হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা এখন অনেক বেড়েছে। ভগ্নহৃদয় নিয়ে লাখ লাখ কবিতা, গান কিংবা উপন্যাস
রচিত হয়েছে। কিন্তু হৃদরোগ বা হার্টঅ্যাটাক সম্পর্কে তেমন আনন্দদায়ক কিংবা হৃদয়গ্রাহী
কিছু বলা যাবে না। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দোকানপাটে কত লাল, নীল কাগজ কিংবা
কাপড়ে তৈরি হৃৎপিণ্ডের প্রতীক ঝুলতে দেখা যায়; কিন্তু ত্রিমাত্রিক এই বিস্ময়কর অঙ্গটির প্রকৃত
কার্যকলাপ কিংবা ভালোমন্দ নিয়ে হয়তো অনেক সময় ভাবার সময় পাই না।
হৃদরোগ হলে সহজেই বোঝা যায়
শুনতে অবাক হলেও হৃদরোগে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ থেকে ৬ জন বুঝতে পারেন
না যে তাদের হার্টঅ্যাটাক হয়েছে। তাদের বুকে ব্যথা হয়, দম আটকে আসে, শরীর ঘামে-এর
পরও তারা সন্দেহ করেন না। অনেকেই জানেন বুকের বাম দিকে হার্টঅ্যাটাকের ব্যথা হয় এবং
তা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এমন আদর্শ প্রকৃতির হার্টঅ্যাটাক কমই দেখা যায়। আসলে
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা বুকের মাঝখানে হয়। অনেকেই হার্টঅ্যাটাকে ভুগছেন । কিন্তু বলেন
কিংবা মনে করেন তাদের বুকে জ্বালাপোড়া হয়েছে কিংবা তারা অতিরিক্ত দুর্বলতায় ভুগছেন।
মেয়েদের হার্টঅ্যাটাকের প্রকৃতি আরো ভিন্নতর। ঈশ্বরের পক্ষে যেমন মেয়েদের মন বোঝা ভার; তেমনি তাদের
হৃদরোগও বৈচিত্র্যময়। হার্টঅ্যাটাক হলেও অনেক মহিলা বুকে ব্যথার কথা বলেন না বরং তারা
পেটে ব্যথা, পিঠে ব্যথা,
চোয়াল কিংবা ঘাড়ে ব্যথার অভিযোগ করেন। অতএব প্রশ্নটা যদি হৃৎপিণ্ড
সংক্রান্ত হয় তাহলে লক্ষণ-উপসর্গ যত বিচিত্রই মনে হোক না কেন হৃদরোগের ঝুঁকির কথা ভুলে
যাওয়া উচিত নয়।
ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার হৃৎপিণ্ডের জন্য নিরাপদ
অনেক খাবারের বোতল কিংবা মোড়কের গায়ে লেখা দেখা যায়-‘এটা ট্রান্সফ্যাটমুক্ত’। ট্রান্সফ্যাট
আসলেই হৃদয়বান্ধব নয়। কিন্তু ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার খুঁজে পাওয়াও কঠিন। কাজেই যেকোনো
তেল, চর্বিজাত কিংবা চর্বিযুক্ত খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আর খাবার ট্রান্সফ্যাটমুক্ত
হলেই যে ভালো তা কিন্তু নয়। ওর ভেতরে সম্পৃক্ত চর্বি থাকতে পারে। সম্পৃক্ত চর্বি হৃৎপিণ্ডের
চিরশত্রু। কাজেই আপনি মোড়কজাত যে খাবার কিনেছেন তার গায়ে ট্রান্সফ্যাট এবং তেল ও চর্বির
পরিমাণ সম্পর্কে পুরো বৃত্তান্ত পড়ে নেয়া ভালো। অবশ্য আমাদের দেশে কয়টা খাবারের মোড়কেই
বা এমন তথ্য দেয়া থাকে?
হৃদরোগ নাকি দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ
হৃদরোগের অনেক লক্ষণ-উপসর্গ দুশ্চিন্তা-উদ্বেগের ছদ্মবেশে আসে। আপনি কাজ করছেন, হঠাৎ হার্টবিট
বা হৃদঘাত বেড়ে গেল। আপনার হয়তো মনে হতে পারে এটা উদ্বেগ কিংবা দুশ্চিন্তার কারণে হচ্ছে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে অনেক সময় এটা হৃদরোগের জন্যও হতে পারে। অনেকের মাঝেমধ্যে হৃদঘাতে
ছন্দ ব্যাহত হতে দেখা যায়। কারো কারো এটা গুরুতর এবং ওষুধ সেবনের প্রয়োজনও হতে পারে।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক ব্যস্ত জীবনে উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা আমাদের প্রাত্যহিক সঙ্গী।
এসব মেনে নিয়েই আমাদের বসবাস। কিন্তু তারপরও কথা রয়ে যায়। আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি যদি
সব সময় বেশি কিংবা ছন্দহীন থাকে,
তাকে হালকাভাবে নেয়া যাবে না। এটা যদি উদ্বেগ কিংবা দুশ্চিন্তার
জন্যও হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তা কিন্তু হৃৎপিণ্ডের জন্য দারুণ ক্ষতিকারক। হৃদঘাত
দীর্ঘদিন ধরে থাকলে অবশ্যই তা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেবে। উদ্বেগ কমানোর জন্য
যোগ ব্যায়াম, ধ্যান কিংবা শিথিলায়ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর
খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।
বয়স বেশি না হলে হৃৎপিণ্ড নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই
অনেকের কিন্তু ২০ বছর বয়সেও হার্টঅ্যাটাক হচ্ছে। বয়স বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে
যায়, এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু অনেকের কৈশোরেও হৃদরোগ হয়। আজকাল ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সে
হৃদরোগ হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো শৈশব
থেকেই গড়ে তোলা উচিত। শিশুদের হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি
তাদের খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিতে হবে, টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে যত কম সময়
থাকা যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু আমাদের শিশুরা কি তা করছে?
বিনা মেঘে বজ্রপাত হওয়াটা যেমন সত্য, তেমনি কোনো ঝুঁকির উপাদান না থাকা সত্ত্বেও
হার্টঅ্যাটাক হয়। অতএব সচেতন থাকুন,
সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করাতে হবে।
No comments:
Post a Comment