মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন
দেখা যায়,
“মেদ ভুঁড়ি কি করি?”
এ
সকল বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে মেদ ভুঁড়িওয়ালা লোকজন কি করছেন, তা সঠিক জানা না গেলেও
সম্প্রতি মেদ ভুঁড়ি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডে বেশ মজার এক গবেষণার
ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে মাঝ বয়েসী আমেরিকানদের ভুঁড়িতে ইংরেজদের
চেয়ে বেশী বেশী মেদ-চর্বি জমা হয়েছে। বলা বাহুল্য ইংরেজদের চেয়ে মার্কিনীদের মধ্যে
ডায়াবেটিসের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে বেশী এবং এর কারণ হিসেবে মার্কিনীদের ভুঁড়িতে
অতিরিক্ত মেদ-চর্বি জমা হওয়াকেই গবেষকগন দায়ী করেছেন।
ইউনিভারসিটি কলেজ
লন্ডন এবং র্যান্ড কর্পোরেশনের(RAND
Corporation)
গবেষকগণ ২০০৬ সালে প্রায় সমতুল্য মাঝ বয়েসী মার্কিন নাগরিক এবং ইংরেজদের ওপর এই গবেষণা
পরিচালনা করেন। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসের হার
দ্বিগুণ। মার্কিনীরা ইংরেজদের তুলনায় বরাবরই স্থূলকায়; কিন্তু ডায়াবেটিসের হার কেন
এত বেশী তার সঠিক ব্যাখ্যা মিলছিল না। এখন গবেষকগণ
বলছেন মার্কিনীদের বিশেষত মহিলাদের ভুঁড়িতে অতিরিক্ত মেদ জমার কারণেই এই বিপত্তি
হয়েছে। গড় পড়তা একজন মার্কিন রমণীর কোমরের মাপ সমবয়সী ইংরেজ মহিলাদের চেয়ে কমপক্ষে
৫ সেন্টিমিটার বেশী। আর মার্কিন পুরুষদের কোমর ইংরেজদের চেয়ে ৩ সেন্টিমিটার বেশী। এমন
কি যে সকল মার্কিনীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী নয়, তাদের কোমরের মাপও ইংরেজদের
তুলনায় বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং ইংল্যান্ডের ৫২ থেকে ৮৫ বছর বয়সের
নাগরিকদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। ডায়াবেটিসের অন্যান্য যে সকল ঝুঁকি উপাদান
রয়েছে সে গুলির বেলায় এই দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায়নি।
শুধু একটি ক্ষেত্রেই বড় রকমের পার্থক্য দেখা গিয়েছে। আর সেটা হোল মার্কিনীদের ওজন
স্বাভাবিক কিংবা অধিক যাই হোক না কেন, তাদের কোমরের মাপ ইংরেজদের চেয়ে বেশী। এমন
কি প্রতি চারজন স্বাভাবিক ওজন বিশিষ্ট মার্কিন নাগরিকদের অন্তত একজনের ভুঁড়িতে
সঞ্চিত মেদের পরিমাণ এত বেশী যে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার অতিরিক্ত ঝুঁকি রয়েছে। ইংরেজদের
বেলায় এ হার ১০ শতাংশ। এতদিন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য বি এম আই (Body mass index)-কে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এখন মনে করা
হচ্ছে যার কোমরের মাপ যত বড় এবং ভুঁড়িতে সঞ্চিত চর্বির পরিমাণ যত বেশী , তার
ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি তত বেশী।
কিন্তু সকলেরই মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে
ইংরেজদের চেয়ে মার্কিনীদের ভুঁড়িতে কেন অতিরিক্ত মেদ জমলো? এর ব্যাখ্যা এখনও মিলছে
না। তবে ধারণা করা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের বিশেষ ভূমিকা থাকতে
পারে। বেশী চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এবং শারীরিক পরিশ্রম করলে পেটে চর্বি জমে। ইংরেজদের
চেয়ে মার্কিনীরা বেশী চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে এবং তারা ইংরেজদের চেয়ে কম
শারীরিক পরিশ্রম করে। একজন ইংরেজ ভদ্রলোক প্রতিদিন যা হাঁটাহাঁটি করে থাকেন,
মার্কিনী ভদ্রলোক তার অর্ধেক হাঁটাহাঁটি করে থাকেন। একজন মার্কিনী যেখানে ৫০০০
পদক্ষেপ দেন, সেখানে একজন ইংরেজ ১০,০০০ ধাপ পা ফেলে থাকেন।
গবেষকদের বিবেচনায় পেটে অতিরিক্ত
চর্বি জমা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এর ফলে অগ্নাশয় ইনসুলিন নিঃসরণ বাধাগ্রস্থ হয়
এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজটিও বিঘ্নিত হয়। ইনসুলিন সঠিক মাত্রায়
নিঃসরিত হলে এবং যথাযথ কাজ করতে পারলে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে সঞ্চয় করে
রাখে। কিন্তু পেটে চর্বি বেশী থাকলে এ কাজটি আর ঠিক মতো সম্পন্ন হয় না। ফলে রক্তে
গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে চর্বি গলে
শক্তি উৎপন্ন হয় এবং গ্লুকোজের মাত্রা আবার স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ পায়। সুতরাং এ
গবেষণার ফলাফলের মূল বার্তা হচ্ছে, মেদ-ভুঁড়ি কমাতে হবে। অর্থাৎ সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ , কম ক্যালরি গ্রহণ,
প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতে হবে। এটা শুধু মার্কিনী কিংবা ইংরেজদের
জন্য নয়; ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে এটা
প্রযোজ্য।
No comments:
Post a Comment