কয়েকদিনের
ব্যবধানেই প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর আবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। এবার প্রোটন পাম্প
ইনহিবিটরের ওপর নতুন আরেক দোষ চেপেছে। চেপেছে বললে ভুল হবে। গবেষকগণ রীতিমত অকাট্য
যুক্তি-প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছেন। এর আগে একটি ছোটখাটো পর্যবেক্ষণে প্রোটন পাম্প
ইনহিবিটরের সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশতার কিঞ্চিৎ সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল। তখন এটাকে কেউ
তেমন পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এবার জার্মানি থেকে বেশ বড় রকমের পর্যবেক্ষণের ফলাফল
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন নিউরোলজিতে(JAMA Neurology)
প্রকাশিত হয়েছে। একথা নতুন করে বলার দরকার নেই যে, ওষুধ হিসেবে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের সফলতার কোন তুলনা নেই। কয়েক দশক ধরে এটা
প্রেসক্রিপশনে সর্বাধিক লেখা ওষুধ। মূলত দুটো কারণে এটা হয়েছেঃ ডিসপেপসিয়ার
চিকিৎসায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত; আর হৃদরোগে অ্যান্টিপ্লাটিলেট
ওষুধের সঙ্গে পাকস্থলি থেকে কোন ধরণের রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের জন্য এটা অবশ্যই
ব্যবহার করা হয়। সুলভ এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এটা ব্যবহার
করে থাকেন। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এটা দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।
উন্নত দেশেও বিনা প্রয়োজনে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর প্রেসক্রিপশনে লেখার নজির রয়েছে। কোন
কোন জরীপে ৭০ শতাংশ প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর প্রয়োজন ছাড়াই লেখার প্রমাণ পাওয়া
গিয়েছে। বৃদ্ধরোগীদের ওষুধের তালিকায় এটা অবশ্যই থাকতে দেখা যায়। এতদিন মনে করা হতো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খুবই নিরাপদ
ওষুধ; এর তেমন কোন
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের ফলাফলে আর তেমন মনে করা
সম্ভব হচ্ছে না।
জার্মানির ফলাফল এসেছে
একটি সরকারি বীমা কোম্পানির গ্রাহকদের রোগবৃত্তান্ত এবং ওষুধের প্রেসক্রিপশন
বিশ্লেষণ থেকে। জার্মানির মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের একভাগ এই বীমার আওতায় এবং এদের
অর্ধেকই বৃদ্ধমানুষ। এদের মধ্যে প্রায় চুয়াত্তর হাজার মানুষ রয়েছে যাদের বয়স ৭৫
বছরের বেশী। বীমা গ্রহণের সময় এদের কারোই স্মৃতিভ্রংশতা ছিল না। কিন্তু ২০০৪ থেকে
২০১১ সাল পর্যন্ত এদের মধ্যে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষের স্মৃতিভ্রংশতা শনাক্ত করা
হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বেশী মানুষের স্মৃতিভ্রংশতা হওয়া একটু অস্বাভাবিক ঘটনাই
বটে। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের
প্রেসক্রিপশনের ধারা অনুসরণ করলে দেখা যায় এদের অনেকেই ২০০৪ সাল থেকে ১৮ মাস কিংবা তার চেয়ে বেশী সময় ধরে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবন করেছেন।
ব্যবহৃত প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের মধ্যে
রয়েছে-ওমেপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ল্যান্সোপ্রাজল, এসমোপ্রাজল কিংবা রাবেপ্রাজল।
এদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার বীমাগ্রহণকারী প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর নিয়মিত আজীবন
সেবন করে যাচ্ছেন। বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দীর্ঘদিন
সেবনকারীদের স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের চেয়ে প্রায় ৫০% বেশী। উল্লেখ্য
স্ট্রোক এবং বিষণ্ণতা থাকলে স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস এবং
যারা প্রতিদিন পাঁচ ধরণের বেশী ওষুধ সেবন করে তাদেরও স্মৃতি দুর্বল হয়ে যায়।
কিন্তু এসব কিছুর চেয়ে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে
স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ওমেপ্রাজল,
প্যান্টোপ্রাজল এবং এসমোপ্রাজলের ক্ষেত্রে একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। যত বেশী সময়
এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তাদের তত বেশী স্মৃতি হারানোর সম্ভাবনা।
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে
কেন কিংবা কিভাবে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে তা এখনও কেউ ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। তবে
গবেষকগন মনে করছেন বিনা প্রয়োজনে ঠিক যতদিন প্রয়োজন তার বেশী প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবন না করাই
উত্তম। এমন কি তারা খুব জরুরী দরকার না থাকলে পুরনো সেই অ্যান্টাসিড কিংবা র্যানিটিডিন
ব্যবহার করার ওপরেও জোর দিচ্ছেন। কারণ প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের জন্য যদি
সামান্য পরিমাণও স্মৃতিভ্রংশতা বাড়ে সংখ্যার হিসেবে বাস্তবে তা বিশাল সমস্যা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বয়স ৭৫ থেকে ৮৪ বছরের মধ্যে। এদের
শতকরা ৩ জনও যদি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবন করে;
তাহলে হিসেব অনুসারে অন্তত ১০,০০০ নতুন স্মৃতিভ্রংশ রোগী শনাক্ত হবে। কিন্তু এত
বিশালসংখ্যক ভুলো মানুষের চিকিৎসা করা সহজ বিষয় নয়। আর অচিরেই এটা নিউরোলজিস্ট তথা
পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্যই একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ
1.
Haenisch B, von Holt K, Wiese B, Prokein J,
Lange C, Ernst A, et al. Risk of dementia in elderly patients with the use of
proton pump inhibitors. European archives of psychiatry and clinical
neuroscience. 2015;265(5):419-28.
2.
Gomm W, von Holt K, Thomé F, et al. Association
of proton pump inhibitors with risk of dementia: A pharmacoepidemiological
claims data analysis. JAMA Neurology. 2016.
3.
Kuller LH. DO proton pump inhibitors increase
the risk of dementia? JAMA Neurology. 2016.
No comments:
Post a Comment