শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Thursday, 12 November 2015

সুখী হওয়ার সহজ উপায়


অবশেষে সুখী হওয়ার সহজ উপায় জানা গিয়েছে। এক সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেই আমরা সুখী হতে পারি। সম্প্রতি একটি ড্যানিশ পর্যবেক্ষণ থেকে এমন ফলাফলই পাওয়া গিয়েছে।
হ্যাপিনেস রিসার্চ ইন্সটিটিউট মানুষের সুখী হওয়ার উপায় নিয়ে গবেষণা করে থাকে। তারা ১,০৯৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর উপর জরীপ করে বর্তমান সময়ে সুখী হওয়ার এই মোক্ষম উপায় বের করেছেন। জরীপে দেখা যাচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৯৪জন অন্তত দিনে একবার হলেও ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। গবেষণার প্রয়োজনে অর্ধেক অংশগ্রহণকারীকে এক সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বাকী অর্ধেক অংশগ্রহণকারীরা যথারীতি ফেসবুক ব্যবহার করতে থাকেন। 
এক সপ্তাহ পড়ে উভয় দলের জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টি পরিমাপ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যারা এক সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার করেননি তাদের জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করার পরে তারা বেশী পরিমানে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।
হ্যাপিনেস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনে করছেন ফেসবুক খারাপ কিংবা ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু এটা বাস্তব জীবন সম্পর্কে আমাদের কিছু অলীক ধারণা দেয়। ফেসবুকে সকলে তাদের জীবনের শুধু আনন্দময় এবং সুখী মুহূর্তগুলিই তুলে ধরেন। এরফলে অন্যদের এমন ধারনাই হয় যে অন্যরা বেশ সুখে আছে এবং এই তুলনামূলক অবস্থা থেকে নিজেকে অসুখী মনে হওয়ার কারন ঘটে। জরীপের ফলাফল বলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতি ২ জনের মধ্যে ১ জন বন্ধুদের আনন্দঘন অভিজ্ঞতার ছবি দেখে ঈর্ষান্বিত বোধ করেছেন।প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন অন্যদের সুখী দৃশ্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। প্রতি ৫ জনের মধ্যে ২ জন অন্যদের সাফল্যের দৃশ্য কিংবা সংবাদে ঈর্ষান্বিত অনুভব করেছেন।সার্বিকভাবে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ব্যবহার না করা বন্ধুদের চেয়ে ৩৯% কম সুখী অনুভব করেছেন।    
এটা স্বীকার করতেই হবে যে ফেসবুক এখন একটি নন-স্টপ নিউজ চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এর ব্যবহারকারীরা অন্যদের তুলনায়  নিজেদের জীবনকে নেতিবাচক আলোকে দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু আসলে এমন তুলনামূলক পরিস্থিতি নিজের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করছে। কারণ মানুষ নিজের কি আছে কিংবা কি প্রয়োজন সেটা চিন্তা না করে; অন্যের কি আছে কিন্তু তার সেটা নেই এমন বিষয়ের প্রতি বেশী মনোযোগ দেয়। ফলে তাদের মনে অতৃপ্তি এবং না পাওয়ার কিংবা না থাকার বেদনাটি বড় হয়ে দেখা দেয়। 
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এখন যাদের বয়স ৩০ কিংবা এর বেশী তাদের মধ্যে অসুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করছেন প্রযুক্তির সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মের অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরশীলতাই এর জন্য দায়ী।


তথ্যসূত্রঃ Wiking M, Tromholt M, Lundby M, Andsbjerg K. The Facebook Experiment: Does Social Media Affect The Quality Of Our Lives? The Happiness Institute. 2015.

Tuesday, 20 October 2015

বিশ্ব সৃজনশীলতা সূচক



সৃজনশীল ব্যক্তি কে? অনেকে হয়ত বলবেন যার কল্পনাশক্তি প্রখর কিংবা যার উপস্থিত বুদ্ধি বেশী অথবা যিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন তিনিই সৃজনশীল। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কিন্তু একটি দেশকে কখন সৃজনশীল বলা যাবে? বলা হচ্ছে একটি সৃজনশীল দেশের মূল উপাদান তিনটিঃ মেধা, প্রযুক্তি এবং সহনশীলতা।

টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মারটিন প্রসপারিটি ইন্সটিটিউটের একদল গবেষক ১৯৬ দেশের সৃজনশীলতার একটি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিটি দেশের বিশ্ব সৃজনশীলতা সূচক (Global Creativity Index  বা GCI) নির্ধারণ করেছেন।তাদের সৃজনশীলতা সূচকের মূল উপাদান তিনটি “টি” বা “three T’s: মেধা(talent), প্রযুক্তি (technology) এবং সহনশীলতা (tolerance)।
     
প্রযুক্তির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে গবেষণা উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ এবং মাথাপিছু আবিস্কার প্যাটেন্ট করার দরখাস্তের হার দ্বারা। মেধার মূল্যায়ন করা হয়েছে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির হার এবং কত শতাংশ উচ্চশিক্ষিত মানুষ সৃজনশীল শিল্পে কার্যরত আছেন তার হিসেব ধরে। আর সহনশীলতা বিচার করা হয়েছে একটি দেশ ইমিগ্রান্টদের প্রতি কেমন আচরণ করছে, বিভিন্ন জাতি এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রতি কেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং দেশে সমকামীদের সংখ্যা কত তার ওপর ভিত্তি করে।

এ সকল বিষয়ে আসলে ১৩৯ টি দেশের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বাকী দেশগুলোর তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক বিচারে সবচেয়ে সৃজনশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড সৃজনশীল দেশ হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। আর আমাদের বাংলাদেশের নাম এসেছে ৯৫ তম স্থানে। 
  
প্রশ্ন হচ্ছে এমন সূচক নির্ণয়ের দরকার কি? এটা মূলত একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির পরিমাপক। গবেষকগণ মনে করছেন সৃজনশীলতার সূচকের সঙ্গে একটি দেশের সামাজিক সাম্যের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যে সকল দেশের সৃজনশীলতার সূচক যত উন্নত তাদের সামাজিক বৈষম্যের হার তত কম। 

তথ্যসূত্রঃ Richard Florida, Charlotta Mellander, Karen King. The Global Creativity Index 2015. Martin Prosperity Institute, University of Toronto, Canada


Thursday, 15 October 2015

হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য সারমেয়



কবিগুরু রবি ঠাকুর লিখেছিলেনঃ
“প্রত্যহ প্রভাতকালে ভক্ত এ কুকুর
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে আসনের কাছে
যতক্ষণে সঙ্গ তার না করি স্বীকার
করস্পর্শ দিয়ে ।
এটুকু স্বীকৃতি লাভ করি
সর্বাঙ্গে তরঙ্গি উঠে আনন্দপ্রবাহ ।
বাক্যহীন প্রাণীলোক-মাঝে
এই জীব শুধু
ভালো মন্দ সব ভেদ করি
দেখেছে সম্পূর্ণ মানুষেরে ;
দেখেছে আনন্দে যারে প্রাণ দেওয়া যায়
যারে ঢেলে দেওয়া যায় অহেতুক প্রেম ,
অসীম চৈতন্যলোকে
পথ দেখাইয়া দেয় যাহার চেতনা”।

দুনিয়ায় কুকুরই একমাত্র প্রাণী সত্যিকার অর্থে থাকা-খাওয়ার জন্য যাকে কোন কাজ করতে হয় না। গরু-ছাগল দুধ দেয়। গরু হাল চাষ করে; মানুষ গরু-ছাগল জবাই করে তার গোস্ত খায়। গাধাকেও ভার বহন করতে হয়। বিড়াল ইঁদুর মারে। মুরগী ডিম দেয়। আমরা মুরগীর মাংস খাই। কিন্তু কুকুরের মত কারও সৌভাগ্য হয়নি। কুকুর সারাদিন কোন কাজ না করে দিব্যি ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া করছে, আরাম করে বারান্দায় ঘুম দিচ্ছে। অবশ্য কুকুর একেবারেই কিছু করে না এমন বলা যাবে না। রাতবিরাতে মনিবের ঘরবাড়ীর দিকে নজর রাখে। কিন্তু সেটা তেমন বড় কিছু নয়। আসল কাজ হচ্ছে মনিবকে তোয়াজ করা। সুন্দর করে বললে বলতে হয় মনিবকে ভালবাসা। খেয়াল করলে সবাই দেখতে পাবেন যে বাইরে থেকে মনিব ফিরলে প্রথম তাকে দেখতে পায় তার কুকুর। আর দেখামাত্রই সেকি আনন্দ প্রকাশ। ঘেউ ঘেউ করে জানান তো দেবেই, লেজ নাড়ানোর জোরে আশেপাশে ঝড় শুরু হয়ে যাবে। মানুষ আদরের কাঙাল। মনিবের প্রতি কুকুরের এই ভালবাসা, এই আদর কখনও বৃথা যায় না। আর তাই মানুষ কুকুরের সব দায়দায়িত্ব নেয়। পদলেহন, পুচ্ছ তাড়না এবং ঘেউ ঘেউ চিৎকারের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করেই কুকুর তার সব পাওনা আদায় করে নেয়। আর কোন প্রাণীর পক্ষে এটা সম্ভব হয় না। আর তাই সারমেয়র এমন আচরণের প্রতি সকলের এত হিংসা।

কিন্তু মানুষ বড়ই স্বার্থপর। কুকুরের প্রতি এহেন আচরণ বেশী দিন থাকে নি। মানুষ কুকুরকেও কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। যেমন কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি খুব প্রখর। অতএব গড়ে উঠেছে গোয়েন্দা কুকুরবাহিনী। গন্ধ শুকে শুকে কুকুর নানা রকম ড্রাগ শনাক্ত করছে, অপরাধীর পিছু তাড়া করছে। জঙ্গলে শিকারের কাজেও কুকুরের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এখন কুকুরকে একেবারেই অন্যধরণের একটি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই জানেন  টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ থাকলে তাদের ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং তাদের যেকোনো সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহসা খুব কমে যেতে পারে। এটা অনেক সময় খুবই মারাত্মক এবং সময় মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হতে পারে। ছবির কুকুরটি গন্ধ শুকে কারও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে তা বুঝতে পারে এবং তার মনিবকে সতর্ক করতে পারে। এখন টাইপ-১ ডায়াবেটিস মেলিটাসের রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য অনেকেই এধরণের কুকুর ব্যবহার করছেন। এরজন্য বেশ কিছু কুকুর প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে উঠেছে।    

Wednesday, 7 October 2015

সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং এর চিকিৎসার অন্তরায়


সম্প্রতি PLOS Neglected Tropical Diseases জার্নালে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া এবং এর চিকিৎসার অন্তরায় সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এটা পড়ার পরে মনে হল নিবন্ধটির মূল বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে।
আমরা জানি এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার কতগুলি দেশে সাপের কামড়ে বিষক্রিয়া একটা বড় সমস্যা কম করে হলেও প্রতি বছর ১২ লাখ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এরফলে ২৫,০০০ থেকে ১২৫,০০০ মানুষ মারা যায়। আর অন্তত ৪০০,০০০ মানুষ  নানারকম জটিলতায় ভুগে থাকে। এত ব্যাপক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসমূহ, দাতা সংস্থা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট সাপের কামড়ের গুরুত্ব তেমন নয়। আজকাল সাপের কামড়ের বিষক্রিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিত সচেতনতা বেড়েছে। অধিকাংশ সংস্থা এখন সাপ, সাপের বিষ, এবং সাপের কামড়ের বিষক্রিয়াকে বায়োমেডিক্যাল এবং টেকনোলজিকাল সমস্যা হিসেবে দেখছে। কিন্তু তারপরেও এটা স্বীকার করতে হবে যে, এর চিকিৎসার যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর সমাধানের জন্য শুধু মেডিক্যাল চিকিৎসা নয়, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টিও মাথায় রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।এর অর্থ আমাদের শুধু সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার চিকিৎসা করলে হবে না; এর পেছনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনো-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কথা মনে রাখতে হবে। সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ায় মূলত গ্রামীণ হতদরিদ্ররাই মৃত্যুবরণ করে। সাপের বিষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম তৈরির গরজ ওষুধ কোম্পানিগুলির খুবই কম। কারণ এটা লাভজনক নয়। আবার যা অল্প পরিমাণ অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় তার দাম অনেকক্ষেত্রেই গরীব জনগণের নাগালের বাইরে। অধিকাংশ দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় এর সার্বক্ষণিক সরবরাহও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সাপের কামড় সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে নানারকম কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি। এর পেছনে রয়েছে সমাজ এবং সংস্কৃতির দীর্ঘদিনের লালিত ধ্যানধারণা এবং চেতনার প্রভাব। যার ফলে সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা গ্রহনেও দেখা দেয় নানা রকম বাধা-বিপত্তি।এজন্য সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার ফলে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তথ্যসূত্রঃ Gutiérrez JM, Burnouf T, Harrison RA, Calvete JJ, Brown N, Jensen SD, et al. (2015) A Call for Incorporating Social Research in the Global Struggle against Snakebite. PLoS Negl Trop Dis 9(9): e0003960.  

অতিরিক্ত হট ফ্ল্যাশ মেয়েদের হৃদরোগের পূর্বাভাস


 
মহিলাদের মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তিকালে এবং এরপরে নানারকম সমস্যা হয়ে থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর উপসর্গ হল হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক। এরফলে শরীরে হঠাৎ একটা গরম উত্তাপের ঢেউ খেলে যায়।  কান, মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে, মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়, প্রচুর ঘাম ঝরতে থাকে আর সঙ্গে থাকে অস্থিরতা। অনেকের এত বুক ধড়ফড় করতে থাকে যে তাদের নিকট মনে হয় গুরুতর হৃদরোগ হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হৃদরোগের প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যাদের অতিরিক্ত হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হয়, তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আসলেই বেশী। কারণ তাদের রক্তনালীর মধ্যবর্তী এবং একদম ভিতরের স্তর অত্যন্ত পুরু থাকে। কিন্তু যাদের হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক কম হয় কিংবা একেবারেই হয় না, তাদের রক্তনালীর গঠন স্বাভাবিক। এর অর্থ যাদের হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হচ্ছে তাদের হৃদরোগের ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। এ বছর আমেরিকার লাস ভেগাসে নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে এই গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে আসলে হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলকের সঙ্গে রক্তনালীর সমস্যার বিষয়টি কখনও পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এজন্য এই ফলাফলকে অনেকে বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। এমনিতেই মেয়েরা তাদের সমস্যা গোপন করতে চায়। অধিকাংশ মহিলা হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলকের বিষয়টি চিকিৎসককে জানায়ও না কিংবা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয় না।  কিন্তু যাদের দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার কিংবা তার চেয়ে বেশী হট ফ্ল্যাশ বা তাপঝলক হবে, তাদের অবশ্যই কোলেস্টেরল বা উচ্চরক্তচাপের মতো এটাকেও হৃদরোগের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে গবেষকগণ মনে করছেন। অবশ্য এ সম্পর্কে এখনও আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।

তথ্যসূত্রঃ North American Menopause Society (NAMS) 2015 Annual Meeting: Abstract S-12. Presented October 2, 2015.

Friday, 2 October 2015

২ অক্টোবর ২০১৫ বিশ্ব হাসি দিবস

শিল্পী হার্ভি বল ১৯৬৩ সালে প্রথম স্মাইলিআইকনটি তৈরি করেছিলেন। এটা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলে তিনি হাসি দিবসপ্রচলন করেন।প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবার হাসি দিবস হিসেবে পালিত হয়। হার্ভির স্মাইলি আইকনটির কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন ভৌগোলিক কিংবা ধর্মীয় গণ্ডি।তার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রানিত করা, বন্ধুত্বকে উৎসাহিত করা;নিজে হাসা এবং অপরকে হাসতে উদ্বুদ্ধ করা।


হাসি সম্পর্কে কয়েকটি মজার তথ্যঃ
•        হাসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
•        হাসি মানসিক চাপ লাঘবে সাহায্য করে
•        ভ্রু কোঁচকানোর চেয়ে হাসা সহজ
•        হাসার জন্য মুখমন্ডলের ৫ থেকে ৫৩ টি পেশী কাজ করে
•        শিশু জন্ম থেকেই হাসতে পারে
•        মোট ১৯ রকমের হাসি আছে।

•        দুনিয়াতে শত শত রকমের ভাষা আছে। কিন্তু শুধু হাসি দিয়েই সব ভাষাতে কথা বলা যায়।   

Monday, 14 September 2015

দিবা নিদ্রা এবং উচ্চ রক্তচাপ

দিবা নিদ্রা বা ভাত ঘুম নিয়ে যতই আপত্তি থাকুক, দেখা যাচ্ছে এটা আমাদের জন্য উপকারী। সম্প্রতি দিবানিদ্রার উপকারিতা আবারও সামনে এসেছে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি-২০১৫-এর কংগ্রেসে গ্রীসের গবেষকগণ দিবানিদ্রার উপকারিতা সম্পর্কে মাঝবয়েসী উচ্চরক্তচাপের রোগীর উপর তাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল জানিয়েছেন। যারা খাওয়া-দাওয়ার পরে দুপুরে নিয়মিত ১ ঘণ্টা  ঘুমাতে অভ্যস্ত তাদের  সিস্টোলিক রক্তচাপ অন্যদের চেয়ে গড়পড়তা ৬ মিঃমিঃ পারদচাপ কম থাকে। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এদের ওষুধও কম লাগে। আপাত দৃষ্টিতে ৬ মিঃ মিঃ পারদচাপ তেমন বড় কিছু মনে নাও হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গড়ে রক্তচাপ ২ মিঃ মিঃ পারদচাপ কমলে, হৃদরোগের সম্ভাবনা শতকরা ১০ ভাগ কমে যায়। সমস্যা হচ্ছে যাদের কাজ কর্ম নাই তাদের পক্ষে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা দিবানিদ্রার বিলাসিতা শোভা পায়; কিন্তু যারা নানারকম কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা কি করবেন?



এর আগে একদল ফরাসী বিজ্ঞানী নিদ্রাহীন ব্যক্তিদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন দিনে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দিবা নিদ্রা অনিদ্রায় আক্রান্তদের উদ্বেগ লাঘব করে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি মজবুত করে।

উল্লেখ্য প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জন প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে থাকেন। রাতের পর রাত  অনিদ্রায় ভুগলে হৃদরোগসহ নানাবিধ গুরুতর ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায়। সুতরাং আর দুশ্চিন্তা না করে এখন সুযোগ পেলেই দিবা নিদ্রা দেওয়াই উত্তম। 

তথ্যসূত্রঃ
  • Kallistratos MS, Poulimenos LE, Karamanou A, et al Association of mid-day naps occurrence and duration with BP levels in hypertensive patients. A prospective observational study. European Society of Cardiology 2015 Congress. August 29, 2015; London, UK. Abstract P906
  • Brice Faraut, Samir Nakib, Catherine Drogou, Maxime Elbaz, Fabien Sauvet, Jean-Pascal De Bandt, Damien Léger. Napping Reverses the Salivary Interleukin-6 and Urinary Norepinephrine Changes Induced by Sleep Restriction. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 2015; jc.2014-2566 DOI:10.1210/jc.2014-2566

Friday, 4 September 2015

দিবা নিদ্রার উপকারিতা

রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, “দেখিতে হইবে আমরা কী খাই ও য়ুরোপীয়রা কী খায়। য়ুরোপীয়েরা যে মদ মাংস খায় তাহার প্রবল উত্তেজনায় তাহাদের একদণ্ড স্থির থাকিতে দেয় না। আমরা ডাল ভাত খাইয়া অত্যন্ত স্নিগ্ধ থাকি, চোখে ঘুম আসে। তবে কি খাদ্য পরিবর্তন করিতে হইবে? সে কি সহজ কথা!”
অবশ্যই তা সহজ কথা নয়; তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের খাদ্য পরিবর্তন করতে হবে না। দিবা নিদ্রা বা ভাত ঘুম নিয়ে যতই আপত্তি থাকুক, এখন দেখা যাচ্ছে দিবা নিদ্রা আমাদের জন্য উপকারী। দিনে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দিবা নিদ্রা অনিদ্রায় আক্রান্তদের উদ্বেগ লাঘব করে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি মজবুত করে। সম্প্রতি একদল ফরাসী বিজ্ঞানী নিদ্রাহীন ব্যক্তিদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্যই দিয়েছেন।

The hammock, Gustave Courbet (1844)


উল্লেখ্য প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জন প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে থাকেন। রাতের পর রাত  অনিদ্রায় ভুগলে হৃদরোগসহ নানাবিধ গুরুতর ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায়। সুতরাং আর দুশ্চিন্তা না করে এখন সুযোগ পেলেই ছোটখাটো দিবা নিদ্রা দিলে মন্দ হয় না।

তথ্যসূত্রঃ  Brice Faraut, Samir Nakib, Catherine Drogou, Maxime Elbaz, Fabien Sauvet, Jean-Pascal De Bandt, Damien Léger. Napping Reverses the Salivary Interleukin-6 and Urinary Norepinephrine Changes Induced by Sleep Restriction. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 2015; jc.2014-2566 DOI:10.1210/jc.2014-2566


Thursday, 27 August 2015

ক’ফোটা চোখের জল ফেলেছো

মান্না দে’র একটি জনপ্রিয় গানের দু চরণ –
" ক’ফোটা চোখের জল ফেলেছো 
যে তুমি ভালবাসবে! 
পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝরালে 
কী করে এখানে তুমি আসবে?" 

এখন বলা হচ্ছে ভালো মতো চোখের জল ফেলতে পারলে  অর্থাৎ কাঁদতে পারলে মন ভালো থাকে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডের একদল গবেষক কান্না নিয়ে গবেষণা করে  এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। জগতে মানুষই শুধুমাত্র আবেগের বশে কাঁদতে পারে। কিন্তু আমাদের অতি পরিচিত কান্নার কারণ কিংবা উপকারিতা নিয়ে আসলে খুব কমই গবেষণা হয়েছে।  অনেক গবেষক মনে করেন মানুষ  কাঁদে অপরের সাহায্য লাভের আশায়, সহানুভূতি কিংবা মনোযোগ  আকর্ষণের জন্য। আবার অনেকে মনে করেন  কান্না আসলে আমাদের আবেগ প্রশমিত করতে সাহায্য করে। এরফলে মানুষের মন ভাল থাকে।

বর্তমান গবেষণায় কান্নার তাৎক্ষণিক এবং বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এজন্য ৬০ জন ব্যক্তিকে দুটি আবেগময় সিনেমা দেখতে দেওয়া হয়। ছবি দেখার ২০ মিনিট এবং ৬০ মিনিট পরে তাদের মানসিক অবস্থা বিচার করা হয়। ছবি দেখার পরে ৬০ জনের মধ্যে ২৮ জন কাঁদলেও, বাকী ৩২ জনের চোখে পানি আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায় যাদের চোখে পানি আসেনি, তাদের মনে ছবি দেখার আগে কিংবা পরে কোন ভাবান্তর হয়নি। কিন্তু যারা ছবি দেখে কেঁদেছেন প্রথম ২০ মিনিটে তাদের মন খারাপ থাকলেও ৯০ মিনিট পরে তাদের মন ভালো হয়েছে এমনকি তা ছবি দেখার আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন। অন্যান্য গবেষণাতেও এমন ফলাফলই পাওয়া গিয়েছে। 

তথ্য সূত্রঃ Asmir Gračanin, Ad J. J. M. Vingerhoets, Igor Kardum, Marina Zupčić, Maja Šantek, Mia Šimić. Why crying does and sometimes does not seem to alleviate mood: a quasi¬experimental study. Motivation and Emotion, 2015; DOI: 10.1007/s11031¬015¬9507¬9

Tuesday, 28 July 2015

বাতায়ন পাশে গুবাক-তরুর সারি

কবি নজরুলের বাতায়ন পাশে জেগেছিল “গুবাক-তরুর সারি”। আমার বাতায়ন পাশে গুবাক-তরুর সারি নেই। তবে একটি ক্যামেলিয়া ফুলের গাছ আছে। শীতের শুরু থেকে তাতে অনেক কুঁড়ি এসেছে। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে দেখি সে ফুটেছে নাকি। ফুটি ফুটি করেও পুরো শীত পার হয়ে গেল। কিন্তু তাদের মুখ আর দেখতে পেলাম না। গত কয়েকদিন নানা ব্যস্ততায়  ওদিকে নজর দিতে পারিনি। আজ সকালে অবাক হয়ে দেখি তার রূপের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে পুরো বাতায়ন এবং বারান্দা। আষাঢ়ের প্রথম কদম নয়, ফুটেছে আমাদের “শীতের প্রথম ক্যামেলিয়া ফুল”। 



সত্যি সত্যি যেন মনে হল-

“আকাশতলে উঠল ফুটে
আলোর শতদল।
পাপড়িগুলি থরে থরে
ছড়ালো দিক্-দিগন্তরে,
ঢেকে গেলো অন্ধকারের
নিবিড় কালো জল।
মাঝখানেতে সোনার কোষে
আনন্দে, ভাই, আছি বসে –
আমায় ঘিরে ছড়ায় ধীরে
আলোর শতদল।”
- কবিগুরু রবি ঠাকুর

Thursday, 23 July 2015

সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা

সোশ্যাল মিডিয়াসমূহ স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং রোগ প্রতিরোধে দিন দিন আরও বেশী ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি মার্স-করোনা ভাইরাস,এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, এবোলা সংক্রমণের ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে টুইটারের টুইটসমূহ বিশ্লেষণ করে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কেও আগাম সন্ধান জানা যাচ্ছে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্র (U.S. Centers for Disease Control and Preventionসোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে অগ্রিম আভাস জানার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে “হাত ধোয়ার” গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য চীনও তাদের সামাজিক মাধ্যমসমূহ ব্যবহার করছে।

তথ্যসূত্রঃ 
  1. Fung IC-H, Hao Y, Cai J, Ying Y, Schaible BJ, Yu CM, et al. (2015) Chinese Social Media Reaction to Information about 42 Notifiable Infectious Diseases. PLoS ONE 10(5): e0126092. doi:10.1371/journal.pone.0126092
  2. Fung IC, Tse ZT, Cheung CN, Miu AS, Fu KW. Ebola and the social media. Lancet. 2014 Dec 20;384(9961):2207. PubMed PMID: 25625391. Epub 2015/01/28.


Tuesday, 30 June 2015

ক্যানসার রোগীদের জীবন মানের ওপর ধার্মিকতা এবং আধ্যাত্মিকতা

সম্প্রতি আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে ক্যানসার রোগীদের জীবন মানের (Quality of life) ওপরে আধ্যাত্মিকতা এবং ধার্মিকতার প্রভাব নিয়ে চমৎকার একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপিত হয়েছে। 

আমরা সবাই জানি কারও ক্যানসার রোগ ধরা পড়া একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। একমাত্র ভুক্তভোগী ব্যক্তি ছাড়া এর ভয়াবহতা অন্য কারও পক্ষে আসলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। স্বভাবতই ক্যানসার রোগ শনাক্ত হওয়ার পরে অনেকেই ধর্মকর্ম  কিংবা আধ্যাত্মিকতার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যানসার রোগীদের এই ক্রান্তিকালে  আধ্যাত্মিকতা এবং ধার্মিকতা কিভাবে তাদের জীবনের শেষ দিনগুলিকে প্রভাবিত করে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। সর্বমোট ৫৫১ জন ক্যানসার রোগীর ওপর ১ বছর যাবত এই পর্যবেক্ষনটি করা হয়। মার্কিন ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউটের সংজ্ঞা অনুসারে আধ্যাত্মিকতা (spirituality) বলতে একজন ব্যক্তির মানসিক প্রশান্তির অনুভূতি বা জীবনের উদ্দেশ্য এবং সামগ্রিকভাবে জীবনের অর্থ সম্পর্কে উপলব্ধিকে বোঝানো হয়ে থাকে। আর কোন বিশেষ বিশ্বাস এবং আচার-আচরন পালনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অর্জনের পথকে ধার্মিকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সংজ্ঞানুসারে কেউ ধার্মিক না হলেও আধ্যাত্মিক হতে পারেন; আবার কেউ ধার্মিক হলেও আধ্যাত্মিকতা নাও অর্জন পারেন।
  
গবেষকগণ ক্যানসার রোগীদের চারটি গ্রুপে ভাগ করেছেনঃ ১) কম আধ্যাত্মিক এবং কম ধার্মিক ২) অধিক আধ্যাত্মিক এবং অধিক ধার্মিক ৩) অধিক আধ্যাত্মিক এবং কম ধার্মিক ৪) কম আধ্যাত্মিক এবং অধিক ধার্মিক। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যখন এই সকল ক্যানসারের রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন তখন তাদের শারীরিক এবং মানসিক জীবন মান সম্পর্কে  বিভিন্ন তথ্য আহরণ করা হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যারা অধিক ধার্মিক এবং অধিক আধ্যাত্মিক তাদের শারীরিক এবং মানসিক জীবন মান ভালো ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে যারা অধিক ধার্মিক কিন্তু কম আধ্যাত্মিক তাদের পরিস্থিতি কিন্তু তত ভালো নয়।  গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে, এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে শুধু ধার্মিকতা নয়; আধ্যাত্মিক হওয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন মান তথা সামগ্রিক প্রশান্তি বজায় রাখতে পারি। 

উল্লেখ্য ইদানীং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। ক্যানসার রোগীদের ওপর ধার্মিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার এমন ভিন্নতর প্রভাব দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কেন এমন ফলাফল পাওয়া গেল? 

এক কথায় আমরা এর উত্তর জানিনা। 

তবে অনেকে মনে করছেন ধার্মিকতা যদি ব্যক্তির জীবনে বাহ্যিক হয়ে থাকে এবং তার জীবন বোধের সঙ্গে যদি আত্মস্থ না হয়, তা হলে সেটা ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক পরিস্থিতির ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে আধ্যাত্মিকতার উৎস অন্তর থেকে; এটা মানুষের শরীর ও মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং অপার্থিব শক্তির ওপর গভীর আস্থা তার মনে অনাবিল প্রশান্তি এবং স্বস্থির মনোভাব সৃষ্টি করে। এজন্য ক্যানসার রোগীদের প্রান্তিক সময়টিকে শান্তিময় করে তোলার উদ্দেশে আধ্যাত্মিকতার উপযুক্ত  প্রয়োগের ওপরেই সকলে জোর দিচ্ছেন।  ধার্মিকতা কিংবা আধ্যাত্মিকতা হয়তো ক্যানসার রোগীর মূল চিকিৎসায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি করবে না; কিন্তু ক্যানসার রোগীর ক্রান্তিকালীন সময়কে প্রশান্তিময় এবং সহনশীল করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ধার্মিক ব্যক্তিদের নিকট এই গবেষণার ফলাফল হয়তো তেমন নতুন কিছু মনে হবে না; তবে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে ধার্মিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার প্রভাব সম্পর্কে এ পর্যন্ত পরিচালিত এটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য।  

তথ্যসূত্রঃ 
Cannon AJ, Garcia J, Loberiza FR. Interplay between spirituality and religiosity on the physical and mental well-being of cancer survivors post-treatment. Program and abstracts of the 168th American Psychiatric Association Annual Meeting; May 16-20, 2015; Toronto, Ontario, Canada. Abstract 63.
Pew Research Group. America's changing religious landscape. http://www.pewforum.org/2015/05/12/americas-changing-religious-landscape/ Accessed June 30, 2015.


Friday, 12 June 2015

বেদনানাশক ওষুধ নরহত্যার প্রবণতা বাড়ায়

একটু অবাক হওয়ার মতোই তথ্য। এতদিন ধারণা করা হতো মানসিক রোগের জন্য সাইকোট্রপিক ওষুধ খেলে অনেকের বিপজ্জনক আচরণের সম্ভাবনা থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে বিষণ্ণতা রোধক ওষুধ, বেনজোডায়াজেপিন এবং বিভিন্ন ধরণের ব্যাথানাশক ওষুধ খেলে নরহত্যার মতো মারাত্মক প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।

সুইডেনের একদল গবেষকের পর্যবেক্ষণে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিষণ্ণতারোধক ওষুধ ব্যবহার করলে আসলেই নরহত্যার প্রবণতা বাড়ে কিনা তা দেখার জন্য সুইডিশ গবেষকগণ ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৯৫৯ জন নরঘাতক দাগী আসামীর ওপর পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর এদের সঙ্গে তুলনা করার জন্য বেঁচে নেওয়া হয়েছে প্রায় দশ হাজার সাধারণ নাগরিককে। ১৯৯৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এদের সকলের ওষুধ ব্যবহারের ইতিহাস খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে।

ফলফলে দেখা যাচ্ছে বিষণ্ণতা রোধক ওষুধ ব্যবহারে নরহত্যার প্রবণতা ৩১% এবং বেনজোডায়াজেপিনে ৪৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে নারকোটিক এনং নন-নারকোটিক বেদনানাশক ওষুধ ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই প্রবণতা দুই  থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু যে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ নিয়ে আমাদের এত আশংকা,সেটার ব্যবহারের সঙ্গে আসলে নরহত্যার প্রবণতার জোরালো কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

সুতরাং গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের অপরাধ করার ইতিহাস রয়েছে তাদের চিকিৎসার সময় বেদনানাশক ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।


তথ্যসূত্রঃ 
Tiihonen J, Lehti M, Aaltonen M, et al.: Psychotropic drugs and homicide: A prospective cohort study from Finland. World Psychiatry 2015; 14:245-47

Thursday, 11 June 2015

দীর্ঘদিন প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। আজকাল প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এটা দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফলে রক্তনালীর ওপর এর বিরূপ প্রভাবের গুরুতর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ২৯ লাখ রোগীর ১৬ মিলিয়ন ক্লিনিকাল ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করার পরে এই ফলাফল দেখতে পেয়েছেন। তবে এইচ টু ব্লকার জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
বিশেষত গ্যাস্ট্রো-এসফেজিয়াল রিফ্লাক্সের জন্য যারা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করেছেন তাদের  হার্ট অ্যাটাকের হার ১৬% বেশী। হৃদরোগের কারণে মৃত্যুহারও এদের দ্বিগুণ।
স্বভাবতই প্রশ্ন এসেছে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে কেন এটা ঘটছে?
এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যারা ক্লোপিডেগ্রলের সঙ্গে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ আগেও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে শুধু হৃদরোগী নয়, কম বয়সী সাধারণ মানুষও প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার করলে হৃদরোগের শিকার হতে পারেন।  প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর  ডাইমিথাইল আর্জিনেজ (DDAH) নামে পরিচিত একটি এনজাইমের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই এনজাইমটি রক্তনালীর সুস্থতার জন্য দরকারী। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের এই ক্ষতিকারক প্রভাব যে কোন মানুষের রক্তনালীর ওপরেই পড়তে পারে। 
ওষুধ হিসেবে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খুবই কার্যকরী। কিন্তু এটা আজকাল খুবই সুলভ এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এটা ব্যবহার করে থাকেন। এজন্য অনেকেই প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহারে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের দরকার বলে মনে করছেন। অবশ্য এ বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে গবেষকগণ  প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। 


তথ্যসূত্রঃ 
Shah NH, LePendu P, Bauer-Mehren A, Ghebremariam YT, Iyer SV, et al. (2015) Proton Pump Inhibitor Usage and the Risk of Myocardial Infarction in the General Population. PLoS ONE 10(6): e0124653.

Wednesday, 3 June 2015

কাজের ফাঁকে ফেসবুক দেখতে এত মজা কেন?

যারা সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করেন তারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা অন্যমনস্ক হয়ে যান। প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালে একটি জরীপে ৫৩% মানুষ স্বীকার করেছিলেন যে তারা প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা সময় অন্যমনস্ক হয়ে নষ্ট করেছেন। বর্তমান সময়ে অন্যমনস্ক হয়ে সময় ব্যয় করার একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। অনেকে স্বীকার করতে না চাইলেও কাজের ফাঁকে ফেসবুক দেখার পেছনে কারণ রয়েছে। একটি নতুন পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে আমাদের বিশ্রামরত মস্তিস্ক অথবা মস্তিস্ক যখন একটু বিরতি চায় তখন তা আপনাআপনি এমন একটি অবস্থায় চলে যায় যা মূলত সামাজিক সম্পর্কের জন্য কাজ করে।
মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যখন কোন কাজ করি না, তখনও কিন্তু মস্তিস্কের কার্যক্রম বন্ধ থাকে না। নানারকম এলেবেলে চিন্তা-ভাবনা মাথার ভেতরে চলতেই থাকে। ১৯৯০-এর দশকে এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিললেও; মস্তিস্কের এমন আচরণের কারণ জানা যায়নি। তবে দেখা যাচ্ছে অলস মস্তিস্ক সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবতে বা চিন্তা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এজন্য আমরা কাজের ভিড়ে একটু ফুরসৎ পেলেই ফেসবুকের টাইম লাইনে পরিচিত বন্ধু-বান্ধব এবং স্বজনদের ছবি কিংবা কাজকর্ম দেখতে ভালোবাসি । মস্তিস্কের কোন অংশ আমাদের কোন ধরণের মানসিক অবস্থায় কাজ করছে তা দেখার জন্য আজকাল ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে বিভিন্ন মানসিক পরিস্থিতিতে মস্তিস্কের কোন অংশ উদ্দীপিত হচ্ছে তা শনাক্ত করা যায়। এর ভিত্তিতে পরীক্ষা করেই গবেষকগণ এখন বলছেন, “মস্তিস্ককে নির্দিষ্ট কাজে ব্যস্ত রাখা একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া। মস্তিস্ক যখনই ছুটি পায় তখন সে তার ডিফল্ট মোডে চলে যায়। আর সেটি আসলে সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এজন্যই ফেসবুকের প্রতি আমাদের এমন আকর্ষণ”। সে অর্থে এটাকে অস্বাভাবিক বলে গণ্য করা যাচ্ছে না। বরং কাজের ফাঁকেও যারা এমন করেন না তাদের মস্তিস্কের স্বাভাবিকতা নিয়েও অনেকে একটু আধটু সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
তথ্যসূত্রঃ  Spunt RP, Meyer ML, Lieberman MD. The default mode of human brain function primes the intentional stance. Journal of Cognitive Neuroscience. 2015 Jun; 27(6):1116-24.

Thursday, 28 May 2015

বীর্যপাতের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের সম্পর্ক

 ২০১৪ সালের হিসেব অনুসারে দুনিয়াজুড়ে পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক শনাক্তকৃত ক্যানসার হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যানসার। প্রোস্টেট ক্যানসার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেলেও এখন পর্যন্ত এটা প্রতিরোধ করার কোন উপায় জানা যায়নি। এজন্য এ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। 
আমেরিকান ইউরোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন ২০১৫ সালের বার্ষিক সম্মেলনে মজার একটি তথ্য দিয়েছে। পুরুষেরা এটা জেনে হয়তো আনন্দিত হবেন। বলা হচ্ছে অধিক বীর্যপাত প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। নতুন তথ্য হলেও এর পেছনে বেশ জোরালো প্রমাণ রয়েছে। এজন্য গবেষকগণ এটা জানাতে পেরেও আনন্দ বোধ করছেন। অবশ্য মূল গবেষক ডঃ রাইডার তার গবেষণার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার উপদেশ দিয়েছেন।
মূলত  স্বাস্থ্যপেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩২,০০০  জনের উপর ১৮ বছর পর্যবেক্ষণের পর এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।  এই সময়ে ৩৮৩৯ জনের প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৮৪ জনের ক্যানসার খুব মারাত্মক ছিল। ১৯৯২ সাল থেকে এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছিল। ২০থেকে ২৯ এবং ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষেরা মাসে গড়ে কতবার বীর্যপাত করেছেন তার একটি গড় হিসেব করা হয়েছে। বিভিন্ন হিসেব নিকেশের পরে দেখা যাচ্ছে যারা মাসে ২১ বারের বেশী বীর্যপাত করেছেন তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের হার মাসে ৪ থেকে ৭ বার বীর্যস্খলনকারীদের চেয়ে ২০% কম। ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষেদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন মাসে ৮ থেকে ১২ বার বীর্যপাত করেছেন; মাত্র ৮.৮% পুরুষ ২১ বারের বেশী বীর্যস্খলনের কথা বলেছেন। ডঃ রাইডার অবশ্য বীর্যপাতের সত্যিকারের সংখ্যার ওপরে তত জোর দিচ্ছেন না। তার বক্তব্য হচ্ছে, “পুরুষদের নিরাপদ যৌন সক্রিয়তা প্রোস্টেটের জন্য উপকারী ”।  আসলে এদের ওপর পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১০ বছর আগেই বলা হয়েছিল যে অধিকবার বীর্যপাতের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের একটি সম্পর্ক আছে। দশ বছর পর এখন সেই তথ্যই আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করা হল।  অন্য আরও কয়েকটি পর্যবেক্ষণেও একই রকম তথ্য এসেছে। অনেকে শুধু বীর্যপাত নয়, বেশী বেশী অর্গাজমের ভূমিকা নিয়েও অনেকে আশার আলো দেখছেন।
ডঃ রাইডারের গবেষণার শক্তিশালী  দিক হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যাপকসংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আর বীর্যপাতের হিসেবনিকেশের জন্য কোন লুকোছাপা না করে সরাসরি যৌন মিলন, হস্তমৈথুন এবং স্বপ্নদোষের  বীর্যপাতের তথ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ৫৯ বছর ছিল এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকের অন্তত ৫ বার পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) পরীক্ষা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বিবাহিত। তবে যাদের বীর্যপাতের হার মাসে ২১ বারের বেশী তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদকারী পুরুষের সংখ্যা বেশী ছিল।   

 তথ্যসূত্রঃ
  • American Urological Association (AUA) 2015 Annual Meeting: Abstract PD6-07. Presented May 15, 2015.
  • Leitzmann MF, Platz EA, Stampfer MJ, Willett WC, Giovannucci E. Ejaculation Frequency and Subsequent Risk of Prostate Cancer. JAMA. 2004; 291(13):1578-1586. doi:10.1001/jama.291.13.1578.

Sunday, 17 May 2015

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং আছাড় খাওয়া

ছোটবেলায় সকলেরই কমবেশি আছাড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও বয়সকালে এটা আনন্দের বিষয় নয়। ছোটদের একটি ছড়া আছে-
“রেল গাড়ী ঝমাঝম,
পা পিছলে আলুর দম”। 
তা বাস-ট্রেন থেকে পড়ে এখনও আছাড় খাওয়ার প্রবণতা এখনও সমানে চলছে। কিন্তু বেশী গোল বাধে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়ে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহার করার সময় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরী। 
যাদের বয়স ৭০ থেকে ৯৭ বছর হয়েছে তাদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের মনেই আশঙ্কা থাকে যে এই বয়সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহার করলে রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে  যেতে পারে এবং অনেকেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন কিংবা আছাড় খেতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি পর্যবেক্ষণে এ ধরণের বয়সী প্রায় ৬০০ উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করানোর পরেও রক্তচাপ খুব কমে আছাড় খাওয়ার অতিরিক্ত কোন ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। এই পর্যবেক্ষণের রোগীদের বিটা ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর, ডাইউরেটিক্স, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার সহ ছয় ধরণের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এক বছরের পর্যবেক্ষণে ৫৪১ টি আছাড় খাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।   অর্ধেকের বেশী রোগী কোন রকম আছাড় খাননি। প্রায় ৪৫ শতাংশ রোগী এক বছরে ১ বার থেকে ১৭ বার পর্যন্ত আছাড় খাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যারা আছাড় খেয়েছেন তাদের মধ্যে ১৩.৭% ঘরের বাইরে, ২১.২% ঘরের ভিতরে এবং ৭.৪% ঘরের ভিতরে এবং বাইরে আছাড় খেয়েছেন। আছাড়ের ফলে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবং এর জন্য চিকিৎসা নেওয়া লেগেছে।  দেখা যাচ্ছে যারা দুর্বল এবং সক্রিয় তারাই বেশী আছাড় খেয়ে থাকেন। ঘরের ভিতরে যারা আছাড় খেয়েছেন তারা আসলেই দুর্বল; কিন্তু আশেপাশের আসবাবপত্র ধরে ফেলার কারণে তাদের আছাড় তেমন গুরুতর হয়নি। কিন্তু ঘরের বাইরে যারা আছাড় খান তারা শারীরিকভাবে অতিরিক্ত সক্রিয় এবং এদের আছাড় গুরুতর হয়ে থাকে। যাদের এসিই ইনহিবিটর এবং ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছাড় খাওয়ার প্রবণতা কম দেখা গিয়েছে। এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ পেশীর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য এটা সেবনের পরে কম আছারের ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার শুধু আছাড় খাওয়ার ঝুঁকি কমায়ই না, এটা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের গতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণেও এদের মধ্যে আছাড় খাওয়ার প্রবণতা কম হতে পারে।
বার্ধক্যে আছাড় খাওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা এবং এটা অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে যা গুরুতর পরিণতি ডেকে আনে। এজন্য বয়স বেশী হলে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করে ঝুঁকি বাড়ানো ঠিক কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। তবে এখন গবেষকগণ মনে করছেন যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।   
তথ্যসূত্রঃ

Lipsitz LA, Habtemariam D, Gagnon M, Iloputaife I, Sorond F, Tchalla AE, et al. Reexamining the Effect of Antihypertensive Medications On Falls in Old Age. Hypertension. 2015 May 4, 2015. 

Saturday, 25 April 2015

টাকার ময়লা হাতে

টাকা নাকি হাতের ময়লা । কিন্তু আসলে হাতের ময়লা টাকায় লাগে, নাকি টাকার ময়লা হাতে লাগে, সেটাও একটা প্রশ্ন নানারকম জীবাণু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। আমরা যতই পরিচ্ছন্ন থাকি না কেন জীবাণু আমাদের পিছু ছাড়ে না। ঘরের দরজার হাতল থেকে শুরু করে বাথরুম পর্যন্ত সব জায়গাতেই কমবেশি জীবাণু থাকে। কিন্তু প্রতিবার মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে কিংবা রেখে আমরা কি হাত পরিস্কার করার কথা ভাবি

সম্প্রতি নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের একটি ব্যাংকের ডলার পরীক্ষা করে বিভিন্ন নোটে গড়পড়তা ৩০০০ রকমের ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ব্যাকটেরিয়ার কিছু স্বাভাবিকভাবে আমাদের ত্বকে বাস করে। গবেষকগণ অবাক হয়েছেন যে নোটের উপর এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলি সাধারণত আমাদের মুখে কিংবা মেয়েদের যোনীতে বাস করে। গরমকালের চেয়ে শীতকালে টাকার ওপর বেশী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরমধ্যে নিউমোনিয়ার জীবাণুও রয়েছে। কিছু কিছু ডলারের নোটে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া গিয়েছে। এ পর্যবেক্ষণের ফলাফল থেকে মনে হচ্ছে টাকা রোগ জীবাণু ছড়ানোর জন্য বেশ উপযুক্ত মাধ্যম; অতএব এসম্পর্কে সচেতন থাকার প্রয়োজন রয়েছে।


তথ্যসূত্রঃ এ বি সি নিউজ

Friday, 24 April 2015

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের থ্রি-ডি প্রিন্টিং



বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রতাপশালী কোন রাজা-বাদশাহও এই  অমোঘ নিয়মের বাত্যায় ঘটাতে পারেননি। কিন্তু সম্প্রতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের  থ্রি-ডি প্রিন্টিং এই ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।


প্রথমে খুব সাধারণভাবে শুরু হলেও এখন মানুষের হৃদপিণ্ড, লিভার কিংবা মস্তিষ্কের হুবহু   থ্রি-ডি প্রিন্টিং করা সম্ভব হচ্ছে। যে অঙ্গের  থ্রি-ডি প্রিন্টিং করতে হবে প্রথমে সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআইয়ের সাহায্যে ব্যক্তির অঙ্গটির মাপ নিয়ে তারই কোষ-কলা দিয়ে একটি রেপ্লিকা তৈরি করা হয়। ব্যক্তির নিজের কোষকলা ব্যবহার করার কারণে এ ধরণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করলে শরীর সেটাকে আর প্রত্যাখ্যান করে না এবং অন্য কোন রকম প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে না।

Friday, 3 April 2015

রাতের পেঁচা হওয়ার বিপদ

বেশী রাত জাগা ভালো নয়- এটা অনেক পুরনো কথা। কিন্তু গবেষণার মাধ্যমে আবার সেটা নতুন করে প্রমাণিত হল। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যারা অধিক রাত জেগে থাকেন তাদের ডায়াবেটিস এবং মেটাবলিক সিনড্রোম  বেশী হয়। কোরিয়ার ৪৭ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ১৬২০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যাদের রাত জাগার অভ্যাস আছে তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোম বেশী হয়। এদের শরীরে  মাংসপেশীর পরিমাণ কমে যায় এবং  চর্বির পরিমাণ পরিমাণ বেড়ে যায়। পুরুষদের রাত জাগার সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক বেশী আর মেয়েদের রাত জাগার সঙ্গে মেটাবলিক সিনড্রোমের সম্পর্ক বেশী। অধিক রাত জাগলে উভয়ের শরীরে চর্বি বেড়ে যায়, তবে ছেলেদের পেশী শুকিয়ে যায় আর মেয়েদের পেটে চর্বির পরিমাণ অধিক বেড়ে যায়। যারা রাতে দেরী করে ঘুমায় তাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেশী, রাতের খাবার অনেক দেরী করে খায় এবং তাদের মধ্যে অলস জীবন যাপনের প্রবণতা বেশী থাকে। কোরিয়ার গবেষকগণ মনে করছেন আজকাল তরুণ-তরুণীদের  মধ্যে রাত জাগার প্রবণতা বেড়েছে। এটা ভবিষ্যতে তাদের জন্য নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করবে। অতএব “Early to bed and early to rise, Makes a man healthy and wise” সেই পুরনো আপ্তবাক্যের প্রতিই আমাদের আস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।


তথ্যসূত্রঃ Yu JH, Yun C-H, Ahn JH, Suh S, Cho HJ, Lee SK, et al. Evening Chronotype is Associated with Metabolic Disorders and Body Composition in Middle-Aged Adults. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism. 0(0):jc.2014-3754. PubMed PMID: 25831477.  

Tuesday, 17 March 2015

স্ট্রোক বা মস্তিস্কের পক্ষাঘাত প্রতিরোধে ফলিক অ্যাসিডের ভূমিকা

বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধে ফলিক অ্যাসিডের ভূমিকা নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। পশ্চিমা পর্যবেক্ষণে এতদিন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে কোন ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। কিন্তু সম্প্রতি  চীনের গবেষকদল এ সম্পর্কে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন। চাইনিজ সোসাইটি অব কার্ডিওলজি এবং আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির ২০১৫ সালের যৌথ বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে ডঃ ইয়ং হুও এ সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল জানিয়েছেন এবং তা একই সঙ্গে জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (JAMA) সাম্প্রতিক  সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

চাইনা স্ট্রোক প্রাইমারি প্রিভেনশন ট্রায়ালে ( The China Stroke Primary Prevention Trial-CSPPT) ২০,০০০-এর অধিক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে অর্ধেক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এনালাপ্রিল (enalapril) এবং ফলিক অ্যাসিড সেবন করেছেন আর বাকী অর্ধেক শুধু এনালাপ্রিল গ্রহণ করেছেন। সাড়ে চার বছর ওষুধ সেবনের পর ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যারা এনালাপ্রিলের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড সেবন করেছেন তাদের মধ্যে অন্য গ্রুপের চেয়ে স্ট্রোকের হার তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।
ডঃ ইয়ং হুও চাইনিজ সোসাইটি অব কার্ডিওলজির বর্তমান সভাপতি। তিনি মনে করছেন গবেষণার এ ফলাফল শুধু চীনের জনগণের জন্য প্রযোজ্য তা নয়; বরং অন্যান্য দেশের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের জন্যও প্রযোজ্য। এমনকি যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই তারাও ফলিক অ্যাসিড সেবনের মাধ্যমে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারেন।          
বর্তমানে দুনিয়া জুড়ে স্ট্রোকের প্রকোপ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে চীনে স্ট্রোকের হার বিগত দুই দশকে খুবই বেড়েছে। এটা প্রতিরোধ করার জন্য সুলভ কোন ওষুধ একান্ত প্রয়োজনীয়। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে সস্তা এবং সহজলভ্য এনালাপ্রিল এবং ফলিক অ্যাসিড অনেকের মনেই উৎসাহ জাগিয়েছে । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এর আগে পশ্চিমা পরীক্ষাসমূহে ফলিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা প্রমাণিত হল না কেন? অনেকের ধারণা পশ্চিমা দেশে মানুষের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি থাকে না। কিন্তু চীনের ২০ থেকে ৬০ শতাংশ জনগণের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের অভাব রয়েছে। এজন্য চীনের জনগণের ওপর ফলিক অ্যাসিড প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণের মধ্যেও ফলিক অ্যাসিডের স্বল্পতা রয়েছে, সেজন্য এই পর্যবেক্ষণের ফলাফলকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ফলিক অ্যাসিডের ভূমিকা নিয়ে আরও ব্যাপক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
1.      Huo Y, Li J, Qin X, et al. Efficacy of folic acid therapy in primary prevention of stroke among adults with hypertension in china: The CSPPT randomized clinical trial. JAMA: the journal of the American Medical Association. 2015. DOI:101001/jama.2015.2274.
2.      Stampfer M, Willett W. Folate supplements for stroke prevention: Targeted trial trumps the rest. JAMA: the journal of the American Medical Association. 2015. DOI:101001/jama.2015.1961





Tuesday, 3 March 2015

পুরুষের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য

অবশেষে পুরুষের লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হল। আসলে পুরুষের লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য কত সেটা নিয়ে একটা বিতর্ক বরাবরই ছিল। 

সম্প্রতি একদল গবেষক প্রায় ১৫,০০০ পুরুষের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য হিসেব করে তার ফলাফল ব্রিটিশ জার্নাল অব ইউরলোজিতে প্রকাশ করেছেন। দেখা যাচ্ছে একজন পুরুষের উত্থিত লিঙ্গের দৈর্ঘ্য গড়পড়তা ১৩.১২ সেন্টিমিটার (৫.১৬ ইঞ্চি) এবং বেড় ১১.৬৬ সেন্টিমিটার ( ৪.৬ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৯.১৬ সেন্টিমিটার (৩.৬ ইঞ্চি)  এবং বেড় ৯.৩১ (৩.৭ ইঞ্চি)। ব্রিটিশ গবেষকদল মনে করছেন এ গবেষণার ফলাফল অনেক পুরুষের মনে তাদের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য নিয়ে যে অসন্তোষ বা হীনমন্যতা আছে, তা দূর করবে এবং অনেকেই উদ্বেগ মুক্ত হবেন। যারা নিজের লিঙ্গ ক্ষুদ্র মনে করে দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য অবশ্যই এই গবেষণার ফলাফল বিশাল স্বস্তি বয়ে আনবে। আর বাস্তবে এরকম পুরুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। 

দেখা যাচ্ছে প্রকৃত পক্ষে ২.২৮% পুরুষের লিঙ্গ আসলেই ছোট এবং সমসংখ্যক পুরুষের লিঙ্গ অস্বাভাবিক বড় হয়ে থাকে। এই গবেষণায় ১৭ থেকে ৯১ বছর বয়সী পুরুষদের লিঙ্গের আকার হিসেব করা হয়েছে। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার পুরুষদের ওপর পরিচালিত ২০টি গবেষণার ফলাফল এখানে হিসেবের মধ্যে আনা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ  Veale D, Miles S, Bramley S, Muir G, Hodsoll J. Am I normal? A systematic review and construction of nomograms for flaccid and erect penis length and circumference in up to 15 521 men.  BJU International. 2015:n/a-n/a.


Wednesday, 18 February 2015

রজঃনিবৃত্তির পরে ৭ বছর তাপঝলক

অর্ধেকের বেশী মহিলা মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির সাত বছর পরেও তাপ ঝলক অনুভব করতে পারেন এবং রাতে ঘামতে পারেন। সম্প্রতি JAMA Internal Medicine জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৪৯ জন মহিলার ওপর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের পর এটা জানানো হয়েছে।
   
দেখা যাচ্ছে মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ-উপসর্গ গড়ে ৭.৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ সকল লক্ষণ সর্বোচ্চ ১১.৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। যাদের মেনোপজ কম বয়সে হয় তাদের ক্ষেত্রে এটা ৯.৪ বছর পর্যন্ত ঘটতে দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ গড়ে ১০ বছর এবং জাপানী এবং চীনা মহিলাদের গড়ে যথাক্রমে ৪.৮ এবং ৫.৪ বছর স্থায়ী হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা ৬.৫ বছর স্থায়ী হয়।

সুতরাং মেনোপজের পরে দীর্ঘদিন যাবত এর আনুষঙ্গিক লক্ষণ উপসর্গ চলতে থাকলে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। মেনোপজের আনুষঙ্গিক লক্ষণ-উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এখন বিভিন্ন ধরণের ওষুধ রয়েছে। এক্ষেত্রে যে ব্যাপক গবেষণা চলছে তাতে ভবিষ্যতে আরও নানাবিধ অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

তথ্যসূত্রঃ
·         Avis NE, Crawford SL, Greendale G, et al. Duration of menopausal vasomotor symptoms over the menopause transition. JAMA Internal Medicine. 2015. Published online February 16, 2015.

·         Richard-Davis G, Manson JE. Vasomotor symptom duration in midlife women—research overturns dogma. JAMA Internal Medicine. 2015. Published online February 16, 2015.