। পানি স্পর্শ করলেই প্রতিবিম্ব অদৃশ্য হয়ে যায়, এতে নার্সিসাস খুব ভয় পেয়ে গেলো। সে আর পানির দিকে হাত বাড়ালো না। কিন্তু একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো তাঁর প্রতিবিম্বের প্রতি।
হতাশায় নার্সিসাস শুধু কাঁদত। যেহেতু সে কাঁদত, ইকোও তার সাথে কাঁদত। সে নড়াচড়া করতো না, খেতো না, কোন কিছু পান করতো না। শুধু গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হতে থাকলো। অলীক প্রেমিকের শোকে তার শরীর শুকিয়ে যেতে থাকলো, তার সৌন্দর্য ম্লান হতে লাগলো। যে পরীরা তাকে ভালোবাসতো তারা বারবার তাকে অনুরোধ করলো সেই ঝর্ণার সামনে থেকে সরে আসতে। ইকোও অনুরোধ করলো। কিন্তু নার্সিসাস যেনো মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেখানেই পড়ে রইলো। এভাবে একসময় ইকোর মতো নার্সিসাসও মরে গেলো। ধীরে ধীরে তাঁর শরীরও অদৃশ্য হয়ে গেলো। পরীরা শোকে বিলাপ করতে থাকলো। ইকোও তাঁদের সাথে বিলাপ করতে থাকলো। আর মিশে যাওয়া নার্সিসাসের শরীর থেকে জন্ম নিল একটি ফুলের গাছ। ফুলের নাম নার্সিসাস। অনেকে বাংলায় এটাকে নার্গিস ফুল বলে থাকে। 


(গ্রীক মিথ অবলম্বনে)

Saturday 17 September 2016

আসল বন্ধু, নকল বন্ধু


সবাই কি আমাদের আসল বন্ধু? এটা মনে করা খুবই স্বাভাবিক যে আমরা যাদের বন্ধু মনে করি, তারাও আমাদের বন্ধু মনে করবে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন সহজ নয়। সম্প্রতি একটি মজার গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে আসলে বন্ধুদের মাত্র অর্ধেক আমাদের পছন্দ করে। অনেকের নিকট এটা খাপছাড়া মনে হতে পারে। আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য বন্ধুত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে আপনার দশজন বন্ধু থাকলে মাত্র পাঁচজন আপনাকে পছন্দ করে, এটা কি সঠিক?

ধরা করা যাক আবুল মনে করে বাবুল তার বন্ধু। বাবুল সামনাসামনি অস্বীকার না করলেও আসলে কি আবুলকে সে বন্ধু মনে করে? দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা যাদের বন্ধু বলে মনে করছি, তারা আমাদের বন্ধু মনে করছে না এবং এর উলটোটাও সত্যি। অর্থাৎ বন্ধুত্ব সবসময় পারস্পরিক নাও হতে পারে।

এজন্য গবেষকদের দুটি প্রশ্ন ছিল।

প্রথম প্রশ্ন বন্ধুদের কতজন আসলে পরস্পরকে বন্ধু মনে করে?
দুজন যদি আসলেই দুজনের পারস্পরিক বন্ধু হয়, তাহলে জীবনে একে অপরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকে। আবুল ধূমপান করে, কিন্তু বাবুল ধূমপান করে না। এখন বাবুল কি আবুলের ধূমপানের অভ্যাস ছাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে?

এজন্য গবেষকদের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, বন্ধুত্ব একে অপরের জীবনাচরণ প্রভাবিত করার কতটুকু সামর্থ্য রাখে?    

দেখা যাচ্ছে শতকরা ৯৪ জনের ধারণাকৃত বন্ধুত্বের মধ্যে ৫৩ জন পারস্পরিক বন্ধুত্বের বন্ধনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকীরা আসলে পারস্পরিক বন্ধুত্ব আছে বলে মনে করে না। ফলে জীবনাচরণ পরিবর্তনে আসলে তথাকথিত বন্ধুত্ব সত্যিকার কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। “পিয়ার ইনফ্লুয়েন্স” বা “বন্ধুদের প্রভাব” তখনই কার্যকরী হয় যখন বন্ধুত্ব উভয়মুখী। অর্থাৎ যেখানে আবুল যেমন বাবুলকে বন্ধু মনে করে, বাবুলও তেমন আবুলকে বন্ধু মনে করে। কিন্তু আচরণ পরিবর্তনের ফলাফল ইতিবাচক হবে না কি নেতিবাচক হবে, সেটা কি ভাবে নির্ধারিত হয়? অর্থাৎ বাবুলকে দেখে আবুল ধূমপান ছেড়ে দেবে নাকি আবুলকে দেখে বাবুল ধূমপান শুরু করবে? এর উত্তর খুব সহজ মনে হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে দুজনের মধ্যে যার বন্ধুত্ব বহির্মুখী, সেই প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ আবুল যদি বন্ধুত্বের জন্য প্রথমত সক্রিয় হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রভাবই বেশী। কিন্তু এটা যে কিভাবে নির্ধারিত হয় বা এর অন্তর্নিহিত রহস্য যে কি তা এখনও পরিস্কার নয়।

যারা এ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী তারা নীচের নিবন্ধটি পড়তে পারেন।
 
তথ্যসূত্রঃ Almaatouq A, Radaelli L, Pentland A, Shmueli E. Are You Your Friends’ Friend? Poor Perception of Friendship Ties Limits the Ability to Promote Behavioral Change. PLoS ONE. 2016;11(3):e0151588.  

Wednesday 24 August 2016

সামাজিকতার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে মেয়েরা এগিয়ে


 
অনেকের নিকট মনে হতে পারে যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকা মানেই সামাজিকভাবে আমরা যুক্ত। কিন্তু আসলে তা নাও হতে পারে। বরং মোবাইল ফোন ব্যবহার সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বোধ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

দেখা যাচ্ছে সামাজিকতার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। জরীপে দেখা যায় ছাত্রীরা প্রতিদিন গড়ে ৩৬৫ মিনিট ফোনে সময় কাটায়। তারা প্রতিদিন ৬ টি কল রিসিভ করে এবং গড়ে ২৬৫ টি টেক্সট মেসেজ পাঠায়। পক্ষান্তরে ছাত্ররা প্রতিদিন গড়ে ২৮৭ মিনিট ফোন ব্যবহার করে। তারা মেয়েদের মতো দিনে ৬টি কল রিসিভ করলেও মাত্র ১৯০ টি টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করে। কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রায় পাঁচশ’ ছাত্র-ছাত্রীর মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্যই দিয়েছেন।

ছাত্রীরা জানিয়েছে তারা ফোনে পিতামাতার সঙ্গে কথা বলতে পারলে মানসিকভাবে সবচেয়ে ভাল বোধ করে। কিন্তু অন্যান্য বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে টেক্সট মেসেজ বিনিময় করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু ছাত্রদের বক্তব্য হচ্ছে ফোন কিংবা টেক্সট মেসেজ কোনটাই তাদের মানসিক নৈকট্যবোধ করতে সাহায্য করে না। তারা সশরীরে উপস্থিত হয়ে কথা বলতেই পছন্দ করে।
 
তথ্যসূত্রঃ Lepp A, Li J, Barkley JE. College students' cell phone use and attachment to parents and peers. Computers in Human Behavior. 2016; 64:401-8.

Saturday 20 August 2016

ঘৃণার মনস্তত্ত্ব


এটা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, অনেক সময় ছড়িয়ে পড়ে সমাজ থেকে সমাজে এবং দেশ থেকে দেশে।

আসলে ঘৃণার মনস্তত্ত্ব নিয়ে খুব বেশী গবেষণা হয়নি। স্মৃতি, চেতনা কিংবা ভালবাসা সম্পর্কে আমরা যত তত্ত্বকথা জানতে পারি, ঘৃণা সম্পর্কে তেমন জানা যায় না। নিঃসন্দেহে ঘৃণা একটি জটিল মানসিক আবেগ। কিন্তু ঘৃণার বশে আজকাল যেভাবে সহিংসতা ঘটছে তাতে অনেকেই মনে করছেন এ সম্পর্কে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ করা দরকার।  
মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা মনে তীব্র ঘৃণা পোষণ করেন, তারাও নিজেদের দয়ালু এবং সহমর্মী ব্যক্তি বলে ভেবে থাকেন। তাদের মানসিক বলয়ের এই দুই বিপরীত ধরণের আবেগ সমাজে পরিস্থিতি ভেদে তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করে দেয়। এরকম ব্যক্তি একই সময়ে তার পরিচিতজনের জন্য যত্নশীল এবং সহানুভূতিপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; কিন্তু এই একই ব্যক্তি অস্ত্রহাতে কোথাও গিয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলছে। ব্যক্তির এই দ্বৈত আচরণের ব্যাখ্যা পাওয়া সহজ নয়। এরা মনের ভিতরে যে তীব্র ঘৃণার বিষ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এবং যারা তার ঘৃণার কারণে সংঘটিত অপরাধের শিকার হচ্ছে, তার জন্য অনেক সময় কোন অনুশোচনাও বোধ করে না। বরং যাদের প্রতি সে ঘৃণা পোষণ করছে, তাদের যেকোনোভাবে নির্মূল করাকেই তার “পবিত্র কর্তব্য” বলে মনে করছে।  

ধরণ এবং মাত্রাভেদে এটা নানা রূপ ধারণ করতে পারে। জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ এরিক ফ্রম ঘৃণার দুটি ধরণের কথা বলেছেন – একটি যুক্তিসঙ্গত ঘৃণা আর অন্যটি চরিত্র-নির্ধারিত ঘৃণা। যুক্তিসঙ্গত ঘৃণার তেমন ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কোন ব্যক্তির মন্দ কাজ কিংবা অপরাধকে আমরা যৌক্তিক কারণে ঘৃণা করতে পারি। কিন্তু চরিত্র-নির্ধারিত ঘৃণা একটু জটিল বিষয়। যেমন কেউ জন্মের পরে মন্ত্রণা কিংবা শিক্ষার কারণে যদি কোন গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম কিংবা জাতির মানুষকে ঘৃণা করে তাহলে সেটা একটি সমস্যার বিষয়ই বটে। এরকম ঘৃণার অনেক উদাহরণ এখন আমাদের সামনে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও মুসলমান, মেক্সিকান, সমকামী কিংবা এশিয়ার মানুষ তীব্র ঘৃণার মুখে অসহায় বোধ করছে। নাৎসি চেতনার মতো উন্নাসিকতার ফলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভুতি থেকে সৃষ্ট এই ঘৃণা অন্যদের মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করছে। কিন্তু তারা সেটা বোঝার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে। চরিত্র-নির্ধারিত ঘৃণার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এটা দুনিয়াকে সরল দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়- আমরা শ্রেষ্ঠ; আর “তারা” আমাদের কেউ নয়, তারা কিছু নয়। এই “তাদের” প্রতি ঘৃণার মাত্রা এতই তীব্র এবং বিধ্বংসী যে “তাদের” নির্মূল করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়াই বৈধ বলে মনেপ্রাণে তারা বিশ্বাস করে। আর এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে সহিংসতা। এটা ব্যক্তি পর্যায়ে ঘটতে পারে, কিন্তু একসময়ে তা ছোটগণ্ডী ছাড়িয়ে বৃহত্তর গণহত্যায়ও রূপ নিতে পারে। তার উদাহরণ ভারত উপমহাদেশে বার বার দেখা গিয়েছে, দেখা গিয়েছে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। 

প্রশ্ন হচ্ছে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন ঘৃণা থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি পাব?

সমাধান একটিই। যুগে যুগে মহৎ ব্যক্তিরা সেই একটি বিষয়ের কথাই বলে গিয়েছেন। মার্টিন লুথার কিং বলেছেন, এই সেদিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বলেছেন- ঘৃণা এবং সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের একে অপরকে ভালবাসতে শিখতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ঘৃণার আগুণ থেকে দুনিয়াকে রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে কোন যাদু-মন্ত্র নেই। তবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার কিছু স্বীকৃত আচার-অনুশাসন আমাদের জানা রয়েছে। ঘৃণা একটি অর্জিত আবেগ; কেউ জন্ম থেকেই ঘৃণা নিয়ে এই দুনিয়ায় আসে না। তাই ঘৃণা দূর করা যায়। এরজন্য দরকার সর্বস্তরে একটি সহনশীল, নমনীয় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ গড়ে তোলা। ক্ষণস্থায়ী জীবনে এই ছোট পৃথিবীতে নানা বর্ণ,ধর্ম এবং মতবিশ্বাসের মানুষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বসবাস করতে শিখতে হবে। আর সেজন্যই গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের আপাতত কোন বিকল্প নেই।


ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ফলে আজ দুনিয়া ছোট হয়েছে সত্য; কিন্তু নতুন বিপদও হয়েছে। স্বাস্থ্য নয়, ব্যাধিই সংক্রামক-এটা যেমন সত্য; তেমন ভালবাসা নয়, ঘৃণাই সংক্রামক। আগে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘৃণা রপ্তানী করতে মাস কিংবা বছর লেগে যেত; কিন্তু এখন অন্তর্জালে মুহূর্তেই ঘৃণার আগুণ লেলিহান শিখার মতো দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানুষের সামনে আজ এটা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে মানুষের প্রতি আস্থা হারানোর কিছু নেই। মানুষ মানুষের জন্যই। অতএব আমাদের আশাবাদী হতে হবে যে আমরা অবশ্যই ঘৃণামুক্ত ভালবাসার সহনশীল শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবো।     

Monday 15 August 2016

কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম



সব রোগ রোগ নয়; অনেক সময় তা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জীবনের অংশ। কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম(computer vision syndrome) আসলে তেমন একটি সমস্যা। চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ কোন কারণে সৃষ্ট একাধিক লক্ষণ-উপসর্গের সমষ্টিকে সিনড্রোম বলা হয়। কোন কোন সিনড্রোমের নাম এসেছে যে অঙ্গে রোগটি হয় তার নাম থেকে। যেমন- কার্পাল টানেল সিনড্রোম। কব্জির সামনে কার্পাল টানেলে মিডিয়ান নার্ভ অতিরিক্ত চাপের কারণে এটা হয়। ডাউনস সিনড্রোমের নাম এসেছে ব্রিটিশ চিকিৎসক ডাঃ জন ল্যাঙ ডন ডাউন-এর নাম থেকে। ১৮৬২ সালে তিনি এই বংশগত রোগটির প্রথম বর্ণনা দিয়েছিলেন। আবার অনেক সিনড্রোমের নাম এসেছে সমস্যার বর্ণনা থেকে। যেমন- রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম। তবে অনেক সময় নামের সঙ্গে সিনড্রোমের বর্ণনার মিল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। 
 
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিধানে ছয়শ’য়ের বেশী সিনড্রোমের নাম রয়েছে। তার সঙ্গে অধুনা নতুন যুক্ত হয়েছে “কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম”। প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম আসলে কি? আজকাল যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার নিয়ে কাজ করেন তারা চোখের বিভিন্নরকম সমস্যার কথা বলেন; যেমন- চোখের পানি শুকিয়ে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা মনে হয়, চোখে জ্বালাপোড়া করে ইত্যাদি।অনেকের সমস্যার তীব্রতা এতই বেশী হয় যে তারা আর কম্পিউটারে কাজ করতে পারেন না। 

অনুমান করা হচ্ছে পৃথিবীতে এখন ৭ কোটি মানুষের কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি আছে। লেখাপড়া, কর্মক্ষেত্র এবং বিনোদনের জন্য যেভাবে  কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। গবেষকদের মতে যারা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কম্পিউটার নিয়ে কাজ করেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জন এ ধরণের এক বা একাধিক লক্ষণ-উপসর্গের অভিযোগ করেন। এসব ছাড়া ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি ধরণের সমস্যা তো রয়েছেই। এসব কিছু মিলে কম্পিউটার নিয়ে বেশী কাজ করা অনেকের জন্য আসলেই এক সমস্যা।
    
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম কেন হচ্ছে তা নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে মোদ্দা কথা হচ্ছেঃ
কম্পিউটারের অক্ষর এবং ছবি পিক্সেল দিয়ে তৈরি। এর কিনারা ঝাপসা থাকে। এজন্য কাগজে ছাপা অক্ষর কিংবা ছবি পড়ার চেয়ে কম্পিউটারের অক্ষর এবং ছবি পড়তে চোখের ওপর বেশী চাপ পড়ে। ক্রমাগত এরকম অতিরিক্ত চাপের কারণে চোখের উপসর্গসমূহ সৃষ্টি হয়।
চোখের পলক পড়ার হার কমে যাওয়া আরেকটি সমস্যা। কেউ যখন একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে থাকে তখন তার চোখের পলক পড়া কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে প্রতি মিনিটে একজন মানুষের অন্তত ১৭ বার চোখের পলক পড়ে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করার সময় এটা কমে মিনিটে ১২ থেকে ১৫ বারে নেমে আসে। চোখের পলক পড়া কমে গেলে চোখের পানির প্রবাহ কমে যায় এবং চোখে শুষ্কতা অনুভূত হয়। 

কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে; যেমন- 
কাজের সময় কম্পিউটারের খুব নিকটে বসা ঠিক নয়। সাধারণত চোখ থেকে কম্পিউটার স্ক্রিনের দূরত্ব অন্তত দুই ফুট হওয়া উচিত।
কম্পিউটার মনিটরের অবস্থানঃ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে কম্পিউটারের মনিটর চোখ থেকে ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি নীচে থাকা উচিত। নীচের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে চোখের দুই পাতার মধ্যে ব্যবধান কম থাকে। ফলে চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
কম্পিউটার স্ক্রিনের কনট্রাস্টঃ এটা এমনভাবে সেট করা উচিত যেন চোখের ওপর কম চাপ পড়ে।উজ্জ্বল সাদা স্ক্রিনে কালো অক্ষরই এজন্য উপযুক্ত।
কম্পিউটারের মনিটরে আলোর ঝলমলে ভাব কমানোঃ ঘরে উজ্জ্বল আলো ব্যবহার না করলে এবং জানালা দিয়ে কম আলো আসতে দিলে, মনিটরের আলো স্তিমিত রাখলে এবং বিশেষ ধরণের চশমা পরলে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়াঃ এজন্য ২০-২০-২০ সূত্র অনুসরণ করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট কাজ করার পরে ২০ সেকেন্ড বিরতি নিতে হবে এবং এই সময়ে ২০ ফুট দূরে তাকাতে হবে। এরসঙ্গে ঘাড় এবং কাঁধের হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
অক্ষরের ফন্ট বড় রাখাঃ অক্ষরের বড় ফন্ট ব্যবহার করলে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে। 
চোখের পানি যেন শুকিয়ে না যায় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মতো চোখের পলক ফেলতে হবে। তারপরেও যদি চোখ শুকিয়ে যায়, তাহলে চোখের জন্য কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এজন্য একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
নিয়মিত চোখের চোখের চেক-আপ করানো জরুরী। যাদের চোখে রি-ফ্র্যাকসনের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই সঠিক চশমা পরে কম্পিউটারে কাজ করতে হবে। এজন্য নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।



কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সৃষ্ট নতুন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের এধরণের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া নতুন নয়। একে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।   

Sunday 7 August 2016

ঘুমের মধ্যে শ্বাসের সমস্যা এবং স্ট্রোক


 
অনেকেরই ঘুমের সময় শ্বাসের সমস্যা হয়। আর এটাও ঠিক যে অনেক স্ট্রোক ঘুমের মধ্যেই ঘটে থাকে। সম্প্রতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে আসলে ঘুমের মধ্যে শ্বাসের সমস্যা থেকেই এসকল স্ট্রোক হয়ে থাকে।
মোট ২৯ টি সমীক্ষায় ২৩৪৩ জন রোগীর স্ট্রোক সম্পর্কে খুব গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের ঘুমের সময় শ্বাসের সমস্যা ছিল। শ্বাসের সমস্যার মধ্যে রয়েছে - ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা(obstructive sleep apnea), সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং শ্বাসের অনিয়মিত ছন্দ (Cheyne-Stokes breathing)।  এধরণের শ্বাসের সমস্যার কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাসের গতি কমে যায় কিংবা সাময়িকভাবে দম নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যাদের স্ট্রোক হয়েছে তাদের ঘুমের মধ্যে এরকম শ্বাস শ্লথ কিংবা থেমে যাওয়ার ঘটনা ঘণ্টায় পাঁচ কিংবা তার চেয়ে বেশী বার ঘটেছে।
 
আরও কিছু সমীক্ষাতেও শ্বাসের সমস্যার সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক চিহ্নিত হয়েছে। এজন্য অনেকেই এখন উচ্চ রক্তচাপ-ডায়াবেটিসের মতো ঘুম এবং শ্বাসের সমস্যাকেও স্ট্রোকের ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করছেন। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন এসকল সমীক্ষার ফলাফলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই; তবে যাদের ঘুমের সময় শ্বাসের সমস্যা হয়, তাদের এবিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।  

তথ্যসূত্রঃ Hermann DM, Bassetti CL. Role of sleep-disordered breathing and sleep-wake disturbances for stroke and stroke recovery.  Neurology. August 3,2016.

Saturday 23 July 2016

মানুষের মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র




পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে যাওয়ার মানচিত্র রয়েছে। গুগল মানচিত্রের সাহায্যে এখন যেকোন জায়গায় যাওয়া সম্ভব। অনেক সময় বাইরের দুনিয়ার মতো মানুষের মগজের ভিতরেও বিশেষ কোন অঞ্চলের কাজ পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন হয়।তার জন্য রয়েছে মস্তিষ্কের মানচিত্র।সম্প্রতি মানুষের মস্তিষ্কের মানচিত্রের  একটি নতুন সংস্করণ বের হয়েছে।

 ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকগণ মানুষের মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র প্রণয়ন করেছেন। তারা  মানুষের সেরিব্রাল কর্টেক্স বা গুরু মস্তিষ্কের বাইরের আস্তরণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানাধরণের অনুভূতির সংযোগস্থলের বিস্তারিত চিত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সম্প্রতি ন্যাচার (Nature)পত্রিকায় মানুষের নতুন মানচিত্রের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। এরফলে মস্তিষ্কের অনেক রোগ যেমন- অটিজম, ডিমেন্সিয়া, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভবিষ্যৎ গবেষণায় আরও সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য মস্তিস্ক এমন কোন কম্পিউটার নয় যে সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে এটা কাজ করবে। বরং এর সফটওয়ার(মস্তিষ্কের যে ভাবে কাজ করে)এটার হার্ডওয়ারের(মস্তিষ্কের গঠনপ্রণালীর)সঙ্গে সম্পর্কিত। এজন্য মস্তিস্ক কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে আমাদের এর গঠন প্রণালী বুঝতে হবে।
     
বর্তমানে মস্তিষ্কের যে মানচিত্র ব্যবহার করা হয় তা প্রায় একশবছর পুরনো। উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে জার্মান নিউরো-অ্যানাটমিস্ট করবিনিয়ান ব্রডম্যান প্রথম মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পুরনো ম্যাপে আসলে মস্তিষ্কের অনেক কাজকর্মের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই অনেকদিন ধরে মস্তিষ্কের একটি বিস্তারিত ম্যাপের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল।

মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র তৈরি করার জন্য গবেষকগণ Human Connectome Project-এর ডাটা ব্যবহার করেছেন। এই প্রজেক্টে এমআরআই মেশিনের সাহায্যে নেওয়া ১২০০ মানুষের মস্তিষ্কের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গঠন, ধরণ এবং কার্যানুসারে মস্তিষ্কের দুই অংশে ১৮০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই অনেক ধরণের স্নায়ুরোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র বিশেষ ভূমিকা রাখবে।


তথ্যসূত্রঃ  Glasser M, Coalson T, Robinson E, Hacker C, Harwell J, Yacoub E. A Multi-Modal Parcellation of Human Cerebral Cortex. Nature, 2016.    

Saturday 18 June 2016

হাঁটাহাঁটির অংক


গড়পড়তা একজন মানুষ ২০০০ কদম হাঁটলে এক মাইল হাঁটা হয়। সুতরাং ১০,০০০ কদমে পাঁচ মাইল। শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় বা অলস একজন মানুষ দিনে বড়জোর ১০০০ থেকে ৩০০০ কদম হাঁটে।  

সাধারনত প্রতি মাইল হাঁটলে ১০০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। কেউ যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত তিন মাইল হাঁটে তাহলে তার ৩০০ ক্যালরি খরচ হবে। প্রতি দিন ৩০০ ক্যালরি খরচ করলে সপ্তাহে ২১০০ ক্যালরি খরচ হয়। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৯০০০ ক্যালরি খরচ হবে। এর ফলে গড়ে আড়াই পাউন্ড ওজন কমে। এভাবে পুরো একবছর হাঁটলে তারপক্ষে ৩১ পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু শর্ত হচ্ছে অতিরক্ত হাঁটার ফলে যে ক্যালরি খরচ হবে তার জন্য খাবারের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না।

ঘণ্টায় চার মাইল বেগে হাঁটলে অতিরিক্ত তিন মাইল হাঁটার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যয় করতে হবে। অতএব বলা যায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট করে নিয়মিত হাঁটলে এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ না বাড়ালে বছরে ৩১ পাউন্ড বা ১৪ কিলোগ্রাম ওজন কমানো সম্ভব।

সমস্যা হচ্ছে আমরা বেশী হাঁটলে কিংবা পরিশ্রম করলে অতিরিক্ত খাই। ফলে আর ওজন কমানো সম্ভব হয় না। সহজ গাণিতিক সূত্র হচ্ছে পরিমিত আহার এবং প্রতিদিন অতিরক্ত তিন মাইল হাঁটলে যে কারও পক্ষে প্রয়োজন মতো ওজন কমানো সম্ভব।  


মনে রাখতে হবেঃ
  • ১ মাইল = প্রায় ২০০০ কদম হাঁটা
  • ১ মাইল হাঁটা = ১০০ ক্যালরি খরচ হওয়া
  • ১ পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য = ৩৫০০ ক্যালরি অতিরক্ত খরচ করতে হবে
  • সপ্তাহে ২ পাউন্ড ওজন কমাতে হলে = ৭০০০ ক্যালরি খরচ করতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালরি খরচ করতে হবে।
  • হেঁটে সপ্তাহে ১ পাউন্ড ওজন কমাতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ মাইল হাঁটতে হবে। এজন্য বলা হয় প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০,০০০ কদম হাঁটলে সপ্তাহে ১ পাউন্ড ওজন কমে।
  • প্রতিদিন অতিরিক্ত আড়াই মাইল বা ৫০০০ কদম হাঁটলে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫০ ক্যালরি কম খাদ্য গ্রহণ করলেও একই ফল পাওয়া সম্ভব।



এগুলি গাণিতিক হিসেব। কিন্তু মানুষ কখনও এভাবে হিসেব করে কাজ করে না; আর খাওয়াদাওয়ার সময় এত সব অংক মনেও থাকে না। অতএব যা হওয়ার তাই হয়।    

Friday 17 June 2016

হাঁটার উপকারিতা



কাউকে চিকিৎসা হিসেবে হাঁটার প্রেসক্রিপশন দিলে হয়তো তেমন মনঃপুত হবে না কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিনে পয়সায় এর চেয়ে ভাল ওষুধ খুব কমই আছে আমরা সবাই জানি ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী এজন্য আমরা মনে করি জিমে যেয়ে অনেক ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যায়াম করতে বে কিন্তু হাঁটা একটি অতি সহজ ব্যায়াম বিনে খরচার এই ব্যায়ামের উপকারের কোন তুলনা হয় না

প্রতিদিন নিয়মিত ২১ মিনিট অর্থাৎ সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা করে হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায় কোন যন্ত্রপাতি ছাড়া যে কোন জায়গায় এই সহজ কাজটি করলে হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়; রক্তচাপ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে; আর মস্তিস্ক থাকে সতেজ এবং সক্রিয়।

হাঁটার আরও পাঁচটি উপকারিতাঃ

১) হাঁটা আমাদের শরীরের ওজন বাড়ানোর জিনের কাজ কমিয়ে দেয়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকগণ ১২,০০০ মানুষের ওপর ৩২ রকমের ওজন বাড়ানোর জিন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গিয়েছে দৈনিক এক ঘণ্টা জোরে জোরে হাঁটলে ওজন বাড়ানোর জিনের কার্যকারিতা অর্ধেক কমে যায়।
    
২) হাঁটলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। সাধারণত যাদের মিষ্টি খাওয়ার লোভ বেশী তাদের ওজন সহজে বেড়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত ১৫ মিনিট হাঁটলে চকলেটসহ অন্যান্য মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। যারা বেশী হাঁটেন তাদের যেকোন ধরণের মিষ্টিযুক্ত খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা কম থাকে।

৩) হাঁটলে স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেকোনো ধরণের ব্যায়াম স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তবে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির সমীক্ষায় দেখা যায়, যে সকল মহিলা সপ্তাহে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা হাঁটেন তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।
  
৪) হাঁটলে বাতের ব্যাথা কমে যায়। অনেকগুলি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বাতের জন্য হাঁটা উপকারী। যারা সপ্তাহে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাইল হাঁটেন তাদের মধ্যে বাতের প্রকোপ কম। হাঁটলে আমাদের বোন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিসমূহ সুস্থ থাকে। ফলে বাতের প্রকোপ লাঘব হয়।

৫) হাঁটলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের সর্দি-গর্মি কম হয়। প্রায় ১০০০ মহিলা এবং পুরুষের ওপর দীর্ঘদিন সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যারা প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন হাঁটেন, তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম।  

অতএব সুস্থতার জন্য হাঁটুন। হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন।