শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Tuesday 14 June 2016

শিউলি নয়, লুকুলিয়া



কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি খুব গানের প্রথম দুটি চরণ- 

“শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।
শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।।“ 

অনেকেরই খুব প্রিয় ফুল এই শিউলি ফুল বা শেফালী ফুল।সাদা রঙের ছোট ছোট ফুল। আর উজ্জ্বল কমলা রঙের বোঁটা। সনাতন ধর্মে একে স্বর্গের ফুল বলে মনে করে হয়। ধারণা করা হয় কৃষ্ণ এই ফুল স্বর্গ থেকে মর্তে এনেছিলেন। শরত আর হেমন্ত কালে রাতে এই ফুল ফোটে। সারা রাত গাছে থাকার পরে শিশিরসিক্ত সকালে গাছের নীচে ঝরে পড়ে। ছোটবেলায় অনেকেরই সেই ঝরা ফুল কুড়নোর সুখস্মৃতি রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শিউলি আসলে বেদনার প্রতীক। গল্পটি এক রাজকন্যাকে নিয়ে। তার নাম পারিজাতিকা বা পারিজাত। তার রূপে মুগ্ধ সবাই। কিন্তু তিনি আবেশিত হয়েছিলেন সূর্য দেবের রূপে। কিন্তু তার ভালোবাসা রয়ে গেল অধরা। দুঃখ সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করলেন। রাজকন্যার দেহভস্ম থেকে জন্ম নেয় একটি গাছ। সেই গাছে ফুল ফোটে।সকাল বেলায় যেন সুর্যের মুখ দেখতে না হয়, তার জন্য সারারাত গাছে ফুল থাকার পর সকাল হবার আগেই ঝরে পরে গাছ থেকে। সেটাই আমাদের পরিচিত শিউলি ফুল বা শেফালী ফুল। রাজকন্যার নামে রাখা ফুলের নাম পারিজাত বা পারিজাতিকা। কাজী নজরুল কিন্তু আরেকটি গানে সেই শিউলি বিছানো পথে আসার খুবই কাব্যিক আহবান জানিয়েছেন- 

“এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে।।
দলি, শাপলা শালুক শতদল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল
নীল লাবনি ঝরায়ে চলচল এসো অরণ্য পর্বতে।।”

আমি কবি নই। তাই সেভাবে এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারছি না। দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়ায় এখন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত এসেছে। শিশির ভেজা সকালে সেদিন ড্যান্ডেনং পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সকালে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি, আর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির রূপালি কনা। অকস্মাৎ চোখে পড়লো একটি গাছের নীচে শিউলি ফুলের মতোই অসংখ্য ফুল ঝরে পড়েছে। ঠিক সাদা নয়; ঈষৎ গোলাপি রঙের ফুল, শিউলির মতোই; কিন্তু শিউলি না। এর নাম লুকুলিয়া (luculia)।
এরাও সাধারনত শরৎকাল এবং শীতকালে ফোটে।আবাস নেপালের হিমালয় পার্বত্য এলাকায়। ভুটান এবং দক্ষিণ চীনেও দেখতে পাওয়া যায়। জানিনা কেউ একজন হয়তো শখ করে নেপাল থেকে এনে ড্যান্ডেনং পাহাড়ের ওপরে লুকুলিয়া ফুলের গাছ লাগিয়েছিল। আর এই শীতের শিশির ভেজা বৃষ্টি স্নাত সকালে সেই ফুল ঝরে পড়ে শিউলির মতই গাছের নীচে চাদর বিছিয়ে রেখেছে।   

No comments:

Post a Comment