মেয়েদের পিউবার্টি (Puberty) আজকাল আগেই শুরু হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালকে ইংরেজীতে পিউবার্টি বলে। এটা এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশু শরীর প্রাপ্তবয়স্ক শরীরে রূপান্তরিত হয়। ইদানীং অগ্রিম পিউবার্টির সঙ্গে মোটা হয়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। ১৯৭০ সালে মার্শাল এবং ট্যানার এটা নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। মেয়েদের শরীরের বাড়ন নিয়ে এই প্রতিবেদন ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক।
অনেকের মনে প্রশ্ন আছে মেয়েদের স্বাভাবিক শারীরিক বাড়ন কেমন হওয়া উচিত? এদিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বরাবরই এগিয়ে। সচরাচর মেয়েদের পিউবার্টি ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে আসে। আর ছেলেদের আসে ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। পিউবার্টি পূর্ণ হতে গড়পড়তা মেয়েদের ৩ বছর এবং ছেলেদের ৪ বছর সময় লাগে।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে আমরা কিভাবে বুঝবো পিউবার্টি শুরু
হয়েছে? ব্রিটিশ শিশু বিশেষজ্ঞ ট্যানারের বিবরন অনুসারে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রথম হচ্ছে স্তন বৃদ্ধি আর ছেলেদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ বড় হওয়া। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে শ্রোণীদেশে যৌনকেশ গজানো পিউবার্টির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। তৃতীয়ত রয়েছে গলার স্বর পরিবর্তন, মুখে দাঁড়ি-গোঁফ ওঠা , লম্বায় বড় হওয়া এবং মেয়েদের মাসিক রজঃস্রাব শুরু হওয়া। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে। ছেলেদের অণ্ডকোষ ৩ মিলিলিটারের বড় হলেই ধরে নেওয়া হয় যে তার পিউবার্টি শুরু হয়েছে। অণ্ডকোষের মাপ ২০ মিলিলিটার এবং লিঙ্গ ১৫ সেন্টিমিটার (৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা হলে পিউবার্টির সমাপ্তি গণনা করা হয়।
নতুন পর্যবেক্ষণসমূহে কি দেখা যাচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২০০ মেয়ের ওপর পরিচালিত জরীপে মূলত স্তন বিকাশের ওপরই বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ অন্যান্য পর্যবেক্ষণেও দেখা যায় মাসিক রজঃস্রাব শুরুর বয়স অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু স্তনবৃন্তের বিকাশ ১৯৯০-এর দশকে যা হতো, এখন তার চেয়ে কয়েক মাস আগে ঘটছে।
আরও দূর অতীতে ফিরে গেলে অবশ্য পরিবর্তনটি চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন হিসেব থেকে দেখা যায় ১৮৬০ সালে মেয়েদের পিউবার্টির গড় বয়স ছিল ১৬.৬ বছর। ১৯২০ সালে এটা ছিল ১৪.৬ বছর; ১৯৫০ সালে ১৩.১ বছর; ১৯৮০ সালে ১২.৫ বছর আর ২০১০ সালে এটা নেমে এসেছে ১০.৫ বছরে। ছেলেদের বেলাতেও একই রকম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তবে তাদের ক্ষেত্রে সবকিছুতে এখনো ১ বছর বেশী সময় লাগে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে বর্তমান পর্যবেক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আফ্রিকান আমেরিকান মেয়েদের পিউবার্টি আসছে ৮ বছর ১০ মাসে; সাদা এবং এশিয়ান মেয়েদের ৯ বছর ৮ মাসে আর স্প্যানিশ মেয়েদের ৯ বছর ৪ মাসে। এই পার্থক্যকে বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন; কারণ সারা দুনিয়ার মেয়েদের পিউবার্টি সম্পর্কে আসলে তেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।
পরিবর্তন শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই ঘটছে না। গত বছর আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ টি অঙ্গরাজ্যের ৪০০০ বালকের ওপর করেছিল। সে পর্যবেক্ষণের ফলাফলেও দেখা যায় ছেলেদের পিউবার্টি ১০ বছর বয়সে শুরু হচ্ছে। অতীতে এটা সাড়ে এগার বছর বয়স থেকে শুরু হতো। ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং শরীরচর্চা।
অন্যান্য দেশে কি হচ্ছে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিকট বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি সংক্রান্ত তথ্য তেমন নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে প্রমাণিত হচ্ছে দেশে দেশে পার্থক্য থাকলেও সারা ইউরোপ জুড়েও ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি আগে আসছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ছেলেমেয়েদের পিউবার্টি এত কম বয়সে কেন শুরু হচ্ছে? গবেষণায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএমআই (body mass index)-কে দায়ী করা হচ্ছে। কারো শরীরের ওজন বেশী না কম সেটা প্রকাশ করার জন্য বিএমআই ব্যবহার করা হয়। বিএমআই যত বেশী, সে তত ওজনে বেশী কিংবা মোটা। কিন্তু এক্ষেত্রে কি শুধু মেদবহুল বা মোটা হওয়ার সঙ্গেই এর সম্পর্ক? নাকি আরও কোন রহস্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ডেনমার্কে দত্তক নেওয়া শিশুদের ওপর এক পর্যবেক্ষণের ফলাফলে একটি মজার বিষয় দেখা গিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে দত্তক নেওয়া মেয়েদের পিউবার্টি অনেক আগে শুরু হয়। কিন্তু উন্নত দেশ থেকে দত্তক নেওয়া মেয়েদের পিউবার্টি পরে শুরু হয়। এটাকে শুধু পুষ্টি, ওজন কিংবা শরীরে চর্বির পরিমাণ দিয়ে মেলান যাচ্ছে না। সুইডেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাইগ্রেট করে যাওয়া মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এজন্য অনেকে শিশুর চারপাশের পরিবেশ – মানসিক চাপ , আবহাওয়া , দিনের আলোর পরিমাণ,পরিবেশ এবং খাবার-দাবারে রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলি ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্রিম পিউবার্টির কোন কারণ শনাক্ত করা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে সুষম পুষ্টির কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে এটা হতে পারে; তবে থ্যালেট এবং হরমোন চক্রকে প্রভাবিত করে এমন রাসায়নিক উপাদানের কারণে এমনটি ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু এটা নিয়ে সকলে এত আগ্রহী কেন? কারণ অগ্রিম পিউবার্টি স্তন ক্যান্সারের জন্যও একটি ঝুঁকি।
No comments:
Post a Comment