দুনিয়াজুড়ে ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ
বাড়ছে। স্বভাবতই এখন চিকিৎসকদের দিনে দিনে আরও অধিক সংখ্যক মুসলমান ডায়াবেটিস
রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা এখন যেকোন সময়ের চেয়ে আধুনিক
এবং জটিল। রমজানের সময় যে সকল ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখেন তাদের চিকিৎসার জন্য
এতদিন কোন আন্তর্জাতিক গাইড লাইন ছিলনা। কিন্তু ডায়াবেটিস চিকিৎসার আধুনিকায়ন এবং
নতুন নতুন অনেক ওষুধ আসার ফলে এসম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট গাইড লাইনের প্রয়োজনীয়তা
সকলেই অনুভব করছিলেন।
সমস্যা হচ্ছে
নতুন ওষুধগুলি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ভাল; কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে
রোজাদারদের ওপরে এগুলি প্রয়োগ করে বাস্তব ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়নি। এজন্য
এসব ক্ষেত্রে প্রমানভিত্তিক ওষুধের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে চিকিৎসা
দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পরামর্শের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়।
এই সমস্যা দূর
করার জন্য “ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন(IDF)” এবং
“ডায়াবেটিস এন্ড রমজান ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স(DAR)” গত এপ্রিল মাসে
চিকিৎসকদের জন্য একটি বিস্তারিত বাস্তব ভিত্তিক গাইডলাইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখা সম্পর্কে এ পর্যন্ত যত দিক নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে তাদের মধ্যে বর্তমান গাইডলাইন নিঃসন্দেহে সবচেয়ে আধুনিক এবং নির্ভরযোগ্য। বর্তমান গাইডলাইন প্রণয়নে বিভিন্ন দেশের ৩২ জন বিশেষজ্ঞ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। আর একাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন আরব আমিরাতের দুবাই হাসপাতালের বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং “ডায়াবেটিস এন্ড রমজান
ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের” সভাপতি ডাঃ মোহাম্মদ হাসনাইন। গাইডলাইনের শেষে মিসরের মুফতি প্রফেসর শায়খ ইব্রাহিম আলমের ধর্মীয় অনুমোদনপত্রও সংযুক্ত করা হয়েছে। এর সাহায্যে
দুনিয়ার যেকোন স্থানে কার্যরত চিকিৎসকগণ
এখন রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীদের রোগ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে কি করণীয় সেসব সম্পর্কে
আন্তর্জাতিক মানের পরামর্শ দিতে পারবেন।
রোজা শুরু হওয়ার
আগে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া
সম্পর্কে শিক্ষা দিলে রোজা রাখার সময় এটা ঘটার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কিন্তু
সবদেশে এরকম প্রাক-রমজান শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেই।
ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের জন্য যেকোনো ওষুধ ব্যবহার করলেই কিছু না কিছু হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার
আশংকা থাকে। কিন্তু কোন ওষুধে কার এমন ঘটবে সেসম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে
কিছু বলা সহজ নয়। এজন্য রোজা রাখাকালীন প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ওষুধের
মাত্রা এবং ওষুধ গ্রহণের সময় সম্পর্কে রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সঠিক ধারণা থাকা
জরুরী।
ডায়াবেটিক
রোজাদারদের জন্য নতুন গাইডলাইন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে এর সম্পর্কে সকল
চিকিৎসক, মুসলিম ধর্মীয়গুরু এবং সার্বিকভাবে জনগণকে সচেতন হতে হবে। আশা করা হচ্ছে
সঠিক শিক্ষা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই গাইডলাইনের সাহায্যে ডায়াবেটিক
রোজাদারদের এখন থেকে ডায়াবেটিসের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment