শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Wednesday, 6 February 2013

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওজন কমানোর ভূমিকা



অনেক সময় ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবএরজন্য প্রয়োজন জীবনাচরণ বা লাইফস্টাইল (lifestyle) বদলানোসাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে বিনা ওষুধে অনেকের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবঃ
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
)     শরীরের ওজন কমানো,
)     শারীরিক পরিশ্রম ব্যায়াম,
)     সুষম খাদ্য গ্রহণ,
)     পাতে লবণ না খাওয়া
)     মদ্যপান পরিহার করা
)     ধূমপান পরিহার করা এবং
)     শিথিলায়ন বায়ো ফিডব্যাক
যারা এই পাঁচটি কৌশল অনুসরণ করেও উচ্চ রক্তচাপ বাগে রাখতে পারবেন না তাদের অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে 

শরীরের ওজন কমানো,

ওজন বাড়া, স্থূলকায় হওয়া কিংবা মেদ ভুঁড়ি থাকা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় প্রকৃত পক্ষে ওজন বাড়লে রক্তচাপ বেড়ে যায় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় গড় পড়তা ৫ কেজি ওজন কমাতে পারলে রক্তচাপ  ২.৫ থেকে ১০ মিঃ মিঃ পারদচাপ  কমে যায় যাদের ওজন অধিক এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য ওজন কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অতিরিক্ত ওজন এবং মেদ ভুঁড়ির সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কোলেস্টেরলের আধিক্যের সম্পর্ক রয়েছে ওজন বাড়লে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে অর্থাৎ ডায়াবেটিস হয় আর রক্তে কোলেস্টেরলও বেড়ে যায় ডায়াবেটিস এবং রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এ দুটোই হৃদরোগের ঝুঁকি বা কারণ মোটা মানুষের ওজন কমালে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এর জন্য হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় শরীরের ওজন ১০% কমাতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০% কমে যায়

কেউ স্থূলকায় কিনা তা দু ভাবে সহজেই বুঝতে পারা যায়- শরীরের ঘনত্ব সূচক (Body mass index) এবং কোমরের পরিধি (Waist circumference)

শরীরের ঘনত্ব সূচক বা বি এম আই কারোর উচ্চতার তুলনায় শরীরের ওজন নির্দেশ করে এর সাহায্যে শরীরের মোট চর্বির পরিমাণ অনুমান করা যায় আর চর্বির পরিমাণ বাড়া মানেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়া তবে যাদের শরীর পেশীবহুল কিংবা যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি জমেছে তাদের বেলায় বি এম আই সঠিক তথ্য নির্দেশ করে না এ জন্য কোমরের পরিধি মাপা উচিৎ পেটে চর্বি বাড়লে কোমরের পরিধি বেড়ে যায় পুরুষদের কোমরের পরিধি ৪০ ইঞ্চির বেশী আর মেয়েদের ৩৫ ইঞ্চির বেশী হলে তা বিপজ্জনক বি এম আই ২৫ থেকে ২৯.৯ হলে শরীরের ওজন অধিক  (Over weight) বলে গণ্য করা হয় আর কারও এটা ৩০ কিংবা তারচেয়ে বেশী হলে তাকে স্থূলকায় (Obese) হিসেবে ধরা হয়
শরীরের ওজন কমানো সহজ কাজ নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫% থেকে ৩৫% মানুষ মোটা বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের অপুষ্টি ভারাক্রন্ত একটি দেশ হলেও আমাদের দেশে স্থূলকায়দের সংখ্যা বাড়ছে প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন প্রতি তিনজন মহিলার একজন অবিরাম ওজন কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ওজন কমানোর এই প্রানান্তকর প্রয়াসকে অনেকে মার্ক টোয়েনের ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে তুলনা করেন মার্ক টোয়েন রসিকতা করে বলেছিলেন,ধূমপান ছাড়া খুবই সহজ আমি শতবার এটা ছেড়েছি (ÒGiving up smoking is easy; I have done it hundreds of times.” )

একটু যত্ন সহকারে নিয়মিত চেষ্টা করলে ওজন কমানো কঠিন কাজ নয় প্রতিদিন আমরা যে পরিমাণ শক্তি খাবারে গ্রহণ করি, ঠিক সেই পরিমাণ আবার নানা কাজ কর্মে খরচ করি শক্তি খরচের বেলায় কার্পণ্য করে শক্তি জমিয়ে রাখার কিংবা অপব্যয়ীর মতো অতিরিক্ত শক্তি খরচ করে দেউলিয়া হওয়ার অবকাশ নেই আমরা যদি কখনও বেশী খাওয়া-দাওয়া করে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করি এবং আলসেমি করে বা কাজকর্ম না করে কিছু অতিরিক্ত ক্যালরি জমিয়ে ফেলি তা হলে সেটা নিয়ে শরীর কি করে? অতিরিক্ত অর্থ যেমন আমরা ব্যাংকে সঞ্চয় করি; শরীরও তেমন অতিরিক্ত শক্তিকে চর্বি বানিয়ে জমিয়ে রাখে উল্টো ভাবে শক্তির যদি ঘাটতি পড়ে? শরীর তখন জমানো চর্বি খরচ করতে থাকে  

শরীরে শক্তির ঘাটতি বাড়ানো কোন কঠিন কাজ নয় শুধু কষ্ট করে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিলেই হয় ওজন কমানোর আরেকটি উপায় বেশী বেশী ব্যায়াম করা এভাবে প্রতিদিন আমরা প্রচুর শক্তি বা ক্যালরি খরচ করতে পারি কিন্তু ওজন কমানোর জন্য যত ব্যায়াম করা দরকার তা সব সময় হয় না তবে ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে প্রয়োজন মতো দেহচর্চা করলে খুব সহজে ওজন কমানো যায়  
ওজন কমানোর কাজটি সবসময় ধীরে ধীরে করা উচিৎ সপ্তাহে এক কেজির বেশী ওজন কমানো উচিৎ নয় কারও বর্তমান ওজনের ১০% কমানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু করাটাই কার্যকরী কৌশল এবং এ লক্ষ্য অর্জন করা সহজ
বি এম আই-এর গুরুত্ব কি?
শ্রেণী
বি এম আই
করনীয়
স্বাভাবিক ওজন
১৮.৫-২৪.৯
·         ওজন না বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে
অতিরিক্ত ওজন (Over weight)
২৫-২৯.৯
·         ওজন বাড়ানো যাবে না
·         কোমরের পরিধি বেশী হলে ওজন কমাতে হবে
স্থূলকায় (Obese)
৩০ কিংবা বেশী
·         ওজন কমাতে হবে
·         সপ্তাহে ২ পাউন্ডের বেশী ওজন কমানো যাবে না
·         প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে

যে সকল উচ্চ রক্তচাপের রোগী স্থূলকায়, তাদের ওজন কমানোর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা উচিৎ  ওজন কমানোর কোন যাদুকরী পন্থা নাই সত্য; কিন্তু চেষ্টার অসাধ্য কিছু নাই এক পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন মানে ৩৫০০ ক্যালরি অতএব সপ্তাহে এক পাউন্ড ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরির সমান কম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে অথবা ৫০০ ক্যালরি ব্যায়ামের মাধ্যমে খরচ করতে হবে বলাবাহুল্য কম খেয়ে আর বেশী পরিশ্রম করে ৫০০ ক্যালরি খরচ করাই সহজসাধ্য

সাধারণত পর্যায়-১-এর উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ওজন কমানোর চেষ্টার জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয় অনেক সময় ওষুধ ছাড়াই এদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসে যায় আর এতে সফল না হলে অবশ্যই তাদের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রার, তাদেরও ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ওজন কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে









No comments:

Post a Comment