অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। এটা “ষোল ক্যানসার প্রতিরোধ আন্দোলন”-এর অংশ। জনগণকে ধূমপান থেকে দূরে রাখার সরকারী প্রচেষ্টা খুবই চোখে পড়ার মতো। অস্ট্রেলিয়ার পথেঘাটে যত সহজে মদ কিনতে পাওয়া যায়, সিগারেট কেনা ততটাই দুরুহ। সিগারেটের ওপর এতই বেশী করারোপ হয়েছে যে ধূমপান রীতিমতো ধনীদের বিলাসিতার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে সিগারেটের বিরুদ্ধে কেন এত কঠোর অবস্থান? কারণ অস্ট্রেলিয়ার জনগণের চিকিৎসাসেবার বা মেডিকেয়ারের টাকার বিশাল অংশ সরকারকেই দিতে হয়। আর তার বিপুল অংশ যায় ক্যানসার চিকিৎসার পিছনে। কাজেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা মানেই মেডিকেয়ারের খরচ কমানো। ধূমপান যে অনেক রকম ক্যানসারের কারণ, তা তো এখন আর নতুন করে প্রমাণ করার দরকার নেই। অতএব সরকারী দল এবং বিরোধী দল নির্বিশেষে ধূমপানের বিরুদ্ধে সকলে একজোট।
সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭০০০ রকমের রাসায়নিক উপাদান থাকে। এদের মধ্যে অন্তত ৭০ টি উপাদান “কার্সিনোজেনিক” বা ক্যানসার সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ধূমপান করা মানেই এসকল উপাদান শরীরে প্রবেশ করে এবং কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা শরীরের কোষের স্বভাব বদলে দেয় এবং তা ক্যানসারে রূপ নেয়। ধূমপানের নিরাপদ মাত্রা বলে কিছু নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অন্তত ১৬ রকমের ক্যানসারের সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক নিশ্চিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই ১৬ রকম ক্যানসারের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার থেকে শুরু করে রয়েছে লিভার, অন্ত্র, কিডনি, জরায়ু এবং ওভারির ক্যানসার। ষোল রকম ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায় কিন্তু মাত্র এক রকম; আর তাহলো ধূমপান পরিত্যাগ করা। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ছয় ঘণ্টা পর থেকে বাড়তি ঝুঁকি কমতে শুরু করে এবং যতই দিন যায় ততই স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে থাকে।
আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের বড় অংশই জনগণ নিজের পকেট থেকে খরচ করে। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ধূমপান করবো; ক্যানসার হলে আমার পকেটের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করবো। এখানে বাধা দেওয়া কেন? এই যদি হয় সকলের মনোভাব, তাহলে অবশ্য বলার কিছু নেই। অন্যথায় ধূমপানের পক্ষে ওকালতি করার আসলে তেমন কোন যুক্তি দেখা যায় না।
No comments:
Post a Comment