পরিবর্তন শুরু হয়েছে এক
দশক আগে থেকেই। ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বা ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এটা পরিহার করতে শুরু করেন এবং অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারক
প্রতিষ্ঠান তাদের খাবারে এর পরিমাণ কমাতে শুরু করে।
খাবারের চর্বির
উৎস মূলত দুই রকম-উদ্ভিজ্জ এবং প্রানীজ। চর্বি আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। এটা ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে শোষণের জন্যও দরকারী। খাবারের উপাদান হিসেবে
চর্বি শুধু আমাদের শক্তিই যোগায়, তা কিন্তু নয়। এটা খাবারের সুবাস এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে, খাদ্যের স্থায়ীত্বকাল বাড়ায়। সুস্থ
শরীরের জন্য এবং ক্রনিক রোগ ব্যাধি এড়িয়ে চলতে হলে আমাদের খাবারে এক তৃতীয়াংশের
বেশী চর্বি থাকা উচিত নয়। নবজাতক এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শক্তির একটি বড়
উৎস চর্বি। কিন্তু এই চর্বির জ্ঞাতি ভাই ট্রান্স ফ্যাট আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসকল
খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, সেখানে ট্রান্স ফ্যাটও থাকতে পারে।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ
প্রশাসন ১৯৯৯ সালে প্রথম প্রস্তাব করে যে খাবারের মোড়কের গায়ে পুষ্টি তথ্যের সঙ্গে
ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণও উল্লেখ করতে হবে।এই প্রস্তাব কার্যকরী হয় ২০০৬ সাল
থেকে।
তবে এখনও হরেক-রকম তৈরি
খাবারে আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils বা PHOs) ব্যবহার করা হয়। খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের এটা একটি প্রধান উৎস। এখন বলা
হচ্ছে হৃদরোগের পিছনে এই ট্রান্স ফ্যাটের বিশেষ অবদান রয়েছে। কারণ এরা ধমনীর
প্রাচীরে চর্বির আস্তর জমতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে এর ফলেই হার্ট অ্যাটাক হয়। মার্কিন
রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ কেন্দ্র আশা করছে খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ আরও কমাতে
পারলে প্রতি বছর ৭০০০ মৃত্যু এবং ২০,০০০ হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা যাবে।
আমেরিকায় জনগণের জন্য
নিরাপদ খাদ্য এবং পানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিশেষ
ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য প্রাথমিক ভাবে তারা একটি নির্দেশনা জারী করেছে যে আংশিক
জারিত তেলকে ( partially hydrogenated oils বা PHOs) শরীরের জন্য আর নিরাপদ বলে গণ্য করা হবে না। এটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আংশিক
জারিত তেল ( partially hydrogenated oils বা PHOs) আর ইচ্ছে মতো খাবারে ব্যবহার করা যাবে না। এর ফলে খাবারে ট্রান্স ফ্যাট
ব্যবহারের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এখন এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা
নিয়ে সকলে চিন্তা-ভাবনা করছেন। অবশ্য এরপরও আমাদের খাদ্য দ্রব্য থেকে ট্রান্স
ফ্যাট একেবারে দূর হবে না। কারণ মাংস এবং বিভিন্ন ধরণের খাবারের তেলে কম বেশী
ট্রান্স ফ্যাট থাকে।
আংশিক জারিত তেল (
partially hydrogenated oils বা PHOs) অনেক মজার মজার সুস্বাদু খাবার তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ভাজা, বেকারী এবং ফ্রোজেন খাবারের আংশিক জারিত তেল ( partially hydrogenated oils বা PHOs) ব্যবহার করা হয়। খাবারের সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এবং সুস্বাদু করার জন্য
১৯৫০-এর দশক থেকে এর প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু এরপর বিভিন্ন
পর্যবেক্ষণে ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ মিলতে থাকে। মার্কিন জাতীয়
বিজ্ঞান একাডেমী ২০০২ সালে এক রিপোর্টে জানায় যে ট্রান্স ফ্যাট শরীরে কম ঘনত্বের
কোলেস্টেরলের (low density lipoprotein বা LDL) পরিমাণ বাড়ায়। এল ডি এল
কোলেস্টেরলকে মানুষের শরীরের জন্য “মন্দ কোলেস্টেরল” হিসেবে গণ্য করা হয়।
কারণ এটা হৃদরোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ট্রান্স ফ্যাটের বা
ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস মূলত দুইটি ।
·
মাঠে চড়ে খাওয়া প্রাণীর
অন্ত্রে এটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়। এজন্য গরু-খাসীর মাংসে, দুধ এবং দুগ্ধজাত
খাবারে কিছু ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায়।
·
খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার
সময় এটা প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। ভেজিটেবল অয়েলে হাইড্রোজেন যোগ করলে তেল জমে যায়।
কিন্তু এরফলে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ খাবার
সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এবং ভাজাভুজি খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য আংশিক জারিত তেল
ব্যবহার করে থাকে। আমাদের শরীরের এভাবেই সবচেয়ে বেশী ট্রান্স ফ্যাট প্রবেশ করার
সুযোগ পায়।
খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন
২০০৬ সাল থেকে ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে খাবারের মোড়কে সতর্কতা বাণী বাধ্যতামূলক করলেও
সচেতন মানুষেরা অতি দ্রুত এটা পরিহার করতে শুরু করে। অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারী
প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় এটার ব্যবহার কমিয়ে দিতে শুরু করে। কিন্তু তারপরেও অনেক
খাবারে এখনও ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে। যে সকল খাবারে এটা থাকে তার কয়েকটি
উদাহরণ নীচে দেওয়া হলোঃ
·
ক্র্যাকার, কুকি, কেক,
ফ্রোজেন পাই এবং এধরণের আরও অনেক বেকারীর খাবার
·
স্ন্যাক জাতীয় খাবার
·
ক্যান্ডি
·
ফ্রোজেন পিৎজা
·
কফি ক্রীমার
·
সংরক্ষিত সবজীর স্ন্যাক
·
ফ্রিজে সংরক্ষিত ময়দার
খামির থেকে তৈরি খাবার ( যেমন বিস্কুট, রোলস)
·
খাবারের ওপরে নকশা করার
জন্য ব্যবহৃত ফ্রস্টিং।
প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ
ভোক্তারা কি করবেন?
যে কোন পছন্দের খাবার
কেনার আগে মোড়কের গায়ে কি লেখা আছে, তা ভালো করে পড়তে হবে। আজকাল সব খাবারের
মোড়কের গায়ে সম্পৃক্ত চর্বি, কোলেস্টেরল এবং ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করা
থাকে। ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ শূন্য লেখা থাকলেও দেখতে হবে আংশিক জারিত তেলের
পরিমাণ উল্লেখ করা আছে কিনা। কারণ এর থেকেই ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। ভোক্তাদের জন্য
জানার বিষয় হলো ট্রান্স ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের
পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এটা হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকি। অতএব চর্বিজাতীয় খাবার সতর্কতার সঙ্গে খেতে হবে।এজন্য কতগুলি
বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিতঃ
•
খাবারে
ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ যত কম রাখা যায়, ততই মঙ্গল।
•
খাবারের
মোড়কের গায়ে লেখা পুষ্টি বিবরণী ভালো করে পড়ে দেখতে হবে।
•
যে সকল খাবারে
সম্পৃক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরল কম থাকে সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
•
জমাট ডালডা, মাখন কিংবা চর্বি দিয়ে ভাজাভুজি না করে ভেজিটেবল ওয়েল ব্যবহার করা উত্তম।
•
ভাজা খাবারের
পরিবর্তে সিদ্ধ করা কিংবা বেক করা খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
•
বাদাম, বীচিজাত তেল, জলপাই এবং অ্যাভোকাডো জাতীয় খাবার বেশী খেতে হবে। কারণ
এসব খাবারে শরীরের জন্য উপকারী তেল থাকে।
•
সামুদ্রিক মাছ
খাওয়া যেতে পারে। কারণ মাছের তেলে প্রচুর শরীরের জন্য উপকারী তেল থাকে।
•
আকর শস্যদানা, ফল এবং সব্জী বেশী খাওয়া ভালো।
•
খাবারের দোকান
কিংবা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে একটু জানার চেষ্টা করা উচিত তারা রান্নার জন্য কি
তেল ব্যবহার করছে।
No comments:
Post a Comment