আজকাল ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
সম্পর্কে সকলেরই
আগ্রহ বেড়েছে। এটা
নিয়ে প্রচার
প্রচারণারও অন্ত
নেই।
প্রশ্ন মূলতঃ
কোথায় পাওয়া
যাবে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড? বেশীরভাগ প্রচারণায়
খাবারে কৃত্রিম
উপায়ে যুক্ত
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের
প্রতিই সকলের
দৃষ্টি আকর্ষণ
করা হয়
কিংবা ক্যাপসুল
আকারে এটা
গ্রহণ করার
জন্য উদ্বুদ্ধ
করা হয়। কিন্তু
আমাদের দৈনন্দিন
খাদ্য থেকেই
প্রচুর ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
পাওয়া সম্ভব।
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
আসলে বিশেষ
ধরণের অসম্পৃক্ত
ফ্যাটি অ্যাসিড। অনেক
সময় এদের
পলি ফ্যাটও
বলা হয়। সবচেয়ে
সরল ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের
নাম আলফা
লিনোলিনিক অ্যাসিড। আমাদের
শরীরে এটা
তৈরি হয়
না।
এজন্য খাবারের
মাধ্যমে এটা
গ্রহণ করতে
হয়।
অন্যথায় শরীরে
এর ঘাটতি
পড়ে যায়। তবে
আনন্দের বিষয়
হচ্ছে বেশীরভাগ
উদ্ভিজ্জ এবং
প্রাণীজ খাবারে
এটা যথেষ্ট
পরিমাণেই পাওয়া
যায়।
কিন্তু অন্য
দুটি ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
অর্থাৎ ইকোসাপেনটানোইক
অ্যাসিড(eicosapentaenoic acid) এবং
ডকোসাহেক্সানোয়িক অ্যাসিড(docosahexaenoic acid)এত সহজে
পাওয়া যায়
না।
সামান্য পরিমাণ
আলফা লিনোলিনিক
অ্যাসিড শরীরে
রূপান্তরিত হয়ে
ওই দুই
রকম ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
তৈরি করতে
পারলেও তা
প্রয়োজনের তুলনায়
নগণ্য। কিন্তু হৃদপিণ্ড, ত্বক,
মস্তিস্ক এবং
আরও অনেক
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষার
জন্য শেষোক্ত
দুই রকমের
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের
প্রয়োজনই বেশী। অতএব
শরীরের সুরক্ষার
জন্য আমাদের
ইকোসাপেনটানোইক অ্যাসিড
এবং ডকোসাহেক্সানোয়িক
অ্যাসিড সমৃদ্ধ
খাবার অবশ্যই
গ্রহণ করতে
হবে।
দৈনিক আমাদের কতটুকু ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড গ্রহণ কড়া উচিৎ? এ সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দৈনিক ১ থেকে ৪
গ্রাম ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়। অতিরিক্ত ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড গ্রহণ করলে আবার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিংবা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হতে
পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোন খাবারে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে?
তিসির বীজ (flaxseed or
linseed) এবং আখরোটে (wallnut) প্রচুর
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। পোয়া কাপ পরিমাণ তিসির বীজ থেকে ৬ থেকে ৮ গ্রাম
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। আর সম পরিমাণ আখরোট থেকে প্রায় ৩ গ্রাম
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া সম্ভব। আমাদের শরীরের জন্য যে পরিমাণ ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড দরকার তা পেতে হলে দৈনিক এক টেবিল চামচ তিসির বীজ কিংবা তেল এবং পোয়া কাপ
পরিমাণ আখরোট খেলেই যথেষ্ট। এরফলে আমরা প্রায় ৪ গ্রামের বেশী ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড পেতে পারি।
এ ছাড়া ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের খুব সমৃদ্ধ উৎস বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক
মাছ। যেমনঃ স্যামন, সারডিন, হেরিং, ম্যাকারেল,
টুনা ইত্যাদি। সাধারণত ৪ আউন্স
এধরণের মাছ খেলে ১ থেকে ২ গ্রাম ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। মিষ্টি পানির
মাছে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ
তুলনামূলকভাবে কম। তবে পাঙাশ, বিভিন্ন রকম কার্প , ট্রাউট ইত্যাদি মাছেও ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া
যায়।
জলপাইয়ের তেলেও ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। প্রতি আউন্স জলপাইয়ের তেলে ১০০ মিঃ গ্রাম
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়া সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ক্যানোলার তেলে ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিডের পরিমাণ যথেষ্ট। সরিষা গোত্রের অন্যান্য সবজী যেমনঃ বাঁধাকপি, ফুল কপি,
শালগম, মূলা, ওয়াসাবি ইত্যাদিতে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাছ, বাদাম কিংবা তেল ভাজলে কিংবা অতিরিক্ত তাপে
রান্না করলে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়। অতএব পরিমাণ মতো ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড পেতে হলে এসব খাবার কাঁচা গ্রহণ করতে হবে অথবা এমন ভাবে রান্না করতে হবে
যেন উত্তাপে নষ্ট হয়ে না যায়। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে তা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা
। এজন্য আজকাল অধিকাংশ খাবারে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পরিপূরক হিসেবে যোগ করা হয়।
রুটি, তেল, আটা থেকে শুরু করে ডিম দুধ মাখন ঘি সব কিছুতেই ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড
যোগ করা হয়। সুপার মার্কেট থেকে কেনার সময় এ সব খাদ্যের মোড়কে ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিডের পরিমাণ দেখলেই এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এরপরেও যাদের দৈনিক ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হয় না, তাদের ওমেগা-৩-ফ্যাটি
অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাপসুল সেবন করাই সমাধান।
No comments:
Post a Comment