শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Friday 28 February 2014

যত বেশী উদ্বেগ, তত বেশী মাথাব্যথা

যাদের মাথাব্যথা হয় তাদের কাছে এটা নতুন বিষয় নয়। যত বেশী উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা, তত বেশী মাথাব্যথা। জার্মানির একদল গবেষক মাথাব্যথার সঙ্গে উদ্বেগের সম্পর্ক নিয়ে পর্যবেক্ষণের ফলাফলে এমন তথ্যই পেয়েছেন। বলা হচ্ছে উদ্বেগ মাথাব্যথা শুরু হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অব্যহত উদ্বেগের মধ্যে জীবনযাপন করলে অনেকরই ক্রনিক মাথাব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হয়।

 পরবর্তীতে মাথাব্যথা নিজেই একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গত ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ২১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী পাঁচ হাজারের বেশী মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ করে জার্মান গবেষকগণ ৩১ শতাংশ টেনশনজনিত মাথাব্যথা এবং ১৪ শতাংশ মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথা পেয়েছেন। ১১ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয় ধরণের সংমিশ্রণজনিত মাথাব্যথা আর ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে কোন কারণ নির্ধারণ করা হয়নি।তবে সব ধরণের মাথাব্যথার ক্ষেত্রেই উদ্বেগের পরিমাণ বাড়লে প্রতি মাসে মাথাব্যথার হার বাড়ার নজির পাওয়া গিয়েছে।

অতএব মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে উদ্বেগ মোকাবেলা করার ভালো ব্যবস্থা দরকার। গবেষকগণ মনে করেন এজন্য শরীর এবং মন – দুটোরই চিকিৎসা দরকার। জার্মানদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, তাইচি, বায়ো ফিডব্যাক, শিথিলায়ন ইত্যাদি প্রক্রিয়ার সাহায্যে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা কমানো সম্ভব। 

 তথ্যসূত্রঃ 66th Annual Meeting of the American Academy of Neurology (AAN), April 26 to May 3, 2014. Abstract 344.


Sunday 23 February 2014

সিজারিয়ান অপারেশনের নতুন নীতিমালা

সিজারিয়ান অপারেশনের বিপক্ষে মতামত দিন দিন জোরালো হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি ধাত্রী ও স্ত্রী রোগ বিদ্যা বিষয়ক আমেরিকান কলেজ (ACOG) এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে অযথা কিংবা প্রয়োজন না থাকলে সিজারিয়ান অপারেশন করে সন্তান জন্ম দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রক্রিয়াটি আসলে আমরা এতদিন যত দ্রুত হয় বলে মনে করে এসেছি, সেটা তারচেয়ে শ্লথ গতিতেও হতে পারে। এ জন্য তাড়াহুড়ো করে সিজারিয়ান অপারেশন করা কতটুকু দরকারী তা নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। কারণ প্রথম সন্তান জন্মদানের সময় সিজারিয়ান অপারেশন করা হলে, পরবর্তী সন্তান জন্মদানের সময়ও সাধারনত সিজারিয়ান করা লাগে। প্রথম সিজারিয়ান এড়ানো গেলে পরবর্তী সিজারিয়ান অপারেশনও এড়ানো সম্ভব হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১১ সালে প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজন গর্ভবতী মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন করে সন্তান জন্ম দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৯৯৬ সালের তুলনায় সিজারিয়ান অপারেশনের হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু এবং মায়ের জীবন রক্ষা করার জন্য সিজারিয়ান অপারেশন করা জরুরী হয়ে পড়ে; কিন্তু ইতোমধ্যে মহিলাদের এমন কি পরিবর্তন ঘটেছে যে তাদের এমন ব্যাপকভাবে সিজারিয়ান অপারেশন করে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে? নীতি নির্ধারকগণ অতিরিক্ত সিজারিয়ান অপারেশন করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতির অপব্যবহার হিসেবে গণ্য করছেন। তাছাড়া সিজারিয়ান অপারেশন করলে এরও কিছু স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকি এবং প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অপারেশনের নিজস্ব ঝুঁকি ছাড়াও শিশু এবং মায়ের ওপরে এর পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক গবেষক এখন শঙ্কিত।  এজন্য সাম্প্রতিক নীতিমালায় স্ত্রী রোগ ও ধাত্রী বিশেষজ্ঞদের জন্য কতগুলি নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ Obstetric Care Consensus No. 1: Safe Prevention of the Primary Cesarean Delivery. Obstetrics & Gynecology. 123(3):693-711, March 2014.

Tuesday 11 February 2014

বাড়ীতে দই বানানোর দুটি সহজ রেসিপি

আমাদের সকলের দধিপ্রীতি পুরনো । দই খুব ভাল খাবার যদি খাঁটি দুধকে গাজিয়ে (ফারমেন্টেড) দই করা হয়। কিন্তু বাজারে যেসব দই  পাওয়া যায়, তা কতটুকু খাওয়ার উপযোগী গবেষণাগারে নিয়ে দেখা দরকার। বেশিরভাগই অখাদ্য, নয় কুখাদ্য। দই তৈরীতে আটা, ময়দা, বাটারওয়েল, টিস্যু পেপার, রং, সেন্ট, কলা, কতকিছু যে মিশায় হয়তো কখনও মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও হবে।
তবে আপাতত অপেক্ষা না করে আমরা স্বনির্ভর হতে পারি। কারণ দই বানানো খুবই সহজ এবং মজাদার কাজ। দোকানের দই না খেয়ে বাড়ীতে নিজে দই বানিয়ে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। এজন্য সহজ দুটো দইয়ের রেসিপিঃ
১। সাধারণ সাদা টক দই
বাসায় সাদা টক দই বানানো খুবই সহজ। এরজন্য প্রয়োজন এক লিটার গরুর দুধ (ছাগী, মহিষ কিংবা উটের দুধও ব্যবহার করা যায়। এছাড়া সয়া দুধ কিংবা নারকেলের দুধ দিয়েও দই বানানো যায়) এবং  দইয়ের সাঁজ দুই টেবিল চামচ প্রথমে দুধ ফুটিয়ে ঘন করে নিতে হবেএক লিটার দুধ আধা লিটার পরিমাণ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে গরম দুধ ভালো করে ফেটে নিতে হবে ফেনা উঠে গেলে দইয়ের সাঁজ গলিয়ে কুসুম গরম ফেটানো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। দই বসানোর পাত্রটি  ঢাকনা দিয়ে গরম জায়গায় রাখতে হবে। কোনরকম নাড়াচাড়া না করে পাত্রটি পাঁচ-ছয় ঘণ্টা রেখে দিলে দই জমে যাবে।
২। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে বানানো টক দই
আমরা সবাই ব্যস্ত থাকি। তাই ঘটা করে দুধ জ্বাল দিয়ে দই বানানো আমাদের হয়ে ওঠে না।  কিন্তু বাসায় সহজে খুব অল্প পরিশ্রমে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সাদা টক দই বানানো যায়। এর জন্য দুধ লিটার দুধ আর ২ টেবিল চামচ দইয়ের বীজ (আগের দই) বা সাঁজ লাগবে।
সবচেয়ে ভালো হয় রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটি বড় কাঁচের বাটি কিংবা পাত্রে দুধ নিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ৮ মিনিট গরম করতে হবে। সাধারণত এই সময়ের মধ্যেই দুধের বলক উঠে  যায়। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে আরও দুই মিনিট গরম করতে হবে। বাটি কিংবা কাঁচের পাত্রটি এমন আকারের হতে হবে যেন দুধ উথলে উঠলে উপচে পড়ে না যায়। এরপর দুধ একটু শীতল হয়ে আসলে দইয়ের বীজ বা পুরনো দই দুধের মধ্যে ঢেলে মিশিয়ে দিতে হবে। পাত্রটিকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভিতরেই একটি ছোট তোয়ালে  দিয়ে ঢেকে সারা রাত রেখে দিতে হবে।পরদিন মাইক্রওয়েভ ওভেনে সকালের নাস্তা তৈরি করার আগেই পাওয়া যাবে নিজের বানানো সাদা টক দই। কেউ মিষ্টি দই খেতে চাইলে দুধ ফোটানোর আগেই প্রয়োজনমতো চিনি কিংবা গুড় মিশিয়ে নিতে হবে।

তবে নিঃসন্দেহে টক দই বেশী স্বাস্থ্যকর। নিজে দই বানান, নিজে খান এবং অন্যকেও খেতে দিন। 

মেয়েদের বয়ঃসন্ধিক্ষণ কি এগিয়ে আসছে?

মেয়েদের পিউবার্টি (Puberty) আজকাল আগেই শুরু হচ্ছে ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালকে ইংরেজীতে পিউবার্টি বলে এটা এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশু শরীর প্রাপ্তবয়স্ক শরীরে রূপান্তরিত হয় ইদানীং অগ্রিম পিউবার্টির সঙ্গে মোটা হয়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে ১৯৭০ সালে মার্শাল এবং ট্যানার এটা নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন মেয়েদের শরীরের বাড়ন নিয়ে এই প্রতিবেদন ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক
অনেকের মনে প্রশ্ন আছে মেয়েদের স্বাভাবিক শারীরিক বাড়ন কেমন হওয়া উচিত? এদিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বরাবরই এগিয়ে সচরাচর মেয়েদের পিউবার্টি থেকে ১২ বছরের মধ্যে আসে আর ছেলেদের আসে থেকে ১৪ বছরের মধ্যে পিউবার্টি পূর্ণ হতে গড়পড়তা মেয়েদের বছর এবং ছেলেদের বছর সময় লাগে
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে আমরা কিভাবে বুঝবো পিউবার্টি শুরু হয়েছে? ব্রিটিশ শিশু বিশেষজ্ঞ ট্যানারের বিবরন অনুসারে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রথম হচ্ছে স্তন বৃদ্ধি আর ছেলেদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ বড় হওয়া ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে শ্রোণীদেশে যৌনকেশ গজানো পিউবার্টির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তৃতীয়ত রয়েছে গলার স্বর পরিবর্তন, মুখে দাঁড়ি-গোঁফ ওঠা , লম্বায় বড় হওয়া এবং মেয়েদের মাসিক রজঃস্রাব শুরু হওয়া এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে ছেলেদের অণ্ডকোষ মিলিলিটারের বড় হলেই ধরে নেওয়া হয় যে তার পিউবার্টি শুরু হয়েছে অণ্ডকোষের মাপ ২০ মিলিলিটার এবং লিঙ্গ ১৫ সেন্টিমিটার (. ইঞ্চি) লম্বা হলে পিউবার্টির সমাপ্তি গণনা করা হয়
নতুন পর্যবেক্ষণসমূহে কি দেখা যাচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২০০ মেয়ের ওপর পরিচালিত জরীপে মূলত স্তন বিকাশের ওপরই বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারণ অন্যান্য পর্যবেক্ষণেও দেখা যায় মাসিক রজঃস্রাব শুরুর বয়স অপরিবর্তিত রয়েছে কিন্তু স্তনবৃন্তের  বিকাশ ১৯৯০-এর দশকে যা হতো, এখন তার চেয়ে কয়েক মাস  আগে ঘটছে
আরও দূর অতীতে ফিরে গেলে অবশ্য পরিবর্তনটি চোখে পড়ার মতো বিভিন্ন হিসেব থেকে দেখা যায় ১৮৬০ সালে মেয়েদের পিউবার্টির গড় বয়স ছিল ১৬. বছর ১৯২০ সালে এটা ছিল ১৪. বছর; ১৯৫০ সালে ১৩. বছর; ১৯৮০ সালে ১২. বছর আর ২০১০ সালে এটা নেমে এসেছে ১০. বছরে ছেলেদের বেলাতেও একই রকম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তবে তাদের ক্ষেত্রে সবকিছুতে এখনো বছর বেশী সময় লাগে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে বর্তমান পর্যবেক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আফ্রিকান আমেরিকান মেয়েদের পিউবার্টি আসছে বছর ১০ মাসে; সাদা এবং এশিয়ান মেয়েদের বছর মাসে আর স্প্যানিশ মেয়েদের বছর ৪ মাসে  এই পার্থক্যকে বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন; কারণ সারা দুনিয়ার মেয়েদের পিউবার্টি সম্পর্কে আসলে তেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই
পরিবর্তন শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই ঘটছে না গত বছর আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ টি অঙ্গরাজ্যের ৪০০০ বালকের ওপর করেছিল সে পর্যবেক্ষণের ফলাফলেও দেখা যায় ছেলেদের পিউবার্টি ১০ বছর বয়সে শুরু হচ্ছে অতীতে এটা সাড়ে এগার বছর বয়স থেকে শুরু হতো ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং শরীরচর্চা
অন্যান্য দেশে কি হচ্ছে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিকট বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি সংক্রান্ত তথ্য তেমন নেই তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে প্রমাণিত হচ্ছে দেশে দেশে পার্থক্য থাকলেও সারা ইউরোপ জুড়েও ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি আগে আসছে

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি এত কম বয়সে কেন শুরু হচ্ছে? গবেষণায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএমআই (body mass index)-কে দায়ী করা হচ্ছে কারো শরীরের ওজন বেশী না কম সেটা প্রকাশ করার জন্য বিএমআই ব্যবহার করা হয় বিএমআই যত বেশী, সে তত ওজনে বেশী কিংবা মোটা কিন্তু এক্ষেত্রে কি শুধু মেদবহুল বা মোটা হওয়ার সঙ্গেই এর সম্পর্ক? নাকি আরও কোন রহস্য রয়েছে  উদাহরণস্বরূপ ডেনমার্কে দত্তক নেওয়া শিশুদের ওপর এক পর্যবেক্ষণের ফলাফলে একটি মজার বিষয় দেখা গিয়েছে উন্নয়নশীল দেশ থেকে দত্তক নেওয়া মেয়েদের পিউবার্টি অনেক আগে শুরু হয় কিন্তু উন্নত দেশ থেকে দত্তক নেওয়া মেয়েদের পিউবার্টি পরে শুরু হয় এটাকে শুধু পুষ্টি, ওজন কিংবা শরীরে চর্বির পরিমাণ দিয়ে মেলান যাচ্ছে না সুইডেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাইগ্রেট করে যাওয়া মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এজন্য অনেকে শিশুর চারপাশের পরিবেশমানসিক চাপ , আবহাওয়া , দিনের আলোর পরিমাণ,পরিবেশ এবং খাবার-দাবারে রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলি ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্রিম পিউবার্টির কোন কারণ শনাক্ত করা যায় না অনেকের ক্ষেত্রে সুষম পুষ্টির কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে এটা হতে পারে; তবে থ্যালেট এবং হরমোন চক্রকে প্রভাবিত করে এমন রাসায়নিক উপাদানের কারণে এমনটি ঘটে থাকতে পারে কিন্তু এটা নিয়ে সকলে এত আগ্রহী কেন? কারণ অগ্রিম পিউবার্টি স্তন ক্যান্সারের জন্যও একটি ঝুঁকি

খাবারের ট্রান্স ফ্যাট

পরিবর্তন শুরু হয়েছে এক দশক আগে থেকেই। ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বা ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এটা পরিহার করতে শুরু করেন এবং অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের খাবারে এর পরিমাণ কমাতে শুরু করে।
খাবারের চর্বির উৎস মূলত দুই রকম-উদ্ভিজ্জ এবং প্রানীজচর্বি আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়এটা ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে শোষণের জন্যও দরকারী। খাবারের উপাদান হিসেবে চর্বি শুধু আমাদের শক্তিই যোগায়, তা কিন্তু নয়। এটা খাবারের সুবাস এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে, খাদ্যের স্থায়ীত্বকাল বাড়ায়।  সুস্থ শরীরের জন্য এবং ক্রনিক রোগ ব্যাধি এড়িয়ে চলতে হলে আমাদের খাবারে এক তৃতীয়াংশের বেশী চর্বি থাকা উচিত নয়। নবজাতক এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শক্তির একটি বড় উৎস চর্বি। কিন্তু এই চর্বির জ্ঞাতি ভাই ট্রান্স ফ্যাট আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসকল খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, সেখানে ট্রান্স ফ্যাটও থাকতে পারে।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ১৯৯৯ সালে প্রথম প্রস্তাব করে যে খাবারের মোড়কের গায়ে পুষ্টি তথ্যের সঙ্গে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণও উল্লেখ করতে হবে।এই প্রস্তাব কার্যকরী হয় ২০০৬ সাল থেকে। 
তবে এখনও হরেক-রকম তৈরি খাবারে আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils  বা PHOs) ব্যবহার করা হয়। খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের এটা একটি প্রধান উৎস। এখন বলা হচ্ছে হৃদরোগের পিছনে এই ট্রান্স ফ্যাটের বিশেষ অবদান রয়েছে। কারণ এরা ধমনীর প্রাচীরে চর্বির আস্তর জমতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে এর ফলেই হার্ট অ্যাটাক হয়। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ কেন্দ্র আশা করছে খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ আরও কমাতে পারলে প্রতি বছর ৭০০০ মৃত্যু এবং ২০,০০০ হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা যাবে।
আমেরিকায় জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য এবং পানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য প্রাথমিক ভাবে তারা একটি নির্দেশনা জারী করেছে যে আংশিক জারিত তেলকে ( partially hydrogenated oils  বা PHOs) শরীরের জন্য আর নিরাপদ বলে গণ্য করা হবে না। এটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils  বা PHOs) আর ইচ্ছে মতো খাবারে ব্যবহার করা যাবে না। এর ফলে খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহারের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এখন এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে সকলে চিন্তা-ভাবনা করছেন। অবশ্য এরপরও আমাদের খাদ্য দ্রব্য থেকে ট্রান্স ফ্যাট একেবারে দূর হবে না। কারণ মাংস এবং বিভিন্ন ধরণের খাবারের তেলে কম বেশী ট্রান্স ফ্যাট থাকে।
আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils  বা PHOs) অনেক মজার মজার সুস্বাদু খাবার তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।  সাধারণত ভাজা, বেকারী এবং ফ্রোজেন খাবারের আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils  বা PHOs) ব্যবহার করা হয়। খাবারের সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এবং সুস্বাদু করার জন্য ১৯৫০-এর দশক থেকে এর প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু এরপর বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ মিলতে থাকে। মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী ২০০২ সালে এক রিপোর্টে জানায় যে ট্রান্স ফ্যাট শরীরে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের (low density lipoprotein বা LDL)  পরিমাণ বাড়ায়। এল ডি এল  কোলেস্টেরলকে মানুষের শরীরের জন্য “মন্দ কোলেস্টেরল” হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এটা হৃদরোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ট্রান্স ফ্যাটের বা ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস মূলত দুইটি ।
·         মাঠে চড়ে খাওয়া প্রাণীর অন্ত্রে এটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়। এজন্য গরু-খাসীর মাংসে, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে কিছু ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায়।
·         খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার সময় এটা প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। ভেজিটেবল অয়েলে হাইড্রোজেন যোগ করলে তেল জমে যায়। কিন্তু এরফলে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ খাবার সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এবং ভাজাভুজি খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য আংশিক জারিত তেল ব্যবহার করে থাকে। আমাদের শরীরের এভাবেই সবচেয়ে বেশী ট্রান্স ফ্যাট প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ২০০৬ সাল থেকে ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে খাবারের মোড়কে সতর্কতা বাণী বাধ্যতামূলক করলেও সচেতন মানুষেরা অতি দ্রুত এটা পরিহার করতে শুরু করে। অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় এটার ব্যবহার কমিয়ে দিতে শুরু করে। কিন্তু তারপরেও অনেক খাবারে এখনও ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে। যে সকল খাবারে এটা থাকে তার কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হলোঃ  
·         ক্র্যাকার, কুকি, কেক, ফ্রোজেন পাই এবং এধরণের আরও অনেক বেকারীর খাবার
·         স্ন্যাক জাতীয় খাবার
·         ক্যান্ডি
·         ফ্রোজেন পিৎজা
·         কফি ক্রীমার
·         সংরক্ষিত সবজীর স্ন্যাক
·         ফ্রিজে সংরক্ষিত ময়দার খামির থেকে তৈরি খাবার ( যেমন বিস্কুট, রোলস)
·         খাবারের ওপরে নকশা করার জন্য ব্যবহৃত ফ্রস্টিং।

প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা কি করবেন?
যে কোন পছন্দের খাবার কেনার আগে মোড়কের গায়ে কি লেখা আছে, তা ভালো করে পড়তে হবে। আজকাল সব খাবারের মোড়কের গায়ে সম্পৃক্ত চর্বি, কোলেস্টেরল এবং ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করা থাকে। ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ শূন্য লেখা থাকলেও দেখতে হবে আংশিক জারিত তেলের পরিমাণ উল্লেখ করা আছে কিনা। কারণ এর থেকেই ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। ভোক্তাদের জন্য জানার বিষয় হলো ট্রান্স ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এটা হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকি। অতএব চর্বিজাতীয় খাবার সতর্কতার সঙ্গে খেতে হবে।এজন্য কতগুলি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিতঃ
          খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ যত কম রাখা যায়, ততই মঙ্গল।
          খাবারের মোড়কের গায়ে লেখা পুষ্টি বিবরণী ভালো করে পড়ে দেখতে হবে।
          যে সকল খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরল কম থাকে সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
          জমাট ডালডা, মাখন কিংবা চর্বি দিয়ে ভাজাভুজি না করে ভেজিটেবল ওয়েল ব্যবহার করা উত্তম।
          ভাজা খাবারের পরিবর্তে সিদ্ধ করা কিংবা বেক করা খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
          বাদাম, বীচিজাত তেল, জলপাই এবং অ্যাভোকাডো জাতীয় খাবার বেশী খেতে হবে। কারণ এসব খাবারে শরীরের জন্য উপকারী তেল থাকে।
          সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যেতে পারে। কারণ মাছের তেলে প্রচুর শরীরের জন্য উপকারী তেল থাকে
          আকর শস্যদানা, ফল এবং সব্জী বেশী খাওয়া ভালো।

          খাবারের দোকান কিংবা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে একটু জানার চেষ্টা করা উচিত তারা রান্নার জন্য কি তেল ব্যবহার করছে।