কাউকে চিকিৎসা হিসেবে হাঁটার প্রেসক্রিপশন দিলে হয়তো তেমন মনঃপুত হবে না। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিনে পয়সায় এর চেয়ে ভাল ওষুধ খুব কমই আছে। আমরা সবাই জানি ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী। এজন্য আমরা মনে করি জিমে যেয়ে অনেক ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। কিন্তু হাঁটা একটি অতি সহজ ব্যায়াম। বিনে খরচার এই ব্যায়ামের উপকারের কোন তুলনা হয় না।
প্রতিদিন নিয়মিত ২১ মিনিট অর্থাৎ সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা করে হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়। কোন যন্ত্রপাতি ছাড়া যে কোন জায়গায় এই সহজ কাজটি করলে হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
থাকে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়; রক্তচাপ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণে থাকে; আর মস্তিস্ক থাকে সতেজ এবং সক্রিয়।
হাঁটার আরও পাঁচটি উপকারিতাঃ
১) হাঁটা আমাদের শরীরের ওজন বাড়ানোর জিনের কাজ কমিয়ে দেয়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির
গবেষকগণ ১২,০০০ মানুষের ওপর ৩২ রকমের ওজন বাড়ানোর জিন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এতে
দেখা গিয়েছে দৈনিক এক ঘণ্টা জোরে জোরে হাঁটলে ওজন বাড়ানোর জিনের কার্যকারিতা
অর্ধেক কমে যায়।
২) হাঁটলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। সাধারণত যাদের মিষ্টি খাওয়ার লোভ বেশী
তাদের ওজন সহজে বেড়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত ১৫ মিনিট হাঁটলে চকলেটসহ অন্যান্য মিষ্টি
খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। যারা বেশী হাঁটেন তাদের যেকোন ধরণের মিষ্টিযুক্ত খাদ্যগ্রহণের
প্রবণতা কম থাকে।
৩) হাঁটলে স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেকোনো ধরণের ব্যায়াম স্তন
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তবে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির সমীক্ষায় দেখা যায়, যে সকল
মহিলা সপ্তাহে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা হাঁটেন তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা
তুলনামূলকভাবে কম।
৪) হাঁটলে বাতের ব্যাথা কমে যায়। অনেকগুলি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বাতের জন্য
হাঁটা উপকারী। যারা সপ্তাহে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাইল হাঁটেন তাদের মধ্যে বাতের
প্রকোপ কম। হাঁটলে আমাদের বোন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিসমূহ সুস্থ থাকে। ফলে বাতের
প্রকোপ লাঘব হয়।
৫) হাঁটলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের সর্দি-গর্মি কম
হয়। প্রায় ১০০০ মহিলা এবং পুরুষের ওপর দীর্ঘদিন সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যারা
প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন হাঁটেন, তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা
অন্যদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম।
অতএব সুস্থতার জন্য হাঁটুন। হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন।
No comments:
Post a Comment