মেদ-ভুড়ি
নিয়ে আর হাসি-তামাশা করা যাচ্ছে না। আগে ভুঁড়ি সম্পদ এবং আভিজাত্যের পরিচয় বহন
করতো। ভুঁড়িদার ব্যক্তিদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে কিছু রসিকতাও করা হতো। কিন্তু আজকাল
ভুঁড়ি একেবারে বেমানান বিষয়। তারপরেও আমাদের অনেকের ভুঁড়ি বড় হচ্ছে, ভুঁড়িদারদের কাফেলা লম্বা
হচ্ছে। এটা মোটেও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। পেটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত
চর্বি জমার মানে স্বাস্থ্যের ওপর ক্রমশ হুমকি বেড়ে যাওয়া।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের পেটে চর্বি
জমা হওয়ার প্রবণতা বেশী। কারো ওজন যাই হোক না কেন, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমা নানা
রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে; যেমন-
- হৃদরোগ
- উচ্চ রক্তচাপ
- মস্তিস্কের পক্ষাঘাত
- বিভিন্ন ধরণের ক্যানসার
- ডায়াবেটিস মেলিটাস ( টাইপ-২)
- ইনসুলিন প্রতিরোধ্যতা বেড়ে যাওয়া
- রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
- কম ঘনত্বের ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়া
- বিপাকজনিত সমস্যা (Metabolic syndrome)
- ঘুমের মধ্যে বার বার দম বন্ধ হয়ে
যাওয়া (Sleep
apnoea)
অনেকে জানতে চান- পেটে অতিরিক্ত চর্বি
জমেছে কিনা তা কেমন করে বোঝা যাবে। সাধারণত কটিদেশ এবং কোমরের মাপ নিয়ে তার অনুপাত নির্ণয় করলে এটা বোঝা
যায়। আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে শরীরের ঘনত্ব সূচক (Body mass index - BMI) নির্নয় করা। তবে যে কারো কটিদেশের মাপ (Waist size) জানলেই
আন্দাজ করা যায় তার অবস্থা কি? সাধারণত যাদের কটি ৪০ ইঞ্চির (১০২ সেঃমিঃ) বেশী
তারা বিপদের মুখে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে-
বয়সের সঙ্গে কি ভুঁড়ির কোন সম্পর্ক আছে? এর উত্তর হচ্ছে বয়স বাড়ার পাশাপাশি কেউ
যদি শরীর চর্চা বা ব্যায়াম না করেন, তাহলে তার পেশী ক্ষয় হতে থাকে এবং এর ফলে
শরীরের ক্যালরি খরচের পরিমাণ আরও কমে যায়। এজন্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুঁড়ি বাড়তে
থাকে।
স্থূলকায়তা কিংবা অতিরিক্ত ওজনের জন্য
অনেকে বংশগতি বা জিনকে দায়ী করে থাকেন। তবে বংশগতি বা জিন যত না ওজন বাড়ার জন্য
দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশী দায়ী আমাদের জীবনাচরণ বা লাইফ স্টাইল। সাধারণত যারা
শারীরিক পরিশ্রম কম করে এবং বেশী খায়- তারাই মোটা হয়। তাদেরই ভুঁড়ি বাড়ে। অতিরক্ত
মদ্যপান বিশেষত বিয়ার সেবন করাকেও ভুঁড়ি হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। অতিরিক্ত বিয়ার
সেবন করলে প্রচুর চর্বি জমে যায়। অতএব যারা ভুঁড়ি কমাতে চান তাদের এ বিষয়টি
সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেমন করে ভুঁড়ি
কমাবো?
ভুঁড়ি কমানো আর শরীরের ওজন কমানোর মূল
সূত্র একই- ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে আর শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়াতে
হবে।
ক্যালরি গ্রহণ কমানোর সহজ কোন বুদ্ধি
নেই। তবে কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে-
- ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে।
- পাতে খাবারের পরিমাণ কম নিতে হবে
- তেল-চর্বির পরিবর্তে শাকসবজি-ফলমূল বেশী
খেতে হবে
- ফাস্ট ফুড যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল
- রেস্টুরেন্টে যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল
- রেস্টুরেন্টে যেয়ে অন্যদের সঙ্গে খাবার
ভাগ করে খেলে কম খাওয়া হবে।
- শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।
- সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রত্যেকের
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াইঘণ্টা
(১৫০ মিনিট) মাঝারী মানের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত অথবা ৭৫ মিনিট
ভারী ব্যায়াম করা যেতে পারে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের এর চেয়ে বেশী ব্যায়াম
করতে হবে এবং তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে।
- যাদের পক্ষে একটানা বেশী সময় ব্যায়ামের
ফুরসৎ নেই, তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্পসময়ে কিংবা বার বার ব্যায়াম করতে
হবে।
- নৈশ ভোজের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি
করতে হবে।
- একবার ওজন সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসতে পারলে
তা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
সবশেষ কথা হচ্ছে আমাদের বিশ্বাস রাখতে
হবে অতিরিক্ত মেদ-ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। প্রয়োজন একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা এবং ধৈর্য। কয়েক
কেজি ওজন কমাতে পারলেই তা চিত্তকে প্রফুল্ল করে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বহুলাংশে লাঘব
করে।
No comments:
Post a Comment