অবশেষে নিখিল চলে গেল।
খবরটা পড়ে অনেকক্ষণ মন খুব খারাপ ছিল।
কিন্তু নিখিলের সঙ্গে
আমার অনেক ভাল সময় কেটেছে। নিখিল আমার স্কুলের বন্ধু। টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী
হাইস্কুল। মেধাবী ছাত্র ছিল। কথা বলত অসাধারণ গুছিয়ে। হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো
সুন্দর। আমার ওকে রীতিমতো হিংসে হতো। কিন্তু নিখিল ছিল অসাধারণ বন্ধুবৎসল।ক্লাস এইটে ওর সঙ্গে আমার
পরিচয় হয়। ওদের বাড়ি ছিল টাঙ্গাইল বাজিতপুর হাটের পাশে। ওই বছরই আমি বাবার নিকট
থেকে একটা সাইকেল পেয়েছিলাম। ছুটির দিনে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে খুব ভাল লাগতো।
তখন টাঙ্গাইল শহর খুব নিরিবিলি আর সবুজ ঘেরা ছিল। আমার যাওয়ার মতো জায়গা খুব বেশী ছিল না। আমাদের বাসস্ট্যান্ডের
পাশের বাসা থেকে সাইকেল নিয়ে বের হলে একটু পরেই সরু রাস্তা চলে গেছে বাজিতপুর।
দুপাশে ধানক্ষেত আর নানারকম গাছে ঘেরা। সোজা পৌঁছে যেতাম ওদের বাসায়। টাঙ্গাইল
বাজিতপুরের শাড়ী বিখ্যাত। হাট বসে খুব ভোরে। সারাদিন হাটের দোকানগুলো ফাঁকা পড়ে
থাকতো। কিন্তু নিখিলের সঙ্গে গল্পে ভরে
উঠত সময়টা। তারপর স্কুলজীবন শেষে কে কোথায় চলে গেলাম।
অনেকদিন দেখা নেই।
কর্মস্থল রাজশাহী থেকে সিল্কসিটি ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলাম। কেন যেন টাঙ্গাইলের
কাছে যেয়ে ট্রেন থেমে গেল। শুনলাম আর আজ ঢাকা যাওয়া হবেনা। কি আর করা ট্রেন থেকে নেমে
বাজিতপুর চলে গেলাম নিখিলদের বাড়ি। জায়গাটা ঠিক চেনা যাচ্ছিল না। কিন্তু নিখিল সেই
আগের মতই আছে। বৌদি আর ওর পুত্রকন্যা নিয়ে সংসারী নিখিল।কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে
সুনাম করেছে। সারাবিকেল ওর সঙ্গে স্মৃতিচারণ করে রাতের বাসে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা
ফিরলাম। কিন্তু মনে হল সেই সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফেরার কথা। আহা! সেই সোনার খাঁচার
দিনগুলি। কিন্তু ডায়াবেটিস ওকে বেশ কাবু করে ফেলেছে। তারপর রাজশাহী-ঢাকা আসা
যাওয়ার পথে আরও কয়েকবার ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে।
গতকাল সেই নিখিল নিখিলের পানে চলে গেল। ভাল থেকো
বন্ধু।আমাদেরই বা আর কয়দিন বাকী আছে কে জানে? তোমার আত্মা শান্তিতে থাক-এই কামনা
করি।
No comments:
Post a Comment