নিয়মিত ব্যায়াম
বা শরীরচর্চা করলে নানারকম দীর্ঘমেয়াদি রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়, ওজন কমানো যায়, ভালো ঘুম হয়
কিংবা মানসিক প্রশান্তি আসে। যে কোনো বয়সী মানুষের জন্য; পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সবার জন্য ব্যয়াম প্রযোজ্য। ব্যায়ামের আরও নানাবিধ উপকার
রয়েছে। সে সম্পর্কে আজকের আলোচনা।
ব্যায়াম মনকে চাঙ্গা করে
শরীরচর্চা করলে
মস্তিষ্ক থেকে নানারকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল
করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। ফলে
আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বোধ অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত শরীরচর্চাকারীকে বিষণ্নতা কিংবা
হতাশা খুব সহজে গ্রাস করতে পারে না।
ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করে
বর্তমানে দৈনন্দিন
জীবনে হাঁটাহাঁটির প্রয়োজন হয় না বললেই চলে, আর আমাদের খাদ্যাভ্যাসও বদলে গেছে। ফলে দিন দিন ক্রনিক রোগব্যাধি যেমন-হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদির প্রকোপ বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিদিন হাঁটলে, দৌড়ালে কিংবা শরীরচর্চা করলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না;
কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত শারীরিক কসরৎ
রক্তে 'ভালো' কোলেস্টেরলের (High density lipoprotein -HDL) পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় আর 'মন্দ' কোলেস্টেরলের (Low density lipoprotein-LDL) মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে রক্তনালীতে চর্বির পুরু আস্তর জমতে
পারে না, ফলে হৃদরোগ হওয়ার ভয় কমে যায়।
শরীরের ওজন
কমে
যাদের ওজন বাড়তি,
তাদের ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। বাড়তি ওজন মানেই হৃদরোগ,
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,
কিংবা ক্যান্সারের ঝুঁকি। শারীরিক পরিশ্রম করলে ক্যালরি খরচ
হয়। যত বেশি ক্যালরি খরচ করা যাবে, শরীরের ওজন তত নিয়ন্ত্রণে
থাকবে। এর জন্য যে প্রতিদিন প্রচুর সময় দিতে হবে তা কিন্তু নয়। লিফট দিয়ে না উঠে আমরা
সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারি, টিভি দেখার পরিবর্তে
আধঘণ্টা হাঁটতে পারি, অফিস যাওয়ার সময় হেঁটে যেতে কিংবা হেঁটে বাসায়
ফিরতে পারি, এভাবে আমরা যতই শারীরিক পরিশ্রম করব ততই আমাদের
ক্যালরি খরচ বাড়বে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কর্মস্পৃহা বাড়ায়
ব্যায়াম এবং
শরীরচর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়।
আমাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালী সচল থাকে। এর ফলে পুরো শরীরে একটি প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা
সৃষ্টি হয়। এটি আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়, কাজ-কর্মে ও
লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
সুনিদ্রা আনে
যাদের ঘুমের
সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম
অনিদ্রা দূর করে, অতি নিদ্রা হ্রাস করে। নিয়মিত যিনি শরীরচর্চা
করেন তার ঘুম আসার কোনো সমস্যা হয় না এবং গভীর ঘুম হয়। অবশ্য একেবারে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম
করা উচিত নয়। কারণ ব্যায়ামের পরে মানসিক চাঙ্গা ভাবের কারণে ঘুম আসা বিলম্বিত হতে পারে।
সেক্ষেত্রে প্রত্যুষে ব্যায়াম করা উপকারী।
নিয়মিত ব্যায়াম একটি মজাদার অভিজ্ঞতা
অবসর সময় কিভাবে
কাটানো যায়, এ নিয়ে যাদের সমস্যা, ব্যায়াম তাদের জন্য অতি উৎকৃষ্ট সমাধান। হাতে করার কিছু না থাকলে
আধঘণ্টা দৌড়ানো কিংবা হাঁটার চেয়ে মজাদার কোনো কাজ হতে পারে না। যারা নাচতে জানেন,
তারা আধঘণ্টা নাচের অনুশীলন করতে পারেন। সাঁতার কাটা,
বাইসাইকেল চালানো কিংবা মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা, যাই হোক না কেন শরীরচর্চা মানেই নির্ভেজাল আনন্দ আর শরীরের জন্য
নানাবিধ উপকার ষোল আনা।
অতএব আধুনিক
যান্ত্রিক জীবনে শরীরের যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক রাখতে, রোগ-ব্যাধির তাড়না থেকে দূরে থাকতে, মনকে উদ্দীপিত
ও চাঙ্গা করতে ব্যায়াম এবং শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো বয়সের নারী-পুরুষের
সুস্থতার জন্য ব্যায়াম বা শরীর চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জীবনকে ত্বরান্বিত
করতে পারে সুস্থতার দিকে।
No comments:
Post a Comment