বিখ্যাত
টাইটানিক ছবির একটি ডায়ালগ ছিল “মেয়েদের হৃদয় গোপন রহস্যের মহাসাগর”(A woman's heart is a deep
ocean of secrets) । কিন্তু আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন তা উম্মোচন করতে চায়; অন্তত হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ওপর প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে তারা বলেছেন যে, পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের চেয়ে মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ-উপসর্গ একটু ভিন্ন ধরণের। আর সেজন্যই মেয়েদের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত হতে বিলম্ব হয় এবং তারা যথাযথ চিকিৎসা থেকেও অনেক সময় বঞ্চিত থাকছেন।
হার্ট
অ্যাটাক নারীপুরুষ উভয়ের জন্যই ঘাতক ব্যাধি। কিন্তু মেয়েদের করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রামের হার তুলনামূলকভাবে কম। অথচ বর্তমান সময়ে পুরুষের চেয়ে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মহিলাদের মৃত্যু হার বেশী। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনে করছেন, এরজন্য রোগী, রোগীর স্বজন এবং চিকিৎসক সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। কারণ একজন পুরুষের বুকে ব্যাথা হলে যত সহজে তার জন্য হার্ট অ্যাটাকের পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়; একজন মহিলার একই ধরণের বুকে ব্যাথার জন্য তা করা হয় না। কিন্তু তারা এখন মহিলাদের বুকে ব্যাথার বিষয়ে আর যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
একথা
স্বীকার করতেই হবে যে, হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে হার্ট
অ্যাটাকে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মৃত্যুহার বেশী ছিল। কিন্তু ইদানীং তা বদলে গিয়েছে।
এখন হার্ট অ্যাটাকে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের বেশী মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি বছর আমেরিকায়
৬৬ লাখ মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু এদের অনেকেরই রোগ শনাক্ত করার
জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয় না এবং তারা চিকিৎসা বঞ্চিত থাকেন।জীবনে প্রথমবার
হার্ট অ্যাটাকের পরে একবছরের মধ্যে ১৯% পুরুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু সেখানে মহিলাদের
মৃত্যু হার ২৬%। হার্ট অ্যাটাকের ৫ বছরের মধ্যে ৩৬% পুরুষ রোগী মারা যায়। কিন্তু
মহিলাদের মৃত্যু হার ৪৭%।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পুরুষদের চেয়ে আসলে মহিলাদের
ডায়াবেটিস, হার্ট ফেইলিউর, উচ্চ রক্তচাপ, বিষণ্ণতা এবং কিডনির সমস্যা বেশী হয়ে
থাকে। আর মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক হলেও ইসিজিতে তা ধরা পড়ে না। এজন্য তাদের হার্ট
অ্যাটাক সন্দেহ করলে তা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করতে হবে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়।মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার পরে
জটিলতাও বেশী হয়। তাদের রক্ত ক্ষরণের প্রবণতা বেশী, দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার
প্রয়োজন হয় এবং করোনারি বাইপাস করার পরে মৃত্যুহারও বেশী। ৫০ বছরের বেশী বয়সী
মহিলাদের হৃদরোগ শনাক্ত হওয়ার হার সন্তোষজনক হলেও কমবয়সী মহিলাদের হৃদরোগ কম
শনাক্ত হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কমবয়সী মহিলাদের হৃদরোগ কেন বেশী
হচ্ছে? এর উত্তর আসলে এখনও পরিস্কার নয়। রজনিবৃত্তির পরে একজন বয়সী মহিলার হৃদরোগ
হওয়ার কারন বোধগম্য। রজনিবৃত্তির পরে মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার ফলেই
এতসব বিপত্তি হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু হৃদরোগ প্রতিরোধে হরমোন চিকিৎসা তেমন
আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেয়নি।
তবে প্রতিবেদনে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ-উপসর্গ যে
পুরুষদের হৃদরোগের চেয়ে আলাদা হতে পারে, সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তুলে
ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সমাজের আরও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চণা এবং অবহেলার
মতো হার্ট অ্যাটাকের বেলাতেও মহিলারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাই সময় এসেছে এ
বিষয়ে সচেতন হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার।
তথ্যসূত্রঃ Mehta
LS, Beckie TM, DeVon HA, Grines CL, Krumholz HM, Johnson MN, et al. Acute
Myocardial Infarction in Women: A Scientific Statement from the American Heart
Association. Circulation. 2016. Published online before print January 25, 2016.
No comments:
Post a Comment