মনে রাখা দরকার
রজঃনিবৃত্তি কোনো ব্যাধি নয়। প্রকৃতির নিয়মে যে শিশুকন্যাটির ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সে রজঃস্রাবের
শুরুর মধ্য দিয়ে নারীজীবনের শুরু হয়েছিল, ৪৫-৫৫ বছর বয়সে
সেই রজঃচক্র সমাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতার ইতি সাধিত হয়। সাধারণত সর্বশেষ
রজঃস্রাবের ১২ মাস বন্ধ থাকলে তাকে রজঃনিবৃত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। রজঃনিবৃত্তি মেয়েদের
জীবনের একটি অমোঘ প্রাকৃতিক পরিবর্তন হলেও এবং একে বিশেষ কোনো রোগ বলা না গেলেও এ সময়ে
নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার উদ্ভব হতে দেখা যায়। রজঃনিবৃত্তিকালে মহিলাদের
নিদ্রাহীনতা, মানসিক অস্থিরতা, কাজকর্মে অনীহা, বুক ধড়ফড় করা, শরীরে অতিরিক্ত উত্তাপ অনুভব করা, চুল পড়ে যাওয়া,
স্তন কৃশতা ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের উপসর্গ সৃষ্টি হয় এবং সার্বিকভাবে
এক ধরনের বিষণ্ন্নতা বোধ, অজ্ঞাত কিছু হারানোর
বেদনা চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। রজঃস্বলা নারীর সার্বিকভাবে হৃদরোগের সম্ভাবনা কম
থাকে। কিন্তু রজঃনিবৃত্তির পরে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে মহিলাদেরও
এ পর্যায়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ সময় অনেক মহিলার রক্তচাপও বাড়তে দেখা যায়। অনেকের
ধারণা রজঃনিবৃত্তির সময় শরীরের মধ্যে হরমোনের ছন্দময় প্রবাহের পরিবর্তনের ফলে রক্তচাপ
বাড়ে।
আবার অনেকের
ধারণা এ সময়ে মহিলাদের শরীরের ঘনত্ব সূচকে পরিবর্তন ও এ জন্য দায়ী হতে পারে। রজঃনিবৃত্তির
পর অনেকে হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর ফলেও অনেকের রক্তচাপ বাড়তে পারে।
১৯৭৬ সালের ফ্রামিংহাম পর্যবেক্ষণে অবশ্য রজঃনিবৃত্তির পরে মহিলাদের রক্ত চাপ বাড়ার
কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে রক্তে উল্লেখযোগ্য কোলেস্টেরল বাড়ার নজির পাওয়া গিয়েছিল।
আগে বাংলাদেশের
মানুষের গড়আয়ু অনেক কম ছিল এবং মাতৃ মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। ফলে রজঃনিবৃত্তির পরবর্তী
সমস্যা নিয়ে মহিলারা খুব কমই চিকিৎসকের কাছে আসতেন। এখন পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র বদলে
গিয়েছে। আমাদের গড়আয়ু অনেক বেড়েছে এবং মাতৃমৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে কমেছে। মেয়েদের শিক্ষার
হার এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা আনুপাতিকহারে বেড়েছে। ফলে মহিলাদের রজঃনিবৃত্তির পরবর্তী
সমস্যা এখন ব্যাপকভাবে চিকিৎসকদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো এগুলো আরো বাড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে
রজঃনিবৃত্তির পর রক্তচাপ বাড়া কীভাবে সামাল দেয়া যাবে। এর উত্তরে এক কথায় বলা যায়-
জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। রজঃনিবৃত্তি উচ্চ রক্তচাপের কারণে হোক কিংবা না
হোক আধুনিক জীবনাচরণ রক্তচাপ বাড়ানোর সহায়ক। অতএব উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে হলে একজন
পুরুষের যেমন জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি রজঃনিবৃত্তির পর একজন মহিলারও জীবনাচরণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
অতএব রজঃনিবৃত্তির পর-
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- হৃদ-বান্ধব খাওয়া-দাওয়া করতে হবে।
- পাতে লবণ একেবারে পরিহার করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম এবং শরীরচর্চা করতে হবে।
- অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা সীমিত রাখতে হবে।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment