আধুনিক জগতে
প্রসাধনীসামগ্রী ব্যবহার করেন না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। প্রসাধনীসামগ্রী বলতে বিভিন্ন
ধরনের স্নো, ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, ডি-ওডরেনট বা দুর্গন্ধনাশক রাসায়নিক, চুলের শ্যাম্পু, দাঁতের মাজন, পেস্ট, লোমনাশক রাসায়নিক উপাদানসমূহকে বোঝানো হয়।
অনেকের মনেই একটি সংশয় রয়েছে যে, এমন ব্যাপকভাবে প্রসাধনীসামগ্রী
ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? সত্যিকার অর্থে এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে
পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে প্রসাধন সামগ্রীর সঙ্গে ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক প্রমাণিত হয়নি।
সব ধরনের প্রসাধনীসামগ্রীই
মূলত নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে তৈরি। আজকাল অবশ্য অনেকে হার্বাল প্রসাধনী
ব্যবহার করে থাকেন। যা হোক প্রসাধনীসামগ্রীর ব্যবহার সম্পর্কে অনেকের মনেই একটি আশঙ্কা
বা ভুল ধারণা রয়েছে যে এরা ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। আর
এ ধরনের আশঙ্কা করার পেছনে যুক্তি হচ্ছে ল্যাবরেটরিতে অনেক প্রসাধনীর রাসায়নিক উপাদান
প্রাণীর শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও
এ ধারণার সত্যতা মেলেনি। এর কারণ মানুষের শরীরে প্রসাধনী ব্যবহারের পরের প্রতিক্রিয়া
আর ল্যাবরেটরিতে কোষের ওপর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের ফলাফল এক রকম নয়। শরীরে ত্বকের
অসাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যার ফলে অনেক রাসায়নিক উপাদান ত্বক ভেদ করে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে
পারে না। আর যে সব উপাদান শরীরে ঢুকে যায় সে গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে লিভার
কিংবা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়। এ জন্য ল্যাবরেটরির কোষের ওপর প্রয়োগকৃত
রাসায়নিক উপাদান ক্ষতিকর হলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের শরীরের কোন ৰতি করতে পারে না।
তবে প্রসাধনীতে
রাসায়নিক উপাদানের মাত্রার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কোন রাসায়নিক উপাদান স্বল্প মাত্রার
ব্যবহার করলে উপাকার কিংবা ক্ষতিকর নয়; কিন্তু বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা
হয় এমন অনেক উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করে ক্যান্সার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে এখন পর্যন্ত বৈধ মাত্রার এবং স্বীকৃত ব্র্যান্ডসমূহের
প্রসাধনীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানসমূহ থেকে ক্যান্সার হওয়ার প্রমাণ নেই। তবে অনেক
নকল কারখানায় বিভিন্ন অপদ্রব্য ব্যবহার করে যে সব প্রসাধনী তৈরি হয় সেগুলো সম্পর্কে
এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেক সময় হার্বাল প্রসাধনীর প্রচারণায় এদের শ্রেষ্ঠত্ব
সম্পর্কে নানা গুণগান করা হয়। কিন্তু হার্বাল উপাদান আর রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে প্রকৃতপৰে
কোন পার্থক্য নেই। কাজেই হার্বাল প্রসাধনী ব্যবহার করলে ক্যান্সার হবে না। আর রাসায়নিক
প্রসাধনী ব্যবহার করলে ক্যান্সার হতে পারে-এ ধরনের প্রচারণার মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই।
সুতরাং আমরা
পরিশেষে বলতে পারি:
- প্রসাধনীতে রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ বা ঘনত্ব গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়। কোন কোন উপাদান খুব সামান্য পরিমাণে শনাক্ত করা যায়।
- আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বিপাক ক্রিয়ার সাহায্যে নিষ্কাশন করতে পারে।
- কোন রাসায়নিক উপাদান শরীরে থাকা মানেই তা ক্ষতিকর নয়। তবে হার্বাল কিংবা রাসায়নিক প্রসাধনীর কোন কোন উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অধিকাংশ দেশেই
প্রসাধনীসামগ্রী তৈরি এবং বিপণনের জন্য কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকরী রয়েছে।
উপযুক্ত মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদিত প্রসাধনী ব্যবহার করা নিরাপদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,
ব্রিটেন এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশে প্রসাধনী উৎপাদনে কঠোর মান
নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে অনেক অনুমোদনবিহীন কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণের তদারকী
ছাড়া অনেক প্রসাধনী তৈরি হয় এবং সেগুলো যথেচ্ছভাবে বিপণন করা হয়। এগুলো জনস্বাস্থ্যের
জন্য নিরাপদ কিনা কিংবা এ সব প্রসাধনী ক্যান্সার সৃষ্টি করে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকা
অস্বাভাবিক নয়।
No comments:
Post a Comment