শরীর ও মন নিয়ে লেখালেখি

Tuesday, 11 February 2014

ভার্চুয়াল চিকিৎসা জগত ২০১৩

কালের স্রোতে ২০১৩ সাল এখন অতীত হয়েছে কিন্তু চিকিৎসা জগতে ২০১৩ সাল অনেক নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে এসম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে।
২০১৩ সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে প্যাথলজি ল্যাবে পরিবর্তনের হাওয়া সাধারণত রোগীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয় এতদিন একাধিক কাঁচের কিংবা প্লাস্টিক নলে রক্ত সংগ্রহ করা হতো ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে আবার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সময়মত পাওয়া নিয়ে নানান ঝামেলায় পড়তে হয় এক্ষেত্রে সত্যি সত্যি পরিবর্তন ঘটাবে থেরানস(theranos) প্রযুক্তি অত্যাধুনিক এই মাইক্রোফ্লুয়িড প্রযুক্তির সাহায্যে সামান্য কয়েক ফোঁটা রক্ত দিয়ে শত শত পরীক্ষা করা যাবে, এর প্রতিটির খরচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা যাবে এবং পরীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি রোগী এবং চিকিৎসকের নিকট পৌঁছে যাবে বিগত ৬০ বছরের মধ্যে এটাকে প্যাথলজি ল্যাবে বড় ধরণের পরিবর্তন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এসম্পর্কে আরও জানতে চাইলে http://www.theranos.com –এ দেখতে পারেন। 
দ্বিতীয় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হিসেবে বলা হচ্ছে জেনেটিক পরীক্ষার ওপর চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের শিথিলতা এতদিন যে কোন রোগ কিংবা রোগের ঝুঁকি শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা করতে হলে রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার হতো  কিন্তু শীগগিরই রোগীরা তাদের চাহিদামত পরীক্ষা সরাসরি করাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে গত ২০১৩ সালের মে মাসে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার স্তন ক্যানসার ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য একটি বিশেষ ধরণের জেনেটিক পরীক্ষা (BRCA 1,2 gene শনাক্তকরণ) করিয়েছিলেন সেটা পজিটিভ হওয়ার ফলে তিনি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ক্যানসার না হলেও আগেভাগে তার দুই স্তন অপারেশন করে ফেলে দিয়েছেন স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্যঅ্যাঞ্জেলিনা ইফেক্ট(Angelina effect)সারা দুনিয়াজুড়ে বেশ ভালই অনুভূত হচ্ছে এখন কেউ ইচ্ছে করলে তার স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা তা জানার জন্য পরীক্ষা নিজেই সরাসরি করাতে পারবে গর্ভবতী মায়েরাও তাদের অনাগত সন্তানের কোন জন্মগত রোগের ঝুঁকি আছে কিনা তা শনাক্ত করার কয়েকটি পরীক্ষাও নিজে থেকে করাতে পারবে এরফলে অচিরে জেনেটিক পরীক্ষা করানোর ব্যবসা বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে
হাসপাতাল এবং ডাক্তারের চেম্বার থেকে সেবা গ্রহণের প্রবণতার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে একটি কোম্পানির পর্যবেক্ষণে দেখা যায় শতকরা ৭০ জন রোগী হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের চেম্বারে না যেয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা নিতে বেশী আগ্রহী  হয়তো সেদিন আর বেশী দূরে নয় যখন মানুষ সশরীরে  হাসপাতালে না যেয়ে ঘরে বসে ভার্চুয়াল হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণ করাকেই বেশী পছন্দ করবে
আরেকটি বড় পরিবর্তন আসছে মানুষের শরীর ট্র্যাকিং করার বিষয়ে গত বছর মার্কিন খাদ্য ওষুধ প্রশাসন এমন কিছু স্মার্ট ফোনের অনুমোদন দিয়েছে যার সাহায্যে কারো হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ  বা সি জি রেকর্ড করবে এবং ফোনের মাধ্যমে তা হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের নিকট পৌঁছে যাবে এমন ঘড়ি তৈরি করা হয়েছে যা প্রতি মুহূর্তে মানুষের রক্তচাপ রেকর্ড করবে ফলে আশা করা হচ্ছে অচিরেই মানুষের শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ খুব সহজেই রেকর্ড করা বা ট্র্যাক করা যাবে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটা বড় রকমের পরিবর্তন আনবে

চিকিৎসা জগতে ২০১৩ সাল প্রকৃতই ডিজিটাল পরিবর্তনের হাওয়া এনেছে এবং স্বভাবতই আশা করা হচ্ছে এটা অব্যাহত থাকবে হয়তো সেদিন বেশী দূরে নয় যখন আমরা ভার্চুয়াল চিকিৎসা জগতের বাসিন্দা হয়ে যাবো

No comments:

Post a Comment