ইদানীং দেখা যায় নতুন মা হওয়ার পরে তারা একের
পর এক সদ্যজাত শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে থাকেন। অবশ্যই শিশুদের ছবি খুব সুন্দর।
কিন্তু প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে শিশুর নানারকম ছবি পোস্ট করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
বন্ধু-বান্ধবেরা যাই ভাবুক না কেন নতুন হওয়া মা-বাবার জন্য তাদের শিশুর এসকল ছবি
ভবিষ্যতের জন্য বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে। ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ এর ভিতরে
খুঁজে পেয়েছেন নতুন মায়েদের মানসিক পরিস্থিতির চিত্র।
তারা মূলত
উচ্চশিক্ষিত বিবাহিত কর্মজীবি মায়েদের ওপরে গবেষণা করেছেন । দেখা গিয়েছে এ ধরণের নতুন মায়েরা শিশুর জন্মের
পর যত্নশীল আদর্শ মা হওয়ার এক ধরণের সামাজিক চাপ অনুভব করেন। এজন্য শিশুর অসংখ্য
ছবি পোস্ট করে তারা সেই স্বীকৃতি অর্জন করার চেষ্টা করেন। তারা ছবির নীচে বন্ধু-বান্ধব
এবং আত্মীয় স্বজনের প্রতিটি মন্তব্যের বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকেন এবং অনেক সময়
অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকেন। এ রকম একজন মা শিশুর ছবি পোস্ট করে যদি
পরিচিতদের নিকট থেকে আশানুরূপ ইতিবাচক মন্তব্য না পান, তাহলে তারা বিষণ্ণতায়
ভুগেন। গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে যে মায়েরা তাদের শিশুদের বিভিন্ন ধরণের ছবি বেশী
পোস্ট করেন তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার প্রকোপ আসলে বেশী।
ওহিওর এই
পর্যবেক্ষণে ১২৭ জন নতুন হওয়া মা অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সকলেরই আন্তরিক ইচ্ছে ছিল
ভাল মা হওয়া। পোস্ট করা ছবির মাধ্যমে তারা সেটাই প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
পর্যবেক্ষকগণ শিশুর জন্মের পর থেকে নয় মাস পর্যন্ত মায়েদের ফেসবুকের কার্যক্রম
লক্ষ্য করেছেন। শতকরা ৯৮ জন মা জন্মের পর তাদের শিশুদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
জন্মের পরেই ছবি পোস্ট করার হার সবচেয়ে বেশী। নয় মাস পরে তা অনেক কমে এসেছে। যে
সকল মা শিশুর ছবি তাদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে রেখেছেন তারা আসলে তাদের শিশুকে
নিজের সমস্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
গবেষকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে এর মাধ্যমে একজন মা আসলে শিশুটির মাঝে তার নিজের
আইডেন্টিটি খুঁজে ফিরছেন। এধরণের ছবি পোস্ট করার পরে পরিচিতদের নিকট থেকে ইতিবাচক
মন্তব্য না পেলে তারা অধিকতর বিষণ্ণতাবোধে আক্রান্ত হয়েছেন।
কিন্তু কর্মজীবী
মায়েদের কি এমন আইডেন্টিটি খুঁজে ফেরার প্রয়োজন আছে? কর্মজীবনের আরও অনেক কিছুই তো
তাদের আইডেন্টিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যথেষ্ট। এজন্য নতুন মায়েদের ফেসবুক ব্যবহার
এই দিকটি গবেষকদের জন্য বিশেষ কৌতুহল জাগিয়েছে। তারা মনে করছেন এবিষয়ে আরও অনেক
বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। যাহোক গবেষকগণ মনে করছেন নতুন মায়েদের ফেসবুকে শিশুদের
কর্মকাণ্ড এবং ছবি পোস্ট করা ভাল; কিন্তু এর মাধ্যমে সবসময় মানসিক তৃপ্তি খোঁজার
চেষ্টা করা একটু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
তথ্যসূত্রঃ Schoppe-Sullivan
SJ, Yavorsky JE, Bartholomew MK, Sullivan JM, Lee MA, Dush CMK, et al. Doing
Gender Online: New Mothers’ Psychological Characteristics, Facebook Use, and
Depressive Symptoms. Sex Roles. 2016:1-14.
No comments:
Post a Comment