শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Tuesday 2 February 2016

সুস্থতার জন্য বন্ধুত্ব এবং সোশ্যাল মিডিয়া

গুনীজনেরা বলেন, “স্বাস্থ্য নয়, ব্যাধিই সংক্রামক”।কিন্তু কখনও কখনও স্বাস্থ্যও সংক্রামক হতে পারে। দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের বন্ধুদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আপনার পাঁচজন প্রিয় বন্ধুর নাম স্মরণ করেন। তারা কি করেন? তারা কি বিকেলে ব্যায়াম করেন? কিংবা খেলাধুলা করেন? তারা কি ধূমপান করতে পছন্দ করেন? তাদের কি মেদভুঁড়ি হয়েছে? এ বিষয়গুলি লক্ষ্য করা জরুরী। কারণ আপনার স্বাস্থ্যের ওপর আপনার বন্ধুদের অভ্যাসের প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২,০০০ সদস্যের ওপর ৩২ বছর পর্যবেক্ষণের একটি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায় কারও ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্থূলকায় হলে, তারও স্থূলকায় হওয়ার সম্ভাবনা ১৭১% বেড়ে যায়। কারও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আত্মহত্যা করলে, তার আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা ৪ গুণ বেড়ে যায়।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে যে বন্ধুদের মাধ্যমে কিংবা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যদি রোগব্যাধি ছড়ায়, তাহলে এর মাধ্যমে কি আমাদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি কি সঞ্চারিত হতে পারে না? এর উত্তর খুবই সহজ। স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি সঞ্চারণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ভূমিকা রয়েছে; কিন্তু রোগব্যাধি ছড়ানোর তুলনায় তা খুবই অকিঞ্চিৎকর। 

দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ানোর মতো প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই সম্পন্ন হয়। এক বন্ধু ধূমপান ছেড়ে দিলে অপর বন্ধুর তা ছাড়ার সম্ভাবনা ৬৭% বেড়ে যায়। সুখী হওয়ার মতো বিষয়ও সংক্রামক। চারপাশে সুখী ব্যক্তিবর্গদ্বারা বেষ্টিত থাকলে আপনারও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। আর সুখী বন্ধুটি যদি আপনার দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে তাহলে তো কথাই নেই। আপনারও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫% বেড়ে যাবে। সুখী ভাইবোন কিংবা সুখী দম্পতি হলেও একই কথা। তবে সুখী সহকর্মী থাকলে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। অতএব কর্মস্থলে কে সুখী তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে।

কথায় বলে, “রতনে রতন চেনে”। ভাল অর্থে ধরলে এটা আসলে তেমন একটি বিষয়। কারণ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রভাব তৃতীয় মাত্রা পর্যন্ত ছড়াতে দেখা যায়; অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর কিংবা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বন্ধু থেকে বন্ধুর বন্ধু পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু বাস্তব জীবনের বন্ধুদের মতো অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বন্ধুরাও কি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে? অনেকেরই এ বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার ক্ষেত্রে উৎসাহ সৃষ্টিতে খুবই ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে সপ্তাহে দুইঘণ্টা পর্যন্ত শরীরচর্চা করতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। অনেকে অন্যান্য স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মসূচী নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং ফলাফলে উৎসাহিত বোধ করছেন।অবশ্য সবধরনের স্বাস্থ্যবার্তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া উপযুক্ত নয়; ক্ষেত্রবিশেষে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়ার সক্ষমতা সম্পর্কে কারও সন্দেহ নেই। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে যথার্থ ভূমিকা পালন করলে অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়াসমূহের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব রাখার ক্ষমতা রয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ 
1. Christakis, Nicholas A. and James H. Fowler. 2007. The spread of obesity in a large social network over 32 years. The New England Journal of Medicine 357, no. 4: 370-379
2. Christakis NA, Fowler JH. The Collective Dynamics of Smoking in a Large Social Network. New England Journal of Medicine. 2008;358(21):2249-58. PubMed PMID: 18499567. 
3. Fowler James H, Christakis Nicholas A.  Dynamic spread of happiness in a large social network: longitudinal analysis over 20 years in the Framingham Heart Study BMJ 2008; 337:a2338    

No comments:

Post a Comment