অবশেষে সুখী হওয়ার সহজ উপায় জানা গিয়েছে। এক সপ্তাহ
ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেই আমরা সুখী হতে পারি। সম্প্রতি একটি ড্যানিশ পর্যবেক্ষণ
থেকে এমন ফলাফলই পাওয়া গিয়েছে।
হ্যাপিনেস রিসার্চ ইন্সটিটিউট মানুষের সুখী হওয়ার
উপায় নিয়ে গবেষণা করে থাকে। তারা ১,০৯৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর
উপর জরীপ করে বর্তমান সময়ে সুখী হওয়ার এই মোক্ষম উপায় বের করেছেন। জরীপে দেখা যাচ্ছে
অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৯৪জন অন্তত দিনে একবার হলেও ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। গবেষণার
প্রয়োজনে অর্ধেক অংশগ্রহণকারীকে এক সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা
হয়। বাকী অর্ধেক অংশগ্রহণকারীরা যথারীতি ফেসবুক ব্যবহার করতে থাকেন।
এক সপ্তাহ পড়ে উভয় দলের জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টি
পরিমাপ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যারা এক সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার করেননি তাদের জীবন সম্পর্কে
সন্তুষ্টি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ
করার পরে তারা বেশী পরিমানে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।
হ্যাপিনেস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা মনে করছেন ফেসবুক খারাপ কিংবা ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু এটা বাস্তব জীবন সম্পর্কে
আমাদের কিছু অলীক ধারণা দেয়। ফেসবুকে সকলে তাদের জীবনের শুধু আনন্দময় এবং সুখী মুহূর্তগুলিই
তুলে ধরেন। এরফলে অন্যদের এমন ধারনাই হয় যে অন্যরা বেশ সুখে আছে এবং এই তুলনামূলক অবস্থা
থেকে নিজেকে অসুখী মনে হওয়ার কারন ঘটে। জরীপের ফলাফল বলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতি
২ জনের মধ্যে ১ জন বন্ধুদের আনন্দঘন অভিজ্ঞতার ছবি দেখে ঈর্ষান্বিত বোধ করেছেন।প্রতি
৩ জনের মধ্যে ১ জন অন্যদের সুখী দৃশ্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। প্রতি ৫ জনের মধ্যে
২ জন অন্যদের সাফল্যের দৃশ্য কিংবা সংবাদে ঈর্ষান্বিত অনুভব করেছেন।সার্বিকভাবে ফেসবুক
ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ব্যবহার না করা বন্ধুদের চেয়ে ৩৯% কম সুখী অনুভব করেছেন।
এটা স্বীকার করতেই হবে যে ফেসবুক এখন একটি নন-স্টপ
নিউজ চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এর ব্যবহারকারীরা অন্যদের তুলনায় নিজেদের জীবনকে নেতিবাচক আলোকে দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু
আসলে এমন তুলনামূলক পরিস্থিতি নিজের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করছে। কারণ মানুষ নিজের
কি আছে কিংবা কি প্রয়োজন সেটা চিন্তা না করে; অন্যের কি আছে কিন্তু তার সেটা নেই এমন বিষয়ের প্রতি
বেশী মনোযোগ দেয়। ফলে তাদের মনে অতৃপ্তি এবং না পাওয়ার কিংবা না থাকার বেদনাটি বড় হয়ে
দেখা দেয়।
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এখন যাদের
বয়স ৩০ কিংবা এর বেশী তাদের মধ্যে অসুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করছেন
প্রযুক্তির সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মের অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরশীলতাই
এর জন্য দায়ী।
তথ্যসূত্রঃ Wiking M, Tromholt M,
Lundby M, Andsbjerg K. The Facebook Experiment: Does Social Media Affect The
Quality Of Our Lives? The Happiness Institute. 2015.